Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ২ - মানব সন্তান ও দিয়াবলের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা

    “আর আমি তােমাতে ও নারীতে এবং তােমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তােমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করবে।” আদিপুস্তক ৩:১৫। মানব জাতির পাপে পতনের পর ঐশবাণী উচচারিত হল শয়তানের বিরুদ্ধে, এটা একটি ভবিষ্যদ্বাণীও বটে, যা শেষকাল পর্যন্ত সর্বযুগকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পৃথিবীতে বসবাস করবে এমন প্রত্যেক জাতির লােকদের মহা সংঘর্ষে লিপ্ত রাখবে প্রদান করে।GrHBen 27.1

    সদাপ্রভু ঈশ্বর বলেন; “আমি...পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব।” এই শত্রুতা স্বাভাবিক বিষয় নয়। মানুষ যখন ঐশ ব্যবস্থা লঙ্ঘন করল তখন তাঁর স্বভাবে মন্দতা স্থান করে নিল এবং দিয়াবলের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য না হয়ে বরং সামঞ্জস্যের রূপ পেল । বস্তুত পাপী মানব এবং পাপের প্রবর্তকের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে কোন শত্রুতা বিরাজ করল না। উভয়ে ভ্রষ্টতার মাধ্যমে অসৎ হয়ে পড়ল । শয়তানের শান্তি নেই, নিজ দৃষ্টান্ত আমাদের অনুসরণে প্রবৃত্ত না করতে পারা পর্যন্ত এবং তাদের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় না করা পর্যন্ত তাঁর যে স্বস্তি নেই। এ কারণেই পতিত দূতেরা ও দুষ্ট লােকেরা অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বে ঐক্যবদ্ধ । স্বর্গের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শয়তান ও মানুষ জাতি যে সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছে তাঁর জন্য ঈশ্বর কি বিশেষ করে অন্তরায় ছিলেন না; আর শয়তানের বিরুদ্ধে শত্রুতা পােষণ না করে বরং সমগ্র মানব জাতি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সঙ্গবদ্ধ হল । GrHBen 27.2

    শয়তান মানুষ জাতিকে প্ররােচিত করেছিল পাপ করতে, সে দূতগণকে প্রণােদিত করেছিল বিদ্রোহ করতে, যেন স্বর্গের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সে তাদের সহযােগিতা নিশ্চিত করতে পারে। তাঁর নিজের ও পতিত দূতদের মধ্যে খ্রীষ্টের প্রতি তাদের ঘৃণার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই, যদিও তাদের অন্য সব বিষয়ে মতানৈক্য আছে। তবে নিখিল বিশ্বের অধিপতির কর্তৃত্বের বিরােধিতায় তারা দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু শয়তান যখন এই ঘােষণা শুনেছিল যে, তাঁর ও নারীর মধ্যে এবং তাঁর বংশধরদের ও নারীর বংশধরদের মধ্যে শত্রুতা বিরাজ করবে, তখন সে বুঝতে পেরেছিল তার। পক্ষে মানব স্বভাব বিকৃত করার প্রচেষ্টা বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং যে কোন উপায়ে তাঁর (শয়তানের) প্রভাবকে প্রতিহত করতে মানুষকে শক্তি প্রদান করা হবে ।GrHBen 27.3

    মনুষ্য জাতির বিরুদ্ধে শয়তানের শত্রুতা প্রজ্জ্বলিত হল, কারণ খ্রীষ্টের মাধ্যমে মানব জাতি ঈশ্বরের প্রেমের ও অনুগ্রহের পাত্র হয়েছে । মানব জাতির ঐশ্বরিক পরিত্রাণ পরিকল্পনা ব্যর্থ করা তাঁর অভিপ্রায়, সে ঈশ্বরের হস্তের কর্মকে বিকৃত ও কলুষিত করে তাঁর ওপর কলঙ্ক লেপন করতে চায়, সে স্বর্গে দুঃখ, দুর্দশা ঘটাতে চায় এবং পৃথিবীতে শোেক, তাপ। ও বিনাশে পরিপূর্ণ করতে চায়। আর এই সব মন্দতার পেছনে কারণ হিসেবে সে ঈশ্বর কর্তৃক মানব জাতি সৃষ্টি করাকেই দায়ী করে ।GrHBen 28.1

    মানবের অন্তরে খ্রীষ্টের রােপিত অনুগ্রহই শয়তানের বিরুদ্ধে ঘৃণার জন্ম দেয়। এই মন পরিবর্তনকারী দয়া ও নবীনীকরণ শক্তি ছাড়া মানুষ শয়তানের বন্দীত্বে একজন দাস হয়ে সর্বদা তাঁর আদেশ পালনে প্রস্তুত থাকত । কিন্তু এই নতুন নীতিমালাটি সেখানে শত্রুতার জন্ম দিল, যেখানে এ পর্যন্ত অন্তরে শান্তি বিরাজ করছিল । খ্রীষ্ট যে শক্তি মনুষ্যকে প্রদান করেন তা উৎপীড়নকারী ও শােষককে প্রতিহত করতে সক্ষম। যে কেউ পাপকে অন্তরে গচ্ছিত না রেখে বরং ঘৃণা বিদ্বেষ পূর্বক তা পরিত্যাগ করে যে কেউ, তা প্রতিহত করে এবং নিজের আবেগ আসক্তির ওপর বিজয়ী হয় যা তাঁর নিজের ভেতরকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে সম্পূর্ণ স্বর্গীয় নীতিমালার প্রয়ােগ প্রদর্শন করে ।GrHBen 28.2

    খ্রীষ্টের নৈতিকতা এবং শয়তানের নৈতিকতার মধ্যে যে সক্রিয় বিরােধীতা বিদ্যমান তা সর্বাধিক ভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল যীশুর প্রতি পৃথিবীর অভ্যর্থনায়। কারণ এমনটি ছিল না যে তিনি পার্থিব ধন-সম্পদ, জাকজমক, অথবা মহিমা ছাড়া এসে ছিলেন যার কারণে যিহুদীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত হয়েছিল। তারা বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, তাঁর কাছে গচ্ছিত যে ক্ষমতা আছে তাতে যে কোন সময়ে অনায়াসে এই বাহ্যিক সুবিধাগুলাে পূরণ করা সম্ভব। তবে খ্রীষ্টের পবিত্র ও ধৰ্ম্মির্কতাই তাঁর প্রতি অধার্মিকদের ঘৃণার কারণ। আর এই দাম্ভিক ও ভােগবিলাসী লােকদের জন্য খ্রীষ্টের আত্মত্যাগী জীবন ও নিস্পাপ উৎসর্গ ছিল একটি চিরস্থায়ী ভৎসনা । এটাই ঈশ-পুত্রের বিরুদ্ধে শত্রুতা ডেকে আনে । শয়তান ও পতিত দূতগণ মন্দ লােকদের সঙ্গে মিলিত হল । সত্যের বিজয়ী বীরপুরুষের বিরুদ্ধে ভ্রষ্টতার যাবতীয় শক্তি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল। GrHBen 28.3

    খ্রীষ্টের অনুগামীদের বিরুদ্ধে একই শত্রুতা প্রদর্শিত হচ্ছে, যা তাদের গুরুর ওপর প্রদর্শিত হয়েছিল । পাপের বীভৎস প্রকৃতি এবং যেভাবে স্বর্গীয় শক্তি প্রলােভনকে প্রতিহও করে তা যে-কেউই দেখুক না কেন শয়তান ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড ঘৃণার উদ্বেক হবেই। যতদিন পাপ ও পাপের উপস্থিতি থাকবে, ততদিন সত্যের যথার্থ নীতিমালার ওপর ঘৃণা ভৎসনা ও যারা তাঁর সমর্থন করে তাদের ওপর অত্যাচার আসবে । খ্রীষ্টের অনুগামীরা ও শয়তানের অনুচরেরা পরস্পর শান্তিতে থাকতে পারে না । ক্রুশের ওপর অসন্তোষের চির অবসান হয়নি । “যত লােক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে ।” ২ তীমথিয় ৩:১২।GrHBen 28.4

    শয়তান তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও তাঁর রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সেও তাঁর প্রতিনিধিরা অবিরত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । ফলে, তারা খ্রীষ্টের অনুগামীদের প্রতারিত করতে চায় এবং তাদের আনুগত্যে থাকতে প্রলুব্ধ করে । তাদের নেতার ন্যায়, তারা শাস্ত্রের বিকৃত ও ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং মূল উদ্দেশ্য সাধনে বিরত রাখে । শয়তান যেমন ঈশ্বরের ওপর নিন্দা করার সুযােগ করে নিয়েছে, তদ্রুপ তাঁর প্রতিনিধিরাও ঈশ্বরের লােকদের ওপর অপবাদ দিতে সচেষ্ট। যে মানসিকতা খ্রীষ্টকে মৃত্যুমুখে পতিত করেছে, সেই একই মানসিকতা দুষ্টদেরকে পরিচালিত করছে খ্রীষ্টের অনুগামীদের ধ্বংস ডেকে আনতে। এসবের পূর্বাভাস প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীতে করা হয়েছে: “আর আমি তােমাতে ও নারীতে এবং তােমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব।” আর এই শত্রুতা অবিরত চলতে থাকবে অন্তিমকাল পর্যন্ত । GrHBen 29.1

    এই সংগ্রামে শয়তান তাঁর যাবতীয় প্রভাব একত্র করে তাঁর সমস্ত শক্তি প্রয়ােগ করবে। তবে কেন সে লক্ষণীয় বড় কোন প্রতিরােধের সম্মুখীন হয় না? কেন খ্রীষ্ট সেনারা এত যুমন্ত ও উদাসীন? কারণ খ্রীষ্টের সঙ্গে তাদের অতি সামান্য বাস্তব যােগাযােগ রয়ে.তু; কারণ তারা তাঁর আত্মাতে নিতান্তই দরিদ্র। পাপ তাদের প্রভুর কাছে যেমন ঘৃণ্য ও বিভৎস তাদের কাছে তেনটি নয়। খ্রীষ্টের মত তারা দৃঢ় মনােবল ও বদ্ধপরিকর হয়ে তাঁর প্রতিরােধ করে না। তারা পাপের ব্যাপকতা ও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া বুঝে না, আর তাদেরকে অন্ধকারের অধিপতির চরিত্র ও ক্ষমতার প্রতি অন্ধ করে রাখা হয়েছে। খ্রীষ্ট ও তাঁর মণ্ডলীর বিরুদ্ধে শয়তানের ক্ষমতা ও বিদ্বেষ এবং তাঁর সংগ্রামের বিশাল ব্যাপকতা সম্বন্ধে মহা অ৩৫তার কারণে হেতু তাঁর ও তাঁর কাজের বিরুদ্ধে নগণ্য শত্রুতা প্রদর্শিত হই। অগণিত জনতা এখানে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হয়। তারা জানে না যে, তাদের শত্রু একজন মহা। সেনাপতি, যে দুষ্ট দূতগণের বিচারবুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সু-পরিকল্পিত পরিকল্পনায় ও চাতুর্যপূর্ণ গতিবিধির মাধ্যমে খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত; যেন মানবের পরিত্রাণ নস্যাৎ করতে পারে । নামধারী খ্ৰীষ্টিয়ানদের এবং এমন কি সুসমাচার প্রচারকদেরও ধর্মপ্রচার মঞ্চে হয়তাে প্রসঙ্গক্রমে শয়তানকে ভয়ানক হিসেবে উল্লেখ করতে শােনা যায়। তারা তাঁর অবিরত কর্মকাণ্ড ও সফলতার প্রমাণ উপেক্ষা করে তারা তাঁর চাতুর্যের ও সূক্ষ্মদর্শিতার অনেক সতর্কবাণী অবহেলা করে; মনে হয় তারা তাঁর অস্তিত্বকেই অগ্রাহ্য করে ।GrHBen 29.2

    যদিও তাঁর কৌশল সম্বন্ধে লােকেরা অজ্ঞ তবে এই জাগ্রত সদাসতর্ক প্রতিপক্ষ তাদের পদচিহ্নের পর্যবেক্ষণে সতত আনাগােনায় রত। তাঁর অনধিকার প্রবেশ গৃহস্থালির প্রতিটি ক্ষেত্রে, আমাদের নগর জীবনের প্রতিটি রাজপথে, প্রতিটি মণ্ডলীতে, প্রতিটি জাতীয় মনুষ্য সভায়, প্রতিটি বিচার সভায়, জট পাকায়, প্রতারিত করে, প্রলুব্ধ করে, শিশু, নারী, পুরুষের মনে ও দেহে সর্বক্ষেত্রে ধ্বংস সাধন করে, পরিবারে অশান্তি নিয়ে আসে বা পরিবারে ভাঙ্গন ধরায়, সমকক্ষ হতে প্রবণতা যােগায়, বিদ্বেষ, বিদ্রোহ ও হত্যার দানা বাধে। আর খ্রীষ্টান সমাজ মনে করে যে এসব কিছুর জন্য ঈশ্বর তাদের নিয়ােগ করেছেন এবং তারা অবশ্যই বিরাজিত থাকবে । GrHBen 29.3

    যা কিছু ঈশ্বরের লােকদের সমস্ত পৃথিবী থেকে আলাদা করে রাখ। সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে ভেঙ্গে তাদের জয় করতে শয়তান অবিরত চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রাচীন কালে ইস্রায়েল জাতি পাপে প্রলুব্ধ হয়েছিল বিধদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সম্পর্ক গড়তে গিয়ে। একইভাবে বর্তমান ইস্রায়েল জাতি বিপথগামী হচ্ছে । “তাহালের মধ্যে এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি যে খ্রীষ্ট তাহার গৌরবের সুসমাচার দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয় ।” ২ করিন্থীয় ৪:৪। আর যারা খ্রীষ্টের নিশ্চিত অনুগামী নয় তারা শয়তানের অনুচর। অননুতপ্ত হয়ে পাপের প্রতি প্রীতি বিদ্যমান এবং তা পােষণ করা ও ক্ষমার চোখে দেখার প্রবণতা রয়েছে । নতুন হৃদয়ে পাপের প্রতি ঘৃণা এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ করার দৃঢ় সংকল্প রয়েছে। খ্রীষ্টানরা যখন অধার্মিকতা অবিশ্বাসীদের সংসর্গ বেছে নেয় তখন তারা নিজেদের প্রলােভনে উন্মোচিত করে। শয়তান নিজেকে তাদের দৃষ্টির আড়ালে রাখে এবং সতর্কতার সঙ্গে গােপনভাবে চোখের ওপর তাঁর প্রতারণাপূর্ণ আচরণ টেনে নেয়। তারা দেখতে পায় না যে বৃহৎ সৈন্যদল তাদের অনিষ্ট কল্পে নিয়ােজিত; আর তারা অবিরত চরিত্রে, বাক্যে ও কর্মে জগতের প্রতি সদৃশ্যপূর্ণ হওয়াতে তাদের অন্ধত্ব আরও অধিকতর বৃদ্ধি পেতে থাকে। GrHBen 30.1

    জাগতিক রীতিনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মণ্ডলী জগতের প্রতি দীক্ষিত হয়, তবে এতে জগত খ্রীষ্টে দীক্ষিত হয় না। পাপের সঙ্গে অপরিহার্যভাবে ঘনিষ্ঠতার কারণে এটি পাপের প্রতি লক্ষণীয় ভাবে কম প্রতিরােধী হয়। যারা শয়তানের অনুগতলের সঙ্গে মেলামেশা করা যেহে নেয়, তারা অচিরেই তাদের নেতাকে ভয় করতে বিরত হবে । দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা যখন বিচারে আনীত হই, রাজ দরবারে দানিয়েলের মত, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করবেন; কিন্তু আমরা যদি নিজেদেরকে যদি প্রলােভনের অধীন করি, আজ নয়তো কাল আমাদের পতন অনিবার্য । GrHBen 30.2

    প্রলােভনকারী সর্বাধিক সফলতা সহকারে তাঁর কাজে এগিয়ে যাচ্ছে, যারা তাঁর নিয়ন্ত্রণে আছে তারা ব্যাপারটি কোন মতেই জানতে পারে না । তাঁর প্রতিভা ও বিদ্যা প্রশংসা ও সম্মানের যােগ্য, মনে হয় যেন এই সমস্ত গুণাগুণ ঈশ্বর ভয়ের অনুপস্থিতির জন্য তা প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে অথবা মানুষকে যেন তাঁর অনুগ্রহ লাভের উপযােগী করে তােলে। তাদের প্রতিভা ও সংস্কৃতি লব্ধ বিদ্যা ঈশ্বরেরই দান; কিন্তু তা যখন ঈশ্বর ভক্তির স্থান পূরণ করতে চায়, তখন তা মনকে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আনার পরিবর্তে, বরং তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, তখন তা একটি অভিশাপ ও ফাদে পরিণত হয়। অনেকের মধ্যে এইরূপ প্রকাশ পায় যে, সৌজন্য ও শিষ্টাচারের মত যা কিছু দেখা যায় কোন কোন ক্ষেত্রে তা শুধু খ্রীষ্টেতেই থাকতে পারে । এর চেয়ে কখনও এত মারাত্মক ভুল আর পরিলক্ষিত হয়নি। এই সব বৈশিষ্ট্যগুলাে খ্রীষ্টানদের চরিত্রে শােভা বৃদ্ধি করবে, তারা প্রকৃত ধর্মের অনুকূলে তা প্রভাব বিস্তার করবে; তবে তাদের নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করতে হবে, নতুবা তা মন্দের শক্তিরূপে দেখা দেবে। অনেক মার্জিত রুচি, বুদ্ধিসম্পন্ন ও মনােহর আচার সম্পন্ন ব্যক্তি, যারা সহজে বশ্যতাস্বীকার করবে না সাধারণ অনৈতিক কাজে, তবে তারা শয়তানের বশীভূত সুরুচিসম্পন্ন হাতিয়ার। ধূর্তবাজ ও ভ্রান্তিজনক তাঁর চরিত্রের প্রভাব ও, সে যে আদর্শ প্রদর্শন করে তা খ্রীষ্টের মহৎ উদ্দেশ্যের পক্ষে মূর্খ ও অওর ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপজ্জনক।GrHBen 30.3

    শলােমন আন্তরিকতার সাথে যে ঈশ্বরের ভজনা করেছিলেন এবং তাঁর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে যে জ্ঞান ও বিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, তা। পৃথিবীর একটি বিস্ময়ের ও শ্রদ্ধার দাবিদার । কিন্তু তিনি যখন তাঁর শক্তির উৎস থেকে পিছু পা হলেন নিজের শক্তির ওপর আস্থা স্থাপন করলেন তখন তিনি প্রলােভনের ফাঁদে ধরা পড়লেন। তখন রাজন্যবর্গের মধ্যে জ্ঞানী শ্রেষ্ঠ জ্ঞানের ওপর অর্পিত অদ্ভুত ক্ষমতা সব তাকে প্রতিপক্ষ আত্মার এক অধিকতর প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলল।GrHBen 31.1

    শয়তান অবিরত তাদের মনকে অন্ধকারে রাখতে সদা সচেষ্ট তবে এ সময় খ্রীষ্টানদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, “কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎ পতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” ইফিষীয় ৬৪১২। বহু শতাব্দী পর শতাব্দী। থেকে শুরু করে বর্তমান আমাদের সময় পর্যন্ত স্বর্গীয় সতর্কবাণী আমাদের কানে ধ্বনিত হচ্ছে, “তােমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তােমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে ।” ১ পিতর ৫৪৮ । “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।” ইফিষীয় ৬:১১ ।GrHBen 31.2

    আদমের সময় থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত আমাদের চরম শত্রু তাঁর ক্ষমতা প্রয়ােগ করে আসছে। অত্যাচার, তাড়না ও ধ্বংস করতে এখন সে প্রস্তুতি নিচ্ছে মণ্ডলীর বিপক্ষে তাঁর সর্বশেষ প্রচারণ করতে । যারা যীশুকে অনুসরণ করতে আগ্রহী তাদের প্রত্যেককেই শয়তানের এই নিষ্ঠুর শত্রুতার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হবে। একজন খ্রীষ্টান যত বেশী ঐশ্বরিক আদর্শ লাভ করতে সচেষ্ট হবে, নিজেকে সে তত বেশী শয়তানের আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে হিসেবে পড়ে তুলবে । যারা সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের কাজে নিবৃত্ত থাকবে, দুষ্টের চাতুরী সকল উন্মোচন করতে এবং খ্রীষ্টকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকবে, তারা পৌলের সাক্ষ্যের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে, সেখানে সে অন্তরের নির্মলতায়, অশ্রুসিক্ত নয়নে ও প্রলােভনের মধ্যে থেকেও প্রভুর দাস্যকর্ম করার কথা বলবে । GrHBen 31.3

    খ্রীষ্টকে শয়তান তাঁর প্রচণ্ডতম ও চরম চাতুর্যতাপূর্ণ প্রলােভন সকলের মাধ্যমে আক্রমণ করেছিল, কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে প্রতিহত হয়েছে। তিনি আমাদের পক্ষে যে, সব যুদ্ধে লড়াই করেছেন, সে সব সাফল্য আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমরাও বিজয়ী হতে সক্ষম। যারা খ্রীষ্টের শক্তির অন্ত্রণ করে তিনি তাদের তা অকাতরে দিয়ে থাকেন। কোন লােকই তাঁর নিজের সম্মতিবিহীন শয়তান দ্বারা পরাভূত হতে পারে না। তবে শয়তানের কোন শক্তি নেই, ইচ্ছা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কিংবা মনকে পাপ করতে বাধ্য করতে। সে কষ্ট প্রদান করতে পারে, তবে কলুষিত করতে পারে না। সে যন্ত্রণা দিতে সক্ষম, তবে অপবিত্র করতে অক্ষম। খ্রীষ্টের বিজয়, তাঁর অনুগামীদের সাহসিকতার সহিত পাপ ও শয়তানের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা সহিত সংগ্রাম করতে অনুপ্রাণিত করে।GrHBen 32.1

    *****

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents