বিবাহ হইতেই যখন এত দুঃখ কষ্টের সৃষ্টি, যুবক-যুবতিগণ এই কার্য্যে কেন বিজ্ঞতা প্রদর্শন করিবে না ? তাহারা কেন ইহা মনে করিতে থাকিবে যে, বয়োজ্যেষ্ঠ অধিকতর অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের পরামর্শে তাহাদের প্রয়োজন নাই ? নর-নারিগণ কাজ-কারবারে যথেষ্ট সতর্কতা প্রদর্শন করিয়া থাকে । কোন অত্যাবশ্যক কার্য্যে রত হইবার পূর্ব্বে লোকেরা নিজেদিগকে ঐ কার্য্যের নিমিত্ত প্রস্তুত করিয়া থাকে । তাহারা যেন তাহাদের কার্য্যে অকৃত-কার্য্য না হয়, তজজন্য এই বিষয়ে তাহারা যথেষ্ট সময়, অর্থ ও মনোযোগ দান করিয়া থাকে । CCh 335.4
বিবাহ-সম্বন্ধ, ভাবী বংশের ও ভাবী জীবনের উপরে ক্রিয়াশীল হয়, সুতরাং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবার পূর্ব্বে কত না অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা বিধেয় ? কিন্তু ইহার পরিবর্ত্তে অনেক সময় স্থির বিবেচনা রহিত হইয়া, অন্ধভাবে এবং উত্তেজনার ও কামেন্দ্রিয়ের বশবর্ত্তী হইয়া ব্যঙ্গচ্ছলে ও লঘুভাবে বিবাহ জীবনে প্রবেশ করা হয় । আর ইহার একমাত্র কারণ— শয়তান এই জগতে দুঃখকষ্ট ও ধ্বংস দেখিতে ভালবাসে ; তাই আত্মাসমূহকে পাশাবদ্ধ করিবার নিমিত্ত সে এই জাল বুনিয়া থাকে । এই সকল অবিবেচক লোক ইহ জগতে তাহাদের অনন্ত আবাস হারায়, ইহা দেখিতে সে আনন্দ উপভোগ করে । CCh 336.1
মাতাপিতার পরামর্শে ও সিদ্ধান্তে মনোনিবেশ না করিয়া সন্তান সন্ততিগণ কি কেবল নিজের বাসনা ও খেয়াল অনুযায়ী চলিবে ? মনে হয়, কেহ কেহ মাতাপিতার ইচ্ছায় ও মনোনয়নে আদৌ ভ্রূক্ষেপ করে না, কিংবা তাহাদের অভিজ্ঞ সিদ্ধান্তে মনোযোগ দান করে না । সন্তানোচিত বাৎসল্যের কাছে তাহাদের হৃদয়-দ্বার স্বার্থপরতায় রুদ্ধ হইয়া গিয়াছে । যুবকযুবতিগণের মন এই বিষয়ে জাগরিত হওয়া কর্ত্তব্য । এক মাত্র পঞ্চম আজ্ঞাই প্রতিজ্ঞা-সহযুক্ত আজ্ঞা, কিন্তু এই আজ্ঞাটীই লঘুভাবে পালিত হয় এবং প্রেমিক-প্রেমিকার দাবীদাওয়া পূরণের জন্য এমন কি সুনির্দিষ্টরূপে ইহা অবজ্ঞাত হয় । মাতৃ-স্নেহ তুচ্ছ করা ও পিতৃ-যত্ন অবজ্ঞা করা এমন মহা পাপ, যাহা বহু যুবকযুবতীর বিরুদ্ধে স্বর্গের বিবরণ পুস্তকে সূক্ষ্মরূপে লিখিত হইয়াছে । CCh 336.2
অনভিজ্ঞ লোকদের ও যুবকযুবতিগণের ভালবাসায় বিঘ্ন ঘটান, কিংবা তাহাদের প্রণয়ে হস্তক্ষেপ করা কোন মতেই কর্ত্তব্য নহে,— এই ধারণাটী বিবাহের ব্যাপারে একটী মস্ত বড় ভুল ধারণা । সর্ব্বদিক দিয়া বিবেচনা করিয়া দেখিবার যদিকোন বিষয়-ব্যাপার থাকে, তবে এইটীই সেই বিষয় । অন্যের অভিজ্ঞতার সাহায্য লওয়া এবং ধীর ও সতর্কভাবে এই বিষয়ের উভয় দিক্ পরিমাণ করিয়া দেখা, একান্ত আবশ্যক । অনেকেই এই বিষয়টী একেবারে হাল্কা ভাবে দেখিয়া থাকে । হে যুবক ও যুবতী বন্ধুগণ, ঈশ্বরকে ও তোমাদের ঈশ্বর-ভীত মাতাপিতাকে তোমাদের পরামর্শের মধ্যে স্থান দিও । এই বিষয়ে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিও । CCh 336.3
আপনারা হয়তো জিজ্ঞাসা করিবেন— পুত্রের কিংবা কন্যার ইচ্ছা ও মতের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করিয়া মাতাপিতার কি তাহাদের জন্য কোন সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী মনোনীত করা কর্ত্তব্য ?” যেমন উচিত, আমিও সেই ভাবে আপনার কাছে একটী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিঃ— সন্তানের প্রতি মাতাপিতার বাৎসল্য আছে বলিয়া তাঁহাদের সুখ-সুবিধায় যেন বিঘ্ন না ঘটে, তজজন্য প্রথমে মাতাপিতার সহিত পরামর্শ না করিয়া কোন পূত্র কিংবা কন্যার কি সঙ্গী বা সঙ্গিনী মনোনীত করা উচিত ? আর তাহার মাতাপিতার পরামর্শ ও বিনতিতে কর্ণপাত না করিয়া ঐ সন্তানের কি সেচ্ছামত চলিবার জন্য গোঁ ধরা উচিত ? আমি সুনির্দ্দিষ্ট ভাবে উত্তর দেইঃ— না, সে যদি কখন বিবাহ নাও করে, তথাপি এরূপ করা উচিত নহে । কেননা পঞ্চম আজ্ঞা এরূপ পথের অনুসরণ করিতে নিষেধ করে । CCh 337.1
“তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিবেন,যেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয় ।” ইহা প্রতিজ্ঞাসহ-যুক্ত একটী আজ্ঞা, যাহারা এই আজ্ঞাটী পালন করিবে, সদাপ্রভু নিশ্চয়ই তাহাদিগেতে উক্ত প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিবেন । সন্তান-সন্ততিগণের ইচ্ছার বিপরীতে বিজ্ঞ মাতাপিতাগণ তাঁহাদের সতান-সন্ততির জন্য কখনও কোন সঙ্গী বা সঙ্গিনী মনোনীত করিবেন না । CCh 337.2
যাহারা যুবকযুবতিগণের উপযুক্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনী হইবে ; কেবল তাহাদিগকেই তাহারা যেন অন্তরের সহিত ভালবাসিতে পারে, তজজন্য তাহাদের ভালবাসা পরিচালনার দায়িত্ব মাতাপিতাগণেরই উপরে ন্যস্ত রহিয়াছে, ইহা তাঁহাদের উপলব্ধি করা কর্ত্তব্য । সন্তানসন্ততিগণ যেন বিশুদ্ধ ও সৎ হইতে এবং যাহা ভাল ও সত্য তাহার দিকে আকৃষ্ট হইতে পারে, তজজন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহে মাতাপিতাগণের নিজেদের শিক্ষা ও দৃষ্টান্ত দ্বারা শৈশব হইতে সন্তানসন্ততিগণের চরিত্র গঠন করিয়া তুলিতে হইবে, এই কর্ত্তব্য-বোধ মাতাপিতার থাকা বিহিত । সমান, সমানকে আকর্ষণ করে ; সদৃশ, সদৃশের মুল্যাবধারণ করে । জীবনে, সত্যের, পবিত্রতার ও ধর্ম্মের জন্য শৈশবকাল প্রেম রোপিত হইতে দিউন, তাহা হইলে যুবকযুবতিগণ এমন সঙ্গী লাভের চেষ্টা করিবে, যাহারা এই সকল গুণে বিভূষিত । CCh 338.1