Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    ১০ - বিবেকের স্বাধীনতা শঙ্কিত

    প্রটেস্ট্যান্টগণ রােমান ক্যাথলিক ধর্মনীতিকে পূর্বের বহরগুলাে। অপেক্ষা বর্তমানে অধিক সমাদরের দৃষ্টিতে দেখে। ঐ সমস্ত দেশগুলােতে, যেখানে ক্যাথলিক মতবাদের প্রাধান্য নেই, আর পােপের অনুসারীরা একটি আপােসমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে, যাতে প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে, সেখানে ধর্মমতবাদ সমূহের ব্যাপারে একটি বর্ধিষ্ণু পার্থক্য রয়েছে যা পূর্বের মণ্ডলীগুলােকে পােপীয় পুরােহিততন্ত্র থেকে আলাদা কার; মতবাদটি এই বলে আস্থা অর্জন করছে যে, সর্বোপরি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলাের ব্যাপারে আমরা অতটা ব্যাপক ভাবে পার্থক্য করি না যেমনটা ধরে নেয়া হয়েছে, আর সেই কারণে আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য এক সময় ছিল যখন প্রটেষ্ট্যাণ্টান বিবেকের স্বাধীনতার ওপরে একটি উচ্চ মূল্য দিয়েছিলেন, যা মহামূল্যে ক্রয় করা হয়েছিল। তারা তাদের সন্তান সন্ততিদেরকে ঘৃণাভরে রােমান ক্যাথলিক। সম্প্রদায়কে পরিহার করতে শিক্ষা দিয়েছিল, এবং শিক্ষা দিয়েছিল যে, রােমান ক্যাথলিকদের সাথে ঐক্য রক্ষা করার চেষ্টা করা মানে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ততা প্রদর্শন করা। কিন্তু এখন যে অনুভূতি প্রকাশ করা হয় তা কতই না ব্যাপক পার্থক্য!GrHBen 125.1

    লােপত্বের সমর্থকগণ ঘােষণা করে যে, মণ্ডলী কলঙ্কিত হয়েছে, এবং প্রটেষ্ট্যান্ট বিশ্ব উক্তিটি গ্রহণ করতে ঝুঁকে পড়েছে। অনেকে জোর দিয়ে বলে যে, অলকার মণ্ডলীকে নিদারূণ ঘৃণা এবং হাস্যকর হিসেবে বিচার করা অন্যায় যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যাপী তাঁর রাজত্ব কালকে মূর্খতা এবং অন্ধকারের রাজত্বকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা তাঁর ভয়ানক নিষ্ঠুরতাকে সময়ের বর্বরতার ফল হিসেবে ক্ষমার চোখে দেখে এবং এই বলে আবেদন জানায় যে, বর্তমান আধুনিক সভ্যতার প্রভাব তাঁর ভাবপ্রবণতাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে ।GrHBen 125.2

    এই সব লােকেরা কি অভ্রান্তিসত্ত্বার দাবীগুলাের কথা ভুলে গেছেন যা আটশত বহর পর্যন্ত এই উর্ধত ক্ষমতা কর্তৃক প্রয়ােগ করা হয়েছিল? পদ হারানাের পর থেকে এযাবৎ, এই দাবীটি উনবিংশ শতাব্দীতে পূর্বাপেক্ষা মহা ইতিবাচক রূপে সুদৃঢ় হয়েছিল। যেহেতু রােম ঘােষণা করে যে, মণ্ডলী কখনাে ভুল করে না; করবেও না, শাস্ত্র অনুসারে, কখনাে করে নি (Gohon L, VAn Mosheim, Institute of Ecclestical History, book 3, century II, part 2, chapter 3 section 9, note 17) . তাহলে কিরূপে সে নীতি সকল অস্বীকার করতে পারে যা অতীত যুগে তাঁর গতিপথ পরিচালনা করেছিল?GrHBen 125.3

    পােপীয় মণ্ডলী কখনাে অভ্রান্তিসত্ত্বার দাবী ছেড়ে দেবে না। যারা তাঁর ধর্মমতবাদসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের প্রতি অতীতে সে যে সকল নির্যাতন করেছে, সেই নির্যাতনের প্রতি সে তাঁর অধিকার ধারণ করে; আর সেই একই আচরণ সে কি পুনরাবৃত্তি করবে না, সেই সুযােগ কি তাকে উপহার স্বরূপ দেওয়া উচিত? ধর্মীয় শাসন মুক্ত সরকার কর্তৃক যে বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছিল তা এখন সরিয়ে ফেল হােক এবং রােমান ক্যাথলিককে তাঁর পূর্ব ক্ষমতায় বসানাে হােক, আর সেখানে প্রজাপীড়ন এবং তাড়নায় একটি পূর্ণজাগরণ দ্রুত অগ্রসর হবে ।GrHBen 126.1

    জনৈক সুপরিচিত লেখক বিবেকের স্বাধীনতা সম্পর্কে পােপীয় পুরােহিতদের মনােভাব, এবং এর ভয়ানক বিপদ সম্পর্কে এরূপ লিখেছেন যা বিশেষ তাঁর নিজের সাফল্য সম্পর্কে যুক্ত রাষ্টকেই হুমকি দেয়ঃ GrHBen 126.2

    “অনেকে রয়েছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রে রােমান ক্যাথলিক ধর্মীয় মতবাদের গােড়ামী অথবা খামখেয়ালির প্রতি ভীত হবার প্রবণতা এবং ঝোঁক রয়েছে । ঐরূপ ব্যক্তিরা রােমীয় মতবাদের চরিত্রে এবং মনােভাবের মধ্যে কিছুই দেখে না যা আমাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলাের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বা এর বৃদ্ধিতে কোন অশুভসূচক কিছুই দেখতে পায় না। তা হলে আসুন প্রথমে আমরা ক্যাথলিক মণ্ডলীর সঙ্গে আমাদের সরকারের কিছু মৌলিক নীতিমালা। তুলনা করি ।GrHBen 126.3

    যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিবেকের স্বাধীনতার প্রতি নিশ্চয়তা প্রদান করে। কিছুই অধিক প্রিয় বা অধিক মৌলিক নয় । পােপ পিয়ুস নবম, (১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই আগস্টে তাঁর জ্ঞানকোষ বিষয়ক তথ্যপূর্ণ চিঠিতে (Encyclical letter) বলেছিলেন: “বিবেকের স্বাধীনতা রক্ষার্থে অযৌক্তিক এবং ভ্রমাত্মক ধর্মমতবাদ সমূহ হল সর্বাধিক বিনাশক ভুল- এটি একটি অতীত, অন্য সমস্তের অতীত, এটি একটি রাষ্ট্রের মধ্যে অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। যারা বিবেকের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় উপাসনার ব্যাপারে অধিকার দাবী করে এ ব্যাপারে, ঐ একই পােপ ১৮৬৪ সালের ৮ ডিসেম্বর তাঁর জ্ঞানকোষ বিষয়ক পত্রে যাজকীয় সম্প্রদায়কে অভিসম্পাত করেন, তবে তা এমন ভাবে যাতে এই ধারণা বজায় থাকে যে মণ্ডলী হয়ত জোরারােপ করবে না ।’GrHBen 126.4

    “যুক্তরাষ্ট্রে রােমের সুনির্দিষ্ট কণ্ঠস্বর অন্তঃকরণের একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না। সে যেখানে অসহায় সেখানে সে সহিষ্ণু। বিশপ ও কন্নর বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা কেবল স্থায়ী হয়েছিল যতক্ষণ পর্যন্ত বিরােধী দল ক্যাথলিক বিশ্বের প্রতি সংকট প্রবেশ না করেছিল । ...সেন্ট লুইস এর আর্চ বিশপ একবার বলেছিলেন: ধর্মোদ্রোহিতা এবং অবিশ্বাস মারাত্মক অপরাধ; যেমন, উদাহরণ স্বরূপ ইতালি ও স্পেন যেখানে সব। লােক ক্যাথলিক, এবং যেখানে ক্যাথলিক ধর্ম দেশের আইনের একটি অপরিহার্য অংশ, তারা অন্যান্য অপরাধের মত সাজা প্রাপ্ত হয়েছে।”...GrHBen 127.1

    প্রত্যেক কার্ডিনাল, আর্চ বিশপ, এবং ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিশপরা পােপের আনুগত্য স্বীকারের একটি শপথ গ্রহণ করে, যার মধ্যে এই শব্দগুলাে থাকে: প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধেবাদী, ধর্মভেদ করা, এবং আমাদের প্রভুর (পােপের) প্রতি অথবা তাঁর পূর্বোক্ত উত্তরাধীকারীগণের প্রতি বিরুদ্ধাচরণকারীদের প্রতি, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব তাদের অত্যাচার করতে এবং বিরােধীতা করতে।” Josiah Strong, Our country, ch, 5, pars, 2-4.GrHBen 127.2

    একথা সত্য যে রােমীয় মণ্ডলীতে সভ্যদের মধ্যেও প্রকৃত খ্রীষ্টান রয়েছে। ঐ মণ্ডলীতে সহস্র সহস্র লােক রয়েছে যারা তাদের প্রাপ্ত সর্বোত্তম জ্যোতি অনুসারে ঈশ্বরের সেবা করছেন। তাঁর বাকের মধ্যে প্রবেশ করবার অনুমতি তাদের নেই, আর তাই তারা সত্য উপলব্ধি করতে পারে না । (১৮৮৮এবং ১৯১১ সালে প্রকাশ করা হয়েছিল । Appendix দেখুন ।)। তারা কখনাে একটি আন্তরিক সেবা কার্য এবং প্রথাগত সেবার রীতি বা অনুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করেন নি । ঈশ্বর এই আত্মাগণের প্রতি করুন এবং কোমল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন, তারা এমন বিশ্বাসের শিক্ষায় শিক্ষিত যা ভ্রান্তিজনক এবং অতৃপ্তিদায়ক । তিনি তাদের চারদিকে পরিবেষ্টিত গাঢ় অন্ধকারের বেষ্টনী ভেদ করে আলাের রশ্মি প্রেরণ করবেন। তিনি তাদের কাছে যীশুর সত্য প্রকাশ করবেন আর বহু সংখ্যক লােক তাঁর প্রজাগণের সঙ্গে অবস্থান নেবে ।GrHBen 127.3

    কিন্তু একটি পদ্ধতিরূপে ৰােমীয় ধর্মীয় মতবাদ, খ্রীষ্টের সুসমাচারের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে না, এখন না এবং মণ্ডলীর ইতিহাসে কোন দিনও না। প্রটেষ্ট্যান্টগণ মণ্ডলীগুলাে মহা অন্ধকার রয়েছে, নতুবা তারা কালের লক্ষণগুলাে দেখতে পেত। রােমীয় মণ্ডলী তাঁর পরিকল্পনা এবং কার্যপরিচালনার কায়দা কৌশল নিয়ে অনেক দূরে এগিয়ে যাচ্ছে। সে তাঁর প্রভাব প্রসারিত করবার, এবং একটি হিংসা এবং দৃঢ় সংকল্পকৃত বিবাদের জন্য প্রস্তুতিকল্পে তাঁর প্রভাব এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রতিটি কৌশল প্রয়ােগ করছে, যদ্বারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাড়না পুনস্থাপন করতে পারে এবং প্রটেষ্ট্যান্টগণ যা করেছে তা বাতিল করে দিতে পারে। ক্যাথলিক মতবাদ প্রতি পার্শ্বে আস্থানা গাড়ছে। লক্ষ্য করুন প্রটেষ্ট্যাণ্ট দেশগুলােতে তাঁর মণ্ডলী এবং উপাসনালয়গুলাে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকায় তাঁর কলেজ এবং সেমিনারিগুলাের জনপ্রিয়তার প্রতি লক্ষ্য করুন, প্রটেস্ট্যান্টগণ কর্তৃক কত ব্যাপক হারে পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করছে। ইংল্যাণ্ডে অত্যধিক ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানের বৃদ্ধি এবং সচরাচর স্বপক্ষত্যাগ করে ক্যাথলিকদের মর্যাদা বৃদ্ধির দিকে চেয়ে দেখুন । এসব বিষয় সেই ব্যক্তিগণের জন্য উদ্বেগ জাগিয়ে তােলে যারা সুসমাচারের খাঁটি নীতিমালার প্রতি মূল্য প্রদান করে।GrHBen 127.4

    প্রটেস্ট্যান্টগণ গােপনে ও অনুচিতরূপে কাজ করেছে এবং রােমান ক্যাথলিকদের পৃষ্ঠপােষকতা করেছে; তারা আপােষ করেছে এবং সুবিধা দিয়েছে, যা পােপসমর্থনকারীরা নিজেরাই দেখে অবাক হয় এবং বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। লােকেরা রােমের ধর্মবেত্তাদের আসলরূপ এবং তাঁর প্রভুত্ব। গ্রেফতার হবার বিপদ দেখে চক্ষু বন্ধ করেছে। লােকদের বেসামরিক লােকদের এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার এই সবচেয়ে বড় শত্রুদের মহা বিপজ্জনক অগ্রগতি প্রতিরােধ করার জন্য লােকদের জাগ্রত হওয়া উচিত এবং সােচ্চার হওয়া উচিত।GrHBen 128.1

    বহু সংখ্যক প্রটেস্ট্যান্ট মনে করে যে ক্যাথলিক ধর্ম অনাকর্ষণীয়। এবং তা হল এর আরাধনার রীতি একটি নিস্তেজ অর্থহীন প্রথা ভিত্তিক ধর্মানুষ্ঠান। এখানেই তারা ভুল করে। যখন রােমান ক্যাথলিক ধর্মানুষ্ঠান প্রতারণার ওপরে স্থাপিত এটি সাধারণ নিকৃষ্ট মানের এবং আনাড়ি প্রতারণা নয় । রােমীয় মণ্ডলীর ধর্মানুষ্ঠান একটি অতীব আকর্ষণীয় পর্ব। এর জাকজমক প্রদর্শন এবং এর গুরুগম্ভীর মতিনীতি লােকদের বুদ্ধি যুক্তিকে ও চেতনাকে স্তব্ধ করে । চোখকে মায়ামুগ্ধ করে। সুউচ্চ গীর্জাঘরগুলাে, মনােরম শােভাযাত্রা, স্বর্ণময় বেদিসমূহ অলঙ্কারের সহিত ছােট ছােট মূর্তি, রুচিকর চিত্র বৈচিত্র, এবং নিখুঁত ও চমৎকারিত্বপূর্ণ খােদাইকার্যের সৌন্দর্য ভাল লাগার প্রতি আবেদন রাখে। কানও বন্দি হয়ে যায় । সুরের মূর্ঘনা অনতিক্রম্য মনে হয়। সুশৃঙ্খল নােট বিশিষ্ট অরগানের গম্ভীর আওয়াজ, পূর্ণস্থর সুমিষ্ট বহুলােকের কণ্ঠস্বর তাঁর উঁচু বিশাল গীর্জা ঘরের গম্বুজ এবং স্ত বিশিষ্ট গলির মধ্যে দিয়ে স্ফীত হয়ে ওঠে। যা ভয় এবং শ্রদ্ধায় মনকে মুগ্ধ করে পারে না।GrHBen 128.2

    এই বাহ্যিক জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, যা কেবলমাত্র পাপ প্রপীড়িত আত্মগণের বাসনা সমূহের প্রতি তামাশা করে, এটি অভ্যন্তরীণ ভ্রষ্টতার একটি প্রমাণ। খ্রীষ্টের ধর্মের সুপারিশ করার জন্য এরূপ আকর্ষণ আবশ্যক নয় । ক্রুশ থেকে উদ্ভাবিত আলােকে প্রকৃত খ্রীষ্ট ধর্ম পবিত্র, মনোরম, এবং এত আনন্দদায়ক যে কোন বাহ্যিক অলঙ্কার এর প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে না। এটি হল পবিত্রতার সৈন্দর্য, একটি বিনম্র শান্ত আত্মা, যা ঈশ্বর মূল্যায়ন করে থাকেন ।GrHBen 129.1

    শুদ্ধতা ও উন্নত চিন্তার জন্য জাঁকজমকপূর্ণ প্রথা আবশ্যকীয় নয় । শিল্প কলায় উচ্চ ধারণা, স্বাদের সূক্ষ্ম রুচি প্রায়ই সেই সমস্ত লােকদের অন্তরে বিরাজ করে যারা জাগতিক মনা এবং ইন্দ্রিয়পরায় । লােকদেরকে আত্মার প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলাে ভুলে থাকতে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলতে, অমর জীবনে, অসীম সাহায্যকারীর কাছ থেকে পথ ভ্রষ্ট করতে, এবং শুধু মাত্র এই পৃথিবীর জন্য বেঁচে থাকতে পরিচালিত করতে তারা প্রায়ই শয়তান কর্তৃক নিয়ােগপ্রাপ্ত হয় ।GrHBen 129.2

    একটি বাহ্যিক ধর্মীয় রীতিনীতি অনবায়নকৃত অন্তঃকরণের কাছে আকর্ষণীয় হয়। ক্যাথলিক আরাধনার ধূমধামে এবং অনুষ্ঠানের একটি মনােলােভা, সম্মােহক শক্তি আছে, যার দ্বারা অনেকে প্রতারিত হয়; এবং তারা স্বর্গের দ্বার হিসেবে রােমীয় মণ্ডলীর ওপরে দৃষ্টিপাত করে । যারা দৃঢ়ভাবে তাদের চরণ সত্যের ভিত্তির ওপরে স্থাপন করেছে, যাদের অন্ত ঃকরণ ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা নবায়িত হয়েছে, কেবল মাত্র তারাই তাঁর প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রমাণস্বরূপ । হাজার হাজার লােক যাদের খ্রীষ্টিয় পরীক্ষামূলক একটি জ্ঞান নেই, তারা শক্তিহীন ঈশ্বরত্বের অবয়ব গ্রহণ করতে পরিচালিত হবে । এরূপ একটি ধর্মই অগণিত লােক গ্রহণ করতে বাসনাGrHBen 129.3

    মণ্ডলীর ক্ষমা দানের অধিকারের দাবী রােমের সমর্থকদের পাপ কার্যে লিপ্ত হবার স্বাধীনতার অনুভূতি দান করে; এবং পাপ স্বীকারের অধ্যাদেশ, যা ব্যাতিরেকে তাঁর ক্ষমা মঞ্জুর করা হয় না, তা মন্দ কাজে অনুমতি দানের প্রবণতা বাড়ায় । যে ব্যক্তি পতিত ব্যক্তির সম্মুখে নতজানু হয়, এবং পাপ স্বীকারে গােপন চিন্তা রাশি এবং তাঁর কল্পনাসমূহ বলার জন্য তাঁর হৃদয় খুলে দেয় সে তাঁর পুরুষ সুলভ গুণাবলী অপভ্রষ্ট করে এবং তাঁর আত্মার প্রতিটি মহৎ সহজাত আবেগকে অবনমিত করে। একজন পুরােহিতের কাছে তাঁর পাপ খুলে বলা-একটি ভ্রমে পতিত হওন, পাপপূর্ণ মরণশীলতা, এবং প্রায়ই মদ এবং লাম্পট্য দ্বারা ভ্রষ্ট, এতে তাঁর চরিত্রের মান অবনমিত হয় এবং পরিণামে সে কলুষিত হয়। ঈশ্বর সম্পর্কে তাঁর চিন্তা ভ্রষ্ট পতিত মানব তুল্য হয়, কারণ পুরােহিত ঈশ্বরের একজন প্রতিনিধি হয়ে দণ্ডায়মান থাকেন। মানুষের কাছে মানুষের মর্যাদাহীন পাপ স্বীকার গােপন ঝর্ণা যা থেকে অধিকাংশ মন্দতা প্রবাহিত হয় যা পৃথিবীকে দুষিত করছে এবং অন্তিম বিনাশের জন্য উপযােগী করছে । তথাপি যে আত্মচরিতার্থ পছন্দ করে, তাঁর জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রাণ খুলে একজন সহমরণশীল মানুষের কাছে পাপ স্বীকার করা আনন্দদায়ক । পাপ পরিত্যাগ করা অপেক্ষা অপরাধের শাস্তিস্বরূপ অনুশােচনা করা মানব স্বভাবের কাছে অধিক রুচিকর; মাংসের অভিলাষসমূহ ক্রুশে দেয়া আপেক্ষা চট পরিধান এবং শরীরে কাঁটাওয়ালা লতা পাতা এবং পীড়াদায়ক শিকল শরীরে পেচিয়ে যন্ত্রণা সহ্য করা সহজ। নত হয়ে খ্রীষ্টিয় যৌয়ালী বহন করে অপেক্ষ বরং রক্ত মাংসের আত্মার ভারী যেয়ালী বহন করা তাঁর পক্ষে সহজ।GrHBen 129.4

    খ্রীষ্টের প্রথম আগমনের সময়ে রােম এবং যিহূদী মণ্ডলীর মধ্যে এক লক্ষ্যনীয় মিল রয়েছে। যিহূদীরা গােপনে ঈশ্বরের ব্যবস্থা নীতি মালা পদদলিত করত, তারা বাহ্যিক ভাবে ব্যবস্থার নীতিমালা পালনে অতীব। কঠোর নিয়মানুবর্তীতা দেখাত, তাতে অন্যায় দাবী এবং কুসংস্কার চাপিয়ে দিয়ে অজ্ঞাবহতাকে বেদনা দায়ক ও বােঝাস্বরূপ করত । যেমন যিহূদীরা মুখে বলত যে তারা ব্যবস্তুর প্রতি সমাদর প্রদর্শন করেছে, রােমের ধর্মে বিশ্বাসীরা ও ক্রশের প্রতি সমাদরের দাবি করত। তারা খ্রীষ্টের দুঃখ ভােগের প্রতীক উচ্চে তুলে ধরত, একই সময়ে যা তাঁর প্রতিনিধিত্ব করত তাকে তাঁর তাদের জীবনে অস্বীকার করত।GrHBen 130.1

    পােপের সমর্থকগণ তাদের উপাসনালয়ের ওপরে, বেদির, ওপরে এবং তাদের পােশাক আশাকের ওপরে ক্রশ স্থাপন করে। প্রতিটি স্থানে কুশের চিহ্ন দেখা যায়। প্রত্যেক স্থানে বাহ্যিক ভাবে এর প্রতি সমাদর করা হত এবং উচ্চ তুলে ধরা হত। কিন্তু খ্রীষ্টের শিক্ষাসমূহ ভারী আমার ঐতিহ্য, মিথ্যা ব্যাখ্যা, এবং দয়ালেশশূণ্য অতিরি দাবীর নিচে কর প্রাপ্ত হয়ে ছিল । সংকীর্ণচেতা ও গোড়া যিহূদীদের সম্পর্কে ত্রাণকর্তার বাণী এখনাে রােমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর প্রতি প্রযােজ্য: “তাহারা ভারী দুৰ্ব্বহ বােঝা বাধিয়া লাকদের কাঁধে চাপাইয়া দেয়, কিন্তু আপনারা অঙ্গুলি দিয়াও তাহা সরাইতে চাহে না।” মথি ২৩:৪। সচেতনতাপূর্ণ আত্মাগণকে অবিরত একজন অপমানিত ঈশ্বরের তীব্র ঘৃণা ও ভয়ানক ত্রাসের মধ্যে রাখা হয়, পক্ষান্তরে মণ্ডলীর বহু সংখ্যক খেতাবকারী লােকবৃন্দ বিলাসিতা এবং মন উদ্রেককারী আমােদের মধ্যে জীবন কাটাবেন ।GrHBen 130.2

    মূর্তি এবং সাংরক্ষিক বা স্মৃতি পূজা, সাধুজনের সাহায্য প্রার্থনা, এবং পােপকে উচ্চে তুলে ধরা এসব ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রের নিকট হতে লােকদের মন আকর্ষণ করার শয়তানের কারসাজি। কেবল যার মাধ্যমে তারা পরিত্রাণ খুঁজে পেতে পারে তাঁর কাছ থেকে তাদের মন ঘুরিয়ে নিয়ে তাদের যাতে সে ধ্বংস করতে পারে তাঁর জন্য সে প্রাণপন চেষ্টা করে। সে তাদেরকে যে কোন বিষয়ের প্রতি পরিচালিত করে যা এমন এক ব্যক্তির প্রতিভূস্বরূপ হতে পারে যিনি বলেছেনঃ “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লােক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তােমাদিগকে বিশ্রাম দিব ।” মথি ১১:২৮।GrHBen 131.1

    শয়তানের বিরামহীন প্রচেষ্টা এই যেন সে, ঈশ্বরের চরিত্র, পাপের প্রকৃতি, এবং মহা সংগ্রামে বাস্তব ঘটনার সংকটাপন্ন অবস্থা এসবের ভুল পরিচয় দিতে পারে। তাঁর কর্তৃক ঐশ্বরের ব্যবস্থার কার্যকে খাট করে দেয় মানুষকে পাপের অনুমতি দেয়। একই সময় সে ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা পােষণে ইন্ধন যােগায় যেন তারা তাঁকে ভয়ের চোখে দেখে এবং প্রেমের পরিবর্তে তাকে ঘৃণা করে। যে নিষ্ঠুরতা তাঁর নিজের চরিত্রে দৃঢ়সংলগ্ন তা সৃষ্টি কর্তার প্রতি আরােপীত; এটি ধর্মের পদ্ধতির মধ্যে বাস্তবে রূপায়িত এবং আরাধনার রীতির মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে । এ রূপ মানুষের মন অন্ধীভূত এবং শয়তান ঈশ্বরের বিরূদ্ধে সংগ্রাম করতে তাঁর প্রতিনিধি রূপে তাদের নিশ্চিত করে। ঐশ্বরিক গুণাবলির বিকৃত ধারণা দ্বারা পৌত্তলিক জাতিগণ এই বিশ্বাস করেছিল যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের জন্য নরবলি আবশ্যক, এবং ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা রুচিবিশিষ্ট করা হয়েছিলাে বিভিন্ন প্রকারের প্রতিমা পূজার অধীন ।GrHBen 131.2

    রােমান ক্যাথলিক মণ্ডলী, পৌত্তলিকতার প্রচলিত প্রথা সমূহকে এবং খ্রীষ্টধর্মকে সংযুক্ত করে, এবং পৌত্তলিকদের ন্যায় ঈশ্বরের চরিত্রের ভুল পরিচয় দিয়ে, নিষ্ঠুরতা এবং বিদ্রোহ কার্যকর করেছে। রােমের প্রাধান্যের দিনগুলােতে, তাঁর শিক্ষামালায় রাজী করানাের জন্য অত্যাচারের অনেক অস্ত্র ছিল। যারা তাঁর দাবীকে সত্য বলে স্বীকার না করে তাদের পুড়িয়ে মারার জন্য সেখানে খুঁটি ছিল। দলে দলে নির্দয়ভাবে লােক হত্যা করা হয়েছিল, যা কেবলমাত্র বিচার দিনে প্রকাশিত হবে । মণ্ডলীর যাজকবর্গ গবেষণা করেছে, তারা তাদের প্রভু শয়তানের কাছে আবদার করেছে সম্ভাব্য সর্বশ্রেষ্ঠ অত্যাচারের উপায় খুঁজে বের করতে, কিন্তু এ অত্যাচারে শিকারীর জীবন শেষ হবে না। অনেক অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ধৈর্যের শেষ সীমা পর্যন্ত শাস্তির নরক তুল্য পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল, যাবৎ না প্রকৃতি সংগ্রাম ছেড়ে দিয়েছিল, এবং যাতনা ভােগকারী যতক্ষণ না এক তৃপ্তিদায়ক মৃত্যু সম্ভাষণে মুক্তি পেয়েছে ।GrHBen 131.3

    এরূপই ছিল রােমের প্রতিপক্ষের ভাগ্য। তাঁর অনুগতদের শাসনের জন্য সে চাবুক, আমরণ ক্লেশযুক্ত ক্ষুধা, শারীরিক কৃচ্ছসাধনের অনুশাসন, মর্মপীড়াদানকারী অত্যাচার চলতাে। স্বর্গের আনুকূল্যলাভের উদ্দেশ্যে অনুতপ্ত ও প্রায়শ্চিতকারী ব্যক্তি প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করে ঈশ্বরের নিয়ম ভঙ্গ করত। তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল সেই বন্ধন ছিন্ন করতে যা তিনি মানুষের পার্থিব যাত্রাকে আশীর্বাদযুক্ত করতে এবং সুখী করতে গঠন করেছিলেন । গীর্জা প্রাঙ্গনে অযুতের সংখ্যায় উপদ্ৰত ব্যক্তিগণ সমাগত যারা তাদের সহজাত স্নেহপ্রীতি দমন করতে ঈশ্বরের অপ্রীতিকর, আপন সহমানবের প্রতি সহানুভূতির প্রতিটি চিন্তা ও অনুভূতি নিবারণ করার বৃথা প্রচেষ্টায় জীবন অতিবাহিত করেছে।GrHBen 132.1

    যদি আমরা শয়তানের দৃঢ় সংকল্পিত নিষ্ঠুরতা বুঝতে চাই, যা শত শত বছরের জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল; যারা কখনাে ঈশ্বরের সম্পর্কে শুনেনি। তাদের মধ্যে নয়, কিন্তু প্রতিটি হৃদয়ে এবং ব্যাপক খ্রীষ্টান সমাজের মধ্যে দিয়ে, তবে আমাদের কেবলমাত্র রােমবাদের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতারণার এই অতিশয় পদ্ধতির মাধ্যমে মন্দের রাজপুত্র ঈশ্বর এবং মণ্ডলীর নেতৃবৃন্দের প্রতি অশ্রদ্ধা আনয়নের কাজ সম্পন্ন করছে। তবে আমরা যখন দেখি কিভাবে সে নিজেকে লুকিয়ে রেখে মণ্ডলীর নেতৃবর্গের দ্বারা তাঁর কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে কৃতকার্য হয়েছে, তখন আমরা বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারি কেন সে বাইবেলের প্রতি এত বিদ্বেষপরায়ন । যদি ঐ পুস্তক পাঠ করা হয় তবে, ঈশ্বরের প্রেম ও করুনা প্রকাশিত হয়ে পড়বে; দেখা যাবে যে তিনি মানুষের ওপরে এই সমস্ত ভারী বােঝার কারণটাই চাপিয়ে দেন না। তিনি যা জিজ্ঞেস করতে চান তাহল একটি ভগ্ন চূর্ণ অন্তঃকরণ, একটি নম্র হৃদয়, ও একটি আজ্ঞাবহ আত্মা ।GrHBen 132.2

    খ্রীষ্ট তাঁর নরনারীদের স্বর্গের উপযােগী করে তােলার জন্য তাদেরকে সন্যাসীদের মধ্যে বদ্ধ করে রাখার জন্য তাঁর জীবনের মাধ্যমে কোন দৃষ্টান্ত প্রদান করেন নি। তিনি কখনো শিক্ষা দেননি যে, প্রেম এবং সহানুভূতি দমিয়ে রাখতে হবে । ত্রাণকর্তার অন্তঃকরণ প্রেমে উপচে পড়ে । মানুষ নৈতিক সিদ্ধতার যতই কাছে আসবে, তাঁর সংবেদনশীলতা ততই ঘনিষ্ঠ হবে, পাপ সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি তত অধিক গভীর এবং নির্যাতিত লােকদের জন্য তাঁর দরদ তত গভীর হবে । পােপ খ্রীষ্টের প্রতিনিধি বলে দম্ভ করে; কিন্তু কিরূপে তাঁর চরিত্র, আমাদের ত্রাণকর্তার সাথে তুলনা বহন করে? এমন কোন ঘটনা জানা আছে কি যখন খ্রীষ্ট লােকদের কারাবন্দী করে রেখে ছিলেন বা আটকে রেখেছিলেন, যেহেতু তারা তাকে স্বর্গের রাজা বলে তাঁর প্রতি সমাদর প্রদর্শন করেন কি? যারা তাকে গ্রহণ করেনি তাঁর কণ্ঠস্বর কি কখনাে তাদের প্রতি মৃত্যুর অভিশাপ বাণী উচ্চারণ করেছে? যখন তিনি শমরিয়ার একটি গ্রামের লােকদের দ্বারা তুচ্ছিকৃত হয়েছিলেন, প্রেরিত যােহন অপমানিত হয়েছিলেন; তখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “প্রভাে, আপনি কি ইচ্ছা করেন যে এলিয় যেমন করিয়াছিলেন, তেমনি আমরা বলি, আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া আসিয়া ইহাদিগকে ভস্ম করিয়া ফেলুক? কিন্তু তিনি মুখ ফিরাইয়া তাহাদিগকে ধমূক দিলেন, আর কহিলেন, তােমরা কি প্রকার আত্মর লােক, তাহা জান না। কারণ মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের প্রাণনাশ করিতে আইসেন নাই, কিন্তু রক্ষা করিতে আসিয়াছেন।” লুক ৯:৫৪, ৫৬। খ্রীষ্ট কর্তৃক প্রদর্শিত আত্মা হতে তাঁর মুখে স্বীকারকারী তাঁর প্রতিনিধি কতই না ভিন্ন।GrHBen 133.1

    রােমীয় মণ্ডলী এখন জগতের কাছে চমৎকার একটি দিক তুলে ধরছে, সে তাঁর অতীতের ভয়ানক নিষ্ঠুরতার জন্য ভুল স্বীকার করে তা ঢাকার চেষ্টা করছে। সে খ্রীষ্টতুল্য পােশাকে আচ্ছাদিত হয়েছে; কিন্তু তাঁর পরিবর্তন হয়নি। পােপত্বের প্রতিটি নীতি যা অতীতে বিরাজ করত, আজো তা বিরাজ করছে। যে ধর্মীয় শিক্ষামালা মহা অন্ধকার যুগে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আজো তা ধরে রাখা হয়েছে। কেউ যেন প্রতারিত না হয় । প্রটেষ্ট্যান্টরা যে পােপত্বকে এখন সমাদর করতে প্রস্তুত ঐ একই পােপত্ব সংস্কারের দিনগুলােতে রাজত্ব করেছে, যখন ঈশ্বরের লােকেরা তাদের জীবনে ঝুঁকি নিয়ে, তাঁর দুষ্টামি প্রকাশি করতে দাড়িয়েছিলেন। সে একই অহঙ্কার অধিকার করে এবং উদ্ধত দম্ভ ধারণ করে যা রাজাগণ এবং অধ্যক্ষগণের ওপরে প্রভুত্ব করেছিল, এবং ঈশ্বরের ব্যক্তিগত অধিকার দাবি করেছিলেন। তাঁর মনোভাব তখন থেকে কম নিষ্ঠুর এবং উৎপীড়ন নয় যখন সে মানব স্বাধীনতা অভিশপ্ত করে দিয়েছিল এবং পরাৎপরের সাধুগণকে হত্যা করেছিল।GrHBen 133.2

    পােপত্ববাদ হচ্ছে ঠিক তাই যার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, সে হবে শেষ কালের ধর্মদ্রোহী । ২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৪। চরিত্র ধারণ করা তাঁর নিয়মের একটি অংশ তাঁর উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করে; পরিবর্তনশীল বহুরূপী বাহ্যিক চেহারা নীচে সে স্বর্গের অপরিবর্তনশীল বিষ লুকিয়ে রাখে । “ধর্মোদ্রোহীদের সাথে থেকে বিশ্বাসী না হওয়া, নতুবা ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মোদ্রাহী হিসেবে চিহ্নিত হওয়া।” (Lenfant, volume I, page 516), সে ঘােষণা করে। যার ইতিহাস এক সহস্র বছর পর্যন্ত সাধুগণের রক্তে লিখিত রয়েছে, তাঁর ক্ষমতা কি এখন খ্রীষ্টের মণ্ডলীর একটি অংশ হিসেবে স্বীকৃত হবে?GrHBen 134.1

    এটি অহেতুক নয় যে, দাবিটি প্রটেষ্ট্যান্ট দেশগুলাের মধ্যে এই ভাবে উত্থাপন করা হয় যে, পূর্ববর্তী সময়ের প্রটেষ্ট্যান্ট আমলের তুলনায় ক্যাথলিক মতবাদ খুব কমই ভিন্নমত পােষণ করে। সেখানে একটি পরিবর্তন এসেছে; কিন্তু পরিবর্তনটি পােপত্রের মধ্যে নয়। কার্যত: ক্যাথলিকবাদ প্রটেষ্ট্যান্টবাদের অধিকাংশই প্রদর্শন করে যা এখন বিরাজ করছে, কারণ প্রটেষ্টান্টবাদ সংস্কারকগণের দিনগুলাে থেকে অধঃপতিত হয়েছিল ।GrHBen 134.2

    যেহেতু প্রটেস্ট্যান্ট মণ্ডলী জগতের অনুগ্রহের অন্বেষণ করে আসছে, ফলে মিথ্যা পরজনপ্রীতি তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছে। তারা সকল মন্দের মধ্যে মঙ্গলটি সঠিক বলে বিশ্বাস করে তাছাড়া, আর অবসম্ভাবী ফলাফলরূপ তারা অবশেষে সকল উত্তমের মন্দটাই বিশ্বাস করবে । একদা সাধুগণের কাছে যে বিশ্বাস উপস্থাপিত হত তাকে প্রতিরােধ করার জন্য দণ্ডায়মান হবার পরিবর্তে তারা পূর্বে ছিল, এখন তারা তেমনটিই হয়েছে, তাঁর মতামতের প্রতি তাদের নিষ্ঠুর আচরণের জন্য তারা রােমানদের কাছে তাদের ভুল স্বীকার করে, তারা তাদের ধর্মান্ধতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।GrHBen 134.3

    এক বৃহৎ শ্রেণী এমন কি যারা দয়া না দেখিয়ে রােমানবাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, তারা তাঁর ক্ষমতা এবং প্রভাবের বিপদ সম্পর্কে খুবই অল্পই সচেতন। অনেকেই সনিবন্ধ মিনতি করবে যে বুদ্ধিতে এবং নৈতিক অন্ধকার, যা মধ্যযুগ ব্যাপী বিরাজ করেছে, তা তাঁর ধর্মমত, কুসংস্কার এবং পীড়ন, এবং বর্তমান যুগের মহত্তর জ্ঞান, জ্ঞানের সার্বজনীন বিভাজন এবং ধর্মীয় বিষয়গুলাের মধ্যে পরম অসহিষ্ণুতা এবং অত্যাচারের একটি জাগরণ নিষেধ করে। একই চিন্তা যে এই আলােকিত যুগে বিষয়গুলাের একটি অবস্থা বিরাজ করবেন তা হাস্যকর। এটি সত্য যে বুদ্ধিমত্তা, নৈতিক এবং ধর্মীয় মহাজ্যোতি এই প্রজন্মের ওপর আলােকিত হচ্ছে। ঈশ্বরের পবিত্র বাক্যের খােলা পৃষ্ঠা গুলাের মধ্যে পৃথিবীর ওপরে স্বর্গীয় জ্যোতি আলােকপাত করছে। কিন্তু এটি মনে রাখতে হবে যে, আলাে যত বৃহৎ আকারে সম্পাতিত যারা হবে তা প্রত্যাখ্যান করবে এবং বিকৃত করবে, তাদের কাছে তা তত বড় অন্ধকার স্বরূপ হবে।GrHBen 134.4

    প্রার্থনাপূর্বক বাইবেল অধ্যয়ন প্রটেস্ট্যান্টদের কাছে পােপত্বের আসল। চরিত্র দেখিয়ে দেবে এবং তাদেরকে ঘৃণাসহকারে পরিহার, এবং পরিত্যাগ করতে বাধ্য করবে; কিন্তু অনেকে নিজেদের বিচারে তারা নিজেদের এতই জ্ঞানী মনে করে যে তারা নম্রভাবে ঈশ্বরের অন্বেষণের আবশ্যকতা উপলব্ধি করে না, যাতে তারা সত্যের মধ্যে পরিচালিত হতে পারে। যদিও বা তারা তাদের জ্ঞানােন্মেষে গর্ববােধ করছে, তবুও তারা শাস্ত্র এবং ঈশ্বরের শক্তির বিষয় অত্ত। তাদের বিবেককে শান্ত করার জন্য কোন না কোন মাধ্যমে থাকতে হয়, আর তাই তারা এমন কিছুর অন্বেষণ করে যা সব চেয়ে কম আত্মিক এবং মানহানীকর । তাদের যা আশা তা হল, ঈশ্বরকে ভুলে যাবার একটি পদ্ধতি যা তাকে স্মরণ করাকে পাশ কাটিয়ে যাবার একটি পদ্ধতি হবে। এ সমস্তের অভাব সমুহের মুশকিল আসান করার জন্য পােপত্ত্ব উপযােগী। এটি দুই শ্রেণীর লােকদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, প্রায় সমগ্র পৃথিবীকে গ্রহণ করেছে-যারা তাদের যােগ্যতা দ্বারা রক্ষা পাবে, এবং দ্বিতীয়ত যারা তাদের পাপের মধ্যে থেকে পরিত্রাণ পাবে । এখানেই এই শক্তির গােপন রহস্য।GrHBen 135.1

    বুদ্ধিবৃত্তির এক মহা অন্ধকার ও অজ্ঞতার যুগকে পােপত্বের সাফল্যের উপযােগী বলে দেখানাে হয়েছে। এ ছাড়া এটাও প্রমাণিত হবে যে বুদ্ধিবৃত্তির মহা উজ্জ্বলতার সময়কালও সমভাবে তাঁর কৃতকার্যতার জন্য সমানভাবে উপযােগী। বিগত যুগ সমূহে, যখন মানুষ ঈশ্বরের বাক্য বিহীন এবং সত্যের জ্ঞান বিহীন ছিল, তখন তারা চোখ বাঁধা অবস্থায় ছিল, এবং সহস্র সহস্র লােক ছিল ফাদে আটকা তাদের পা আঁটকে পড়ার জন্য যে জাল পাতা রয়েছে তা তারা দেখতে পেত না। এই যুগে অনেকে রয়েছে। যাদের মানব চোখ দূরকল্পনার চোখ ধাধানাে জ্বলজ্বলে আলােতে চোখ ঝলসে গেছে, “তথা কথিত মিথ্যা বিজ্ঞান” তারা জাল দেখতে পায় না, এবং তাঁর মধ্যে হেঁটে যায়, যেন তারা চোখ বাধা অবস্থায় রয়েছে। ঈশ্বর এমন ভাবে নকশা করেছিলেন যেন মানুষের বুদ্ধিমত্তার শক্তি তাঁর নির্মাতার দান হিসেবে বিবেচনা করে এবং তা সত্য ও ধার্মিক্কতার ক্ষেত্রে নিয়ােগ করে; কিন্তু যখন অহংকার ও উচচাকাঙ্খ লালিত হয়, এবং মানুষ যখন তাদেরনিজেদের মতবাদগুলাে ঈশ্বরের বাক্যে ঊর্ধ্বে স্থাপন করে, তখন বুদ্ধিমত্তা অজ্ঞতা অপেক্ষা মহা ক্ষতিকর কার্য সাধন করতে পারে । এরূপে। বর্তমান কালের মিথ্যা বিজ্ঞান যা বাইবেলের বিশ্বাসকে ক্রমশ দুর্বল করে, তা পােপীয় মতবাদ গ্রহণের পথ প্রস্তুত কল্পে সফল বলে প্রমাণ করবে ঠিক আনন্দদায়ক আকৃতিতে, যেমন অন্ধকারময় যুগে এর সংবর্ধনের জন্য জ্ঞান উন্মুক্তকরণ পথকে রেখে ছিল ।GrHBen 135.2

    প্রতিষ্ঠান সমূহের নিরাপত্তা জন্য, এবং মণ্ডলীর প্রয়ােগ বিধিতে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপােষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উন্নতিকল্পে এখন আন্দোলনগুলাে অগ্রগতির পথে; আর প্রটেষ্ট্যান্টগণ পােপের সমর্থকদের অনুসরণ করছে । না , তারা পােপত্বের জন্য যত দরজা খুলে দিচ্ছে যাতে করে প্রটেষ্ট্যান্টগণ আমেরিকায় প্রভুত্ব লাভ করতে পারে; যা সে প্রাচীন বিশ্বে হারিয়েছিল । আর যা এই আন্দোলনে মহত্বর তাৎপর্য প্রদান করে তা হল এই যে মূল বিষয়টি মনােযােগ সহকারে বিবেচনা করা হয়ে ছিল, তা হল বলপূর্বক রবিবার পালন আদেশ জারি করা একটি প্রথা যা প্রথমে রােমানদের দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল, এবং যা সে তাঁর ক্ষমতার চিহ্নস্বরূপ দাবি করে । এটি হল পােপত্বের আত্মা— জাগতি প্রথার সদৃশ আত্মা, ঈশ্বরের আজ্ঞাসমূহের ঊর্ধ্বে মানুষের পরাম্পরাগত প্রথার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন অর্থাৎ প্রটেষ্ট্যান্ট মণ্ডলীগুলােকে অনুমতি প্রদান করা এবং রবিবারকে উচ্চে তুলে ধরার ন্যায় একই কাজের প্রতি তাদের পরিচালনা দান করা যা পােপসমর্থক বা তাদের পূর্বেই তা করে ফেলেছে ।GrHBen 136.1

    পাঠক যদি বুঝতে পারত যে আসন্ন প্রতিযােগিতায় প্রতিনিধিগণকে নিযুক্ত করা হবে, তবে সে মাধ্যমসমূহের ইতিহাসের সন্ধান দিতে পারত, যেগুলাে রােম নিয়ােগ করেছিল অতীত যুগের সেই এই উদ্দেশ্যে সাধনের লক্ষ্যে। যদি সে জানত কিরূপে পােপের সমর্থকগণ এবং প্রটেষ্ট্যাণ্টগণ যে মতবাদগুলাে তারা প্রত্যাখ্যান করে ছিল সেই মতবাদের ভিত্তিতেই পােপও প্রটেষ্ঠ্যা একত্রিত হয়েছে, সে দেখুক শাব্বাথের প্রতি ও তাঁর সমর্থকদের প্রতি রােমানদে কিরূপ মনােভাব প্রদর্শিত হয়েছিল ।GrHBen 136.2

    রাজকীয় অনুশাসকগণ, সাধারণ মন্ত্রণাসভাগুলাে, এবং মণ্ডলীর নিয়ম নীতি সমূহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দ্বারা খ্রীষ্টান বিশ্বে পৌত্তলিক উৎসব তাঁর সম্মানের পদ লাভ করত। সর্ব প্রথম গণপ্রতিবিধান রােববার পালন বলবৎ করেছিল, যা কনস্ট্যানটাইন কর্তৃক কার্যকরি করা হলাে (A.D. 321) এই রাজাজ্ঞা পালনের জন্য শহরের অধিবাসীদের “সূর্যের সম্মানের দিনে বিশ্রাম করার প্রয়ােজন হত, কিন্তু দেশবাসীদের তাদের জমিজমা, চাষবাসের কাজ অনুমতি দেয়া হত । ফলত: যদিও বা এটি একটি পৌত্তলিক মূর্তি তবে নামমাত্র খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণের পর তিনি এটি বলবৎ করেন।GrHBen 137.1

    রাজকীয় এই আদেশ স্বর্গীয় ক্ষমতার পক্ষে প্রতিভূ হিসেবে যথেষ্ট প্রমান করে না, ইউসেবিয়াস, একজন বিশপ, যিনি রাজপুত্রের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করেন, আর তিনি ছিলেন কনস্ট্যানটাইনের বিশেষ বন্ধু এবং তােষামােদকারী, তিনি নূতন চিন্তাধারায় অনুপ্রাণীত হয়ে এই দাবীটি উত্থাপন করেন যে খ্রীষ্ট শাব্বাথ দিনকে রবিবারে স্থানান্তর করেছিলেন। নতুন ধর্মমতুটি পক্ষে প্রমান স্বরূপ শাস্ত্রের একটি সাক্ষ্যও হাজির করা যায় নি। ইউসেবিয়াস অনিচ্ছাকৃতভাবে এই মিথ্যা উক্তির কথা স্বীকার করেন এবং পরিবর্তিনের প্রকৃত লেখককে দেখিয়ে দেন। “সব কিছু” তিনি বলেন, শাব্বাথ দিন সম্পর্কে যা করা কর্তব্য, এসব আমরা প্রভুর দিনে স্থানান্তর Poste ” --Rabert Cox, Sabbath Laws and Sabbath Dguties, p. 538. তবে রবিবারের বির্তক ছিল ভিত্তিহীন যা লেখকদেরকে প্রভুর দিনের ওপরে পদদলনে সাহস জুগিয়েছিল । যারা জগৎ কর্তৃক সম্মাণিত হতে চেয়েছিল, তারা জন প্রিয় আমােদ প্রমােদ গ্রহণ করল ।GrHBen 137.2

    পােপতৃ দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হওয়ার পর, রবিবার দিনকে উঠে তুলে ধরার কাজটিও চলতে লাগল। এক সময় যখন গীর্জায় না গিয়ে লােকেরা কৃষি কর্ম করত, এবং তখনও সপ্তম দিনকে বিশ্রামবার বলে মনে করা হত। কিন্তু অবিচলিত ভাবে একটা পরিবর্তন সম্মানিত হল । যারা অবিচলিত ভাবে একটা পরিবর্তন সম্মানিত হল । যারা পবিত্র দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিল তাদেরকে রােববারে যে কোন বেসামরিক আলাপ আলােচনার কারণে বিচার নিষিদ্ধ করা হল । এর পরেই, সব লােককে যে কোন স্তরের হােক না কেন, তাদের সাধারণ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করা হল, যারা স্বাধীন তাদের কিছু জরিমানা দিতে হবে যে এবং ভৃত্য হলে তাদের বেত্রাঘাত পেতে হবে। পরে এরূপ আদেশ করা হল যে, ধনী লােকদের ক্ষেত্রে শাস্তি হল, তাদের অর্ধেক সম্পত্তি খােয়ান; অবশেষে যদি একগুঁয়েমি ভাব দেখানাে হয়,GrHBen 137.3

    তবে তাদের ক্রীতদাস হতে হবে। নিম শ্রেণীর লােকদের ভােগ করতে হবে চিরদিনের জন্য নির্বাসন ।GrHBen 138.1

    অলৌকিক কার্যরূপে লিখিত ফরমান পত্রের ব্যবস্থাও ছিল । অন্যান্য বিস্ময়কর কাজগুলাের মধ্যে একটি ছিল, একজন স্বামী যে রােববার তাঁর জমি চাষ করতে যাওয়ার পূর্বে, সে একটি লােহা দিয়ে তাঁর লাঙ্গল পরিষ্কার করে আর সেই লােহা তৎক্ষণাৎ তাঁর হাতে লেগে যায়, এবং দুই বছর পর্যন্ত সে ঐ লােহা তাঁর সাথে বয়ে নিয়ে বেড়ায়, এটি তাঁর জন্য প্রচণ্ড ব্যথা এবং “Francis West, Historical and Practical Discourse on the Lord’s Day, p. 174,GrHBen 138.2

    পরে পােপ নির্দেশ দিলেন যে ছােট মণ্ডলীর যাজক রবিবার আইন ভঙ্গকারীদের সাবধান করে দেয়া হয় তারা যেন রবিবার গীর্জায় গিয়ে তাদের প্রার্থনা করবে তা না করলে মনে করতে হবে যে তারা তাদের এবং তাদের প্রতিবাসীদের ওপরে মহা বিপর্যয় নিয়ে আসছে । যাজকীয় পরিষদ একটি বিতর্কটি সামনে আনলেন, যেহেতু এত ব্যাপক ভাবে নিয়ােগ করা হল, এমন কি প্রটেষ্ট্যান্টগণ কর্তৃকও, যেহেতু, লােকেরা রবিবার কাজের সময় বজ্রপাতে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছিল, এটি অবশ্যই শাব্বাথ দিন হবে । “এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়,” উচ্চপদস্ত যাজক বললেন, “এই দিনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন হেতু ঈশ্বর কতই না অসন্তুষ্ট হল।” অতঃপর একটি আবেদন করে রাখা হয়েছিল। যে, যাজক এবং পুরােহিতগণ, রাজন্যবর্গ এবং অধ্যক্ষগণ এবং সকল বিশ্বস্ত লােকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করবে এবং লক্ষ্য রাখবে যেন দিনের সমাদর পুনরুদ্ধার করা হয়, এবং খ্রীষ্টধর্মের সম্মানের জন্য আগামীতে আরও ভক্তিভরে পালন করা হচ্ছে।” Thomas Morer, Disourse in Six Dialogues on the Name, Notion and Observation of the Lord’s Day, p. 271.GrHBen 138.3

    পরামর্শ সভার আদেশ অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হলে, জাগতিক ক্ষমতাসীন ব্যক্তিগণকে সনির্বন্ধ অনুরােধ করা হল যেন তারা এমন একটি অনুশাসন বের করেন, যাতে লােকদের প্রাণ মতা আতকে আৎকে ওঠে এবং রােববার কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। রােমে অনুষ্ঠিত একটি গীর্জায় রাজকীয় বিচার সভায়, পূর্বের সব সিদ্ধান্ত মহাবলে এবং মহা সমারােহে পুনঃনিশ্চিত করা হল এবং বেসামরিক ক্ষমতাশীল ব্যক্তিগণ প্রায় সব খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীর মধ্যদিয়ে বলবৎ করা হল। (See Heylyn, History of the Sabbathi, pt.2, ch, 5, sec.. 7.)GrHBen 138.4

    রােববার পালনের ব্যাপারে শাস্ত্রীয় কোন অধিকার বা ক্ষমতা না থাকার কারণে কম লজ্জায় পড়তে হয়নি। সূর্যের দিনের সম্মানার্থে যিহােবার “সপ্তম দিন তােমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিশ্বাস দিন”- এই ইতিবাচক ঘােষণাকে একপার্শ্বে ফেলে রাখার অধিকার সম্পর্কে লােকেরা তাদের শিক্ষকদের প্রশ্ন করে। এ ব্যাপারে বাইবেল থেকে সাক্ষ্য প্রদানের অভাব পূরণের জন্য অন্যান্য সুবিধাজনক উপায়গুলাে অবশ্যক ছিল। রবিবারের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহশীল একজন অধিবক্তা, যিনি দ্বাদশ শতাব্দীর সমাপ্তিতে ইংল্যাণ্ডের মণ্ডলীগুলাে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। আর তিনি সত্যের পক্ষে বিশ্বস্ত সাক্ষীগণ কর্তৃক বাধাগ্রস্থ হলেন; এবং তাঁর চেষ্টা এতই নিস্ফল হল যে, তিনি কোন কারণ বশত সেই দেশ ত্যাগ করলেন, কিন্তু তিনি তাঁর চারপার্শ্বে কিছু উপায় রেখে গেলেন তাঁর শিক্ষামালা বলবৎ করার জন্য। তিনি ফিরে এলে, ঘাটতি পূরণ করা হল, এবং তিনি তাঁর পরবর্তী শ্রমগুলােতে মহত্ত্বর কৃতকার্যতা লক্ষ্য করলেন । তিনি তাঁর সঙ্গে একটি জড়ানাে পুস্তক নিয়ে এসেছিলেন যাতে বুঝানাে যায় যে এটি স্বয়ং ঈশ্বরের নিকট থেকে পাওয়া, যার মধ্যে রবিবার পালনের ব্যাপারে কিছু প্রয়ােজনীয় আজ্ঞা রয়েছে, অবাধ্যদের ভয় দেখানাের জন্য ভয়ানক কিছু হুমকিও দেওয়া রয়েছে। এই মূল্যবান দলিলটি একটি জালবস্তু যা আসল বলে প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে সমর্থন করেছিল এবং বলা হয়েছিল যে এটি নাকি আকাশ থেকে পড়েছিল, এবং এটি যিরূশালেমে, গলগাথায় সাধু শিমােনের বেদির ওপর পাওয়া গেছে । কিন্তু, প্রকৃত পক্ষে, রােমের প্রধান যাজক বা বিশপের প্রাসাদই ছিল এর উৎস, যেখান থেকে এটি প্রস্তুত করা হয়েছিল। মণ্ডলীর ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে বহু চুরি এবং মুদ্রাজাল করা হয়েছিল, যা পােপীয় ধর্ম ভ্রষ্টতা দ্বারা এটি সর্ব যুগে আইন সম্মত করেছিল ।GrHBen 139.1

    ঐ পাণ্ডুলিপি, শনিবার নবম ঘটিকা অর্থাৎ বেলা তিনটা থেকে কাজ নিষিদ্ধ করেছিল, সােমবার সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত এবং অনেক অলৌকিক কার্যের ঘােষণা দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়ৈ ছিল। আর এটি জানিয়ে দেয়া হল যে, যারা নির্ধারিত সময়ের পরেও কাজ করেছিল তারা পক্ষাঘাত রােগে আক্রান্ত হয়েছিল। মিলের একজন কর্মচারীর যে তাঁর ভূট্টাভাঙ্গাবার চেষ্টা করেছিল, সে লক্ষ্য করল, ময়দার পরিবর্তে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে । এবং মিলের চাকা থেমে গেছে, তবুও তীব্র বেগে জলের স্রোত বেরিয়ে আসছে। একজন স্ত্রীলােক যিনি ওভেনের মধ্যে ভিজে ময়দার তাল দিয়েছিল, চুলা (ওভেন) খুব গরম থাকা সত্ত্বেও ময়দা কাচাই রয়ে গিয়েছিল। অন্য একজন রুটি বানাবার জন্য নরম ঘটিকা সময়ে ময়দা ছেনেছিল, কিন্তু সে সােমবার পর্যন্ত তা রেখে দেয়ার পর সে দেখতে পেল, শক্তি:ত রুটি তৈরি হয়ে গেছে। একজন ব্যক্তি যে শনিবার নবম ঘটিকার পরে রুটি তৈরি করেছিল সে পরদিন সকাল বেলা রুটি ভাঙ্গাবার পর লক্ষ্য করল, তা থেকে রক্ত বের হয়ে আসছে। এভাবে অযৌক্তিক এবং কুসংস্কারজনক কারসাজি দ্বারা রবিবারের পবিত্রতা স্থাপন করার চেষ্টা করা হল। (দেখুন Roger de Hoveden, Annals, Vol.-2, pp. 528-530)GrHBen 139.2

    যমন ইংল্যাণ্ডে, তদ্রুপ স্কটল্যাণ্ডে রবিবারের ব্যাপারে বিবেচনা করে পুরাকালীন বিশ্রামবারের একটি অংশের সঙ্গে যােগদানের দ্বার নিশ্চিত হল । কিন্তু পবিত্র রাখার প্রয়ােজনীয় সময়ে ভিন্নতা দেখা দিল দৃষ্ট হল । কটল্যাণ্ডের রাজার নিকট থেকে একটি অধ্যাদেশ ঘােষণা করা হল যে, “শনিবার বেলা ১২ টা থেকে পবিত্র দিন ধরে নিতে হবে,” আর কোন ব্যক্তি, ঐ সময় থেকে সােমবার সকাল পর্যন্ত জাগতিক কাজে নিয়েজিত থাকতে পারবে না । Marer, p. 290-291.GrHBen 140.1

    কিন্তু তথাপি রবিবারের পবিত্রতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সর্বত্র করা হল, পােপ সমর্থকগণ নিজেরাই শাব্বাথ এবং মানবের উৎপত্তিতে প্রাধান্য ঐশ্বরিক ক্ষমতার কথা স্বীকার করল যার দ্বারা এটি কৌশলে স্থানচ্যুত করা। হল । ষষ্ঠ শতাব্দীতে একটি পােপীয় পরামর্শ সভায় পরিষ্কাররূপে ঘােষণা করল “সকল খ্রীষ্টানগণ স্মরণে রাখুক যে সপ্তম দিন ঈশ্বর কর্তৃক উৎসর্গকৃত হয়েছিল, এবং তা কেবল মাত্র যিহুদীরাই পায়নি বা পালন করেনি, বরং অন্য যারা ঈশ্বরের আরাধনার ভান করে তারাও পেয়েছিল; যদিও বা আমরা। খ্রীষ্টানগণ তাদের শাবাথ প্রভুর দিনে পরিবর্তন করেছি।” Ibid., pp. 281, 282. যারা ঐশ্বরিক ব্যবস্থার অবৈধ হস্তক্ষেপ করছিল, তারা তাদের কাজের প্রকৃতি সম্পর্কে অবিদিত ছিল না। তারা স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে ঈশ্বরের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছিল।GrHBen 140.2

    যারা তাঁর সঙ্গে ভিন্ন মত পােষণ করে তাদের প্রতি রােমের নীতির নিয়মের এক দীর্ঘ এবং ওয়ালঃ,৬নসিলদের মধ্যে যারা শাব্বাথ পালনকারী তাদের প্রতি রক্তাক্ত অত্যাচার একটি চিত্তাকর্ষক দৃষ্টান্ত প্রদান করে । অন্যান্যরা তালের চতুর্থ আর প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা প্রযুক্ত একই প্রকারে যন্ত্রণা ভােগ করেছে। ইথিওপীয়া এবং আবিসিনীয়ার ইতিহাস বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অন্ধকার যুগের ঘাের অন্ধকারের মধ্যে, মধ্য আফ্রিকার খ্রীষ্টানগণ সম্পর্কে জগৎ দৃষ্টি হারা হয়েছিল এবং তাদের ভুলেই গিয়েছিল, এবং বহু শতাব্দী পর্যন্ত তারা তাদের বিশ্বাস রক্ষায় স্বাধীনতা উপভােগ করেছিল। কিন্তু অবশেষে রােম তাদের অস্তিত্ব টেরপেল, এবং অচিরেই অবিসিনিয়ার সম্রাটকে খ্রীষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে পােপকে মেনে নেওয়ানাের মাধ্যমে প্রতারিত করেছিল । অন্যান্য সুবিধাগুলাে আসতে লাগল। একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল যে শাব্বাথ পালন করলে ভয়ানক শাস্তি প্রদান করা হবে । (দেখুন Michael Zeddes Church History of Ethiopia, pp.,311, 312.) কিন্তু পােপের নিষ্ঠুরতা অতি সত্ত্বর এমন। ভারী পীড়াদানকারী খেয়ালীস্বরূপ হল যে আবিসিনিয়াবাসীগণ তাদের স্কন্ধ থেকে এটি ভেঙ্গে ফেলতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ হল । এক প্রচণ্ড সংগ্রামের পর রােমের লােকেরা তাদের রাজত্ব থেকে নিশ্চেষ্ট হয়ে গেল, এবং পুরাতন বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা হল । মণ্ডলী তাদের স্বাধীনতায় আনন্দিত হল, আর তারা প্রতারণা গোঁড়ামি এবং রােমের সার্বভৌম ক্ষমতা থেকে যে শিক্ষা পেয়েছিল তা কখনাে ভুলে গেল না। তাদের নির্জন অধিকৃত এলাকার মধ্যে থেকে তারা, অন্যান্য খ্রীষ্টান সমাজের কাছে অপরিচিত রইল ।GrHBen 140.3

    আফ্রিকার মণ্ডলীগুলাে শাব্বাথ পালন করেছিল যেমনি ভাবে পােপীয় মণ্ডলী তাঁর সম্পূর্ণ ধর্ম বিরােধীতার পূর্বে পালন করেছিল। যেমন তাঁর ঈশ্বরের আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শন করে সপ্তম দিন পালন করেছিল, তারা মণ্ডলীর প্রথা অনুসারে রবিবার কাজ করা থেকে বিরত থাকত । উচ্চ ক্ষমতা লাভের পরে রােম তাঁর নিজের ক্ষমতা উচচ ভুলে ধরার জন্য ঈশ্বরের শাব্বাথকে পদতলে দলিত করল; কিন্তু অফ্রিকার মণ্ডলীগুলাে প্রায় এক হাজার বছর লুকিয়ে ছিল এবং এই ধর্মোদ্রোহীতায় অংশ গ্রহণ করেনি। যখন রােমের শাসনাধীনে আনীত হল, তাদেরকে জোর করা হল সত্যকে এক পার্শ্বে রেখে দিয়ে ভ্রান্ত শাব্বথকে উচ্চে তুলে ধরতে; কিন্তু অনতিবিলম্ভে পুনরায় তাদের স্বাধীনতা ফিরে এল ।GrHBen 141.1

    এই সমস্ত অতীত ইতিহাস প্রকৃত শাব্বাথ ও তা পালকারীদের প্রতি রােমের শত্রুতা সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করে, এবং তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি সে কতটা সম্মান ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেয় যে, এই দৃশ্যগুলাে পুনরাবৃত্তি করে রােমান ক্যাথলিকগণ এবং প্রটেষ্টান্টগণ রবিবারকে উচ্চে তুলে ধরার জন্য একতাবদ্ধ হবে ।GrHBen 141.2

    প্রকাশিত বাক্যের ১৩ অধ্যায় ঘােষণা করে যে, দশ শৃঙ্গ বিশিষ্ট মেষশাবক দ্বারা যে ক্ষমতাকে বুঝানাে হয়েছে তা “পৃথিবীকে ও তন্নিবাসীদিগকে তাহার ভজনা করায় পােপত্বের প্রতি আরাধনা যা পশুর প্রতীক “একটি চিতাবাঘের তুল্য।” দুই শৃঙ্গ বিশিষ্ট পশুও পৃথিবীনিবাসীদিগকে বলে, “যে পশু খড়গ দ্বারা আহত হইয়াও বাচিয়া ছিল, তাহার এক প্রতিমা নির্মাণ কর;” এবং ক্ষুদ্র ও মহা ধনী ও দরিদ্র স্বাধীন ও দাস, সকলকে পশুর ছাব ধারণ করতে আদেশ করে । প্রকাশিত বাক্য ১৩:১১-১৬। দেখানাে হয়েছে যে, মেষশাবকতুল্য শৃঙ্গ বিশিষ্ট পশু দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে নির্দেশ করে, ভবিষ্যদ্বাণীর তখন পূর্ণতা লাভ করবে যখন যুক্তরাষ্ট্র রবিবার আইন বলবৎ করবে যা রােমের দাবী অনুসারে তাঁর প্রাধান্যের প্রতি বিশেষ স্বীকৃতি স্বরূপ । কিন্তু পােপত্বের প্রতি এই আনুগত্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই থাকবে না। যে সমস্ত দেশ একবার রােমের আধিপত্য স্বীকার করে নিয়েছে তারা ধ্বংসের হাত থেকে দূরে থাকবে । আর ভবিষ্যম্বাণী তাঁর ক্ষমতার একটি পুনরুদ্বারের কথা সম্পর্কে বলে । “পরে দেখিলাম, তাহার ঐ সকল মস্তকের মধ্যে একটি মস্তক যেন মৃত্যুজনক আঘাতে আহত হইয়াছিল, আর তাহার সেই মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতিকার করা হইল; আর সমুদয় পৃথিবী চমৎকার জ্ঞান করিয়া সেই পশুর পশ্চাৎ চলিল” ৩ পদ। মৃত্যুজনক আঘাতের যন্ত্রণা ১৭৯৮ খ্রীষ্টাব্দে পােপত্বের পতনকে নির্দেশ করে। এর পরে, ভাববাদী বলেন, “তাঁর মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইল; আর সমুদয় পৃথিবী চমৎকার জ্ঞান করিয়া সেই পশুর পশ্চাৎ চলিল।” পৌল পরিষ্কাররূপে বলেন যে, “পাপপুরুষ” দ্বিতীয় আগমনের সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে । ২ থিষলনীকীয়, ২:৩৮। শেষকাল পর্যন্ত সে প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাবে। প্রকাশিত বাক্য লেখক ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি নির্দেশ করে বলেন: “পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লােক তাহার ভজনা করিবে যাহাদের নাম জগৎপত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত নাই।” প্রকাশিত বাক্য ১৩:৮। পুরাতন এবং নতুন বিশ্বে,,পােপত্ব, রােববার প্রতিষ্ঠানের সম্মানে শ্রদ্ধার্ঘ লাভ করবে যা গুরুগম্ভীরভাবে রােমীয় মণ্ডলীর ক্ষমতার ওপরে অধিষ্ঠিত।GrHBen 141.3

    ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে, যুওঁরাষ্ট্র ভবিষদ্বাণীর শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর কাছে এই সাক্ষ্য প্রদান করেছে। যে ঘটনাগুলাে এখন ঘটে চলেছে তাতে দেয়া যায় ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে । প্রটেষ্ট্যাণ্ট শিক্ষকদেরও রবিবার পালনের পক্ষে ঐশ্বরিক ক্ষমতার একই দাবি রয়েছে, এবং শাস্ত্রীয় প্রমাণের দাবি রয়েছে, এবং তাদেরও শাস্ত্রীয় প্রমানের ঘাটতি রয়েছে, ঠিক পােপীয় নেতৃবৃন্দ যেমন ঈশ্বরের আজ্ঞার উপরে স্থাপন করার জন্য নকল অলৌকিক কার্যসমূহ উদ্ভাবন করেছিল । নিশ্চিত উক্তিটি বলে যে, রবিবার-শাব্বাথ লঙ্ঘন হেতু মানুষের ওপর ঈশ্বরের বিচারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে; ইতােমধ্যে সজোর অনুরােধ আসতে শুরু করেছে । রােববার পালনের আইন জারি করার একটি আন্দোলন দ্রুত স্থান করে নিচ্ছে।GrHBen 142.1

    চাতুর্যে এবং ধূর্ততায় বিস্ময়কর হল রােমীয় মণ্ডলী কি হতে পারে সে তা পাঠ করতে পারে । প্রটেষ্ট্যাণ্ট মণ্ডলীগুলাে এই ভূয়া বিশ্রামদিন গ্রহণ করে তাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে এবং অতীতের দিনগুলােতে যে যে মাধ্যম ব্যবহার করেছিল সেই একই মাধ্যমের দ্বারা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা দেখে সে তাঁর সময়কে আদেশ প্রদান করে। যারা সত্যের জ্যোতি প্রত্যাখ্যান করে তারা তথাপি যে প্রতিষ্ঠানটি পােপীয় মণ্ডলী দ্বারা উভূত তাকে উচ্চে তুলে ধরতে এই স্ব-উদ্ভাবিত শক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে । এই কাজে প্রটেস্ট্যান্টদের সাহায্যে করতে সে কত দ্রুত এগিয়ে আসবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। যারা এই মণ্ডলীর প্রতি অবাধ্য হবে তাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করতে হবে তা পােপীয় নেতৃবৃন্দ ব্যতিরেকে আর কে ভাল করে বুঝতে পারে ?GrHBen 143.1

    রােমান ক্যাথলিক মণ্ডলী বিশ্বের মধ্য দিয়ে তাঁর সব শাখা বিস্তার করে, পােপের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে, এবং তাঁর প্রতি আগ্রহীদের সেবাদানের জন্য নকশা প্রণয়ন করে। প্রথিবীর প্রতিটি দেশে প্রভুর ভােজে অংশ গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ লােককে শিক্ষা দেওয়া হয়েই যে, তারা যে জাতিই হােক না কেন, তাদের যে সরকার হােক না কেন তারা মণ্ডলীর ক্ষমতাধারক পােপকে অন্য সকলের ওপরে স্থান দেবে । যদিও বা তারা রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আনুগত্য স্বীকারের অঙ্গীকার করবে, তথাপি এর পেছনে রােমের প্রতি তালের বাধ্যতার অঙ্গীকারও রয়েছে, তাদেরকে তাঁর স্বার্থের প্রতিটি অঙ্গীকার হতে ক্ষমা দান করবে।GrHBen 143.2

    ইতিহাস তাঁর চাতুর্যপূর্ণ এবং ধৈর্যশীল প্রচেষ্টার বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে জাতির ব্যাপারে পদাধিষ্ঠিত করায়; এবং একটু পা রাখার স্থান তৈরী করে, তাঁর নিজের লক্ষ্যতে প্রসারিত করে, এমন কি রাজপুত্রদের এবং লােকদের ধ্বংস করতে হলেও সে তা করবে । ১২০৪ সালে পােপ ইনােসেনাে-৩ এরাগনের রাজা, পিটার-২ কে নিম্ন লিখিত অসাধারণ এক শপথ পাঠ করানাের মাধ্যমে বল পূর্বক উৎপাটন করেন: “আমি, পিটার, এরাগনীয়দের রাজ স্বীকার করছি এবং প্রতিজ্ঞা করছি যে আমার প্রভু পােপ ইনােসেন্ট এর প্রতি, তাঁর ক্যাথলিক পূর্বসূরী রােমীয় মণ্ডলীর প্রতি বিশ্বস্ত এবং বাধ্য থাকব, এবং ক্যাথলিক বিশ্বাসকে রক্ষা করে, এবং তাঁর প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শন করে, এবং নির্যাতন করে ধর্মোদ্রোহীদের নষ্টামি দূর করে বিশ্বস্ত সহকারে আমি আমার রাজ্য ও রাজত্ব রক্ষা করব।” John Dowling, The History of Romanism, b. 5.ch. 6, sec.55. এটি রােমের প্রধান যাজকের ক্ষমতা ব্যাপারে দাবিগুলাের ঐক্যতার রক্ষা করে অর্থাৎ সম্রাটকে সিংহাসনচ্যুত করা তাঁর পক্ষে আইন সঙ্গত” এবং “তাই প্রজাদের তাদের অধার্মিক শাসকলের কাছ থেকে বিমুক্ত করবে।” Mosheim, b. 3, cent. ll, 2. ch.2, se. 9, note 17 (See also Appendix).GrHBen 143.3

    আর এটি স্মরণে রাখতে হবে যে, এটি হল রােমের দম্ভ যে সে কখনও কখনাে পরিবর্তীত হবে না। গ্রেগরী-৭ এবং ইনােসেন্ট৩ এর নীতি এখনাে রােমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর নীতিমালা। আর যদি তাঁর ক্ষমতা থাকত তবে অতীত শতাব্দীগুলােতে যেমন, এখনও তদ্রুপ সে অধিক তেজবীর্য সহ সেগুলাের অনুশীল বজায় রাখত। প্রটেষ্ট্যান্টরা অল্পই জানে যে তারা কি করেছে, যখন রবিবারকে উচ্চে তুলে ধরার কাজে তারা রােমের সাহায্য গ্রহণ করার প্রস্তাব করে। যখন তারা তাদের উদ্দেশ্য হাশিল করার ওপরে ঝুঁকে পড়ে, তখন রােম তাঁর ক্ষমতা পুনস্থাপন করার জন্য, তাঁর হারানাে প্রাধান্য পুনরায় ফিরে পাওয়ার পায়তারা করতে থাকবে। যে নীতি একবার যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত হয়েছিল, যেন মণ্ডলী রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়ােগ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; সেই ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত জাগতিক আইনের উপর চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে; যাতে সংক্ষেপে মণ্ডলী এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতায়; বিবেককে শাসন করা যায় এবং এই দেশে রােমের বিজয় নিশ্চিত হয় ।GrHBen 144.1

    ঈশ্বর আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী প্রদান করেছেন; তা গুপ্ত না থাকুক তাতে প্রটেষ্ট্যান্ট বিশ্ব জানতে পারবে প্রকৃত পক্ষে রােমের উদ্দেশ্য কি, কেবল মাত্র তখন এটি হবে যখন ফাদ এড়ানাের জন্য খুব বেশী বিলম্ব হবে। সে নীরবে তাঁর ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। সে তাঁর শিক্ষামালা তাদের বিধান সভাকক্ষে, মণ্ডলীর মধ্যে এবং মানুষের অন্তরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সে তাঁর অত্যুচ্চ এবং প্রকাণ্ড কাঠামাে গােপনে নিঃসঙ্গ অবস্থানে স্থাপন করেছে, যে স্থান থেকে তাঁর পূর্বকালীন তাড়না পুনরাবৃত্ত হবে। গােপনে এবং সন্দেহাতীত ভাবে সে তাঁর দলকে শক্তিশালী করছে তাঁর নিজের সীমা প্রসারিত করার জন্য যখন তাঁর আঘাত হানবার সময় আসবে তখন সে আঘাত হানবে । সুবিধা জনক অবস্থানে তাঁর সকল চাওয়া, এবং তা ইতােমধ্যেই তাকে প্রদান করা হয়েছে। আমরা অতি সত্বর দেখবাে এবং অনুভব করব রােমের মূল উদ্দেশ্য কি । যে কেউ ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হবে এ প্রসঙ্গে সে-ই নিন্দ ও তাড়নায় জড়িয়ে। পড়বে।GrHBen 144.2

    *****