Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

ভাববাদিগণের এবং রাজগণের কাহিনী

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ১০—কঠোর ভর্ৎসনার বাণী

    একবার এলিয় করিৎ স্রোতের ধারে পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। সেখানে দীর্ঘ কয়েক মাস যাবৎ অলৌকিক উপায়ে তাকে আহার প্রদান করা হয়েছিল । পরে অনাবৃষ্টি হেতু-স্রোত শুকিয়ে গেলে, ঈশ্বর তাঁর দাসকে একটি পৌত্তলিক দেশে আশ্রয় খুঁজতে বললেন। “উঠ, সীদোনের অন্তঃপাতী সারিফতে গিয়া সেখানে বাস কর; দেখ, আমি তথায় এক বিধবাকে তোমার খাদ্য দ্রব্য যোগাইবার আজ্ঞা দিয়াছি।” PKBeng 104.1

    এই স্ত্রীলোকটি একজন ইস্রায়েলী নয়। এই স্ত্রীলোকটি কখনও সুযোগ সুবিধা এবং আশীর্বাদ লাভ করতে পারেনি, যা ঈশ্বরের মনোনীত লোকেরা ভোগ করতো; কিন্তু সে ছিল একজন সত্য ঈশ্বরের বিশ্বাসী এবং সে তার পথে প্রতিভাত আলোর পথেই চলত। আর এখন, যখন ইস্রায়েল দেশে এলিয়ের কোন নিরাপত্তা ছিল না, তখন ঈশ্বর একটি আশ্রয় স্থানের জন্য তার বাড়ীতে পাঠালেন। PKBeng 104.2

    “তখন তিনি উঠিয়া সারিফতে যাত্রা করিলেন, আর যখন সেই নগরের দ্বারে উপস্থিত হইলেন, দেখ, সেই স্থানে এক বিধবা কাঠ কুড়াইতেছে। তিনি তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, বিনয় করি, তুমি একটি পাত্রে করিয়া কিঞ্চিৎ জল আন, আমি পান করিব। সে স্ত্রীলোকটি তাহা অনিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে তিনি তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, বিনয় করি, আমার জন্য একখন্ড রুটী হাতে করিয়া আনিও।” PKBeng 104.3

    এই দারিদ্র নিপীড়িত পরিবারটি দুর্ভিক্ষের কষাঘাতে জরজর হয়েছিল, এবং অপ্রচুর আহারীয় দ্রব্যের সংস্থানেও যেন ব্যর্থ হল। আর এমন দিনে এলিয় এসে উপস্থিত হলেন যখন বিধবার ভয় হচ্ছিল যে, তার হয়তো জীবনের আশা ত্যাগ করে তার দারিদ্র্য দূর করার জন্য জীবন্ত ঈশ্বরের শক্তিতে নির্ভর করতে হবে। কিন্তু তার ভয়ানক চরম অবস্থার মধ্যে সে তার অতিরিক্ত অনুরোধ এবং আদেশ পালন করার মাধ্যমে তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য বহন করল, যিনি তার শেষ মুষ্টি খাদ্য তার সাথে সহভাগ করতে বললেন। PKBeng 104.4

    খাদ্য এবং পানীয়ের জন্য এলিয়ের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিধবা স্ত্রীলোকটি বলল, তোমার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য আমার ঘরে একটি পিষ্টকও নেই; কেবল জালায় এক মুষ্টি ময়দা ও ভাঁড়ে কিঞ্চিৎ তৈল আছে; আর দেখ, আমি খান দুই কাঠ কুড়াচিছ তা নিয়ে গিয়ে আমার ও আমার ছেলের জন্য এটি পাক করব; পরে আমরা তা খেয়ে মরব। এলিয় তাকে বললেন, “ভয় করিও না; যাহা বলিলে, তাহা কর গিয়া, কিন্তু প্রথমে তাহা হইতে আমার জন্য একটি ক্ষুদ্র পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া আন; পরে আপনার ও ছেলেটির জন্য প্রস্তুত করিও। কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে দিন পর্যন্ত সদাপ্রভু ভূতলে বৃষ্টি না দেন, সেই দিন পর্যন্ত তোমার ময়দার জালা শূন্য হইবে না ও তৈলের ভাঁড় শুকাইয়া যাইবে না।” ১ রাজা ১৭:১৩-১৫। PKBeng 105.1

    এটি ছাড়া বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠতর পরীক্ষা আর হতে পারে না। অদ্যাবধি বিধবা সকল অতিথিদের সাথে দয়া এবং উদারতার সাথে আচরণ করেছেন। তার এবং তার সন্তানের যত বড়ই অভাব থাকুক না কেন তার প্রতিটি অভাবের যোগান দেয়াও ইস্রায়েলের নির্ভর করে, “এলিয়ের কথা মত” কাজ করে সে অতিথি সেবার এই চূড়ান্ত বিশ্বাসের মুকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল । PKBeng 105.2

    এই ফৈনিকিয়ার স্ত্রীলোকটির দ্বারা ঈশ্বরের ভাববাদীর প্রতি প্রদর্শিত অতিথি সেবাটি ছিল চমৎকার এবং তার-বিশ্বাস এবং উদারতার পুরস্কারটিও ছিল চমৎকার। আর সে এবং এলিয় এবং সেই স্ত্রীলোকের পরিজন অনেকদিন পর্যন্ত ভোজন করল। সদাপ্রভু এলিয়ের দ্বারা যে বাক্য তদনুসারে ঐ ময়দার জালা শূন্য হল না। তৈলের ভাঁড়ও শুকাল বলেছিলেন না । PKBeng 105.3

    এই সকল ঘঁনার পরে সেই স্ত্রীলোকের, সেই গৃহস্বামিনীর পুত্র পীড়িত হইল, এবং তাহার পীড়া এমন উৎকট হইল যে, তাহার শরীরে আর শ্বাস রইল না। তখন স্ত্রীলোকটি এলিয়কে কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার সাথে আমার বিষয় কি? আপনি আমার অপরাধ স্মরণ করাইতে ও আমার পুত্রকে মারিয়া ফেলিতে আমার এখানে আসিয়াছেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, তোমার পুত্রটি আমাকে দেও। পরে তিনি তাহার ক্রোড় হইতে ছেলেটিকে লইয়া উপরে আপনার থাকিবার কুঠরীতে গিয়া আপন শয্যায় শোয়াইয়া দিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুক ডাকিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, আমি যে বিধবার বাটীতে প্রবাস করিতেছি, তুমি কি তাহার পুত্রকে মারিয়া ফেলিয়া তাহারও উপরে অমঙ্গল উপস্থিত করিলে? পরে তিনি বালকটির উপরে তিনবার আপন শরীর লম্বমান করিয়া সদাপ্রভুকে ডাকিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, বিনয় করি, এই বালকের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়া আসুক। তখন সদাপ্রভু এলিয়ের রবে কর্ণপাত করিলেন, তাহাতে বালকটির প্রাণ তাহার মধ্যে ফিরিয়া আসিল, সে পুনর্জীবিত হইল । পরে এলিয় বালকটিকে লইয়া উপরিস্থ কুঠরী হইতে গৃহমধ্যে নামিয়া গিয়া তাহার মাতার কাছে সমর্পণ করিলেন। আর এলিয় কহিলেন, দেখ, তোমার পুত্র জীবিত। তাহাতে সেই স্ত্রী এলিয়কে কহিল, এখন আমি জানিতে পারিলাম আপনি ঈশ্বরের লোক এবং সদাপ্রভুর যে বাক্য আপনার মুখে আছে, তাহা সত্য।” ১৭-২৪। PKBeng 105.4

    সারিফতের বিধবা এলিয়ের সঙ্গে তার খাদ্য সহভাগ করেছিল, এবং বিনিময়ে তার জীবন এবং তার ছেলে রক্ষা পেয়েছিল। আর যারা সংকট এবং অভাবের সময়ে অন্যান্য অত্যন্ত অভাব গ্রস্থ লোকদের সহানুভূতি প্রদর্শন এবং সাহায্য করে ঈশ্বর তাদের সকলের কাছ মহা আশীর্বাদ প্রতিজ্ঞা করেছেন। তিনি বদলিয়ে যাননি। এলিয়ের সময়ে তাঁর যে ক্ষমতা ছিল, তদপেক্ষা সেই ক্ষমতা এখন কোন মতেই কম নহে। আমাদের ত্রাণকর্তা কর্তৃক যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, তার নিশ্চয়তা এখন কোন মতেই কম নয়, “যে ভাববাদীকে ভাববাদী বলিয়া গ্রহণ করে, সে ভাববাদীর পুরস্কার পাইবে।” মথি ১০:৪১। PKBeng 106.1

    “তোমরা অতিথি সেবা ভুলে যেও না; কেননা তদ্বারা কেহ কেহ না জেনে দূতগণেরও আতিথ্য করেছেন।” ইব্রীয় ১৩:২। এই কথাগুলো সময়ের ব্যবধানে এর কোন ক্ষমতা হারায় নি। আমাদের স্বর্গস্থ পিতা এখনও তাঁর PKBeng 106.2

    সন্তানদের চলা পথে সুযোগ সুবিধা রাখেন যা অগোচরে আশীর্বাদ স্বরূপ; এবং যারা এসকল সুযোগ সমূহের সদ্ব্যবহার করে, তারা মহা আনন্দ খুঁজে পায়। “আর যদি ক্ষুধিত লোককে তোমার প্রাণের ইষ্ট ভক্ষ্য দেও, ও দুঃখার্ত প্রাণীকে আপ্যায়িত কর, তবে অন্ধকারে তোমার দীপ্তি উদিত হইবে, ও তোমার তিমির মধ্যাহ্নের সমান হইবে। আর সদাপ্রভু নিয়ত তোমার পথ প্রদর্শন করিবেন, মরুভূমিতে তোমার প্রাণ তৃপ্ত করিবেন, ও তোমার অস্থি সকল বলবান করিবেন, তাহাতে তুমি জলসিক্ত উদ্যানের ন্যায় হইবে এবং এমন উনুইর ন্যায় হইবে, যাহার জল শুকায় না।” যিশা ৫৮:১০, ১১। PKBeng 107.1

    অদ্য, খ্রীষ্ট তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের বলেন, “যাহারা তোমাদিগকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর যাহারা আমাকে গ্রহণ করে, সে আমার প্রেরণকর্তাকেই গ্রহণ করে।” তাঁর নামে যে কোন দয়ার কার্য প্রদর্শন করা হয়েছে, তা অস্বীকৃত এবং অপুরস্কৃত থাকবে না। আর একই সহানুভূতিশীল স্বীকৃতিতে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পরিবারের দুর্বলতম এবং বিনীত ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করেন। “যে কেহ ক্ষুদ্রগণের মধ্যে কোন এক ব্যক্তিকে শিষ্য বলিয়া কেবল এক বাটি শীতল জল পান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, সে কোন মতে আপনার পুরষ্কার হইতে বঞ্চিত হইবে না।” মথি ১০:৪০, ৪২। PKBeng 107.2

    দীর্ঘ অনাবৃষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের বছরের মধ্য দিয়ে, এলিয় একান্ত ভাবে প্রার্থনা করেছিলেন যেন, ইস্রায়েলের অন্তঃকরণ প্রতিমা পূজা হতে ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ হওয়ার প্রতি ফিরে আসে। ধৈর্য সহকারে ভাববাদী অপেক্ষা’ করলেন, যখন প্রভুর হাত জোরালভাবে আঘাতপ্রাপ্ত দেশের ওপরে ছিল । তিনি যখন স্বচক্ষে দেখলেন, চারদিকে দুঃখ কষ্ট এবং অভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার হৃদয় হতাশাগ্রস্থ হল, আর তিনি চাইলেন যেন অতি সত্বর একটি সংস্কার কার্য সাধিত হয়। কিন্তু ঈশ্বও তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করছিলেন, এবং তাঁর দাসদের একমাত্র কর্তব্য ছিল বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করা এবং নিশ্চিত কার্যসাধনের সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। PKBeng 107.3

    আহাবের সময়ে যে ধর্ম ভ্রষ্টতা বিরাজ করছিল, বহু বছরের পাপ কাজের পরিণাম। ধাপের পর ধাপ, বছরের পর পর, ইস্রায়েলের ন্যায়ের পথ পরিত্যাগ করে আসছিল। যুগ যুগ ধরে তারা সত্য পথে চলতে অস্বীকার করে এসেছে, এবং অবশেষে বহু সংখ্যক লোক তাদেরকে অন্ধকারের ক্ষমতার কাছে সমর্পণ করল । PKBeng 108.1

    দায়ূদের শাসনকালের প্রায় এক শতাব্দি কেটেছে, ইস্রায়েল আনন্দ সহকারে, প্রতিদিনের অনুগ্রহের জন্য তাঁর ওপরে তাদের পূর্ণ নির্ভরশীলতার স্বীকৃতিতে প্রশংসা ও আনন্দ করে পরাপরের সাথে মিলিত হল । তাদের প্রশংসা গানের কথাগুলো শুনুন:PKBeng 108.2

    “হে আমাদের ত্রাণেশ্বর...
    তুমি প্রত্যুষের ও সন্ধ্যাকালের উদয়
    স্থানকে আনন্দ-গানময় করিয়া থাক ।
    তুমি পৃথিবীর তত্ত্বাবধান করিতেছ,
    উহাতে জল সেচন করিতেছ,
    উহা অতিশয় ধনাঢ্য করিয়াছ;
    ঈশ্বরের নদী জলে পরিপূর্ণ;
    এইরূপে ভুমি প্রস্তুত করিয়া তুমি মনুষ্য-
    দের শস্য প্রস্তুত করিয়া থাক ।

    “তুমি তাহার সীতা সকল জলসিক্ত করিয়া থাক,
    তুমি আলি সকল সমান করিয়া থাক,
    তুমি বৃষ্টি দ্বারা তাহা কোমল করিয়া থাক,
    তাহার অঙ্কুরকে আশীর্বাদ করিয়ার থাক ।

    “তুমি আপন মঙ্গলভাবের বসরকে মুকুট পরাইয়া থাক,
    তোমার চক্রচিহ্ন দিয়া পুষ্টিকর দ্রব্য ক্ষরে।
    তাহা প্রান্তরস্থ চরাণি-স্থান সকলেতে ক্ষরে;
    এবং উপ-পর্ববতগণ হর্ষরূপ কটিবন্ধন পায়। মাঠ সকল মেষপালে ভূষিত হয়,
    তলভূমি সকল শস্যে পরিচ্ছন্ন হয়;
    তাহারা আনন্দ ধ্বনি করে, তাহারা গান করে।”
    PKBeng 108.3

    গীত ৬৫:৫, ৮-১৩

    অতঃপর ইস্রায়েল এমন একজন ব্যক্তিকে চিনতে পারেনি, যিনি পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাদের বিশ্বাস ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা এই গীতগান করেছিল:PKBeng 109.1

    “তুমি তাহা জলধি-বস্ত্রে আচ্ছাদন করিয়াছিলে;
    পবর্বতগণের উপরে জল দাঁড়াইয়াছিল ।
    তোমার ভর্ৎসনায় সেই জল পলায়ন করিল,
    তোমার বজ্রনাদে তা বেগে প্রস্থান করিল।
    পবর্বতগণ উচ্চ হইল, সমস্থলী নিম্ন হইল,
    তুমি জলের জন্য যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছিলে, জল তথায় গেল ।
    তুমি সীমা স্থাপন করিয়াছ, যেন জল
    তাহা উল্লঙ্ঘন না করে,
    যেন ফিরিয়া পৃথিবীকে আচ্ছাদন না করে ।”
    PKBeng 109.2

    গীতসংহিতা ১০৪:৬-৯

    এটি অসীম এক ব্যক্তির ক্ষমতার সাহায্যে পৃথিবী, এবং সমুদ্র এবং আকাশে প্রকৃতির বস্তুব্যুহ বেঁধে রাখে। আর এই পঞ্চ স্রষ্টা তার সৃষ্ট জীবের সুখ স্বাচ্ছ্যন্দের স্বার্থে ব্যবহার করেন। “তাঁর মঙ্গল-ভাণ্ডার” “যথাকালে” “বৃষ্টি দিতে ও তোমার হাতের সমস্ত কর্মে আশীর্বাদ” করার জন্য প্রসারিত । দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১২।PKBeng 109.3

    তিনি তলভূমিতে প্রবাহ প্রেরণ করিয়া থাকেন;
    সে সকল পর্বতগণের মধ্যে ভ্রমণ করেন। সে সকল মাঠের সমস্ত পশুকে জল দেয়;
    বন গর্দভেরা তৃষ্ণা নিবারণ করে ।
    সে সকলের তীরে আকাশের পক্ষিগণ বাসা করে,
    ডালের মধ্য হইতে নিজ নিজ রব শুনায় ।
    তিনি আপন কক্ষ হইতে পবর্বতে জল সেচন করেন;
    তোমার কার্য্যের ফলে পৃথিবী পরিতৃপ্ত হয়।
    তিনি পশুগণের জন্য তৃণ অঙ্কুরিত করেন,
    মনুষ্যের সেবার জন্য ওষধি অঙ্কুরিত করেন;
    এইরূপে ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন,
    আর মর্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস,
    মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল,
    ও মর্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন...।

    “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ!
    তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্মাণ করিয়াছ;
    পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ ।
    ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ,
    তথায় জঙ্গমেরা থাকে তারা অগণ্য;
    ক্ষুদ্র ও প্রকান্ড কত জীবজন্তু থাকে ।
    তথায় পোতরাজি বিহার করে,
    তথায় সেই লিবিয়াথন থাকে, যাহা তুমি
    তথায় লিলা করিবার জন্য নির্মাণ করিয়াছ।
    ইহারা সকলেই তোমার অপেক্ষায় থাকে,
    যেন তুমি যথা সময়ে তাহাদেও ভক্ষ্যদেও ।
    তুমি তাহাদিগকে দিলে তাহারা কুড়ায়;
    তুমি হস্ত মুক্ত করিলে তাহারা মঙ্গলে তৃপ্ত হয় ।”
    PKBeng 109.4

    গীতসংহিতা ১০৪:১০-১৫, ২৪-২৮

    আনন্দ করবার জন্য ইস্রায়েলের প্রচুর সুযোগ ছিল। যে দেশে সদাপ্রভু তাদেরকে নিয়ে এসেছিলেন, তা ছিল দুগ্ধমধু প্রবাহী দেশ । প্রান্তর দিয়ে ভ্রমণ করার সময় ব্যাপী, ঈশ্বর তাদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে একটি দেশে পরিচালিত করে নিয়ে যাচ্ছিলেন যেখানে তারা অনাবৃষ্টিতে কষ্ট পাবে না। তিনি তাদেরকে বললেন, “তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাচ্ছ, তাহা তদ্রূপ নয়, মিসর দেশ হইতে বের হইয়া আসিয়াছ সেই দেশে তুমি বীজ বুনিয়া শাকের উদ্যানের ন্যায় পা দ্বারা জল সেচন করিতে; কিন্তু তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তাহা পৰ্ব্বত ও উপত্যকা বিশিষ্ট দেশ এবং আকাশের বৃষ্টির জল পান করে; সেই দেশের প্রতি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোযোগ আছে; বছর আরম্ভ অবধি বছরের শেষ পর্যন্ত তাহার প্রতি নিরন্তর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে।” PKBeng 110.1

    বাধ্যতার শর্তের ওপরেই প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল । “আমি অদ্য তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, তোমরা যদি যত্নপূর্বক তাহা শুন, তোমাদের সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সাথে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তবে আমি যথাসময়ে প্রথম ও শেষ বর্ষায় তোমাদের দেশে বৃষ্টি দান করিব তাহাতে তুমি আপন শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল সংগ্রহ করিতে পারিবে। আর আমি তোমার পশুগণের জন্য তোমার ক্ষেত্রে তৃণ দিব এবং তুমি ভক্ষণ করিয়া তৃপ্ত হইবে।” PKBeng 111.1

    “আপনাদের বিষয় সাবধান, পাছে তোমাদের হৃদয় ভ্রান্ত হয়, এবং তোমরা পথ ছাড়িয়া অন্য দেবগণের সেবা কর ও তাহাদের কাছে প্ৰণিপাত কর; করিলে তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্জ্বলিত হইবে, ও তিনি আকাশ রোধ করিবেন, তাহাতে বৃষ্টি হইবে না, ও ভূমি নিজ ফল প্রদান করিবে না, এবং সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন সেই উত্তম দেশ হইতে তোমরা ত্বরায় উচ্ছিন্ন হইবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১০-১৭। PKBeng 111.2

    “কিন্তু যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, আমি অদ্য তোমাকে তাঁহার যে সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি-আদেশ করিতেছি, যত্নপূর্বক সেই সকল পালন না কর, তবে এই সমস্ত অভিপাশ তোমার প্রতি বর্তিবে ও তোমাকে আশ্রয় করিবে।” “আর তোমার মস্তকের উপরিস্থিত আকাশ পিত্তল ও নিম্নস্থিত ভূমি লৌহময় হইবে। সদাপ্রভু তোমার দেশে জলের পরিবর্তে ধূলি ও বালি বর্ষণ করিবেন; যে পর্যন্ত তোমার বিনাশ না হয়, তাবৎ তাহা আকাশ হইতে নামিয়া তোমার উপরে পড়িবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১৫, ২৩, ২৪।PKBeng 111.3

    এসকল ছিল পুরাকালীন ইস্রায়েলের প্রতি যিহোবার পরামর্শ । “অতএব তোমরা আমার এই সকল বাক্য আপন আপন হৃদয়ে ও প্রাণে রাখিও।” তিনি তাঁর মনোনীত লোকদেরকে আদশে করলেন, “এবং চিহ্নরূপে আপন আপন হাতে বাধিয়া রাখিও এবং সেই সকল ভূষণরূপে তোমাদের দুই চক্ষুর মধ্যে থাকিবে। আর তোমার গৃহে উপবেশন ও পথে গমনকালে এবং শয়ন ও গাত্রোত্থান কালে ঐসকল কথার প্রসঙ্গ করিয়া আপন আপন সন্তানদিগকে শিক্ষা দিও।” দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮, ১৯। এই আদেশমালা ছিল সরল ও সহজ তথাপি কয়েক শতাব্দি কেটে গেল, এবং যুগের পর যুগ তাদের জন্য কৃত আত্মিক কাল্যাণের প্রতি দৃষ্টিহারা হল, ধর্মদ্রোহিতার ধ্বংসাত্মক প্রভাবসমূহ ঐশ্বরিক অনুগ্রহের প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা ভাসিয়ে নিয়ে যাবার ভয় দেখিয়েছিল ।PKBeng 112.1

    আর এরূপ হল, ঈশ্বর তার লোকদের ওপরে অত্যধিক ক্লেশকর বিচার আনলেন। এলিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর ভয়াবহ পূর্ণতা লাভ হল । তিন বছর পর্যন্ত শোকের বার্তাবাহককে শহরের পর শহর, দেশের পর দেশ অনুসন্ধান করা হল। আহাবের রায় ঘোষণায় অনেক শাসনকর্তা, এরূপ বললেন যে, এই অপরিচিত ভাববাদীকে তাদের রাজ্যে পাওয়া যাবে না। তথাপি তারা অন্বেষণে ক্ষান্ত হলেন না, কেননা ঈষেবল এবং বালের ভাববাদীরা এলিয়কে সাংঘাতিক ঘৃণা করত এবং তারা তাদের ক্ষমতাধীনে আনার চেষ্টার ত্রুটি করলেন না। আর এখন পর্যন্ত বৃষ্টির কোন লক্ষণ দেখা গেল না ।PKBeng 112.2

    অনেক দিনের পরে, সদাপ্রভুর বাক্য এলিয়ের কাছে উপস্থিত হল, “তুমি গিয়া আহাবকে দেখা দেও; পরে আমি, ভূতলে বৃষ্টি প্রেরণ করিব।” এই আদেশ মান্য করে, “এলিয় আহাবের সাথে সাক্ষাৎ করিলেন।” ভাববাদী শমরিয়ায় যেতে উদ্যত, এমন সময় আহাব তার বাটীর শাসনকর্তা ওবদিয়ের কাছে এই প্রস্তাব রাখলেন যে, তারা তাদের মৃত প্রায় পশু পালের জন্য কোন জলস্রোত এবং চরাণির সন্ধান পায় কি- না। এমনকি রাজ দরবারেও দীর্ঘ অনাবৃষ্টির প্রভাব অনুভূত হল । রাজা গভীরভাবে তার বাটীর বাহ্যিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করে স্বয়ং তার দাসদের সাথে সবুজ চরাণির অন্বেষণে বের হলেন। “আর তাহারা দেশে পরিভ্রমণ করণার্থে আপনাদের মধ্যে দেশ দুই ভাগ করিয়া লইলেন; আহাব স্বতন্ত্র এক পথে গেলেন, এবং ওবদিয় স্বতন্ত্র অন্য পথে গেলেন।” PKBeng 112.3

    “ওবদিয় পথ দিয়া যাইতেছিলেন, এমন সময়ে, দেখ, এলিয় তাঁহার সম্মূখে উপস্থিত; তখন ওবদিয় তাঁহাকে চিনিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া কহিলেন, আপনি কি আমার প্রভু এলিয়?” PKBeng 113.1

    ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্টতার বছরগুলো ব্যাপী, ওবদিয় বিশ্বস্ত ছিলেন । তার প্রভু, রাজা, তাকে তার জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। এখন এলিয় সসম্মানে তাকে রাজার কাছে বার্তাসহ পাঠালেন, “যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত।” PKBeng 113.2

    মহাত্রাসযুক্ত হয়ে ওবদিয় বললেন, “আমি কি পাপ করিলাম যে, আপনি আপন দাস আমাকে বধ করণার্থে আহাবের হস্তে সমপর্ণ করিতে চাহেন?” এ ধরণের বার্তা আহাবের কাছে নিয়ে যাবার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু । “আপনার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তিনি ভাববাদীকে বললেন, “এমন কোন জাতি কি রাজ্য নাই, যাহার নিকটে আমার প্রভু আপনার অন্বেষণে দূত পাঠান নাই; আর যখন তাহারা বলিল, সে ব্যক্তি নাই; তখন তাহারা আপনাকে পাইতে পারে নাই বলিয়া তিনি সেই সকল রাজ্যের ও জাতির লোকদিগকে শপথও করাইয়াছেন। এখন আপনি বলিতেছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত। আর আমি আপনার নিকট হইতে গেলেই সদাপ্রভুর আত্মা আমার অজ্ঞাত কোন স্থানে আপনাকে লইয়া যাইবেন, তাহাতে আমি গিয়া আহাবকে সংবাদ দিলে যদি তিনি আপনার উদ্দেশ না পান, তবে আমাকে বধ করিবেন।” PKBeng 113.3

    ওবদিয় একান্তভাবে ভাববাদীকে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তাকে না পাঠান। “আপনার দাস আমি বাল্যাবধি সদাপ্রভুকে ভয় করিয়া আসিতেছি। ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর ভাববাদীগণকে বধ করিতেছিলেন, তখন আমি যাহা করিয়াছিলাম, তাহা কি আমার প্রভু শুনেন নাই? আমি পঞ্চাশ পঞ্চাশ করিয় সদাপ্রভুর এক শত ভাববাদীকে গহ্বরে লুকাইয় রাখিয়া অন্নজল দিয়া প্রতি পালন করিয়াছি। আর এখন আপনি বলিতেছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত, তিনি তো আমাকে বধ করিবেন।” PKBeng 113.4

    এক গুরুগম্ভীরভাবে দিব্য করে এলিয় ওবদিয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন, যাত্রা বৃথা যাবে না। “আমি যার সাক্ষাতে দণ্ডায়মান, সেই বাহিনীগণের জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমি অদ্য অবশ্য তাঁহাকে দেখা দিব।” এরূপে নিশ্চয়তা দিলে, “ওবদিয় আহাবের সাথে সাক্ষাৎ করিতে গেলেন ও তাঁহাকে সংবাদ দিলেন।” PKBeng 114.1

    ত্রাস মিশ্রিত রাজা অবাক হয়ে লোকটির কথা শুনতে লাগলেন যাকে তিনি ভয় করতেন এবং ঘৃণাও করতেন; এবং যাকে তিনি অক্লান্ত ভাবে অন্বেষণ করেছেন। তিনি অবশ্য জানতেন, ভাববাদী তার সাথে সাক্ষাৎ করেছে, সেই হেতু এলিয় তাঁর জীবনকে বিপদগ্রস্থ করবেন না। এরূপ কি হতে পারত যে, ভাববাদী ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিশাপ বাণী উচ্চারণ করলেন? ভয় তার অন্তঃকরণ অধিকার করল। যিরবিয়ামের বাহু শুষ্ক হবার কথা তার মনে পড়ল। আহাব আদেশনামা এড়াতে পারলেন না, ঈশ্বরের বার্তাবাহকের বিরুদ্ধে তার হাত তুলতেও সাহস পেলেন না। সুতরাং সৈন্যদের একজন দেহরক্ষিকে সঙ্গে নিয়ে ভয়ে কম্পিত সম্রাট ভাববাদীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন । PKBeng 114.2

    রাজা এবং ভাববাদী সামনা সামনি দণ্ডায়মান। আহাব যদিও ভয়মিশ্রিত ঘৃণায় পরিপূর্ণ, তথাপি এলিয়ের সামনে তিনি একাকী এবং শক্তিহীন । তার সর্ব প্রথম দ্বিধাগ্রস্ত কথাটি ছিল, “হে ইস্রায়েলের কণ্টক, একি তুমি?” তিনি বিবেকহীনভাবে তার মনের অনুভূতিটি ব্যক্ত করলেন। আহাব জানতেন যে, ঈশ্বরের বাক্য দ্বারাই আকাশমন্ডল এত নির্মম হয়েছিল, তথাপি তিনি, দেশে এই নিদারুণ বিচার হেতু ভাববাদীকে দোষারোপ করলেন। এই দুর্যোগ, যা ধার্মিকতার পথ পরিত্যাগ করার নিশ্চিত ফলাফল এর জন্য ঈশ্বরের বার্তাবাহকদের দায়ী করাই অন্যায়কারীর প্রকৃতি। যারা তাদেরকে শয়তানের হাতে সমর্পণ করে, তারা, ঈশ্বর তাদেরকে যেমন দৃষ্টিতে দেখেন, তদ্রূপ দেখতে অসমর্থ। যখন সত্যের দর্পণ তাদের সামনে ধরা হয় তখন তারা অনুযোগ গ্রহণ করার চিন্ত য়ি ঘৃণা মিশ্রিত ক্রোধে পূর্ণ হয়। যারা পাপ দ্বারা অন্ধীভূত হয়ে, মনপরিবর্তন করতে অস্বীকার করে; তারা মনে করে যে ঈশ্বরের দাসেরা তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে এবং তারা ভয়ানক নিন্দার যোগ্য । PKBeng 114.3

    বিশুদ্ধ বিবেক আহাবের সামনে দণ্ডায়মান হয়ে এলিয় রাজার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জাহির করলেন না। অনাবৃষ্টি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এই কথা বলে রাজার ক্রোধ প্রসমিত করার চেষ্টা করলেন না । তার অপরাধ স্বীকার করার কিছুই নেই। ঈশ্বরের সমাদর হেতু ঘৃণা এবং ঈর্ষায় তিনি আহাবের নিন্দা ফিরিয়ে দেন, নির্ভয়ে রাজার সামনে ঘোষণা করলেন যে, এটি তার পাপ, এবং তার পিতার পাপ, যা ইস্রায়েলের ওপরে এই ভয়াবহ দুর্যোগ এনেছে। “আমি ইস্রায়েলের কন্টক হইনি,” এলিয় দৃঢ়তার সাথে জবাব দিলেন, “কিন্তু আপনি ও আপনার পিতৃকূল; কেননা আপনারা সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল ত্যাগ করিয়াছেন, এবং আপনি বাল দেবের অনুগামী হইয়াছেন।” PKBeng 115.1

    অদ্য কঠোর ভর্ৎসনার বাণী উচ্চারিত হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে; কেননা শোচনীয় পাপসমূহ ঈশ্বর হতে লোকদেরকে পৃথক করেছে দ্রুত ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস ফ্যাশান স্বরূপ হয়ে আসছে। সহস্র সহস্র কন্ঠ লোকদের ভাষা এরূপ, “আমাদের ইচ্ছা নয় যে, এই ব্যক্তি আমাদের উপরে রাজত্ব করে।” লূক ১৯:১৪ । প্রায়ই সুভাষী বক্তৃতা প্রদান করা হয়, যা কোন স্থায়ী প্রভাব রাখে না; তুরী একটি সুনির্দিষ্ট রব সৃষ্টি করে না। ঈশ্বরের বাক্যের সরল, ধারাল বাক্য মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে না । PKBeng 115.2

    অনেক নামধারী খ্রীষ্টান রয়েছে, যারা, যদি তারা অনুভূতি সকল বলতে চায়, তারা বলবে, এত সহজ ভাষায় কথা বলবার প্রয়োজন কেন ? তারা আরও জিজ্ঞেস করতে পারে, ফরীশীদেরকে যোহন বাপ্তাইজকের এই কথা বলবার কি প্রয়োজন হয়েছিল, “হে সর্পের বংশেরা আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল?” লূক ৩:৭। হেরোদকে ক্রোধোদ্দীপ্ত হয়ে এই কথা বলবার কি প্রয়োজন ছিল যে, তার ভ্রাতার স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করা অবৈধ? সহজ সত্য কথাটি বলার কারণে খ্রীষ্টের অগ্রদূতকে প্রাণ দিতে হল। যারা পাপের মধ্যে বসবাস করছিল তাদের অসন্তোষ বৃদ্ধি না করে তিনি তথা হতে সরে গেলেন না কেন ? PKBeng 115.3

    এরূপে যাদেরকে ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিশ্বস্ত তত্ত্বাবধায়ক হওয়া উচিত, তারা বাদপ্রতিবাদ করেছে, কুটনীতি বিশ্বস্ততার স্থান অধিকার করেছে, এবং পাপের জন্য তিরস্কার করা হচ্ছে না। মণ্ডলীতে কখন পুনরায় বিশ্বস্ত কণ্ঠস্বরের তীব্র তিরষ্কার বাণী শ্রুত হবে? PKBeng 116.1

    “আপনিই সেই ব্যক্তি।” ২শমূয়েল ১২:৭। দায়ূদের কাছে নাথন কর্তৃক কথিত এরূপ নির্ভূল সত্য বাক্য প্রচার মঞ্চ হতে খুব অল্পই শ্ৰুত হয়। গণপ্রচার গণ প্রচার মাধ্যমে খুব অল্পই দৃষ্ট হয়। যদি ঐ সকল কদাচিৎ শ্রুত না হয়ে থাকে, তাহলে আমরা মানুষদের মধ্যে আরও অধিক ঈশ্বরের ক্ষমতা দেখতাম । প্রভুর বার্তাবাহকদের অভিযোগ করা উচিত হবে না যে, তাদের কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে যাবৎ না তারা তাদের নিজেদের অনুমোদন প্রীতি, এবং মানুষদের তুষ্ট করার বাসনার জন্য অনুশোচনা করবে, যা তাদেরকে সত্য দমন করতে পরিচালিত করে। PKBeng 116.2

    সুসমাচার প্রচারকেরা যারা মানুষদের তুষ্টকারী, যারা শান্তি, শান্তি বলে উচ্চরব করে, যখন ঈশ্বর শান্তির কথা বলেননি, তারা ঈশ্বরের সামনে তাদের চিত্ত কোমল করুক তারা কপটতা এবং তাদের সৎসাহসের অভাবের জন্য ঈশ্বরের সামনে ক্ষমা ভিক্ষা চাউক। তারা প্রেমের সাথে তাদের প্রতিবেসীর কাছে, তাদের কাছে গচ্ছিত বার্তা প্রদান করে না, কিন্তু যেহেতু তারা ভোগপরায়ন এবং আরামপ্রিয় তাই। প্রকৃত প্রেম ঈশ্বর সমাদর এবং আত্মাদের পরিত্রাণের চেষ্টা করে। যাদের মধ্যে এই প্রেম রয়েছে, তারা সহজ সত্য কথা বলার অপ্রীতিকর পরিণাম হতে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, কৌশলে এই সত্য এড়িয়ে চলবে না। যখন আত্মারা সংকটের মধ্যে পতিত হয়, ঈশ্বরের সুসমবার প্রচারকেরা নিজের বিষয়ে চিন্তা করবে না; কিন্তু, তাদের কাছে দেয়া বাক্য বলবে, তারা মন্দতার পক্ষে অজুহাত বা পক্ষসমর্থন অস্বীকার করবে। PKBeng 116.3

    প্রত্যেক সুসমাচার প্রচারক কি, তার কর্ম দায়িত্ব এবং তার কাজের গুরুগাম্ভীর্য উপলব্ধি করতে পারেন এবং এলিয়ের ন্যায় সাহস প্রদর্শন করতে পারেন! যেমন স্বর্গ নিরুপীত বার্তাবাহকের, প্রচারকেরা একটি ভয়াবহ দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। তাদেরকে “অনুযোগ” করতে হবে, “ভর্ৎসনা” করতে হবে এবং “চেতনা” দিতে হবে। ২তীমথিয় ৪:২। তারা খ্রীষ্টের পক্ষে স্বর্গের নিগূঢ়তত্ত্বের ধনাধ্যক্ষরূপে পরিশ্রম করবেন, আজ্ঞাবাহকদেরকে উৎসাহ দান করবেন এবং অবাধ্যদেরকে সতর্ক করে দেবেন। জাগতিক কোন কুটনীতি তাদেরকে প্রভাবিত করবে না। যীশু তাদেরকে যে পথে গমন করতে আদেশ করেছেন তারা কখনও সেই পথ হতে সরে যাবে না। তারা বিশ্বাসে অগ্রসর হবে। মনে রাখতে হবে যে, তারা একটি সাক্ষী মেঘ দ্বারা বেষ্টিত। তারা নিজেদের কথা বলবে না, কিন্তু যা এই পৃথিবীর ক্ষমতাবান, রাজাদের হতে মহান এক ব্যক্তির কথিত বাক্যই তারা বলবে। তাদের বাক্য হবে, “প্রভু এরূপ বলেছেন।” ঈশ্বর এলিয়, নাথন, এবং যোহন বাপ্তাইজকের ন্যায় লোকদেরকে আহ্বান করছেন- যারা বিশ্বস্ত তার সাথে তাঁর বার্তা বহন করতে, পরিণাম যাই হোক না কেন; মানুষেরা সাহসীকতার সাথে সত্য কথাটি বলবে, যদিও তাদের সব কিছু জলাঞ্জলী দিতে হয়। PKBeng 116.4

    ঈশ্বর সেই লোকদেরকে ব্যবহার করতে পারেন না, যারা সত্যের পক্ষে দাড়াতে ভীত, যখন শক্তি, উৎসাহ, এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রভাবই তাদের আবশ্যক হবে। তিনি সেই সকল লোকদেরকেই আহ্বান করেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্বস্ততার সংগ্রাম করবে অধিপতি এবং ক্ষমতাবানসমূহের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেবে, এই অন্ধকারময় বিশ্বের শাসন কর্তাদের বিরুদ্ধে, স্বর্গীয় স্থানের দুষ্টতার আত্মাদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করবে। তিনি তাদের কাছে এই কথা বলবেন; “উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস, ...তোমরা আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।” PKBeng 117.1

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents