২—মন্দির প্রতিষ্ঠা
সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটি মন্দির নির্মাণের জন্য দায়ূদের দীর্ঘাকাঙ্খিত পরিকল্পনাটি শলোমন বুদ্ধিপূর্বক সম্পাদন করলেন। সাতটি বছর পর্যন্ত, মনোনীত স্থানটি সমান করা, বিশাল রক্ষা-প্রাচীর নির্মাণ, “বৃহৎ বৃহৎ বহুমূল্য প্রস্তর তক্ষিত প্রস্তর” দ্বারা গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন- লিবাননের বন হতে আনীত ভারী কাঠ নির্দিষ্ট আকারে গঠন করা এবং সুউচ্চ ধর্মধাম নির্মাণ কাজে ব্যস্ত কার্যকারী দ্বারা যিরূশালেম ছিল পরিপূর্ণ। ১রাজাবলি ৫:১৭। PKBeng 26.1
একই সময়ে কাঠ এবং পাথর প্রস্তুত করার জন্য হাজার হাজার শ্রমিক তাদের শ্রম দিচ্ছিল, মন্দিরের জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সজ্জা ও আসবাবপত্র প্রস্তুত কাজ, “জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান”--- স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, লোহা, পাথর ও কাঠ, এবং বেগুনে নীল, মসীনা সূতার ও রক্তবর্ণ কাজে সোরের হীরমের নৈতৃত্বে অগ্রসর হতে লাগল ।” ২ বংশাবলি ২:১৩, ১৪ । PKBeng 26.2
এরূপে মোরীয়া পর্বতের ওপরে ঘরটি, “প্রস্তত পাথর সকল দ্বারা তৈরী করা হল;উপাসনা ঘরটি তৈরী করবার সময়ে সেখানে কোন হাতুড়ি, বাটালি বা অন্য কোন যন্ত্রপাতির শব্দ শোনা গেল না, “ঈশ্বরের ঘরের সমস্ত পাত্র” অতি মনোরম আসবাব পত্রগুলো দায়ূদ কর্তৃক তার পুত্রের কাছে অর্পিত নমুনা অনুসারে সম্পন্ন করা হয়েছিল। ১ রাজাবলি ৬:৭; ২বংশাবলি ৪:১৯। এই সকলের মধ্যে রয়েছে সুগন্ধি ধূপ বেদী, দর্শনরুটির মেজ, দীপাধার এবং প্রদীপ প্রক্ষালন পাত্ৰ এবং পবিত্র স্থানে পুরোহিতদের পরিচর্যাকাজের জন্য আবশ্যকীয় জিনিসপত্র স্বর্ণে নির্মিত, সেই স্বর্ণ বিশুদ্ধ।” ২রাজাবলি ৪:২১। পিত্তলের আসবাব পত্র- পিত্তলময় যজ্ঞবেদী, সমুদ্র পাত্র বারোটী গোরুর ওপরে স্থাপিত ছিল, ছোট প্রক্ষালন পাত্র ছিল, অন্যান্য অনেক পাত্র;- “রাজা যদনের অঞ্চলের সুক্কো ও সর্তনের মাঝা মাঝি একজায়গায় কাদার মধ্যে ফেলে তা বানালেন।” ২ বংশাবলি ৪:১৭। প্রচুর আসবাব পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেন কোন অভাব না হয়। PKBeng 26.3
প্রাসাদতুল্য ঘরটি ছিল অনুপম সৌন্দর্য এবং অপূর্ব শোভায় মন্ডিত, যা শলোমন এবং তার সহকারিরা ঈশ্বর এবং তাঁর আরাধনার জন্যতৈরী করেছিলেন। বহুমূল্য পাথর দিয়ে অলংকৃত প্রসারিত প্রাঙ্গনে জাঁকালো প্রবেশ দ্বার, সুগন্ধি কাঠে ক্ষোদিত এবং স্বর্ণে মোড়ান, মন্দিরের কাঠামো, ঝুল্লমান সূচি শিল্প এবং বহুমূল্য আসবাব পত্র পৃথিবীতে ঈশ্বরের জীবন্ত উপাসনালয়ের একটি উপযুক্ত প্রতীক। যা যুগযুগ ধরে স্বর্গীয় নমুনা অনুসারে হয়ে আসছে, সাজ- সরঞ্জাম সমূহ যা “স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্য প্রস্তর”, “প্রাসাদের গাঁথুনীর অনুরূপে তক্ষিত” হয়ে এসেছে।” ১করিন্থিয় ৩:১২; গীতসংহিতা ১৪৪:১২। এই আত্মিক মন্দিরের “প্রধান কোণের পাথর স্বংয় খ্রীষ্ট যীশু। তাতেই প্রত্যেক গাঁথনি সুসংলগ্ন হয়ে প্রভুতে পবিত্র মন্দির হবার জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।” ইফিষীয় ২:২০, ২১। PKBeng 27.1
অবশেষে রাজা দায়ূদ কর্তৃক পরিকল্পিত মন্দিরটি তার পুত্র শলোমন দ্বারা তৈরীর কাজ শেষ হল । “যা যা করতে শলোমনের মনোবাঞ্ছা হয়েছিল”, তিনি “কুশলে সাধন করলেন।” ২ বংশাবলি ৭:১১। আর এখন, উদ্দেশ্য এই যে, প্রাসাদটি অবশ্যই মোরিয়া পর্বতের চূড়ায় মুকুট স্বরূপ হবে, যে বিষয়ে দায়ূদের বাসনা ছিল. একটি আবাস স্থল হবে, যে বিষয়ে দায়ূদের বাসনা ছিল, একটি আবাস স্থল নির্মাণের, যা “মানুষের জন্য নয় কিন্তু সদাপ্রভু ঈশ্বরের জন্য (১ বংশাবলি ২৯:১) ঐ স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে যিহোবা এবং তার আরাধনা উদ্দেশে উসর্গীকরণের পবিত্র অনুষ্ঠান পশ্চাতে রয়ে গেল । PKBeng 27.2
যে স্থানে উপাসনা ঘর তৈরী করা হয়েছিল এটি দীর্ঘকাল পর্যন্ত একটি উসগীকৃত স্থানরূপে বিবেচনা করা হয়েছে। এই সেই স্থান যেখানে, বিশ্বস্ত লোকদের আদিপিতা অব্রাহাম, যিহোবার নির্দেশের প্রতি আজ্ঞাবহ হওন পূর্বক তার একমাত্র পুত্রকে উসর্গ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এই স্থানে ঈশ্বর আব্রাহামের সাথে আশীর্বাদের চুক্তি নবায়ন করেছিলেন যা পরাপরের পুত্রের বলির মাধ্যমে মানব গোষ্ঠীর কাছে গৌরবময় মশীহ্ বিষয়ক প্রতিজ্ঞা অন্তর্ভূক্ত করেছিল। আদিপুস্তক ১২:৯, ১৬-১৮ দেখুন। এই স্থানে সংহারক দূতের প্রতি হিংসার খড়গ নিশ্চল করার উদ্দেশে দায়ূদ হোমবলি এবং মঙ্গল উপহার উসর্গ করেছিলেন । PKBeng 27.3
উসর্গের জন্য একটি অতীব অনুকূল সময় মনোনয়ন করা হয়েছিল- সপ্তম মাস যখন রাজ্যের সকল স্থান হতে প্রথা অনুসারে কুটীরবাস পর্বের ভোজে যোগদানের উদ্দেশে সমবেত হত। ভোজটি ছিল আনন্দ করার সর্বোৎকৃষ্ট একটি অনুষ্ঠান। শস্য চয়নের শ্রম শেষ এবং নূতন বছরের খাটুনির সময় এখনো উপস্থিত হয়নি, লোকেরা ছিল চিন্তামুক্ত এবং লোকেরা তাদের সময়ের পবিত্র আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের জন্য সময় দিতে পারত । PKBeng 28.1
নির্দ্ধারিত সময়ে দূর দূরান্তের অনেক দেশ হতে বহু সংখ্যক ইস্রায়েল ব্যয়বহুল আড়ম্বরপূর্ণ পোশাকে মন্দির প্রাঙ্গনে এসে সমবেত হত। দৃশ্যটি ছিল অস্বাভাবিক একটি জাঁকজমকপূর্ণ সমারোহ। শলোমন, ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা এবং লোকদের মধ্য হতে অতীব প্রভাবশালী লোকসহ শহরের অন্য একটি স্থান হতে ফিরে এসেছে, যে স্থান হতে তারা নিয়ম সিন্দুক নিয়ে এসেছেন। গিবিয়নের পর্বত শিখরে ধর্মধাম হতে পুরাকালীন “সমাগম-তাম্বু ও তাম্বুর মধ্যস্থিত সমস্ত পবিত্র পাত্র উঠিয়ে আনল (২বংশাবলি ৫:৫); এবং ইস্রায়েল জাতির প্রান্তর ভ্রমণ এবং তাদের কম্পন জয় এই সময় ব্যাপী, প্রথম অভিজ্ঞতার এসকল লালিত স্মৃতিসমূহ অতুৎকৃষ্ট গৃহে একটি স্থায়ী আবাসস্থল খুঁজে পেল যা- কাঠামোর স্থান অধিকার করার জন্য নির্মিত হয়েছিল। ঈশ্বরের আঙ্গুল দিয়ে, দুইখানি পাথর ফলকে লেখা দশ আজ্ঞা ধারণকারী পবিত্র সিন্দুকটি ধর্মধামে আনয়ন করার জন্যে শলোমন তার পিতা দায়ূদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলেন। প্রত্যেক ছয় পদক্ষেপের পরে তিনি বলি উৎসর্গ করলেন। সঙ্গীত এবং বাদ্যসহ এবং মহাসমারোহে, “যাজকেরা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক নিয়ে গিয়ে স্বস্থানে, উপাসনা ঘরের ভেতরে মহা পবিত্র স্থানে, স্থাপন করলেন।” ৭ পদ। “তারা উপাসনা ঘরের বাইরে এলে, তারা তাদের নির্দ্ধারিত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করলেন। গায়কদল- লেবীয় সন্তান শুভ্র মসিনা বস্ত্র পরে; করতাল, নেবল ও বীণাসহকারে যজ্ঞবেদীর পূর্ব প্রান্তে দাড়ালেন, এবং তূরীবাদক একশত কুড়িজন যাজক তাদের সঙ্গে ছিল।” ১২ পদ দেখুন । PKBeng 28.2
“সেই তূরীবাদকেরা ও গায়কেরা সকলে একরবে সদাপ্রভুর প্রশংসা ও স্তব করার জন্য এক ব্যক্তির ন্যায় উপস্থিত ছিল; এবং যখন তারা তূরী ও করতালাদি বাদ্যের সাথে মহাশব্দ করে তিনি মঙ্গলময় হাঁ, তার দয়া অনন্ত কালস্থায়ী, এই কথা বলে সদাপ্রভুর প্রশংসা করল, তৎকালে ঘর, সদাপ্রভুর ঘর মেঘে এমন পরিপূর্ণ হল যে, মেঘের দরুন যাজকেরা পরিচর্যা করার জন্য দাঁড়াতে পারল না; কেননা ঈশ্বরের ঘর সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হয়েছিল। ১৩, ১৪ পদ । PKBeng 28.3
এই মেঘের বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করতে পেরে, শলোমন বললেন, “সদাপ্রভু বলেছেন যে, তিনি ঘোর অন্ধকারে বাস করবেন। কিন্তু আমি তোমার এই বসতি ঘর পূর্ণ করালাম; এটি চিরকাল তোমার নিবাস-স্থান।” ২ বংশাবলি ৬:১, ২। PKBeng 29.1
“সদাপ্রভু রাজত্ব করেন, জাতিরা কাঁপছেন,
তিনি করূবদ্বয়ে আসীন, পৃথিবী টলছে।
সদাপ্রভু সিয়োনে মহান,
তিনি সমস্ত জাতির ওপরে উন্নীত ।
তারা তোমার মহ ও ভয়াবহ নামের স্তব করুক;
তিনি পবিত্র ।
রাজা বল ও বিচার ভালবাসে;
তুমি ন্যায় বিধি অটল করে থাক,
তুমি যাকোবের মধ্যে বিচার ও ধার্মিকতা
সাধন করে থাক ।
তোমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিষ্ঠা কর,
তাঁর পাদ-পীঠের অভিমুখে প্রণিপাত কর;
তিনি পবিত্র । গীতসংহিতাPKBeng 29.2
৯৯:১-৫।
ধর্মধামের “প্রাঙ্গনের মধ্যস্থলে” “পিত্তলময় এক মঞ্চ” তৈরী করলেন, যা পাচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত প্রস্থ ও তিন হাত উচ্চ।” শলোমন তার ওপরে দাঁড়িয়ে হাত বিস্তার করে তার সামনের বিশাল জনতাকে আশীর্বাদ করলেন। “আর সমস্ত ইস্রায়েল সমাজ দাড়িয়ে রইল।” ২ বংশাবলি ৬:১৩, ৩। PKBeng 29.3
শলোমন বললেন, “ধন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর; তিনি আমার পিতা দায়ূদের কাছে আপনার মুখে এই কথা বলেছিলেন, --- আপন নাম স্থাপনের জন্য আমি যিরূশালেম মনোনীত করেছি।” ৪-৬ পদ। PKBeng 29.4
পরে শলোমন সমস্ত লোকের সামনে হাঁটু পেতে উৎসর্গীকরণ প্রার্থনা উচ্চারণ করলেন। স্বর্গের দিকে আঙ্গুল বিস্তার করলেন, এই সময় সমবেত জনতা ভূমিতে অধোমুখো হলে, রাজা নিবেদন করলেন: “হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, স্বর্গে কি পৃথিবীতে তোমার তুল্য ঈশ্বর নেই। সর্বান্তঃকরণে যারা তোমার সাক্ষাতে চলে, তোমার সেই দাসদের পক্ষে তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করে থাক।” PKBeng 29.5
“কিন্তু ঈশ্বর কি সত্য সত্যই পৃথিবীতে মানুষের সাথে বাস করবেন? দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ তোমাকে ধারণ করতে পারে না, তবে আমার তৈরী করা এই ঘর কি পারবে? তথাপি হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর তুমি আপন দাসের প্রার্থনাতে ও বিনতীতে মনোযোগ কর, তোমার দাস তোমার কাছে যে কাকুক্তি ও প্রার্থনা করছে, তা শুন। যে স্থানের বিষয়ে তুমি বলেছ যে, তোমার নাম সেই স্থানে রাখবে, সেই স্থানের অর্থাৎ এই ঘরের প্রতি তোমার চোখ দিনরাত খোলা থাকুক এবং এই স্থানের দিকে মুখ করে তোমার দাস যে প্রার্থনা করে তা শুনিও। আর তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েল যখন এই স্থানের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করবে, তখন তাদের সকল বিনতীতে কর্ণপাত করো; তোমার নিবাস-স্থান হতে, স্বর্গ হতে, তা শুন, এবং শুনে ক্ষমা করো ।... PKBeng 30.1
“তোমার প্রজা ইস্রায়েল তোমার বিরুদ্ধে পাপ করার কারণে শত্রুর সামনে আহত হলে পর যদি পুনর্বার ফিরে এবং এই ঘরে তোমার নামের স্তব করে তোমার কাছে প্রার্থনা ও বিনতি করে তবে তুমি স্বর্গ হতে তা শুন, এবং আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করো, আর তাদেরকে ও তাদের পিতৃপুরুষদেরকে এই দেশ দিয়েছ, এখানে পুনর্বার তাদেরকে আনবে। PKBeng 30.2
তোমার বিরুদ্ধে তাদের পাপ প্রযুক্ত যদি আকাশ রুদ্ধ হয়, বৃষ্টি না হয়, আর লোকেরা যদি এই স্থানের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে, তোমার নামের স্তব করে, এবং তোমা হতে দুঃখ পাওয়াতে আপন আপন পাপ হতে ফিরে, তবে তুমি স্বর্গে তা শুন, এবং আপন দাসত্বের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করো, ও তাদের গন্তব্য সংপথ তাদেরকে দেখাও, এবং তুমি আপন প্রজাদেরকে যে দেশ অধিকারার্থে দিয়েছ তোমার সেই দেশে বৃষ্টি পাঠাও । PKBeng 30.3
“দেশের মধ্যে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, যদি মহামারী হয়, যদি শস্যের শেষ কি হানি কি পঙ্গপাল কিম্বা কীট হয়, যদি তা তাদের শত্রুরা তাদের দেশে নগরে নগরে তাদেরকে অবরোধ করে, যদি কোন মারীর বা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; তাহলে কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, যারা প্রত্যেকে আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্মব্যথা জানে এবং এই ঘরের দিকে আঙ্গুল তুলে কোন প্ৰাৰ্থনা কি বিনতি করে; তবে তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গ হতে তা শুন, এবং ক্ষমা করো, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব সমস্ত পথ অনুযায়ী প্রতিফল দেও, তুমি ত তাদের অন্তঃকরণ জান;... যেন আমাদের পিতৃপুরুষদের তুমি যে দেশ দিয়েছ, সেই দেশে তারা যত দিন থাকে, তোমার পথে চলবার জন্য তোমাকে ভয় করে।” PKBeng 30.4
“তাছাড়া তোমার প্রজা ইস্রায়েল গোষ্ঠির নয়, এমন কোন বিদেশী লোক যখন তোমার মহানাম, তোমার বলবান হাত ও তোমার বিস্তারিত বাহুর উদ্দেশে দূর দেশ হতে আসবে, যখন তারা এসে এই ঘরের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করবে, তখন তুমি স্বর্গ হতে, তোমার নিবাস-স্থান হতে তা শুন; এবং সেই বিদেশী লোক তোমার কাছে যে কিছু প্রার্থনা করবে তদনুসারে করো; যেন তোমার প্রজা ইস্রায়েলের ন্যায় পৃথিবীর সমস্ত জাতি তোমার নাম জানে, ও তোমাকে ভয় করে, এবং তারা যেন জানতে পায় যে, আমার তৈরী এই ঘরের ওপরে তোমারই নাম কীর্তিত।” PKBeng 31.1
“তুমি আপন প্রজাদেরকে কোন পথে প্রেরণ করলে, যদি তারা আপন শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে বের হয়, এবং তোমার মনোনীত এই নগরের অভিমুখে ও তোমার নামের জন্য আমার জন্য ঘরের দিকে মুখ করে তোমার কাছে প্রার্থনা করে, তবে তুমি স্বর্গ হতে তাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুন, এবং তাদের বিচার নিষ্পত্তি কর।” PKBeng 31.2
“তারা যদি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে,- কেননা পাপ না করে, এমন কোন মানুষ নেই,- এবং তুমি যদি আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে শত্রুর হাতে তাদেরকে সমর্পণ কর, ও শত্রুরা তাদেরকে বন্দি করে দূরের কিম্বা কাছের কোন দেশে নিয়ে যায়; তথাপি যে দেশে তারা বন্দিরূপে নীত হয়েছে, সেই দেশে যদি মনে মনে বিবেচনা করে ও ফিরে, আপনাদের বন্দিত্বের দেশে তোমার কাছে বিনতি করে বলে, আমরা পাপ করেছি, অপরাধী হয়েছি ও দুষ্টামি করেছি; এবং যে দেশে বন্দিরূপে নীত হয়েছে, সেই বন্দিত্বের দেশে যদি সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণের সাথে তোমার কাছে ফিরে আসে, এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরকে যে দেশ দিয়েছ, আপনাদের সেই দেশের অভিমুখে, তোমার নামের জন্য আমার তৈরী করা ঘরের দিকে মুখ করে যদি প্রার্থনা করে; তবে তুমি স্বর্গ হতে, তোমার বাসস্থান হতে তাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুন, এবং তাদের বিচার নিষ্পত্তি কর, আর তোমার যে প্রজারা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে, তাদেরকে ক্ষমা করো। PKBeng 31.3
“এখন, হে আমার ঈশ্বর বিনতি করি, এই স্থানে যে প্রার্থনা হবে, তৎপ্রতি যেন তোমার চক্ষু উন্মীলিত ও কর্ণ অবহিত থাকে। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, এখন তুমি উঠে তোমার বিশ্রাম-স্থানে গমন কর; তুমি ও তোমার শক্তির সিন্দুক। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমার যাজকেরা পরিত্রাণ বস্ত্র পরিধান করুক ও তোমার সাধুরা মঙ্গলে আনন্দ করুক। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি আপন অভিষিক্ত লোকদের মুখ ফিরিয়ে দিও না, আপনা দাস দায়ূদের [প্রতিকৃত| বিবিধ দয়া স্মরণ করো।” ১৪-৪২ পদ । PKBeng 32.1
শলোমন প্রার্থনা শেষ করলে, “আকাশ হতে আগুন নেমে হোম ও বলি সকল গ্রাস করল।” যাজকেরা ধর্মধামে ঢুকতে পারলেন না কারণ সদাপ্রভুর প্রতাপে ঘর পরিপূর্ণ হল।” “তখন ইস্রায়েল সন্তানেরা সে সকল তা দেখতে পেল- আর তারা নত হয়ে প্রস্তর বাঁধা ভূমিতে উবুড় হয়ে প্রণিপাত করল, এবং সদাপ্রভুর স্তব করে বলল, তিনি মঙ্গলময় হ্যাঁ, তাঁর দয়া অন্তকাল স্থায়ী। ” PKBeng 32.2
পরে রাজা এবং সমস্ত লোক সদাপ্রভুর সামনে যজ্ঞ করল। “এই রূপে রাজা ও সমস্ত লোক ঈশ্বরের ঘর প্রতিষ্ঠা করলেন।” ২ বংশাবলি ৭:১-৫। রাজ্যের প্রত্যেক স্থান হতে “হমাতের প্রবেশ স্থান অবধি, মিশর পর্যন্ত মহা সমাজ সাত দিন উৎসব করলেন। পরবর্তী সপ্তাহ সুখী জনতা ধর্মধামের উৎসব পালন করে কাটাল। পুরো স্বর্গ এবং আনন্দের সময় যাপনের শেষে লোক সমাজ তাদের গৃহে ফিরে গেল, “সদাপ্রভু দায়ূদের, শলোমনের ও আপন প্ৰজা ইস্রায়েলের যে সকল, মঙ্গল করেছিলেন, তৎপ্রযুক্ত তারা আনন্দিত ও হৃষ্টচিত্ত হয়েছিল।” ৮, ১০ পদ । PKBeng 32.3
রাজা লোকদেরকে উৎসাহদান করার জন্য তার ক্ষমতাধীন সমস্ত কিছুই করলেন যেন তারা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের কাছে এবং তাঁর সেবায় নিজেদেরকে সমর্পণ করে, এবং তাঁর নাম মহিমান্বিত করে। আর এখন আরও একবার, গিবিয়নে তার প্রাথমিক শাসনামলের ন্যায় ইস্রায়েলের শাসককে ঐশ্বরিক পরিগ্রহণ এবং আশীর্বাদের প্রমাণ দেয়া হল। “পরে সদাপ্রভু রাতে শলোমনকে দর্শনে বললেন: “আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি ও যজ্ঞ-গৃহ বলে এই স্থান আমার জন্য মনোনীত করেছি। আমি যদি আকাশ রুদ্ধ করি, আর বৃষ্টি না হয়, কিম্বা দেশ বিনষ্ট করতে পঙ্গপালদেরকে আজ্ঞা করি, অথবা আপন প্রজাদের মধ্যে মহামারী পাঠাই, আমার প্রজারা, যাদের ওপরে আমার নাম কীর্তিত হয়েছে, তারা যদি নম্র হয়ে প্রার্থনা করে ও আমার মুখের অন্বেষণ করে ও আপনাদের কুপথ হতে ফিরে, তবে আমি স্বর্গ হতে তা শুনব, তাদের পাপ ক্ষমা করব ও তাদের দেশ আরোগ্য করব । এইস্থানে যে প্রার্থনা হবে, তার প্রতি এখন আমার চোখ ও কান খোলা থাকবে। কারণ এই ঘরে যেন আমার নাম চিরকালের জন্য থাকে, এই জন্য আমি এখন এটি মনোনীত ও পবিত্র করলাম, এবং এই স্থানে সর্বদা আমার চোখ ও আমার হৃদয় থাকবে।” PKBeng 32.4
ইস্রায়েল যদি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকত, তাহলে এই গৌরবময় ঘর চিরকাল দাড়িয়ে থাকত, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের জন্য তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের একটি চিরস্থায়ী চিহ্ন। ঈশ্বর বললেন, “আর যে বিজাতীয় সন্তানেরা সদাপ্রভুর পরিচর্যা করার জন্য, তাঁর নামের প্রতি প্রেম দেখাবার জন্য ও তাঁর দাস হবার জন্য সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেউ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করে রাখে, তাদেরকে আমি আপন পবিত্র পর্বতে আনব, এবং আমার প্রার্থনা-ঘরে আনন্দিত করব; তাদের হোমবলি ও অন্য বলি সকল আমার যজ্ঞবেদীর ওপরে গ্রাহ্য হবে, যেহেতু আমার ঘর সর্ব জাতির প্রার্থনার ঘর বলে আখ্যাত হবে।” যিশাইয় ৫৬:৬, ৭। PKBeng 33.1
গ্রহণযোগ্য হবার এসকল নিশ্চয়তার সাথে, সদাপ্রভু রাজার সামনে কর্তব্যের পথ সরল করলেন, তিনি বললেন, “আর তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলতো, তেমনি তুমিও যদি আমার সাক্ষাতে চল, আমি তোমাকে যে সমস্ত আজ্ঞা দিয়েছি, যদি তদনুযায়ী কাজ কর, এবং আমার নিয়ম ও শাসন সকল পালন কর; তবে ইস্রায়েলের ওপরে কর্তৃত্ব করতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হবে না এই বলে আমি তোমার বাবা দায়ূদের সাথে যে নিয়ম করেছিলাম, তদনুসারে তোমার রাজ সিংহাসন স্থির করব।” ২ বংশাবলি ৭:১৭, ১৮। PKBeng 33.2
যদি শলোমন নম্রতায় সদাপ্রভুর সেবা করা হতে বিরত না থাকতেন তাহলে তিনি তার গোটা শাসনকালে চারদিকের জাতিদের ওপরে একটি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন, যে জাতিরা তার পিতা দায়ূদের শাসনকাল এবং তার নিজের শাসনকালের প্রথম বছরগুলোর জ্ঞানের বাক্য এবং মহৎ কাজে সন্তোষজনকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। উন্নতি এবং জাগতিক সম্মানের ভয়াবহ প্রলোভনসমূহের দূরদর্শন লাভ করে ঈশ্বর শলোমনকে ধর্মদ্রোহিতার মন্দতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিলেন এবং আগে থেকে পাপের ভয়াবহ পরিনতি সম্পর্কে বলে দিলেন। এমন কি সদ্য নির্মিত মনোরম ধর্মধাম সম্পর্কে তিনি বললেন, “সমস্ত জাতির মধ্যে এটি প্রবাদের উপহাসের আষ্পদ হবে, যদি ইস্রায়েল সন্তানেরা “আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ” করে, পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত হয় । ২০, ২২ পদ । PKBeng 33.3
তিনি স্বর্গীয় বার্তা দ্বারা শক্তিমন্ত হলেন মহা উৎফুল্ল হলেন, যেহেতু ইস্রায়েলের পক্ষে তার প্রার্থনা শুনা হয়েছে, শলোমন এখন তার রাজত্বের অতীব গৌরবময় সময়ে প্রবেশ করলেন, যখন “পৃথিবীর সমস্ত রাজা” তার কাছে আসতে লাগলেন “ঈশ্বর শলোমনের চিত্তে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন তার সেই জ্ঞানের কথা শুনার জন্য।” ২বংশাবলি ৯:২৩। অনেকে এসেছিলেন, তার শাসন পদ্ধতি দেখতে এবং সংকটময় মুহূর্তে কিরূপ আচরণ করতে হবে, সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে।PKBeng 34.1
এসকল লোক শলোমনের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে, তিনি তাদেরকে সমস্ত কিছুর স্রষ্টা ঈশ্বর সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন, আর তারা মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের প্রেম ইস্রায়েলের ঈশ্বর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে তাদের দেশে ফিরে যেতেন। প্রকৃতির কাজের মধ্যে তারা এখন তাঁর প্রেম এবং তাঁর চরিত্রের একটি প্রকাশ সন্দর্শন করল; এবং অনেকে তাঁর ঈশ্বরের আরাধনা করতে লাগল । PKBeng 34.2
রাষ্ট্রের দায়িত্বভার বহন করার সময়ে শলোমনের নম্রতা যখন তিনি ঈশ্বরের সামনে উপলব্ধি করলেন, “আমি ক্ষুদ্র বালক মাত্র” (১ রাজাবলি ৩:৭), ঈশ্বরের প্রতি তার লক্ষণীয় ঐশ্বরিক বিষয়ের জন্য তার গভীর শ্রদ্ধা, তার আত্ম- বিশ্বাস এর সমস্ত কিছুর অসীম স্রষ্টাকে তাঁর উচ্চে তুলে ধরা- তাঁর চরিত্রের এসকল গুণাবলি, সমকক্ষ হবার এতই যোগ্য, যা মন্দির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সংযুক্ত সেবাকাজের সময় ব্যাপী প্রকাশিত হয়েছিল, যখন উৎসর্গীকরণ প্রার্থনায় তিনি একজন আবেদনকারীর নম্রতায় নতজানু হয়েছিলেন, অদ্য খ্রীষ্টের অনুসারীদের উচিত সমাদরের এবং ঈশ্বর ভয়ের আত্মা হারিয়ে ফেলবার মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রহরী নিযুক্ত করা। স্রষ্টার সামনে উপস্থিত হওন সম্পর্কে শাস্ত্র মানুষদের শিক্ষা দেয়- একজন স্বর্গীয় মধ্যস্থতায় বিশ্বাসের মাধ্যমে নম্রতা এবং ভীত সহকারে । গীত রচক বলেন :- PKBeng 34.3
“কেননা সদাপ্রভু মহান্ ঈশ্বর,
যিনি সব দেবতার ওপরে মহান্ রাজা ।...
এস, আমরা প্রণিপাত করি, প্রণত হই,
জানি আমাদের নির্মাতা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে জানুপাতি ।”PKBeng 35.1
গীতসংহিতা ৯৫:৩-৬।
আমরা যখন তাঁর কাছে আমাদের আবেদন রাখি, তখন প্রকাশ্য এবং গোপন আরাধনায়, ঈশ্বরের সামনে অবনত মস্তকে জানুপাত করা আমাদের সুযোগ। আমাদের আদর্শ যীশু, “জানু পেতে প্রার্থনা করলেন।” লূক ২২:৪১। তাঁর শিষ্যদের সম্পর্কেও বলা আছে যে, তারাও “হাঁটু পেতে প্রার্থনা করলেন। প্রেরিত ৯:৪ । পৌল বলেছেন, “সেই পিতার কাছে আমি জানু পাতছি।” ইফিষীয় ৫:১৪। ইষ্রা ঈশ্বরের সামনে জানু পাত পূর্বক ইস্রায়েলের পাপ স্বীকার করেছিলেন। ইষ্রা ৯:৫, দানিয়েল “দিনের মধ্যে তিনবার জানু পেতে আপন ঈশ্বরের সামনে প্রার্থনা ও স্তব গান করলেন।” দানিয়েল ৬:১০। PKBeng 35.2
তাঁর অসীম মহত্ত্ব এবং তাঁর উপস্থিতির একটি উপলব্ধি বোধ দ্বারা প্রকৃত সমাদর অনুপ্রাণিত এবং সঞ্চারিত হয়। এই অদৃশ্য ব্যক্তির অনুভূতির সাথে প্রতিটি হৃদয় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়। প্রার্থনায় সময় এবং কাল পবিত্র, কেননা ঈশ্বর তথায় বর্তমান। আর যেমন মনোভাব এবং আচরণে ভক্তি দেখানো হয়, তদ্রূপ অনুপ্রেরণা দানকারী অনুভূতিও গভীরতম হবে। PKBeng 35.3
“তার নাম পবিত্র ও ভয়াবহ” গীত রচক বলেন, গীতসংহিতা ১১৯:৯। দূতেরা যখন তার নাম উচ্চারণ করেন, তখন তারা তাদের মুখমন্ডল আচ্ছাদন করেন। তাহলে আমরা যারা পতিত এবং পাপপূর্ণ আমাদের কত অধিক সমাদরের সাথেই না “তার নাম উচ্চারণ করব!” PKBeng 35.4
বৃদ্ধ বৃদ্ধা এবং যুবক যুবতিদের পক্ষে শাস্ত্রের বাণী উচ্চারণ করা ভালই হবে যা দেখায় কিরূপ ঈশ্বরের বিশেষ উপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত স্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা উচিত। “যে স্থানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ, তা পবিত্র ভূমি।” যাত্রাপুস্তক ৩:৫ । দূতের দর্শনটি লক্ষ্য করে যাকোব বললেন, “অবশ্য এই স্থানে সদাপ্রভু আছেন, আর আমার তা জানা ছিল না। ...এ নিতান্তই ঈশ্বরের ঘর, এ স্বর্গের দ্বার।” আদিপুস্তক ২৮:১৬, ১৭। PKBeng 35.5
উসর্গকরণ অনুষ্ঠানের সময় যা বলা হয়েছিল তাতে শলোমন সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে উপস্থিত লোকদের মধ্য হতে, কু-সংস্কার দূর করার চেষ্টা করেছিলেন যা পৌত্তলিকদের মনকে মেঘাচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। স্বর্গের ঈশ্বর হাত দ্বারা নির্মিত অবরুদ্ধ, পৌত্তলিকদের দেবতাদেও মত না; তথাপি যখন তারা তার আরাধনার জন্য উসর্গ করা ঘরে মিলিত হয়, তখন তিনি তাঁর আত্মায় তাঁর লোকদের সাথে সাক্ষা করেন । PKBeng 36.1
বহু শতাব্দি পরে পৌল এই বাক্যে একই সত্য শিক্ষা দিয়েছিলেন: “ঈশ্বর যিতি জগ ও তন্মধ্যস্থ বস্তু নির্মাণ করেছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং তিনি হাতে তৈরী মন্দিরে বাস করেন না; কোন কিছুর অভাব প্রযুক্ত মানুষদের হাত দ্বারা সেবিতও হন না, তিনিই সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিচেছন। আর তিনি এক ব্যক্তি হতে মানুষদের সব জাতিকে উপন্ন করেছেন, যেন তারা সমস্ত পৃথিবীতে বাস করে; তিনি তাদের নির্দিষ্ট কাল ও নিবাসের সীমা স্থির করেছেন; যেন তারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, যদি কোন মতে হাতড়িয়ে তাঁর উদ্দেশ পায়; অথচ তিনি আমাদের কারও কাছ থেকে দূরে নন। কেননা তাঁতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্ত্বা।” PKBeng 36.2
“ধন্য সেই জাতি, যার ঈশ্বর সদাপ্রভু,
সেই লোকসমাজ, যাকে তিনি নিজ
অধিকারে মনোনীত করেছেন।
সদাপ্রভু স্বর্গ হতে দৃষ্টিপাত করেন
তিনি সব মানুষ-সন্তানকে নিরীক্ষণ করেন ।
তিনি আপন বাসস্থান হতে দৃষ্টিপাত করেন
পৃথিবীর সমস্ত নিবাসীর ওপরে।”
“সদাপ্রভু স্বর্গে আপন সিংহাসন স্থাপন করেছেন,
তাঁর রাজ্য কর্তৃত্ব করে সমস্তের ওপরে।”PKBeng 36.3
“হে ঈশ্বর পবিত্রতায় তোমার পথ,
ঈশ্বরের তুল্য মহান্ ঈশ্বর কে?
তুমিই আশ্চর্য-কার্যকারী ঈশ্বর,
তুমি জাতিদের মধ্যে তোমার পরাক্রম
জ্ঞাত করেছ।”PKBeng 37.1
—গীতসংহিতা ৩৩:১২-১৪, ১০৩:১৯; ৭৭:১৩, ১৪।
ঈশ্বর যদিও হাতে তৈরী ধর্মধামে বাস করেন না, তথাপি তিনি তাঁর উপস্থিতি দ্বারা তাঁর লোকদের উপস্থিতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে যখন তাঁর অন্বেষণে সমবেত হয়, তাদের পাপ উপলব্ধি করার জন্য এবং একে অন্যের জন্য প্রার্থনা করার জন্য তখন তিনি তাঁর আত্মা দ্বারা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু তার আরাধনা করার জন্য সমবেত হয়ে থাকেন, তাদের উচিত, সমস্ত মন্দতা দূর করে দেয়া । PKBeng 37.2
যদি তারা আত্মায় ও সত্যে এবং পবিত্র শোভায় তাঁর আরাধনা না করে, তাদের সমবেত হবার কোন অর্থই হবে না। ঐ লোকদের সম্পর্কে সদাপ্রভু বলেন, “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সমাদর করে, কিন্তু তাদের অন্তঃকরণ আমা হতে দূরে থাকে।” মথি ১৩:৮-৯। যারা ঈশ্বরের আরাধনা করে, তাদেরকে “আত্মায় ও সত্যে” তাঁর আরাধনা করতে হবে, কারণ বাস্তবিক পিতা এরূপ আরাধনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন।” যোহন ৪:২৩। PKBeng 37.3
“কিন্তু সদাপ্রভু আপন পবিত্র মন্দিরে আছেন; সমস্ত পৃথিবী তাঁর সামনে নীরব থাক।” হবক্কুক ২:২০।PKBeng 37.4