আমরা যখন আমাদের ভ্রাতার বিরুদ্ধে কোন দুর্নামের বিষয় শুনি, তখন আমরা সেই দুর্নাম গাহিয়া বেড়াই। “হে আমার সদাপ্রভু, তোমার তাম্বুতে কে প্রবাস করিবে ? তোমার পবিত্র পর্ব্বতে কে বসতি করিবে ?” এই প্রশ্নের উত্তরে গীতরচক বলেন “যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে এবং হৃদয়ে সত্য কহে। যে পরিবাদ জিহ্বাগ্রে আনে না, মিত্রের অপকার করে না, আপনার প্রতিবাসীর দুর্নাম করে না”। গীতসংহিতা ১৫ ঃ ১-৩। CCh 442.1
যাহারা তাহার নিকটে অন্যের দোষ ব্যক্ত করে, সুযোগ পাইলেই, তাহারা তাহার দোষ অন্যের নিকট ব্যক্ত করিবে, প্রত্যেক যদি ইহা স্মরণে রাখিত, তাহা হইলে জগতের এত জল্পনা কল্পনা বা পরিবাদ সহজেই নিবারিত হইত। যে পর্য্যন্ত না বিপরীত চিন্তা করিতে বাধ্য হই, হে পর্য্যন্ত সকলেরই, বিসেসতঃ আমাদের ভ্রাতৃগণের, মঙ্গল চিন্তা করিতে চেষ্টা করা কর্ত্তব্য। দুর্নাম রটনাকারীদের কথায় সহজে কর্ণপাত করা উচিত নহে। কারণ ঈর্ষ্যা ও ভুল বুঝার ফলে কিংবা অতিরঞ্জনের বা ঘটনার সম্মন্ধের আংশিক বিবৃতির ফলে, অনেক সময়ে এইরূপ ঘটনা ঘটিয়া থাকে। ঈর্ষ্যা এবং কুসন্দেহকে আকবর স্থান দিলে, কাঁটাগাছের বীজের মত উহা আপনা আপনি চতুর্দ্দিকে ছড়াইয়া পরিবে। কোন ভ্রাতা বিপথগামী হইলে, তাহার প্রতি যে আপনার প্রকৃত অনুরাগ আছে, তখনই তাহা দেখাইবার সময়। তাহার মুক্তির জন্য খ্রীষ্ট অনন্ত মূল্য দিয়াছেন, ইহা সরণ করিয়া সদয়-ভাবে তাহার নিকটে যাউন ও তাহার সহিত এবং তাহার জন্য প্রার্থনা করুন। এইরূপে আপনি একটী আত্মাকে মৃত্যু হইতে রক্ষা করিতে এবং বহু পাপ আচ্ছাদিত করিতে পারেন। CCh 442.2
একটী কটাক্ষ, একটী বাক্য, এমন কি একটী স্বরকম্পনের দ্বারা মিথ্যার প্রশ্রয় দেওয়া যাইতে পারে, আর ইহা দ্বারা হৃদয়ে এমন শেল বিদ্ধ হইতে পারে, যাহার ক্ষত একেবারে অপ্রীতকার্য্য ইয়া পরে। এইরূপে একটীমাত্র সন্দেহ বা একটী মাত্র দুর্নাম এমন একজনের উপরে আরোপ করা যাইতে পারে, যাহা দ্বারা ঈশ্বর এক মহৎ কার্য্য সাধন করিতেন; কিন্তু ঐ দুর্নামের ফলে তাহার প্রভাবে একেবারে ব্যর্থ এবং তাহার কার্য্যকারিতা একেবারে নষ্ট হইয়া যায়। কোন কোন জাতীয় জন্তর মধ্যে দেখা যায়যে, তাঁহাদের মধ্যে কোন একটী যদি আহত ও দুর্ব্বল হইয়া পরে, তবে তৎক্ষনাৎ তাহার দিকে তাহার সঙ্গিগণকে লেলাইয়া দিয়া তাহাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয়। যাহারা খ্রীষ্টের নামধারী, সেই সকল নরনারীর মধ্যেও ঠিক ঐ একই প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ দেখিতে পাওয়া যায়। তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা যাহারা অল্প দোষী, তাহাদিগকে পাথর মারিবার নিমিত্ত তাহারা ফরীশীদিগের মত উদ্যোগ দেখাইয়া থাকে। নিজের দোষ-ত্রুটী ঢাকিবার বা সে দিক হইতে লোকের দৃষ্টি ফিরাইবার জন্য, অথবা ঈশ্বরের ও মণ্ডলীর পক্ষে মহা উদ্যোগ দেখাইয়া বাহাবা লইবার জন্য কেহ কেহ অন্যের দোষত্রুটী ও অকৃতকার্য্যতার অবতারনা করিয়া থাকে।25T 58, 59; CCh 443.1
খ্রীষ্টের দাসগণের উদ্দেশ্য ও কার্য্যাদি সম্বন্ধে সমালোচনা করিয়া যে অমূল্য সময় ব্যয় করা হয় হইলে আরও ভাল হইত। যাহাদের দোষ ধরা হয়, তাহাদের সম্বন্ধে সত্য ঘটনা কী, যাহারা দোষ ধরে, তাহারা যদি তাহা সঠিক জানিত, তাহা হইলে কুৎসা রটনাকারিগণ তাহাদের সম্বন্ধে প্রায়ই একেবারে অন্য ধারণা পোষণ করিত। অন্যের বিষয় সমালোচনা না করিয়া এবং অন্যকে দোষী না করিয়া প্রত্যেকেই সদি এই বলিত — “আমার নিজের পরিত্রাণ আমার নিজেরই সাধন করিতে হইবে” — তাহা হইলে ইহা কতই না উত্তম হইত। যিনি আমার আত্মার মুক্তি চাহেন, আমি যদি সেই খ্রীষ্টের সহিত আমার যোগাযোগ রক্ষা করি, তাহা হইলে অধ্যবসায় সহকারে নিজের প্রতি আমার সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে। আমার জীবন হইতে সর্ব্বপ্রকার মন্দ বিসজর্জন দিতে হইবে। খ্রীষ্টে আমার নুতন-সৃষ্ট হইতে হইবে। প্রত্যেক দোষত্রুটীর উপরে আমার বিজয়ী হইতে হইবে। ইহা করিয়া, পরে যাহারা মন্দের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতেছে তাহাদিগকে দুর্ব্বল না করিয়া উৎসাহজনক বাক্য দ্বারা আমি তাহাদিগকে সবল করিতে পারি।38T 83, 84; CCh 443.2