Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    ২৭শ অধ্যায়—ইফিষ

    এই অধ্যায়টা প্রেরিত ১৯:১—২০ পদের ওপর ভিত্তি করে লেখাAABen 236.1

    আপেলে—াযে সময় করিন্থে প্রচার করেছিলেন , পৌল তখন ইফিষে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করলেন । তিনি অল্পকাল যিরূশালেমে অবস্থান করে তার প্রাথমিক কার্যক্ষেত্র আন্তিয়খিয়ার কিছুদিন অতিবাহিত করলেন । সেখান থেকে তিনি এশিয়া মাইনরের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ক্রমে গালাতিয়া দেশ ও ফারগিয়া ভ্রমন করে তার নিজের স্থাপন করা মণ্ডলীতে গিয়ে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস দৃঢ় করলেনAABen 236.2

    প্রেরিতদের সময়ে এশিয়া মাইনরের পশ্চিমাংশকেএশিয়ার রোমীয় প্রদেশ বলা হত । রাজধানীর , ইফিষ একটা বড় বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল । এখানের পোতাশ্রয়ে বহু জাহাজের ভিড় থাকত রাস্তাঘাট নানা দেশের লোকে গিজগিজ করত । করিন্থের মতো , এখানেও মিশনারী প্রচেষ্টা চালানো সম্ভাবনাপূর্ণ ছিল ।AABen 236.3

    সভ্য দেশগুলোর মধ্যে বিস্তীর্ণভাবে ছড়িয়ে থাকা যিহূদীরা , সাধারণত মশীহের আগমনের অপেক্ষায় ছিল । যোহন বাপ্তাইজক যখন প্রচার করেছিলেন , তখন এদের অনেকে যিরূশালেমে বিভিন্ন বাৎসরিক পর্ব্বের সময় যর্দ্দনের পাড়ে গিয়ে তার প্রচার শুনেছে । সেখানে তারা যিশুকে প্রতিজ্ঞাত ব্যক্তিরূপে ঘোষণা করতে শুনেছে , আর তারা এই সংবাদ পৃথিবীর সব জায়গায় নিয়ে গিয়েছে । এইভাবেই ঈশ্বর প্রেরিতদের কাজের জন্য পথ প্রস্তুত করেছিলেন ।AABen 236.4

    ইফিষে এসে পৌল বার জন ভ্রাতার সাক্ষাত পেলেন , যারা আপেল—ার মতো , যোহান বাপ্তাইজকের শিষ্য ছিল , তার মত খ্রীষ্টের কাজের কিছু জ্ঞাণ অর্জ্জন করেছিল । তারা আপেল—ার সামান দক্ষতার সম্পন্ন ছিল না । কিন্তু তারা একই সরলতা ও বিশ্বাসে তাদের লব্ধ জ্ঞান চারদিকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে ।AABen 236.5

    এই ভ্রাতৃগন পবিত্র আত্মার সম্পর্কে কিছুই জানত না । পৌল যখন তাদের জিজ্ঞাসা করলেন যে তারা পবিত্র আত্মা পেয়েছে কিনা , তারা উত্তর দিল , “পবিত্র আত্মা যে আছেন , তাহাও আমরা শুনি নাই ‘’। পৌল জিজ্ঞেস করলেন , “তবে কিসে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলে ?’’ তারা বলল “যোহনের বাপ্তিস্মে ।’’AABen 236.6

    তখন প্রেরিত , খ্রীষ্টানের আশার ভিত্তি মহান সত্যগুলো তাদের সামনে উপস্থাপন করলেন । তিনি তাদের কাছে এই পৃথিবীতে খ্রীষ্টানের জীবন ও তাঁর নিষ্ঠুর লজ্জাজনক মৃত্যুর কথা বললেন যে , কিভাবে জীবনের প্রভু কবরের বাধা ভেঙ্গে মৃত্যুর উপর জয়ী হয়ে উঠেছিলেন । তিনি তার শিষ্যদের কাছ ত্রাণকর্তার আদেশে পুনরক্তি করলেন : “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত আমাকে দত্ত হইয়াছে । অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর ।’’ মথি ২৮:১৭ , ১৮ , ১৯ পদ । তিনি তাদের কাছে খ্রীষ্টের দেওয়া প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী এক সহায় পাঠানোর কথাও বললেন , যার শক্তিতে মহা চিহ্ন ও আর্শ্চয্য কাজ সাধিত হবে, আর পঞ্চাশত্তমীর দিনে কেমন গৌরবের সঙ্গে এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়েছে তার বর্ণনা দিলেন ।AABen 236.7

    গভীর আগ্রহ ও কৃতজ্ঞতা ও বিস্ময়কর আনন্দে ভ্রাতিগণ পৌলের কথা শুনল । বিশ্বাসে তারা খ্রীষ্টে ও প্রায়শ্চিত্তের যজ্ঞের বিস্ময়কর সত্য গ্রহণ করল ও তাঁকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করল । তারা যীশুর নামে বাপ্ততাইজিত হল , পৌল যখন “তাহাদের উপরে হস্তার্পণ ‘‘ করলেন ,তখন তারা পবিত্র আত্মার বাপ্তিস্ম গ্রহণ করল , আর তারা অন্যান্য ভাষায় কথা বলতে ও ভাববাণী বলতে লাগলো । এইভাবে তারা ইফিষে ও আশে পাশে মিশনারীরূপে কাজ করার যোগ্য হল আর তারা এশিয়া মাইননেরও সুসমাচার প্রচার করতে গেল ।AABen 237.1

    নম্র ও শিক্ষা গ্রহণ করার মনোভাবের জন্য এই লোকেরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করল তাই তাদের শস্যক্ষেত্র কার্য্যকারীরূপে কাজ করতে সক্ষম করল । তাদের আদর্শ খ্রীষ্টানদের কাছে একটা মহামূল্যবান শিক্ষা উপস্থাপন করে । এমন অনেকে আছে যারা ঐশ্বরিক জীবনে খুব কম অগ্রসর হয় কারণ তারা নিজেদের সয়ংসম্পূর্ণ মনে করে শিক্ষার্থীর আসন গ্রহণ করতে চায় না । তারা ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে । তারা বিশ্বাস ও অভ্যাস পরির্বতন করতে চায় না ফলে তারা বৃহত্তর আলো পাবার কোন চেষ্টাই করে না ।AABen 237.2

    যদি খ্রীষ্টের অনুসারীরা জ্ঞানের একান্ত অনুসন্ধানকারী হত , তাহলে , তাদের এমন এক গভীর সত্যের ক্ষেত্রে পরিচালত করা হত যা তাদের কাছে তখন পর্য্যন্ত সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল । যে নিজে নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করবে , তাকে ঐশ্বরিক হাত দিতে পরিচালিত করা হবে । তাকে হয়তো নিচুস্তরের ও আপাতদৃষ্টিতে তালন্তবিহীন মনে হতে পারে , তবুও যদি প্রেমপূর্ণ ও আস্থাপূর্ণ অন্তরে ঈশ্বরের ইচ্ছার সমস্ত নির্দ্দেশ পালন করে , তবে তারা শক্তিতে বিশুদ্ধকরণ , অভিজাত শ্রেণীতে উন্নীতকরণ , শক্তিমন্তকরণ ও তার সমস্ত যোগ্যতার বৃদ্ধিসাধন করা হবে । সে যেমন ঐশ্বরিকজ্ঞানেরশিক্ষাকে মূল্য দেবে , তাকে একটা পবিত্র নির্দেশ অর্পণ করা হবে , সে তার জীবনকে ঈশ্বরের সম্মানজনক ও জগতের কাছে আশীর্ব্বাদযুক্ত করতে সক্ষম হবে । ” তব বাক্য সমূহের বিকাশ আলোক প্রদান করে , তাহা অমায়িকদিগকে বুদ্ধিমান করে । ‘‘ গীত ১১৯ : ১৩০ পদ ।AABen 237.3

    বর্তমানেও অনেকে ইফিষের বিশ্বাসীদের মত , অন্তরে পবিত্র আত্মার কাজ সম্পর্কে অজ্ঞ রয়েছে : অথচ ঈশ্বরের বাক্যে কোন সত্য এর চেয়ে বেশি পরিষ্কার ভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়নি ভাববাদীগণ ও প্রেরিতগণ এই মূল চিন্তার ওপর অবস্থান করেছেন । তাঁর আত্মার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জীবন রক্ষার উদাহরণ দিতে গিয়ে খ্রীষ্টনিজে উদ্ভিতজগতের বৃদ্ধির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন । লতায় রস শিকড়ের উপর উঠে শাখা প্রশাখায় প্রবেশ করে বৃদ্ধি সাধন করে , ফুল ও ফল উৎপন্ন করে । তেমনি পবিত্র আত্মার জীবনদায়ী শক্তি ত্রাণকর্তার কাছ থেকে প্রবাহিত হয়ে , আত্মাকে আপ—ুত করে , মনের উদ্দেশ্য ও অনুভূতিকে নবায়িত করে , এমনকি চিন্তাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার বশীভূত করে গ্রাহককে সৎকর্ম্মের মূল্যবান ফল উৎপন্ন করার যোগ্য করে ।AABen 238.1

    এই আধ্যাত্মিক জীবনের রচয়িতা অদৃশ্য , এবং এই জীবনদান ও বাঁচিয়ে রাখার সঠিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা মানব দর্শন শক্তির অনেক উর্দ্ধে । অথচ আত্মার কাজ লিখিত বাক্যের সঙ্গে সবসময় সামঞ্জস্যপূর্ণ । প্রাকৃতিক জগতে যেমন , আধ্যাত্নিক জগতেও তেমন । প্রাকৃতিক জীবন ঐশ্বরিক শক্তির দ্বারা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে সংরক্ষিত হয় ; অথচ কোন সরাসরি আশ্চর্য কাজের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা হয় না , কিন্তু আমাদের নাগালের মধ্যে রাখা আশীর্ব্বাদের মাধ্যমে হয় । সুতরাং ঈশ্বর যা কিছু সরবারাহ করেন তার ব্যবহার দ্বারা আধ্যাতিক জীবন বেঁচে থাকে । যদি খ্রীষ্টের অনুসারী “সিদ্ধ পুরষের অবস্থা পর্য্যন্ত , খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত ‘‘ (ইফিষীয় ৪ : ১৩ পদ । ) বৃদ্ধি পায় , তবে তাকে জীবন খাদ্য খেতে হবে আর পরিত্রাণের জল পান করতে হবে । সে অবশ্যই সজাগ থাকবে , আর প্রার্থনা করবে , আর কাজ করবে , সব কিছুতে তাঁর বাক্যে ব্যক্ত করা ঈশ্বরের নির্দ্দেশমালায় মনোযোগ দেবে ।AABen 238.2

    সেই সব পরিবর্তিত যিহূদীদের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের জন্য আরো একটি শিক্ষা আছে । তারা যখন যোহনের হাতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে তখন তারা সম্পূর্ণভাবে পাপবহনকারীরূপে যীশুর কাজ সম্পর্কে বুঝতে পারে নাই । তারা মনের মধ্যে অনেক গুরতর ভুল পোষণ করেছিল । কিন্তু স্বচ্ছ আলোকে তারা খ্রীষ্টকে ত্রানকর্তারূপে গ্রহণ করল , আর এই অগ্রগতিতে তাদের দায়িত্বে একটা পরিবর্ত্তন এলো । তারা যখন খাঁটি বিশ্বাস লাভ করল , তাদের জীবনে তখন অনুরূপ পরিবর্তন এলো । এই পরিবর্তন চিহ্নরূপে , আর তাদের খ্রীষ্টে বিশ্বাসের স্বীকৃতিরূপে , তারা যীশুর নামে বাপ্তাজিত হল ।AABen 238.3

    পৌল তার রীতি অনুসারে ইফিষে , যিহূদীদের ধর্ম্মধামে প্রচার করে তার কাজ আরম্ভ করেন । তিনি সেখানে তিন মাস যাবৎ কাজ করে ” ঈশ্বর রাজ্যের বিষয়ে কথা প্রসঙ্গ করিতে ও প্রবৃত্তি দিতে লাগিলেন । ‘‘ প্রথমে তিনি অনুকূলে অভ্যর্থনা লাভ করলেও পরে অন্যান্য ক্ষেত্রের মত প্রচন্ড বিরোধীতার সম্মুখীন হলেন । ” কয়েকজনকঠিন ও অবাধ্য হইয়া লোকসমূহের সাক্ষাতে সেই পথের নিন্দা করিতে লাগিল।”যখন তারা সুসমাচারের বিরোধীতা করতেই থাকল, প্রেরিত ধর্ম্মধামে প্রচার করা বন্ধকরে দিলেন ।AABen 238.4

    তার দেশের লোকদের জন্য, ঈশ্বরের আত্মা, তার সঙ্গে ও মাধ্যমে কাজকরেছেন । যারা সততার সাথে সত্য জানতে চায় তাদের দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদনেরজন্য যথেষ্ট প্রামানিক তথ্য উপস্থাপন করা হল । কিন্তু অনেকে নিজেদের কুসংস্কারও অবিশ্বাসের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেয় আর চূড়ান্ত প্রামানিক তথ্যের বশবর্ত্তী হতেঅস্বীকার করে । সত্যবিরোধীদের সঙ্গে মেলামেশায় বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বিপদগ্রস্তAABen 239.1

    হতে পারে এই ভয়ে, পৌল তাদের কাছ থেকে সরে এসে শিষ্যদের নিয়ে পৃথক দলগঠন করে তূরান্ন নামক একজন বিশিষ্ট শিক্ষকের বিদ্যালয়ে তার প্রকাশ্য শিক্ষাচালিয়ে যেতে থাকলেন ।AABen 239.2

    পৌল দেখলেন তার সামনে “এক দ্বার খোলা রহিয়াছে, তাহা বৃহৎ ও কার্য্যসাধক, আর বিপক্ষ অনেক ।” ১ করিন্থীয় ১৬ : ৯ । ইফিষ কেবল একটাজাঁকজমকপূর্ণ শহরই নয়, কিন্তু এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কলুষিত শহরছিল। কুসংস্কার ও কামুকতা শহরের ঘন জনসংখ্যার মধ্যে বিস্তারিত ছিল ।মন্দিরগুলোর ছত্রছায়ায় নানা স্তরের সন্ত্রাসীরা আশ্রয় পেত আর অতি নিম্ন স্তরেরবদভ্যাসগুলো বৃদ্ধি লাভ করেছিল ।AABen 239.3

    ইফিষ দীয়ানার পুজার কেন্দ্র হিসাবে একটা জনপ্রিয় স্থান ছিল । ইফিষীয়দেরদীয়ানার চমৎকার মন্দিরের খ্যাতি সমগ্র এশিয়া ও জগতে ব্যপ্ত ছিল। এর ছাপিয়েযাওয়া জাঁকজমক কেবল এই শহরেরই নয়, বরং সমগ্র জাতির গর্ব ছিল । মন্দিরের মধ্যের, কিংবদন্তী দ্বারা ঘোষিত প্রতিমা, আকাশ থেকে পতিত হয়েছে বলা হত ।এর গায়ে প্রতীকী অক্ষর খোদাই করা ছিল যা মহাশক্তিধর বলে বিশ্বাস করা হত । ইফিষীয়েরা এই সব প্রতীকের অর্থ ব্যাখ্যা ও ব্যবহার সম্পর্কে অনেক বই লিখেছিল।AABen 239.4

    যারা অনেক দামী এই সব বইপত্রের ওপর একনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করত, সেইসব যাদুকরেরা মন্দিরের মধ্যের প্রতিমার কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুজারীদের মনের ওপরেপ্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করেছিল।AABen 239.5

    ইফিষে কাজ করার সময়, পৌলকে ঐশ্বরিক অনুগ্রহের বিশেষ প্রামানিক সাক্ষ্যদেওয়া হয়েছিল। তার প্রচেষ্টার সঙ্গে ঈশ্বরের শক্তি সহবর্ত্তী ছিল আর অনেকেতাদের শারীরিক অসুস্থতার থেকে সুস্থ হয়েছিল । ” আর ঈশ্বর পৌলের হস্ত দ্বারাঅসামান্য পরাক্রম কার্য্য সাধন করিতেন ; এমন কি, তাঁহার গাত্র হইতে রুমালকিম্বা গামছা পীড়িত লোকদের নিকটে আনিলে ব্যাধি তাহাদিগকে ছাড়িয়া যাইত,এবং দুষ্ট আত্মারা বাহির হইয়া যাইত।” ইতোপূর্বে এত শক্তিশালীঅতিপ্রাকৃত শক্তির প্রকাশ ইফিষে দৃষ্ট হয় নাই, এগুলো যে ধরণের ছিল তা যাদুকরেরা তাদেরদক্ষ যাদুবিদ্যা দিয়ে অনুকরণ করতে ব্যর্থ হল । এই সব আশ্চর্য্য কাজ যখননাসরতীয় যীশুর নামে সাধিত হচ্ছিল, লোকেরা দেখতে পেল যে স্বর্গের ঈশ্বর দীয়ানাদেবীর পুজারী, যাদুকরদের চেয়েও বেশী শক্তিশালী । এইভাবে তাঁর দাসকে প্রভুপ্রতিমা পুজকদের নিজেদের চাইতেও সবচেয়ে শক্তিশালী ও অনুগ্রহ প্রাপ্ত যাদুকরেরচাইতে বেশী ওপরে ওঠালেন ।AABen 239.6

    কিন্তু, সমস্ত মন্দাত্মারা যাঁর নিয়ন্ত্রাণাধীন ও যিনি তাঁর দাসগণকে তাদের ওপরেকর্ত্তৃত্ব দিয়েছেন, যারা তাঁর পবিত্র নামের উপর নিন্দা ও কলঙ্ক লেপন করেছে তাদেরওপরে তিনি লজ্জা ও পরাজয় আনতে যাচ্ছেন । জাদুবিদ্যা মোশির ব্যবস্থায় নিষিদ্ধও মৃত্যুযোগ্য অপরাধ, তবুও কখনো কখনো এই বিদ্যা গোপনে পথভ্রষ্ট যিহূদীরাওঅভ্যাস করত। পৌলের ইফিষে থাকার সময় “কয়েকজন পর্য্যটনকারীযিহূদী ওঝা ” তাদের আশ্চর্য্য কাজ করতে দেখে, “দুষ্ট আত্মাবিষ্ট লোকদের কাছেপ্রভু যীশুর নাম জপ করিতে . . . লাগিল ।” “আর স্কিবা নামে একজন যিহূদীপ্রধান যাজকের সাত পুত্র ছিল, তাহারা এইরূপ করিত ।” তারা দুষ্ট আত্মাবিষ্টএকজনকে পেয়ে বলল, ” পৌল যাহাকে প্রচার করেন, সেই যীশুর দিব্য দিয়াতোমাদিগকে বলিতেছি ।” কিন্তু “দুষ্ট আত্মা উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিল,যীশুকে আমি জানি, পৌলকেও চিনি, কিন্তু তোমরা কে ? তখন যে ব্যক্তি দুষ্টআত্মাবিষ্ট, সে তাহাদের উপরে লাফ দিয়া পড়িল, দুইজনকে পরাভব করিয়াতাহাদের এমন বল প্রকাশ করিল যে, তাহারা উলঙ্গ ও ক্ষত বিক্ষত হইয়া সেই গৃহহইতে পলায়ন করিল ।”AABen 240.1

    এইভাবে খ্রীষ্টনামের পবিত্রতা সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণ প্রদত্ত হল, আর তারা যেবিপদের সম্মুখীন হল, কে তা ত্রাণকর্তার কাজ সম্পর্কে বিশ্বাস না করে স্মরণ করতেপারে। “তাহাতে সকলে ভয়গ্রস্ত হইল, এবং প্রভু যীশুর নাম মহিমান্নিত হইতেলাগিল।”যে সব ঘটনা আগে গোপন ছিল, এখন তা আলোতে প্রকাশিত হল । খ্রীষ্টধর্মগ্রহণ করেও, কিছু বিশ্বাসী তাদের কুসংস্কার সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করতে পারেনি।কতকাংশে তারা তখনো যাদুবিদ্যা অভ্যাস করত । এখন তাদের ভুল বুঝতে পেরে” যাহারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহাদের অনেকে আসিয়া আপন আপন ক্রিয়া স্বীকারও প্রকাশ করিতে লাগিল ।” এমন কি কিছু কিছু যাদুকরদের কাছ পর্য্যন্ত ভাল কাজপৌঁছে গিয়েছিল ; “আর যাহারা যাদু ক্রিয়া করিত, তাহাদের মধ্যে অনেকে আপনআপন পুস্তক আনিয়া একত্র করিয়া সকলের সাক্ষাতে পোড়াইয়া ফেলিল ; সে সকলেরমূল্য গণনা করিলে দেখা গেল, পঞ্চাশ সহস্র রৌপ্যমূদ্রা । এইরূপে সপরাক্রমে প্রভুরবাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও প্রবল হইতে লাগিল ।”AABen 240.2

    যাদুবিদ্যার বইপত্র পুড়িয়ে, ইফিষীয় মনপরিবর্তনকারীরা দেখাল যে আগে তারাযে সব কিছুতে আমোদিত হত এখন তারা তা ঘৃণা করে । যাদুবিদ্যা দিয়ে ও এরমাধ্যমে তারা বিশেষভাবে ঈশ্বরের অবমাননা ও তাদের আত্মাকে বিপদগ্রস্ত করেছিল; আর এই যাদুবিদ্যার বিরূদ্ধে তারা তাদের ঘৃণা মিশ্রিত ক্রোধ প্রকাশ করল ।এইভাবে তারা প্রকৃত মনপরিবর্তনের প্রমাণ দিল ।AABen 241.1

    গণৎকারীত্বের উপর লেখা এই বইগুলোতে মন্দাত্মার সঙ্গে যোগাযোগের নিয়মপদ্ধতি লিপিবদ্ধ ছিল । এগুলো শয়তানের কাছ থেকে সাহায্য ও তথ্য পাওয়ারজন্য পূজার নিয়মকানুন ছিল । এই বইগুলো কাছে থাকলে শিষ্যেরা নিজেদেরপ্রলোভনের সম্মুখীন করত, আর বিক্রি করলে অন্যদের সামনে প্রলোভন এনে দিত। তারা অন্ধকারের রাজ্য পরিত্যাগ করেছে আর এর শক্তিকে ধ্বংশ করার জন্য যেকোন ত্যাগস্বীকার করতে ইত:স্তত করেনি । এইভাবে সত্য, মানুষের কুসংস্কার ওঅর্থের লালসার উপরে বিজয় লাভ করল ।AABen 241.2

    খ্রীষ্টের এই শক্তি প্রকাশের মধ্য দিয়ে কুসংস্কারের শক্ত ঘাঁটির মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্মবিশাল বিজয় লাভ করল । এই ঘটনার প্রভাব এত প্রসারিত হল যে তা পৌলওবুঝতে পারেন নি । ইফিষ থেকে এই সংবাদ চারিদিকে প্রচারিত হয়ে খ্রীষ্টের কাজেপ্রচন্ড গতি এনে দিল । প্রেরিত নিজে তার কাজ শেষ করার অনেক পরেও এইদৃশ্যাবলী লোকদের মনে জাগরক ছিল আর এগুলো অনেককে সুসমাচারের জন্যআত্মা লাভ করার মাধ্যম হিসাবে কাজ করেলিছ।AABen 241.3

    বিংশ শতাব্দির সভ্যতার আগেই ম্মেচ্ছ কুসংস্কার দূরীভূত হয়েছিল একথা খুবভালভাবে মনে করা হয়ে থাকে । কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য ও ঘটনাবলীর কঠোর সাক্ষ্যঘোষণা করে যে পুরাকালের যাদুকরদের মত এ যুগেও যাদুবিদ্যার চর্চ্চা হয়ে থাকে। আগের কালের যাদুবিদ্যা, বাস্তবে, বর্ত্তমানের পরিচিত আধুনিক অধ্যাত্মবাদ ।শয়তান মৃত বন্ধুবান্ধবদের ছদ্মবেশে হাজার হাজার লোকের মনে পথ করে নিচ্ছে ।শাস্ত্র ঘোষণা করে, ” মৃতেরা কিছুই জানেনা ।” উপদেশক ৯:৫ । তাদের চিন্তা,তাদের প্রেম, তাদের ঘৃণা সবই বিনষ্ট হয়েছে । মৃতেরা জীবিতদের সাথে কোনযোগাযোগ করতে পারে না । কিন্তু আগের চতুরতার মত শয়তান এই কৌশলপ্রয়োগ করে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে ।AABen 241.4

    অধ্যাত্মবাদের মাধ্যমে অনেক অসুস্থ, শোকার্ত, কৌতুহলী লোক মন্দাত্মারসাথে যোগাযোগ করে । যারা এই সব করতে যায় তারা বিপদসঙ্কুল স্থানে দাঁড়িয়েআছে । ঈশ্বর তাদের সম্পর্কে কী ভাবেন সত্যের বাক্য তা বলে দেয় । পুরাকালেএকজন রাজা যিনি বিধর্মী দেববানীজ্ঞাপকের কাছে পরামর্শের জন্য লোকপাঠিয়েছিলেন, ঈশ্বর তাকে কঠোর দণ্ডাজ্ঞা দিয়েছিলেন : ” ইস্রায়েলের মধ্যে কিঈশ্বর নাই যে তোমরা ইক্রোণের দেবতা বাল্—সবুবের কাছে জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছ ? অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যে খাটে উঠিয়া শুইয়াছ, তাহাহইতে আর নামিবে না, মরিবেই মরিবে ।” ২ রাজাবলি ১: ৩, ৪ পদ।AABen 241.5

    বিধর্মীদের সময়ের যাদুকরদের প্রতিরূপ, আজকের আত্মিকবাদমূলক মাধ্যম,আলোকদ্রষ্টা, ও বিষ্যৎবক্তারা । ইক্রোণ ও ইফিষে যে গুপ্তরহস্যপূর্ণ স্বরগুলো কথাবলেছিল, এখনও তাদের মিথ্যা কথা মানুষদের পথভ্রষ্ট করে । আমাদের চোখেরসামনের থেকে যদি পর্দা তুলে নেওয়া যেত, তাহলে দেখা যেত যে মন্দ দূতেরাপ্রতারণা ও ধ্বংশ করার জন্য তাদের সব রকম কৌশল প্রয়োগ করছে । যেখানেইAABen 242.1

    ঈশ্বরকে ভুলে যাবার জন্য মানুষকে প্রভাবিত করা যায়, শয়তান সেখানেই তারমায়াবী শক্তি প্রয়োগ করে । মানুষ যখন তার প্রভাবে পড়ে, তা বুঝে ওঠার আগেইতাদের মন বিভ্রান্ত ও আত্মা কলুষিত করে । ইফিষীয় মন্ডলীর কাছে প্রেরিতেরউপদেশ বর্ত্তমানে ঈশ্বরের লোকদের অবশ্যই কর্ণপাত করা আবশ্যক : ” অন্ধকারেরফলহীন কর্ম্ম সকলের সহভাগী হইও না, বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও ।”ইফিষীয় ৫:১১ পদ।AABen 242.2