Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ৫৮ অধ্যায়—মন্ডলীর বিজয়য়োল্লাস

    প্রেরিত গন তাদের প্রচার কার্য থেকে বিশ্রাম কার্য থেকে বিশ্রাম গ্রহণের পর থেকে আঠারোশ শতাব্দির ও অধিক কাল অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু খ্রীষ্টের জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস এখন পর্যন্ত মন্ডলীর মধ্যে মহা মূল্যবান সম্পদ হয়ে আছে। এই ইতিহাস পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছিল, এটি এই উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল যেন সকল যুগের খ্রীষ্টের অনুসারীদের মুক্তিদাতার জন্য গভীর আগ্রহ এবং আন্তরিকতাপূর্ণ মনোভাবের সৃষ্টি হয়।AABen 501.1

    যে কাজের ভার শিষ্যদের উপর অর্পন করা হয়েছিল তারা তা যথাযথ ভাবে সম্পনড়ব করেছিলেন। ক্রুশের এই বার্তা বাহকেরা যে ভাবে সুসমাচার ঘোষনা করার জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পরেছিল তাতে এমনভাবে ঈশ্বরের মহিমার প্রকাশ ঘটেছিল যে পূর্বে মরণশীল মানুষের মানুষের দ্বারা কখনও এই রকম বাক্য বহন করা সম্ভব হয় নি। পবিত্র আত্মার সহযোগীতায় প্রেরিতগন যে কাজ করেছিলেনতা সমস্ত জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিটি জাতির মধ্যে এক একটি বংশের কাছে সুসমাচার বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।AABen 501.2

    খ্রীষ্টের মনোনীত প্রেরিতদের প্রচার কার্যের যত্নশীলতার ফল ছিল মহ গৌরবমন্ডিত। তারা যখন প্রচার কার্য শুরু করেন তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন অশিক্ষিত। কিন্তু তাদের প্রভুর জন্য উৎসর্গকৃত জীবন ছিল এবং তার নির্দেশের ফলে তাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তার জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহন করতে পেরেছিলেন। অনুগ্রহ এবং সত্য তাদের জীবন প্রভাবিত করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনুপ্রেরনা জুগিয়ে ছিল এবং তাদের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রন করেছিল। খ্রীষ্টের সঙ্গে তাদের জীবন ঈশ্বরের মধ্যে লুকায়িত ছিল, তাদের নিজেদের দেখতে পাওয়া যায় নি, অসীম ভালোবাসার গভীরে তারা নিমজ্জিত ছিল।AABen 501.3

    প্রেরিতগন ছিলেন সেই মানুষের যারা জানতেন কিভাবে কথা বলতে হয় এবং কিভাবে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে হয়, যারা জানতেন কিভাবে ইস্রায়েলের শক্তিমত্তাকে ধরে রাখতে হয়। ঈশ্বরের কত নিকটবর্তী হয়ে তারা অবস্থান করেছিলেন এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের প্রতি ব্যাক্তিগত সম্মান কত না গভীর ছিল! সদাপ্রভু ছিলেন তাদের ঈশ্বর। তার সম্মান ছিল তাদের সম্মান। তার যথার্থতা ছিল তাদের যথার্থতা। যখন সুসমাচারের উপর কোন আক্রমন আসত তখন তাদের মনে হত এটি যেন তাদের অন্তরকে গভীরভাবে কেঁটে ক্ষতবিক্ষত করেছে, এবং তাদের যত শক্তি, ক্ষমতা এবং সামর্থ ছিল তার সব কিছু দিয়ে তারা খ্রীষ্টের পক্ষে পরিচর্যা করার জন্য প্রানপণে যুদ্ধ করতেন। স্বর্গীয় অভিষেক গ্রহণ করেছিলেন বলে তারা জগতের কাছে জীবনের বাক্য প্রচার করতে পেরেছিলেন। তারা অনেক প্রত্যাশা করতেন আর এই জন্য তারা খুব জোড়ালোভাবে প্রচেষ্টা করতেন। খ্রীষ্ট নিজেকে তাদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন এবং তারা তার কাছে নির্দেশনা চাইতেন। বিরোধীদের প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে তাদের সত্য সম্পর্কে জ্ঞন এবং তাদের ক্ষমতা ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে তাদের ইচ্ছার যে সামঞ্জস্য রয়েছে তার বহিপ্রকাশ। যীশু খ্রীষ্ট, যিনি ছিলেন ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা, যিনি প্রতিটি আলোচনার প্রসঙ্গ ছিলেন। তার নাম ——— আকাশের নিচে প্রদত্ত একমাত্র নাম যে নামের দ্বারা মানুষ পরিত্রান লাভ করতে পারে ——— তাদের দ্বারা মহিমান্বিত হয়েছিল। তারা পুনরুত্থিত খ্রীষ্টের সম্পর্কে এমনভাবে ঘোষনা করেছিলেন যে, লোকদের অন্তর তাদের কথায় পরিবর্তন হয়েছিল এবং পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা সুসমাচার গ্রহন করেছিল। অসংখ্য লোক যারা ত্রানকর্তার নামে কুৎসা রটিয়েছিল এবং তার ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করেছিল তারা এখন নিজেদের ক্রুশাহত শিষ্য হিসাবে শিকার করেছেন।AABen 501.4

    প্রেরিতদের উপর যে মহান কার্য ভার অর্পিত হয়েছিল তারা তা নিজেদের শক্তিতে সম্পনড়ব করেননি, কিন্তু তারা তা সম্পনড়ব করেছিল জীবন্ত ঈশ্বরের শক্তিতে। তাদের কাজ খুব সহজসাধ্য ছিল না। খ্রীষ্টিয় মন্ডলী প্রারম্ভিক কাজ গুলো সম্পনড়ব করতে গিয়ে অত্যন্ত কষ্টকর এবং দুঃসহ অবস্থা সম্মুখিন হতে হয়েছিল। প্রেরিতগন তাদের কাজে অব্যাহতভাবে কষ্ট, নিন্দা এবং নির্যাতনের সম্মুখিন হয়েছিলেন; কিন্তু তাদের জীবন নিজেদের কাছে প্রিয় বলে গন্য করেন নি এবং তারা এই বলে আনন্দ প্রকাশ করতেন যে তারা খ্রীষ্টের জন্য দুঃখভোগ করতে আহুত হয়েছেন। তাদের প্রচেষ্টার মধ্যে দ্বিধাভাব, সংকল্পেকের দুর্বলতার কোন স্থান ছিল না। তারা নিজেদের প্রভুর জন্য বিলিয়ে দিতে এবং নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পন করতে ইচ্ছুক ছিলেন। দায়িত্বে সচেতনতা তাদের পবিত্র করেছিল এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধশালী করেছিল। আর স্বর্গের অনুগ্রহ খ্রীষ্টের জন্য তাদের অর্জন প্রকাশ পেয়েছিল বিজয়ের মধ্যে। সুসমাচার বিজয় দৃপ্ত করতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষমতা তাদের মধ্য দিয়ে কাজ করেছিল।AABen 502.1

    যে ভিত্তি স্বয়ং খ্রীষ্ট স্থাপন করেছিলেন প্রেরিতগন তার উপরে ঈশ্বরের মন্ডলী নির্মান করেছিলেন। গীর্জার ইমারতের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার জন্য পবিত্র শা¯্রে প্রায়ই মন্দিরে ইমারতের চিত্র উল্লেখ করা হয়েছে। সখরিয় খ্রীষ্টকে পল্লব হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা প্রভুর মন্দির নির্মান করবে। এই কাজে সহায্য করার ব্যাপারে পরজাতি সম্পর্কে বলেছেন, “আর দুরস্থ লোকেরা আসিয়া সদাপ্রভুর মন্দির নির্মানে সাহায্য করিবে।” আর যিশাইয় ঘোষনা করেছেন, “আর বিজাতি সন্তানেরা তোমার প্রাচীর গাথিবে।” সখরিয় ৬:১২,১৫, যিশাইয় ৬০:১০ পদ।AABen 503.1

    এই মন্দিরের দালানের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে পিতর বলেছেন, “তোমরা তাহারই নিকট আসিয়া জীবন্ত প্রস্তরের ন্যায় আত্মিক গৃহ স্বরুপে গাথিয়া তোলা যাইতেছে, যেন পবিত্র যাজকবর্গ হইয়া যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ করিতে পার।” ১ পিতর ২:৪,৫ পদ।AABen 503.2

    ভিত্তি গাথার জন্য পাথর আনার কারণে প্রেরিতগন যিহুদীদের এবং পরজাতিদের জগতে কঠোর পরিশ্রম করে সুসমাচার প্রচার করেছেন। ইফিসীয় বিশ্বাসীদের কাছে পৌল তার লেখা চিঠিতে বলেছেন, “অতএব তোমরা আর অসম্পর্কীয় ও প্রবাসী নহ, কিন্তু পবিত্র গনের সহ প্রজা এবং ঈশ্বরের বাটির লোক। তোমাদিগকে প্রেরীত এবং ভাববাদীগনের ভিত্তিমূলের উপর গাথিয়া তোলা হইয়াছে, তাহার প্রধান কোনস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু। তাহাতেই প্রত্যেক গাথুনি সুসংলগড়ব হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকে এক সঙ্গে গাথিয়া তোলা হইতেছে।” ইফিসীয় ২:১৯—২২ পদ।AABen 503.3

    আর করিন্থীয়দের কাছে তিনি লিখেছেন, “ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ আমাতে দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে আমি জ্ঞানবান গাথকের ন্যায় তাহার উপরে অন্যে গাথিতেছে; কিন্তু প্রত্যেকজন দেখুক, কিরূপে সে তাহার উপরে গাঁথে। কেননা কেবল যাহা স্থাপিত হইয়াছে তাহা ব্যাতিত অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না, তিনি যীশু খ্রীষ্ট। কিন্তু এই ভিত্তিমূলের উপিরে স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্যের প্রস্তর, কাঠ, খড়, নাড়া দিয়ে যদি কেহ গাঁথে, তবে প্রত্যেক ব্যাক্তির কর্ম প্রকাশ পাইবে। কারন সেই দিন তাহা ব্যক্ত করিবে, কেননা সেই দিন প্রকাশ অগ্নিতেই হয়; আর প্রত্যেকের কর্ম কি প্রকার, সেই অগ্নি তাহার পরীক্ষা করিবে। ১ করন্থিয় ৩:১০—১৩।AABen 503.4

    প্রেরিতগন নিশ্চিত ভিত্তির উপর নির্মান করেছিলেন, এই ভিত্তির জন্য তারা পাথর বহন করে এসেছিল যা তারা জগৎ থেকে আহরণ করেছিল। কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা বিহীনভাবে এই নির্মাতারা তাদের কাজ করেছিলেন, তা নয়। খ্রীষ্টের শত্রুদের প্রবল বিরোধীতার ফলে তাদের কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পরেছিল। যারা মিথ্যে ভিত্তির উপর নির্মান করেছিল, তাদের গোঁড়ামি, সংস্কার এবং তাদের তীব্র ঘৃণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। অনেকে নহিমীয়র সময়ের প্রাচীর নির্মানকারীর মতন হওয়ার জন্য মন্ডলীর নির্মানকারী হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, যাদের সম্পর্কে এটি লেখা হয়েছিল, “যাহারা প্রচীর গাঁথিত, আর যাহার ভার বহিত, তাহারা ভার তুলিয়া দিত, সকলে এক হস্তে কর্ম করিত, অন্য হস্তে অস্ত্র ধরিত।” নহিমীয় ৪:১৭।AABen 504.1

    রাজারা এবং শাসনকর্তারা, যাজকরা এবং নেতারা ঈশ্বরের মন্দির ধ্বংশ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কারাবাসের, অত্যাচারের এবং মৃত্যুর সম্মুখিন হয়ে বিশ্বস্ত লোকেরা কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল; আর চমৎকার এবং সুসানঞ্জস্যভাবে দালান বৃদ্ধি পেয়েছিল। এক সময় নির্মান কর্মীরা কুসংস্কারে কুয়াশায় প্রায় অন্ধের মত ছিল যা তাদের চারপাশে স্থির হয়ে ছিল। এক সময় তারা বিপক্ষদের হিংস্রতা দ্বারা প্রায় বসিভূত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু অনঢ় বিশ্বাস এবং নিশ্চিত সাহস দিয়ে তারা কাজে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। একর পর এক নির্মাতাদের প্রধানের শত্রুদের হাতে মৃত্যুবরণ করছিল। স্তিফানকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছিল; যাকোবকে তরবারি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল; পৌলের শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল; যোহনকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তথাপি মন্ডলী ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল্ যারা মৃত্যুবরণ করেছিল নতুন পরিচর্যাকারীরা এসে তাদের সেই স্থান পূরণ করেছিলেন এবং একটি পাথরের পরে আর একটি পাথর দালানে যুক্ত হয়েছিল। এইভাবে ঈশ্বরের মন্ডলীর উপাসনাগৃহ ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল।AABen 504.2

    ভয়ংকর নির্জাতনের শতবর্ষ যেন খ্রীষ্টিয় মন্ডলীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে এমন কেউ ছিলেন না যিনি ঈশ্বরের গৃহ নির্মানের কাজকে তাদের জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গন্য করতেন। এই সম্পর্কে লেখা হয়েছে: “আর অন্যেরা বিদ্রæপের ও কষাঘাতের, অধিকন্ড বন্ধনের ও কারাগারের পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন: তাহারা প্রস্তরাঘাতে হত, পরীক্ষিত হত, করাত দ্বারা বিদীর্ণ, খড়গ দ্বারা নিহত হইলেন: তাহারা মেষের ও ছাগের চর্ম পড়িয়া বেড়াইতেন দ্বিনহীন, কিষ্ট; উপদ্রত হইতেন; (এই জগত যাহাদের যোগ্য ছিল না) তাহারা প্রান্তরে প্রান্তরে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায়, গহব্বরে গহব্বরে ভ্রমন করিতে।” ইব্রীয় ১১:৩৬—৩৮।AABen 504.3

    যে কাজের ভার প্রভুর কার্যকারীদের উপর অর্পন করা হয়েছিল তা বন্ধ করার জন্য ধার্মিকতার শত্রুরা এমনকোন প্রচেষ্টা অবশিষ্ট রাখে নি যা করা যেত না। কিন্তু ঈশ্বর “তথাপি তিনি আপনাকে সাক্ষ্য বিহীন রাখেন নাই।” প্রেরিত ১৪:১৭।AABen 505.1

    ধার্মিকদের যা একবার প্রদান করা হয়েছিল যে সকল পরিচর্যাকারী কাজ করেছিলেন তারা তা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ইতিহাসের বিবরণ এই সকল লোকদের বীরদের মত সহিঞ্চুতা এবং বিরত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রেরিতদের মত অনেককেই তাদের সাক্ষ্য বহন করার জন্য হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু মন্দিরে নির্মানকারীরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এগিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক কার্যকারীকে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু কাজ থেকে থাকে নি, তা চলমান ছিল। ওয়ানডেনসেস, জন উইকলিফ, হাস্ এবং জেরোমী, মার্টিন লুথার এবং উইবলি, ক্রেনমার, লাটিমার এবং নক্স, হিউগুনেটস, জন এবং চার্লস ওয়েসলি এই ভাবে আরো অনেকে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিত্তি করেছেন যা সর্বত্র চিরকাল অবিচল থাকবে। আর পরবর্তী বছর গুলোতে যারা মহত্বরভাবে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন এবং যারা পরজাতিদের দেশে তাদের পরিচর্যা কাজের দ্বারা শেষ মহান আদেশ ঘোষনার জন্য পদ প্রস্তুত করেছিলেন তারাও দালান তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন।AABen 505.2

    প্রেরিতিক যুগের মধ্য দিয়ে যে যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন থেকে অদ্যাবধি ঈশ্বরের মন্দিরে নির্মান কাজ কখনো থেমে থাকে নি। আমরা শতাব্দির মধ্য দিয়ে পেছনের দিকে তাকাতে পারি এবং দেখতে পাব জীবন্ত প্রস্তর যা ভ্রান্তি আর কুসংস্কারের অন্ধকারে মধ্য দিয়ে আলোর পাথরের মত উজ্জল আলো বিচ্ছুরিত করছে। অনন্তকাল ব্যাপি এই মহামূল্যবাণ রতড়ব ঈশ্বরের সত্যের ক্ষমতার সাক্ষ্য তুলে ধরার জন্য উজ্জল আলো বিকিরণ করবে। এই সকল মসৃণ পাথরের বিচ্ছুরিত আলো প্রকাশ করে যে, আলো এবং অন্ধকারের মদ্যে পার্থক্য রয়েছে, পার্থক্য রয়েছে সত্যের স্বর্ণ এবং ভ্রান্তির আবর্জনার মধ্যে।AABen 505.3

    পৌল এবং অন্যান্য প্রেরিতগন এবং সকল ধার্মিক ব্যাক্তি যারা ঐ সময় বসবাস করতেন, তারা মন্দিরের দালান তৈরি করার কাজে অংশ গ্রহণ করছেন। কিন্তু তবুও দালান তৈরির কাজ সমাপ্ত হয় নি। আমরা যারা বর্তমান সময়ে বাস করছি, করবার জন্য কাজ রয়েছে, কাজ রয়েছে এই দালান তৈরিতে অংশ নেবার। আমাদের ভিত্তির উপাদান নিয়ে আসতে হবে যা প্রতিষ্ঠিত করবে আগুনে পরীক্ষিত, স্বর্ণ, রৌপ্য এবং মহামূল্যবাণ পাথর, “প্রাসাদের গাঁথনির অনুরূপে তফিত কোনের স্তম্ভ সাদৃশ হয়।” গীতসংগীতা ১৪৪:১২। যারা এইভাবে ঈশ্বরের জন্য গাঁথে, পৌল তাদের উদ্দেশ্যে উৎসাহমূলক এবং সতর্কতার বাণী উল্লেখ করেছেন: “যে যাহা গাঁথিয়াছে, তাহার সেই কর্ম যদি থাকে, তবে সে বেতন পাইবে। যাহার কর্ম পুড়িয়া যায়, সে ক্ষতিগ্রস্থ হইবে, কিন্তু সে আপনি পরিত্রান পাইবে। তথাপি এরূপে পাইবে, যে অগ্নির মধ্য দিয়া উত্তির্ণ হইবে।” ১ করিন্থীয় ৩:১৪—১৫ পদ। যে খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বস্তভাবে জীবনের বাক্য উপস্থাপন করেন, পুরুষ এবং স্ত্রী লোকেদের পবিত্রতা এবং শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যা টিকে থাকে এমন ভিত্তি উপাদানের কাছে নিয়ে আসে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের কাছে নিয়ে আসে তিনি জ্ঞানি নির্মাতা হিসাবে সম্মানিত হবেন।AABen 506.1

    প্রেরিতদের মধ্যে একজন লিখেছেল, “আর তাহারা প্রস্থান করিয়া সর্বত্র প্রচার করিতে লাগিলেন এবং প্রভু সঙ্গে সঙ্গে কার্য করিয়া অনুবর্তী চিহ্ন সমূহ দ্বারা সেই বাক্য সপ্রমান করিলেন।” মার্ক ১৬:২০। খ্রীষ্ট যেভাবে তার শিষ্যদের প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে বর্তমানেও তিনি মন্ডলীর সদস্য সদস্যাদের প্রচারের জন্য পাঠিয়ে থাকেন। যে ক্ষমতা প্রেরিতদের দেওয়া হয়েছিল এই কাজের জন্য, একই ক্ষমতা তাদেরও প্রদান করা হয়েছে। যদি তারা ঈশ্বরকে তাদের শক্তি করে থাকে তাহলে তিনি তাদের সঙ্গে কাজ করবেন এবং তাদের পরিশ্রম নিস্ফল হবে না। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, যে কাজে তারা ব্যাপৃত হয়েছেন তাই এমন একটি কাজ যার উপর প্রভু সিলমোহর করেছেন। ঈশ্বর যিরমিয়কে বলেছেন, “আমি বালক, এমন কথা বলিও না, কিন্তু আমি তোমাকে যাহার কাছে পাঠাইব, তাহারই কাছে তুমি যাইবে এবং তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিব তাহাই বলিবে। উহাদের সম্মুখে ভীত হইও না, কেননা তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।” পরে সদাপ্রভু হাত বাড়িয়ে তার দাসের মুখ স্পর্শ করলেন, এবং বললেন, “দেখ আামি আমার বাক্য তোমার মধ্যে দিলাম,” যিরমিয় ১:৭—৯। তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যে বাক্য তিনি আমাদের দিয়েছেন আমি যেন লোকদের কাছে গিয়ে তা প্রচার করি, আমাদের মুখে যেন তার স্পর্শ অনুভব করি।AABen 506.2

    খ্রীষ্ট মন্ডলীকে একটি পবিত্র কার্যভার প্রদান করেছেন। মন্ডলীর প্রত্যেক সদস্য সদস্যাকে এমন একটি মাধ্যম হতে হবে তাদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তার মহা অনুগ্রহ ধন, খ্রীষ্টের অনুসন্ধেয় সম্পদ জগৎকে প্রদান করতে পারেন। মুক্তিদাতার ভালোবাসার মানবিকতার মধ্য দিয়ে যা প্রকাশ পেয়েছে তা এর চেয়ে বেশি জগতের আর কিছুর প্রয়োজন নেই। যাদের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টিয় চরিত্রের শক্তি করতে পারেন সেই পুরুষ ও স্ত্রী লোকদের জন্য সমস্ত স্বর্গ অপেক্ষা করে আছে। সত্যের ঘোষনার জন্য মন্ডলী হল ঈশ্বরের মাধ্যম, যে মন্ডলীকে এই বিশেষ কাজ সমাধা করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে; যদি মন্ডলী তার অনুগ্রহ থাকে, তার সকল আদেশের প্রতি বাধ্য থাকে তাহলে স্বর্গীয় অনুগ্রহের উৎকর্ষ তার মধ্যে বাস করবে। যদি সে তার কর্তব্যে বিশ্বস্ত থাকে, যদি সে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে সম্মান করে, তাহলে এমন কোন শক্তি নেই যা তার বিরুদ্ধে দাড়াতে পারে।AABen 507.1

    ঈশ্বর এবং তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রেরিতদের গভীর আগ্রহ ছিল বলে তারা প্রবল শক্তি নিয়ে সুসমাচারের সাক্ষ্য বহন করার জন্য চারদিকে ছড়িয়ে পরেছিল। খ্রীষ্টের পাপ থেকে মুক্ত করার সেই মহা প্রেমের গল্প এবং তার ক্রুশীয় মৃত্যুর ঘটনা বলার জন্য কি আমাদের আগুনের মত জ্বলন্ত আগ্রহ থাকা উচিৎ নয়? এটি সকল খ্রীষ্টয়ানদের জন্য অধিকার, কেবল প্রত্যাশা করতে নয়, কিন্তু মুক্তিদাতার আগমন ত্বরান্বিত করতে। যদি মন্ডলী খ্রীষ্টের ধার্মিকতার বস্ত্র পরিধান করে, যদি জগতের প্রতি তার যে আনুগত্য রয়েছে, তা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারে, তাহলে তার সামনে উজ্জল প্রভাব এবং গৌরবমন্ডিত দিন। তার প্রতি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা চিরকাল অটুট থাকবে। তিনি মন্ডলীতে চিরকালীন উৎকর্ষতা দান করবেন, অনেক আনন্দের উৎস করবেন। যারা সত্যকে অবজ্ঞা এবং প্রত্যাখ্যান করে এটিকে উপেক্ষা করবে তারা হয়তো বিজয় উল্লাস করবে। এক সময় আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে মন্ডলীর কার্যক্রম দলিত হয়েছে। কিন্তু এর অগ্রগতি কখনোই রুদ্ধ করা যাবে না। যখন ঈশ্বরের বাণীর বিরোধীতার সম্মুখিন তখন তিনি বাড়তি শক্তি প্রদান করেন যাতে এটি আরো ক্ষমতাপনড়ব হয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ঈশ্বরের ক্ষমতার অধিকারী হয়ে সমস্ত শক্ত বাধা দূরে সরিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে নেবে এবং সমস্ত প্রতিবন্ধকতার উপর বিজয় উল্লাস করবে।AABen 507.2

    ঈশ্বরের পুত্র তার কঠোর পরিশ্রমের জীবনকালে এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কি তুলে ধরেছিলেন? তিনি তার কঠোর পরিশ্রমী প্রাণের ফল দেখেছিলেন এবং সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। অন্তরের দিকে তাকিয়ে তিনি সেই সকল লোকদের সুখ দেখতে পেয়েছিলেন যারা তার বিনম্রতাম মধ্য দিয়ে ক্ষমা এবং অনন্ত জীবন লাভ করেছেন। উদ্ধার প্রাপ্তদের চিকিৎসা তার কানে প্রবেশ করে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মোশির এবং মেষসাবকের গান তিনি শুনতে পান।AABen 508.1

    আমরা ভবিষ্যতের স্থান, স্বর্গের সুখের অবস্থান দেখতে পারি। পবিত্র বাইবেলে ভবিষ্যতের মহিমা দর্শন প্রকাশ করেছে, ঈশ্বর নিজ হাতে দৃশ্য চিত্রিত করেছেন, আর এই সব তার মন্দিরের কাছে প্রিয় বিষয়। বিশ্বাসে আমরা চিরস্থায়ী নগরীর প্রবেশদ্বারের উপর দাড়িয়ে আছি এবং এই জীবনে খ্রীষ্টের সঙ্গে যে নিজেকে যুক্ত রেখেছে তাকে সর্বদা সদয় স্বাগত জানানো হবে তা সে শুনতে পাবে এবং আমরা বুঝতে পারব যে খ্রীষ্টের নামের জন্য দুঃখভোগ করার জন্য আমাদের এই সম্মান প্রদান করা হয়েছে। এই কথাগুলো এভাবে বলা হয়েছে, “আইস, আমার পিতার আর্শিবাদের পাত্রেরা,” তারা তাদের মুকুট মুক্তিদাতার পায়ের কাছে সমর্পন করে উচ্চস্বরে বলেছেন, “মেষসাবক, যিনি হত হইয়াছিলেন, তিনিই পরিক্রম ও ধন ও জ্ঞান ও শক্তি ও সমাদর ও গৌরব ও ধন্যবাদ এই সকল গ্রহণ করিবার যোগ্য। যেনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন তাহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও গৌরব ও কর্তৃত্ব যুগপর্যায়ের যুগে যুগে বর্তুক।” প্রকাশিত বাক্য ৫:১২।AABen 508.2

    যারা মুক্তিদাতার ইচ্ছায় জীবন যাপন করেছেন তাদের মুক্তির সভাষন জানানো হয়েছে এবং এই পরিত্রানের জীবন লাভের জন্য যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জীবন ঈশ্বরের জীবনের সঙ্গে পরিমাপ করা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে। দুঃখ, কষ্ট আর বিরোধের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পরিত্রান লাভকারি ব্যাক্তি এমনভাবে আনন্দের গান উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন যে সমর্গ স্বর্গ বিজয়ের সংগীতে পূর্ণ হয়ে আছে, প্রশংসার যোগ্য, প্রশংসার যোগ্য হলেন মেষসাবক, যেনি মৃত্যুভোগ করেছিলেন এবং পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠা একজন সফলকাম বিজয়ী।AABen 508.3

    “ইহার পরে আমি দৃষ্টি করলাম আর দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করতে সমর্থ কেহ ছিলনা; তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষসাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে, তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত ও তাহাদের হস্তে খর্জ্জরপত্র এবং তাহারা উচ্চ রবে চিৎকার করিয়া কহিতেছে; পরিত্রান আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন এবং মেষশাবকের দান।” প্রকাশিত বাক্য ৭:৯—১০।AABen 509.1

    “ইহারা সেই লোক, যাহারা মহা ক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে এবং মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্রে ধৌত করিয়াছে ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে। এই জন্য ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে; এবং তাহারা দিবারাত্র তাহার মন্দিরে তাহার আরাধনা করে, আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি তাহাদের উপর আপন তাম্বু বিস্তার করিবেন। ইহারা আর কখনো ক্ষুধিত হইবে না, আর কখনো তৃষ্ণার্থ হইবে না এবং ইহাদিগতে কোন রৌদ্র বা কোন উত্তাপ লাগিবে না; কারণ সিংহাসনের মধ্যস্থিত মেষশাবক ইহাদিগকে পালন করবেন, এবং জীবন জলের উনুইয়ের নিকট গমন করাইবেন, আর ঈশ্বর ইহাদের সাবস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” “এবং মৃত্যু আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪—১৭; ২১:৪ পদ।AABen 509.2

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents