Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

ত্রাণার্থীর আশাপূরণ ।

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ত্রয়োদশ অধ্যায়

    আনন্দ সাধনা । (REJOICING IN THE LORD)

    ঈশ্বরের সন্তানদিগকে খ্রীষ্টের প্রতিনিধি বলা হইয়াছে ; কারণ তাহাদের দ্বারাই সদাপ্রভুর মহত্ত্ব ও করুণা প্রকাশিত । প্রভু যীশু যেরূপ পিতার চরিত্র আমাদের নিকটে পূর্ণরূপে প্রকাশ করিয়াছেন, সেইরূপ যে জগৎ তাহার বিষয়ে জানে না, সেই জগতে আমাদের তাহার কোমল ও করুণা মিশ্রিত প্রেম প্রকাশ করিতে হইবে । যীশু কহিয়াছেন, “তুমি যেমন আমাকে জগতে প্রেরণ করিয়াছ, তদ্রূপ আমিও তাহাদিগকে জগতে প্রেরণ করিয়াছি । আমি তাহাদিগেতে ও তুমি আমাতে,............ যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ” (যোহন ১৭ঃ১৮, ২৩ ) । প্রেরিত পৌল যীশুর শিষ্যদিগকে বলিয়াছেন “ফলতঃ তোমার খ্রীষ্টের পত্র ......... বলিয়া প্রকাশ পাইতেছ” “যাহা সকল মনুষ্য জানে ও পাঠ করে” (২ করি ৩ঃ৩, ২ ) । যীশু তাঁহার প্রত্যেক সন্তানে এক এক খানা পত্র জগতে প্রেরণ করেন । যদি তুমি খ্রিষ্টের অনুসরণকারী হও, তবে যেখানে তুমি বাস কর, সেখানে পরিবারে, গ্রামে ও রাস্তায় তোমাকে তিনি একখানা পত্র স্বরূপ পাঠাইয়া দেন । যাহারা যীশুর সহিত পরিচিত নহে, যীশু তোমাদের হৃদয়ে বাস করিয়া, তাহাদের অন্তরের সহিত কথা কহিতে চাহেন । হয়তো তাহারা বাইবেল পাঠ করে না । অথবা ঊহা তাহাদের সহিত যে কথা বলিতেছে তাহা তাহারা শুনিতে পায় না ; তাহারা, ঈশ্বরের কার্য্যাবলীতে প্রকাশিত তাহার প্রেম হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে না। কিন্তু যদি তুমি প্রভু যিশুর খাঁটি প্রতিনিধি হও, তবে হয়তো তোমার মধ্য দিয়া তাহার মহত্তের কিয়দংশ বুঝিতে পারিবে এবং তাহাকে সেবা ও প্রেম করিবার নিমিত্ত বশীভূত হইবে । SC 122.1

    খ্রীষ্টীয়ানগন আলোক-বাহীরূপে স্বর্গের পথ দেখাইয়া থাকেন । খ্রীষ্ট হইতে তাহার যে দীপ্তি লাভ করিয়াছেন, তাহাই তাহাদিগকে জগতে প্রতিফলিত করিতে হইবে । তাহাদের জীবন ও চরিত্র এরূপ হইবে যেন তাহাদের মধ্য দিয়া অপর সকলে খ্রীষ্ট ও তাহার পরিচর্য্যা সম্বন্ধে যথার্থ ধারনা পোষণ করিতে পারে । SC 122.2

    যদি আমরা খ্রীষ্টের নিদর্শন স্বরূপ হই, তবে আমরা তাহার সেবাকার্য্যকে মনোহারী করিয়া তুলিতে পারিব ; আর বাস্তবিক উহা স্বভাবতঃই মনোহারী । যে সকল খ্রীষ্টীয়ান প্রাণে বিষাদ ও কালিমা সঞ্চিত করিয়া রাখে এবং বিরক্তি ও অসন্তুষ্টির ভাব প্রকাশ করে, তাহারা অপরকে ঈশ্বরের খ্রীষ্টীয় জীবনের মিথ্যা আদর্শ প্রদান করিতেছে । তাহারা এই প্রকার ব্যবহার দ্বারা অপরের হৃদয়ে এইরূপ ভুল ধারনা জন্মাইয়া দেয় যে ঈশ্বর যেন তাহার সন্তানগণের সুখী দেখিয়া সন্তুষ্ট নহেন ; তাই এই বিষয়ে তাহারা আমদের স্বর্গস্থ পিতার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য বহন করিতেছে । SC 123.1

    শয়তান, ঈশ্বরের সন্তানগণের হৃদয়ে অবিশ্বাস ও নৈরাশ্য জন্মাইতে পারিলে পুলকিত হয় । আমরা ঈশ্বরের অবিশ্বাস ও আমাদিগকে পরিত্রাণ করিবার নিমিত্ত তাহার ইচ্ছায় ও শক্তিতে সন্দেহ করি, - ইহা দেখিতে পাইলে শয়তান বড়ই আনন্দিত হয় । ঈশ্বর তাহার বিধান দ্বারা আমাদের ক্ষতি করিবেন, আমরা যেন এইরূপ ভাব পোষণ করি, শয়তানের ইহাই ইচ্ছা । সদা প্রভুকে করুণা ও মমতাবিহীন করিয়া চিত্রিত শয়তানের কার্য্য । সে তাহার সম্বন্ধে সত্যের অপলাপ করিয়া থাকে । ঈশ্বর সম্বন্ধে কতকগুলি মিথ্যা ধারণা দ্বারা সে আমাদের হৃদয় পূর্ণ করিয়া রাখে ; আর আমরা আমদের স্বর্গস্থ পিতা সম্পর্কীয় সত্যের প্রতি মনোনিবেশ না করিয়া শয়তানের মিথ্যা কথনের প্রতি মনোযোগ দান করি এবং অবিশ্বাস ও অসন্তুষ্টির ভাব প্রয়াশ করিয়া ঈশ্বরের অশ্রদ্ধা দেখাই থাকি । শয়তান সর্ব্বদাই ধার্ম্মিক জীবনকে বিষাদের জীবন করিয়া তুলতে চেষ্টা করে । এইরূপ জীবন যেন সকলের নিকটে দুর্ব্বহ ও কঠিন বলিয়া বোধ হয়, ইহাই তাহার বাসনা ; কোন খ্রীষ্টীয়ান যদি নিজ ধর্ম্ম সম্বন্ধে এইরূপ ভাব পোষণ করে, তবে তাহার অবিশ্বাস দ্বারা সে শয়তানের মিথ্যাচারের সমর্থন করিতেছে । SC 123.2

    জীবন-পথে চলিতে অনেকে নিজ নিজ ভুল, ভ্রান্তি, ব্যর্থতা ও নৈরাশ্যের বিষয়ে অতিশয় চিন্তা করে এবং তাহাদের হৃদয় শোক ও নিরুৎসাহে পরিণত হইয়া যায় । ইউরোপে থাকিবার কালে এক ভগিনীকে এইরূপ অবস্থায় পাইয়াছিলাম ; গভির ক্লেশে পতিত হইয়া তিনি আমার নিকটে উৎসাহ বাক্যের জন্য একখানা পত্র লিখিলেন । তাহার পত্র পাঠ করিবার পর রাত্রিতে আমি এক স্বপ্ন দেখিলাম, যেন আমি এক উদ্যানের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছি । এবং এক ব্যক্তি, যাহাকে উদ্যানের মালিক বলিয়া বোধ হইল, উহার মধ্যস্থ নানা পথ দিয়া আমাকে চালাইয়া নিতেছেন । আমি নানা জাতীয় ফুল চয়ন করিয়া সুগন্ধ গ্রহণ করিতেছি, এমন সময়ে সে ভগিনী আমার পার্শ্বে হাটিতে হাটিতে সহসা আমাকে ডাকিয়া বলিলেন যে কতিপয় বিশ্রী আকৃতির কণ্টকের জন্য তিনি পথ চলিতে পারিতেছেন না । তিনি সেই জন্য শোক ও আক্ষেপ করিতে লাগিলেন । তিনি চালকের নির্দ্দেশ মত পথ না চলিয়া কণ্টকময় পথে ভ্রমন করিতেছিলেন । তাই তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়া বলিলেন, ” হায়, এমন সুন্দর উদ্যানখানি কণ্টক দ্বারা খারাপ হইয়া গিয়াছে !’’ তখন চালক উত্তর করিলেন, “কণ্টকের পথে ফিরিয়া চাহিও না, কারন উহারা শুধু তোমাকে আঘাত দিবে । শুধু সুন্দর সুন্দর, গোলাপ, স্থল কুমুদ ও পারুল প্রভৃতি পুষ্প চয়ন করিতে থাক ।“ SC 124.1

    তোমার অভিজ্ঞতায় কি কোনই উজ্জ্বল রেখা নাই ? তোমার স্মৃতিপথে কি এমন কোন মঙ্গল মুহূর্তের উদয় হয় না, যখন তোমার হৃদয় ঈশ্বরের আত্মার স্পন্দনে আনন্দে কম্পিত হইয়া উঠিয়াছিল ? তোমার অতিত জীবনের অভিজ্ঞতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তুমি কি কোনই মনোরম স্মৃতি খুঁজিয়া পাও না ? সুগন্ধি পুস্পের মত ঈশ্বরের অঙ্গীকারগুলি কি তোমার পথের দুই পার্শ্বে ফুটিয়া রহে নাই ? তুমি কি উহাদের সৌন্দর্য্য ও মাধুরী দ্বারা তোমার হৃদয় আনন্দে পূর্ণ হইতে দিবে না ?SC 124.2

    পথের কণ্টকরাশি কেবল তোমাকে বেদনা ও আঘাত দিবে ; যদি তুমি শুধু ঐ গুলি সংগ্রহ করিয়া অপরকে উপহার দেও, তবে কি তুমি নিজে ঈশ্বরের মহত্ত্ব তুচ্ছ করা ব্যতিত অপরকেও জীবন-পথে ভ্রমণ করিতে বাধা দিতেছ না ?SC 125.1

    অতিত জীবনের অপ্রীতিকর স্মৃতি ও উহার পাপ ও হতাশের কার্য্যগুলি মনে মনে গুছাইয়া লইয়া নিরাশায় একেবারে ভাঙ্গিয়া পরা পর্য্যন্ত ঐ সমুদয় বিষয়ে আলোচনা বা শোক করা বুদ্ধিমানের কার্য্য নহে । হতাশপূর্ণ হৃদয়, ঈশ্বরের জ্যোতি হইতে আপনাকে বঞ্চিত করিয়া অন্ধকারে পূর্ণ হইয়া যায় এবং অপর সকলের পথে ছায়া বিস্তার করে । SC 125.2

    ঈশ্বর আমাদিগকে যে সকল উজ্জ্বল চিত্র দান করিয়াছেন, তজ্জন্য তাঁহাকে ধন্যবাদ করি । তাঁহার প্রেমের পবিত্র আশ্বাসগুলি আমরা সঞ্চিত করিয়া রাখিব। যেন আমরা সর্ব্বদা উহাদের পানে দৃষ্টিপাত করিতে পারি । ঈশ্বর-পুত্র পিতৃ-সিংহাসন ত্যাগ করি মানবত্ব দ্বারা তাহার ঈশ্বরত্বকে আবৃত করিয়া রাখিলেন, যেন তিনি শয়তানের প্রভুত্ব হইতে মানবজাতিকে উদ্ধার করিতে পারেন ; ঈশ্বর যে স্থানে তাহার গৌরবে স্ব-প্রকাশ রহিয়াছেন মানবীয় দৃষ্টির সম্মুখে সেই স্বর্গীয় কক্ষ এবং স্বর্গ রাজ্য উন্মুক্ত করিয়া দিয়া তিনি আমাদের নিমিত্ত বিজয়ী হইয়াছেন ; পতিত জাতিকে, পাপ কর্ত্তৃক নিক্ষিপ্ত ধ্বংসের কুপ হইতে উদ্ধার করিয়া পুনরায় তাহাদিগকে অনন্ত পরমেশ্বরের সংস্পর্শে আনিয়াছেন এবং তাহারা আমাদের ত্রানকর্ত্তার প্রতি বিশ্বাসের বলে ঐশ্বরিক পরীক্ষা সহ্য করিয়াছে ও খ্রীষ্টের ধার্ম্মিকতায় পরিহিত হইয়াছে ;- আমরা যেন এই সকল চিত্রের বিষয়ে চিন্তা করি, ঈশ্বরের ইহাই ইচ্ছা । SC 125.3

    আমরা যখন ঈশ্বরের প্রেমে সন্দেহ এবং তাহার অঙ্গীকারসমূহ অবিশ্বাস করি, তখন আমরা তাহাকে অশ্রদ্ধা দেখাইয়া থাকি ও তাহার পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করি । সন্তানের মঙ্গল ও শান্তি বিধানের নিমিত্ত মাতা সমস্ত জীবন ব্যয় করিয়াও যদি বুঝিতে পারেন যে তাহার সন্তানগণ তাহার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করিতেছে — যেন তাহাদের কল্যাণ কামনা তাহার অভিপ্রায় ছিল না, তবে সেই মাতার মনের ভাব কিরুপ হইবে ? মনে কর যেন তাহারা তাহার স্নেহ ও যত্নে সন্দেহ পোষণ করিতেছে ; উহাতে নিশ্চয় তাহার প্রাণে আঘাত লাগিবে । কোন মাতাপিতা সন্তানের নিকট হইতে এরূপ ব্যবহার পাইতে চায় ? যে প্রেম দ্বারা চালিত হইয়া আমাদিগকে জীবন দান করিবার জন্য জন্য আমাদের স্বর্গস্থ পিতা তাহার একজাত পুত্র দান করিয়াছেন, যদি আমরা সেই প্রেমে অবিশ্বাস করি, তবে তিনি আমাদিগকে কীরূপ মনে করিবেন ? প্রেরিত পৌল লিখিয়াছেন, “যিনি নিজ পুত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাহাকে সমর্পন করিলেন, তিনি কি তাহার সহিত সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ পুর্ব্বক দান করিবেন না ?” (রোমীয় ৮ঃ৩২)। তথাপি অনেকে বাক্যে না হৌক্, আপনআপন কার্য্য দ্বারা এরূপ ভাব প্রকাশ করিতেছে , “প্রভুর এই অঙ্গীকার আমার নিমিত্ত নহে । তিনি অপর সকলকে ভালবাসিতে পারেন, আমাকে নহে ।”SC 126.1

    এই সকল ভাব , তোমার আত্মার পক্ষে অনিষ্টকর ; কারন তোমার উচ্চারিত, সন্দেহ জনিত প্রত্যেক শব্দ, শয়তানের প্রলোভনরাশি আহ্বান করিতেছে ; উহা তোমার সন্দেহের প্রকৃতিকে দৃঢ়তর করিতেছে এবং পরিচর্য্যাকারী দূতগণ তোমার নিকট হইতে ব্যথিত হইয়া ফিরিয়া যাইতেছেন । শয়তান যখন তোমাকে প্রলোভন দেখায় তখন একটিও সন্দেহ বা অজ্ঞানতার বাক্য প্রকাশ করিও না । যদি তুমি তাহার সঙ্কেত মত হৃদয় দুয়ার খুলিয়া দেও, তবে তোমার মন অবিশ্বাস ও বিদ্রোহসূচক সন্দেহে পরিপূর্ণ হইয়া যাইবে । যদি তুমি তোমার মনোভাব প্রকাশ করিয়া ফেল, তবে যে সন্দেহের ভাব তুমি ব্যক্ত করিয়াছ, তাহা যে তোমাতেই শুধু ঘুরিয়া ফিরিয়া আসিবে তাহা নহে, উহা ক্ষুদ্র অঙ্কুরের ন্যায় ক্রমে ক্রমে বাড়িয়া উঠিয়া অপরের জীবনেও ফল বহন করিবে এবং তাহা হইলে তোমার বাক্যের প্রভাব প্রতিহিত করা সম্ভব হইবে । তুমি নিজে হয়তো প্রলোভনের কাল শয়তানের ফাঁদ হইতে আপনাকে মুক্ত করিতে পার, কিন্তু অপর যাহারা তোমার প্রভাবে অভিভূত হইয়াছে, তাহারা হয়তো তুমি তাহাদিগকে যে অবিশ্বাস শিখিয়া দিয়াছ, তাহা হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিতে পারিবে না । তাই যে সকল বিষয় আত্মিক শক্তি ও জীবন দান করিবে, আমাদের সেই সকল বিষয় আলোচনা করা কত আধিক প্রয়োজন !SC 126.2

    তুমি তোমার স্বর্গস্থ পিতা সম্বন্ধে জগতে কীরূপ সংবাদ বহন করিতেছ, দূতগণ তাহাই কান পাতিয়া শুনিতেছেন । যিনি পিতার সম্মুখে অনুরোধ করিবার জন্য রহিয়াছেন , তোমার কথা বার্ত্তা যেন তাহারই বিষয়ক হয় । কোন বন্ধুর হস্তখানি গ্রহন করিবার কালে, তোমার ওষ্ঠ ও হৃদয় হইতে স্তুতি বাক্য নির্গত হউক । ইহা দ্বারা তাহার চিন্তারাশি যীশুর প্রতি আকৃষ্ট হইবে । SC 127.1

    দুঃখসহ শোক ও দুর্দ্দমনীয় পরীক্ষা — প্রভৃতি কঠোর পরীক্ষা প্রত্যেকেরই সহিতে হইবে । কোন মনুষ্যের নিকটে তোমার দুঃখের কথা না বলিয়া, প্রার্থনাতে ঈশ্বরের নিকটে সকল কথা বল, এইরূপ নিয়ম করিয়া লও । আশা ও পবিত্র আনন্দ পুর্ন বাক্য দ্বারা তুমি অপরের জীবন উজ্জ্বল ও উদ্দম দৃঢ়তম করিতে পার । SC 127.2

    পরীক্ষা দ্বারা অভিভূত বহু সাহসী হৃদয়, নিজের ও শয়তানের পরাক্রমের সহিত সংগ্রাম করিয়া একেবারে বিহ্বল হইয়া পরিয়াছে, এরূপ কোন ব্যক্তিকে, তাহার কঠোর সংগ্রামে নিরুৎসাহ করিও না । তাহাকে নির্ভীক ও আশা প্রদ বাক্য বলিয়া SC 127.3

    সুপথে চালিত কর । এই প্রকারে তোমা হইতে খ্রীষ্টের দীপ্তি বিকীর্ণ হইতে পারে । “কারণ আমাদের মধ্যে কেহ আপনার উদ্দেশে জীবিত থাকে না’’ ( রোমীয় ১৪ঃ৭) । আমাদের অজ্ঞাত প্রভাব দ্বারা অপরে উৎসাহিত ও আধিকতর শক্তিমান হইতে পারে, আবার কেহ কেহ খ্রীষ্ট ও সত্য হইতে ভ্রষ্ট হইয়া নিরুৎসাহিত হইতে পারে । SC 128.1

    খ্রীষ্টের চরিত্র ও স্বভাব সম্ভন্ধে অনেকে ভুল ধারণা করিয়া থাকে । তাহারা মনে করে যে তিনি মোটেই প্রফুল্ল বা হাসি খুসি ছিলেন না, শুধু কঠিন, কঠোর ও নিরানন্দ । অনেক স্থলে এইরূপ নিরুৎসাহকর ধারণা দ্বারা সমুদয় আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা রঞ্জিত রহিয়াছে ।SC 128.2

    অনেকে আবার বলিয়া থাকে যে যীশু বহুবার কাঁদিয়াছিলেন বটে, কিন্তু কোথাও তাহার হাসিবার উল্লেখ নাই । আমাদের ত্রাণকর্ত্তা সত্য সত্যই ব্যথার পাত্র ও যাতনা পরিচিত হইয়াছিলেন, কারন তিনি মানবের যাবতীয় দুঃখ বহন করিয়া লইবার জন্য আপনার হৃদয় খুলিয়া দিয়াছিলেন । কিন্তু যদিও তাহার জীবন আত্মত্যাগী এবং দুঃখ ও ভাবনা দ্বারা অন্ধকারচ্ছন্ন ছিল, তথাপি কখনও তাহার হৃদয় চুর্ণ হয় নাই । তাহার আকৃতিতে কখনও শোক বা ক্ষোভের চিহ্ন ছিল না, কিন্তু সর্ব্বদাই শান্তি পূর্ণ গাম্ভীর্য বিরাজিত ছিল । তাহার অন্তঃকরণ জীবনের উৎস ছিল ; তিনি যেখানেই যাইতেন সর্ব্বত্র তাহার সঙ্গে বিশ্রাম ও শান্তি, আনন্দ ও প্রফুল্লতা বর্ত্তমান থাকিত । SC 128.3

    আমাদের ত্রাণকর্ত্তা অতিশয় গম্ভীর প্রকৃতি ও কার্য্যতৎপর ছিলেন, কখনও বিষণ্ণ বা বিমর্ষ ছিলেন না । তাহার অনুসরণ কারীদের জীবন একাগ্র সাধনায় পরিপুর্ন হইবে ; ব্যক্তিগত দায়িত্ব সম্বন্ধে তাহাদের গভীর জ্ঞান থাকিবে । চঞ্চলতা দমিত হইবে; কোন প্রকার উদ্দাম রঙ্গকৌতুক, অথবা অশোভন ঠাট্টা বিদ্রূপ থাকিবে না ; কিন্তু যীশুর ধর্ম্ম তটিনীর ন্যায় শান্তি দান করিবে । উহা কখনও আনন্দের আলোক নির্ব্বাপিত করে না ; প্রফুল্লতা নিরোধ করিতে পারে না অথবা হাস্যদীপ্ত, উজ্জ্বল মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করিয়া দেয় না । যীশুর পরিচর্য্যা লাভ করিতে নহে, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে আসিয়াছিলেন ; আমাদের হৃদয়ে যখন তাহার প্রেম আধিপত্য করিবে, আমরা তখন তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিব । SC 128.4

    আমরা যদি অপরের অন্যায় ও নির্দ্দয় কার্য্যগুলি সম্বন্ধে আধিক চিন্তা করি, তবে খ্রীষ্ট যেরূপ আমাদিগকে ভাল বাসিয়া ছিলেন, আমরা কখনও তাহাদিগকে সেইরূপ ভালবাসিতে পারিব না ; কিন্তু আমরা খ্রীষ্টের অপুর্ব্ব প্রেম ও করুণার চিন্তায় ভরপুর থাকি তবে অপরের প্রতিও সেইরূপ আত্মা প্রবাহিত হইবে । সকলের দোষ ও অসম্পুর্নতা আমাদের চখে পরা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরকে প্রেম ও শ্রদ্ধা করিব । নম্রতা, নিজের উপরে অতিরিক্ত বিশ্বাস স্থাপন না করা এবং অপরের দোষসমুহের প্রতি ধৈর্যশীল উপেক্ষার ভাব — প্রভৃতি গুণের অনুশীলন করিব । ইহা দ্বারা সমুদয় সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরতা দূরীভূত হইবে এবং আমরা মহাপ্রাণ ও উদার হইতে পারিব । SC 129.1

    গীত-সংহিতাকার বলিয়াছেন, “সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ, সদাচরন কর, দেশে বাস কর, বিশ্বস্ততা ক্ষেত্রে চর, ( অথবা দেশে বাস করিবে, নির্ভয়ে ভজন করিবে’ )’’ (গীত ৩৭ঃ৩) । ‘সদা-প্রভুতে নির্ভর রাখ ।’’ প্রতিদিন আমাদের সম্মুখে নানা প্রকার দুশ্চিন্তা, বিপদ ও জঞ্জাল উপস্থিত হইয়া থাকে ; উহাদের সম্মুখীন হইয়া আমরা আমাদের বিপদ ও পরীক্ষারাশির বিষয়ে আলোচনা করিতে প্রস্তুত হই । তখন এত অপ্রাকৃত বিপদ আসিয়া জুটিতে থাকে, এত কাল্পনিক ভয় স্থান পায় এবং এত বেদনার গুরুভার পীড়া দিয়া থাকে যে তাহা দ্বারা কেহ হয়তো মনে করিতে পারে যে আমাদের প্রার্থনায় কর্ণপাত করিবার জন্য এবং সকল প্রকার বিপদে আমাদের সহায় হইবার জন্য বুঝি আমাদের কোন প্রেমপূর্ণ ও করুনাময় ত্রাণকর্ত্তা নাই । SC 129.2

    কতিপয় লোক সর্ব্বদাই আশঙ্কা করে এবং বিপদ ডাকিয়া আনে । প্রতিদিন তাহারা ঈশ্বরের প্রেমের নানা নিদর্শন দ্বারা বেষ্টীত রহিয়াছেন ; প্রতিদিন তাহারা তাহার দয়ার দান উপভোগ করিতেছে ; কিন্তু তাহারা বর্ত্তমান আশীর্ব্বাদসমূহ উপেক্ষা করিয়া থাকে । তাহাদের মন সর্ব্বদাই কোন অপ্রীতিকর বিষয়ের আলোচনায় ব্যস্ত এবিং উহা তাহাদের উপরে পতিত হইবে বলিয়া তাহারা আশঙ্কা করে ; অথবা হয়তো কোন বিপদ সত্য সত্যই বর্ত্তমান থাকিতে পারে, কিন্তু তাহা অতি ক্ষুদ্রা হইলেও, অন্যান্য অনেক কৃতজ্ঞতার বিষয় হইতে তাহাদের দৃষ্টি অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । তাহারা যেসকল বিপদের সম্মুখীন হয়, সেই সকল তাহাদিগকে একমাত্র সহায় ঈশ্বরের পানে চালিত না করিয়া, তাহার নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেয় ; কারন উহারা হৃদয়ে অস্থিরতা ও অসন্তোষের ভাব জাগাইয়া তোলে । SC 130.1

    এক প্রকার অবিশ্বাস করা কি যুক্তিসঙ্গত ? আমরা কেন অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞ হইব ? যীশু আমাদের বন্ধু ; সমুদয় স্বর্গ আমাদের মঙ্গল সাধনে উৎসুক । প্রতিদিনের জীবনের দুশ্চিন্তা ও জঞ্জাল দ্বারা আমরা কখনও আমাদের মন বিসন্ন ও মুখমণ্ডল বিবর্ণ করিয়া তুলিব না । এইরূপ করিলে সর্ব্বদাই আমাদের বিরক্ত ও উত্তক্ত্য হইবার কিছু না কিছু কারন থাকিবে । আমরা এরূপ কোন উদ্বেগের প্রশ্রয় দিব না, যাহা শুধু আমাদিগকে বেদনা ও মনঃপীড়া দেয়, কিন্তু পরীক্ষা সহ্য করিতে সাহায্যে করে না । SC 130.2

    তুমি হয়তো ব্যবসায়ে কি করিতে হইবে ভাবিয়া ঠিক পাইতেছ না ; তোমরা শ্রীবৃদ্ধি লাভের আশা ক্রমশঃই খারাপ হইয়া পড়িতেছে এবং তুমি লোকজনের আশঙ্কা করিতেছ ; কিন্তু হতাশ হইয়া পরিও না ; ঈশ্বরের উপরে তোমার দুশ্চিন্তার ভার ও অর্পণ কর এবং প্রফুল্ল ও শান্তভাবে আবস্থান কর । বুদ্ধি সহকারে তোমার ব্যবসায় চালাইবার জন্য তুমি জ্ঞানের নিমিত্ত প্রার্থণা কর । সুফল লাভ করিবার জন্য তুমি তোমার যথাসাধ্য চেষ্টা কর । যীশু সাহায্য দান করিবেন বলিয়া অঙ্গিকার করিয়াছেন, কিন্তু আমাদেরও সাধ্য মত চেষ্টা করিতে হইবে । আমাদের পরম সাহায্যের উপরে নির্ভর করিয়া, যখন তুমি নিজ শক্তি অনুযায়ী সকল সম্পন্ন করিয়াছ তখন যেরূপ ফল লাভ হৌক না কেন, তাহাই সানন্দে গ্রহন কর । SC 130.3

    ঈশ্বরের এরূপ ইচ্ছা নয় যে তাহার সন্তানগণ চিন্তা ভারে পীড়িত হইবে । কিন্তু আমাদের সদাপ্রভু আমাদিগকে প্রতারিত করেন না । তিনি কখনও বলেন না, “ভয় করিও না; তোমার পথে কোনই বিপদ নাই।” তিনি জানেন যে আমদের বহু বিপদ ও পরীক্ষা রহিয়াছে, তাই তিনি আমাদের সহিত সরল ব্যবহার করিয়া থাকেন । তিনি কখনও তাহার লোকদিগকে পাপ পূর্ণ জগৎ হইতে দূরে নিয়া জেতে চাহেন না, কিন্তু তিনি চির বিশ্রাম-স্থলের অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন । তানি তাহার শীষ্যদের জন্য এই প্রার্থণা করিয়াছিলেন, “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে মন্দ হইতে রক্ষা কর’’ (যোহন ১৭ঃ১৫) । তিনি বলিয়াছেন, “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ ; কিন্তু সাহস কর আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি’’ (যোহন ১৬ঃ৩৩) ।SC 131.1

    ঈশ্বরের বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে খ্রীষ্ট শৈল-উপদেশে, তাহার শীষ্যগণকে অমূল্য শিক্ষা দান করিয়াছিলেন । সকল যুগের ঈশ্বর-সন্তানদিগকে উৎসাহ দান করিবার জন্য এই সকল উপদেশ প্রদত্ত হইয়াছিল এবং শিক্ষা ও সান্ত্বনা পূর্ণ এই উপদেশ গুলি আমাদের নিকটেও পৌছিয়াছে । সাংসারিক দুশ্চিন্তা হইতে মুক্ত, আকাশের পক্ষিগণ যখন স্তুতিগান করিয়া যাইতেছিল, তখন ত্রাণকর্ত্তা আপন শীষ্যগণকে উহাদিগকে দেখাইয়া দিলেন ; উহারা কখনও “বুনেও না, কাটেও না ।’’ তথাপি পরমপিতা তাহাদের অভাব পূর্ণ করিয়া থাকেন । ত্রাণকর্ত্তা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “তোমারা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও ?’’ (মথি ৬ঃ২৬ ) । সমুদয় জীবজন্তুর অভাবপূরণকারী, হস্ত খুলিয়া তাহার সমুদয় প্রাণীর অভাব পূর্ণ করিয়া দেন । আকাশের পক্ষিগণও তাহার দৃষ্টির বাহিরে নহে । তিনি তাহাদের ঠোঁটের মধ্যে খাদ্য পুরিয়ে দেন না, কিন্তু তাহাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য স্থির করিয়া রাখিয়াছেন । যে সকল শস্যকণা তিনি তাহাদের জন্য ছড়াইয়া রাখাছেন, তাহা তাহাদের সংগ্রহ করিতে হইবে । তাহাদের থাকিবার জন্য বাসা বাঁধিতে হইবে, নিজেদের ছানাগুলির আহার জোগাড় করিতে হইবে । তাহারা গান গাহিতে গাহিতে আপন কাগে চলিয়া যায়, কারন ” তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকে আহার দিয়া থাকেন ।’’ আর “তোমরা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও ?’’ তোমরা কি বুদ্ধিমান ও আধ্যাত্মিক উপাসনাকারী হিসেবে আকাসের পক্ষিদের অধিক মূল্যবান নহ ? যিনি আমাদের অস্তিত্ত্বের মূল, আমাদের জীবন-রক্ষক, যিনি আপনার স্বর্গীয় প্রতিমুর্ত্তিতে আমাদের সৃষ্টি করিয়াছেন — যদি আমরা তাহাতে বিশ্বাস করি, তবে কি তুমি আমাদের অভাব পূরণ করিবেন না ?SC 131.2

    মানুষের প্রতি ইসসরে প্রেমের একটি নিদর্শন স্বরূপ, খ্রীষ্ট তাহার শীষ্যদিগকে ফুলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে বলিলেন ; উহারা প্রচুর সংখ্যায় ফুটিয়া রহিয়াছে এবং উহারা স্বর্গীয় পিতা কর্তৃক দত্ত সরল সৌন্দর্য্যে শোভা পাইতেছে । তিনি বলিলেন, “ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর ।’’ এই পুস্পরাশির স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ও সরলতা, শলোমনের ঐশ্বর্য্যেকে হারাইয়া দেয় । ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট ফুলরাশির স্বাভাবিক মাধুরী ও দীপ্ত সৌন্দর্য্যের সহিত সুদক্ষ শিল্পী নির্ম্মিত জাকালো পরিচ্ছেদের তুলনা চলে না । যীশু তাই জিজ্ঞাসা করিলেন, ” ভাল, ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এত বিভূষিত করেন, তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না ?’’ (মথি ৬ঃ৩০) । যে কোমল পুস্পরাশি দিনান্তে ঝরিয়া পড়িবে, স্বর্গীয় শিল্পী পরমেশ্বর যখন তাহদিগকেই মধুর ও বিচিত্র বর্ণ দান করিয়াছেন, তখন যাহাদিগকে তুমি আপণ প্রতিমূর্ত্তিতে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাদের জন্য কত অধিক যত্ন গ্রহন করিবেন ? অবিশ্বাসী হৃদয়ের অযথা ভাবনা, সন্দেহ ও উদ্বেগের প্রতি তিরস্কচ্ছলে, খ্রীষ্ট এই শিক্ষা দিলেন । SC 132.1

    সদাপ্রভু, তাহার পুত্রকন্যাগণকে সুখী, শান্তিপূর্ণ ও আজ্ঞাবহ দেখিতে চান । যিশু বলিয়াছেন, “আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছে ; জগৎ যেরূপ দান করে, আমি সেরূপ দান করি না । তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ভীতও না হউক” (যোহন ১৪ঃ২৭) । “এই সকল কথা তোমাদিগকে বলিয়াছি, যেন আমার আনন্দ তোমাদিগকে থাকে, এবং তোমাদের আনন্দ সম্পুর্ণ হয়’’ (যোহন ১৪ঃ১১) ।SC 133.1

    কর্ত্তব্য পথ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া স্বার্থপূর্ণ উদ্দেশ্যে যে সুখের সন্ধান করা হয়, তাহা সংশয় পূর্ণ, চঞ্চল ও ক্ষণস্থায়ী ; উহা চলিয়া গেলে আত্মা নিঃসঙ্গ ও বিষাদপূর্ন হইয়া পড়ে ; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচর্য্যায় তৃপ্তি ও আনন্দ রহিয়াছে । খ্রীষ্টীয়ান তখনও অনির্দ্দষ্ট । পথে ভ্রমন করেন না — তিনি তখনও বৃথা আক্ষেপ ও হতাশের কবলে পতিত হন না । এই জীবনে যদি আমরা শান্তি লাভ না করিয়া থাকি, তবে পরবর্ত্তী জীবনের আশায় আমরা উৎফুল্ল থাকিতে পারি । SC 133.2

    কিন্তু এমন কি, এই জীবনেই খ্রীষ্টীয়ানগণ খ্রীষ্টের সহভাগিতার আনন্দ লাভ করিতে পারেন ; তাহারা তাহার প্রেমের জ্যোতিঃ, তাহার উপস্থিতির চির শান্তি উপভোগ করিতে পারেন । জীবনের প্রতি পদবিক্ষেপ আমাদিগকে যিশুর অতি নিকটে লইয়া যাইতে, তাহার প্রেমের গভীর অনুভূতি দান করিতে এবং শান্তিময় স্বর্গীয় বাস ভবনের দিকে এক এক পদ অগ্রসর করিয়া দিতে পারে । সুতরাং আমরা আমদের বিশ্বাস ছাড়িব না কিন্তু পূর্ব্বাপেক্ষাও দৃঢ় প্রত্যয় স্থাপন করিব । “এ পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আমাদের সাহায্য করিয়াছেন’’ (১ শমূয়েল ৭ঃ১২), আর শেষ পর্য্যন্তও তিনি আমাদিগকে সাহয্য করিবেন । আমাদিগকে সান্তনা দান ও ধ্বংসকারীর হস্ত হইতে আমাদিগকে রক্ষা করিবার জন্য তিনি যাহা করিয়াছেন, সেই সকল স্মৃতি-স্তম্ভের প্রতি একবার আমরা দৃষ্টিপাত করি । আমাদের জীবন-যাত্রার অবশিষ্ট পথে সর্ব্ব বিষয়ে আমাদিগকে শক্তিমান করিবার জন্য ঈশ্বর আমাদের প্রতি যে যে করুনা প্রকাশ করিয়াছেন, - যত অশ্রু মুছাইয়া দিয়াছেন, যত বেদনা শান্ত করিয়াছেন, যত ব্যাকুলতা ও ভয় দূরীভূত করিয়াছেন, - আমরা সেই সকল করুণার কার্য্য স্মরণে চির অঙ্কিত করিয়া রাখিব । SC 133.3

    আমরা ভবিষ্যৎ সংগ্রামে নূতন নূতন ক্লেশের আশঙ্কা না করিয়া থাকিতে পারে না কিন্তু অতীত ও ভবিষ্যৎ এই উভয়ের পানে দৃষ্টিপাত করিয়া আমরা বলিতে পারি, “এ পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আমাদের সাহায্য করিয়াছেন ।’’ “তোমার যেমন দিন, তেমনি শক্তি হইবে’’ (দ্বিঃ বিঃ ৩৩ঃ২৫) । আমাদিগকে কখনও শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা দেওয়া হইবে না । সুতরাং, যাহাই আসুক না কেন, আমরা পরীক্ষার উপযোগী শক্তিলাভ করিতে পারিব, এই বিশ্বাস স্থাপন করিয়া, কার্য্য আরম্ভ করিব। SC 134.1

    ঈশ্বরের সন্তানগণকে প্রবেশ করিতে দিবার জন্য ধীরে ধীরে স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত হইবে এবং অতি মধুর সঙ্গিতের ন্যায় মহিমাময় রাজার দ্বার উন্মুক্ত হইবে এবং অতি মধুর সঙ্গীতের ন্যায় মহিমায় রাজার ওষ্ঠ হইতে আশির্ব্বাদ-বানী নির্গত হইয়া তাহাদের কর্ণে বর্ষিত হইবে, -“আইস, আমার পিতার আশির্ব্বাদ পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার আধিকারী হও’’ (মথি ২৫ঃ৩৪)। SC 134.2

    তারপর মুক্তি প্রাপ্তদিগের নিমিত্ত যিশু যে গৃহ প্রস্তুত করিতেছেন, সেই স্থানে তাহাদিগকে সাদরে গ্রহণ করা যাইবে । সেই স্থানে পৃথিবীর নীচ মিথ্যাচার, প্রতিমাপূজক, অপবিত্র ও অবিশ্বাসী দল তাহাদের সঙ্গী হইবে না ; কিন্তু শয়তানকে যাহারা পরাভূত করিয়াছে এবং ঐশ্বরিক অনুগ্রহে সিদ্ধ চরিত্র লাভ করিয়াছে, তাহারাই আমাদের সঙ্গী হইবে । এই জগতে তাহাদিগকে পীড়া দিয়াছে, এইরূপ প্রত্যেক পাপ বাসনা, প্রত্যেক অসম্পূর্ণতা খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা দূরীভূত হইয়াছে এবং সুর্য্যে্র জ্যোতিঃ অপেক্ষাও অধিক প্রভাময়, তাহার মহিমার প্রভা ও উৎকৃষ্টতা, তাহাদিগকে দান করা হইয়াছে । আর এই বাহ্যিক দীপ্তি অপেক্ষায়ও শ্রেষ্ঠ, তাঁহার চরিত্রের সিদ্ধতা ও নৈতিক সৌন্দর্য, তাহাদের মধ্যে ফুটিয়া উঠিবে । বৃহৎ শ্বেত-সিংহাসনের সম্মুখে, তাঁহার দুতগণের মর্য্যাদা ও অধিকার ভোগ করিবার জন্য নিষ্কলঙ্ক ভাবে উপস্থিত । SC 135.1

    এই প্রকার গৌরবময় অধিকার লাভের নিমিত্ত, “মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্ত্তে কি দিবে ?’’ (মথি ১৬ঃ২৬) । পৃথিবীর হিসেবে সে হয়তো দরিদ্র হইতে পারে, তথাপি সে এই পৃথিবী দান করিতে পারে না, এরূপ শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য্য ও মর্য্যাদার অধিকারী । পাপ-কালিমা বিহীন যে আত্মা পরিত্রান লাভ করিয়াছে ও সমুদয় মহৎ বৃত্তি সহ ঈশ্বরের সেবার নিবেদিত হইয়াছে, তাহা অমূল্য পরিত্রাণ প্রাপ্ত এইরূপ একটী আত্মার নিমিত্ত স্বর্গে, ঈশ্বর ও পবিত্র দূতগণের সম্মুখে বিজয় সঙ্গীত দ্বারা পরমানন্দ ব্যক্ত হইয়া থাকে ।SC 135.2

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents