Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ২৩শ অধ্যায়—বিরয়া ও আথীনী

    বিরয়াতে পৌল বেশ কিছু যিহূদীর দেখা পেলেন যারা তাঁর শিক্ষায় প্রকাশিত সত্য সম্পর্কে আরও জানার জন্য আগ্রহী ছিল। লূক তাদের সম্পর্কে বলেছেন: “থিষলনীকীর যিহূদীদের চেয়ে বিরয়া শহরের যিহূদীদের মন অনেক বেশী খোলা ছিল। তারা খুব আগ্রহের সংগে ঈশ্বরের বাক্য শুনে তা গ্রহণ করল। পৌল যা বলেছেন তা সত্যি কিনা দেখবার জন্য প্রত্যেক দিন তারা শাস্ত্রের মধ্যে খোঁজ করত। অনেক যিহূদী যীশুর উপর বিশ্বাস করল; এছাড়া অনেক বিশেষ গ্রীক মহিলা ও পুরুষও বিশ্বাস করলেন।”AABen 192.1

    বিরয়ার লোকদের মন মানসিকতা সংস্কারগ্রস্ত ও সঙ্কীর্ণ ছিল না। তারা প্রেরিতদের প্রচারিত সত্যকে অনুধাবন করার জন্য আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিল। তারা বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল, কিন্তু স্রেফ কৌতূহল থেকে নয়, বরং প্রতিজ্ঞাত মশীহ্ সম্পর্কে জানার জন্য। প্রতিদিন তারা শাস্ত্র পাঠ করে অনুসন্ধান করত, একটি শাস্ত্রাংশের সাথে আরেকটির তুলনা করত, স্বর্গের দূতগণ তাদের পাশে ছিলেন এবং তাদের অন্তরকে আলোকিত করে তাদের হৃদয়কে প্রভাবিত করতেন।AABen 192.2

    যেখানেই সুসমাচারের সত্য প্রচার করা হত সেখানেই যারা সততার সাথে ন্যায়ের পথে হাঁটতে চাইত তারা শাস্ত্রের অনুসন্ধান চালাত। জগতের ইতিহাসের শেষ দৃশ্যপটে যাদের কাছে নতুনভাবে খ্রীষ্ট বিশ্বাস প্রচার করা হয়েছে তাদের আদর্শ হিসেবে বিরয়াবাসীদের অনুসরণ করে মানুষ যদি প্রতিদিন শাস্ত্র অধ্যয়ন করত, তাদের কাছে বার্তাবাহকেরা যে নতুন সংবাদ দিচ্ছেন তার সাথে মিলিয়ে দেখত, তাহলে আজ পৃথিবীর বিরাট একটি জনগোষ্ঠী ঈশ্বরীয় বিধানের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত থাকত, যারা এখন তুলনামূলকভাবে অনেক স্বল্প। কিন্তু বাইবেলের একটি অপেক্ষাকৃত কম শ্রুত সত্যকে যখন উপস্থাপন করা হয় তখন মানুষ তা অনুসন্ধান করে দেখতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও শাস্ত্রের সরল শিক্ষাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের কোন অবকাশ নেই, তথাপি তারা সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন করতেন। অনেকে মনে করেন যে, এই মতাদর্শগুলো সত্যি হলেও তারা এই নতুন আলো গ্রহণ করবে কি করবে না সেটা নিয়ে তেমন চিন্তার অবকাশ নেই, কারণ বিপক্ষ তাদের আত্মাকে যে মিথ্যার মাঝে আবৃত করে রেখেছে তাতে বন্দী হয়ে থাকতেই তারা বেশি পছন্দ করে।AABen 192.3

    প্রত্যেককেই যে আলো দান করা হয়েছে তার ভিত্তিতে বিচার করা হবে। প্রভু তাঁর দূতগণকে পরিত্রাণের বার্তা সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং যারা তা শুনবে তারা তাদেরকে তিনি তাঁর পরিচর্যাকারীদের দেখিয়ে দেওয়ার পথ অনুসারে বিচার করবেন। যারা আন্তরিকভাবে সত্যের অনুসন্ধান করে তারা খুব সতর্কতার সাথে ঈশ্বরের বাক্যের আলোকে যে শিক্ষা তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই শিক্ষাকে অনুসন্ধান করবেন। থিষলনীকীর অবিশ্বাসী যিহূদীরা প্রেরিতদের প্রতি হিংসা ও ঘৃণায় পূর্ণ হয়ে শুধু তাদেরকে নিজেদের শহর থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তারা বিরয়াতে পর্যন্ত এসে লোকদের মনে বাজে চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে প্রেরিতদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলল। পৌল যদি এখানে থাকেন তাহলে তাঁর উপরে অত্যাচার হতে পারে এই ভয়ে বিশ্বাসী ভাইয়েরা তাঁকে এথেন্সে পাঠিয়ে দিলেন এবং সাথে বিরয়ার কয়েকজন নতুন বিশ্বাসী ভাইকেও সহযোগী হিসেবে পাঠিয়ে দিলেন।AABen 193.1

    এভাবেই সত্যের শিক্ষাদানকারী শিক্ষককে এক শহর থেকে আরেক শহর অত্যাচার ও পীড়ন অনুসরণ করে বেড়াতে লাগল। কিন্তু খ্রীষ্টের বিপক্ষ কোনভাবে সুসমাচারের অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখতে পারল না, তবে তারা প্রেরিতগণের কাজের পথ অনেকটাই কঠিন করে তুলল। তথাপি বিরোধিতা ও দ্বন্দ্বের মুখে পড়েও পৌল নিজেকে দৃঢ় রাখলেন এবং যিরূশালেমে দর্শনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর কাছে যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন সেই প্রত্যাদেশ তিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন: “তুমি যাও, আমি তোমাকে দূরে অযিহূদীদের কাছে পাঠাব।” প্রেরিত ২২:২১।AABen 193.2

    বিরয়া থেকে তাড়াহুড়ো করে চলে আসার কারণে পৌল থিষলনীকীতে ফিরে গিয়ে সেখানকার বিশ্বাসী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করার যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা বাধাপ্রাপ্ত হল।AABen 193.3

    এথেন্সে পৌঁছানোর পর প্রেরিত পৌল বিরয়ার বিশ্বাসী ভাইদেরকে বিরয়ায় পাঠিয়ে দিলেন এবং তাদের সাথে সীল ও তীমথির জন্য এই বার্তা পাঠালেন যে, তারা যেন অবিলম্বে তাঁর সাথে এসে যোগ দেন। পৌল বিরয়া ত্যাগ করার আগেই তীমথি সেখানে এসেছিলেন এবং সীলের সাথে তিনি সেখানে পরিচর্যা কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ও নতুন বিশ্বাসীদেরকে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের মৌলিক নীতিগুলো শিক্ষা দিচ্ছিলেন।AABen 193.4

    আথীনী তথা এথেন্স নগরী ছিল পরজাতীয়দের রাজধানী। এখানে পৌল লূস্ত্রার মত অজ্ঞ ও বিশ্বাসপ্রবণ জনতাকে পাননি, বরং বুদ্ধিমত্তা ও সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ এক জাতির দেখা পেলেন। যেখানেই তিনি যাচ্ছিলেন তাদের দেবতাদের ও ইতিহাসখ্যাত বীরদের মূর্তি এবং কাব্যগাথা চোখে পড়ছিল, অন্যদিকে মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য ও চিত্রকর্ম তাদের জাতিগত গৌরব ও পরজাতীয় দেবতাদের আরাধনার প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলছিল। শিল্পের সৌন্দর্য ও প্রাচুর্যের কারণে লোকেরাও ছিল প্রচণ্ডভাবে মোহাবিষ্ট। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আশ্রম ও মন্দিরগুলোর নির্মাণশৈলী ও প্রকাণ্ড বপু দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সেগুলো কতটা ব্যয়বহুল। যুদ্ধে বিজয় লাভ এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের কীর্তির কথা বিভিন্ন শিলালিপি, মাটির খোদাইকর্ম এবং দেয়ালচিত্রে প্রকাশ পাচ্ছিল। এসব কিছুর কারণে পুরো এথেন্স নগরীটিই হয়ে উঠেছিল যেন একটি বিরাট চিত্রকলা প্রদর্শনী।AABen 194.1

    পৌল যখন ঘুরে ঘুরে এথেন্সের এই সৌন্দর্য ও জাঁকজমক অবলোকন করছিলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন পুরো শহরটির পৌত্তলিকতাকে মনে প্রাণে ধারণ করে আছে এবং তাতে করে তাঁর হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি তীব্রভাবে আকুল হয়ে উঠল, কারণ তিনি দেখছিলেন ঈশ্বর এই নগরের সর্বক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছেন। এ কারণে এথেন্সের লোকদের প্রতি তাঁর হৃদয় অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হল, যারা জ্ঞানে ও শিল্প সাহিত্যে এতটা উৎকর্ষতা অর্জন করা সত্ত্বেও একমাত্র সত্য ঈশ্বর সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল।AABen 194.2

    শিক্ষাদীক্ষার এই কেন্দ্রস্থলে এসে উপস্থিত হয়ে প্রেরিত পৌল সমস্ত কিছু দেখেও ভ্রান্ত হননি। তাঁর আত্মিক চেতনা এতটাই উজ্জীবিত ছিল যে, কেবলমাত্র স্বর্গের ধনের প্রতিই তাঁর মনোযোগ কেন্দীভূত ছিল, যা কখনো ক্ষয়ে যাবে না এবং তা তাঁর চারপাশের সমস্ত প্রাচুর্য ও সম্পদের চেয়েও আরও বেশি মূল্যবান। এথেন্সের প্রতাপ অবলোকন করে তিনি শিল্প ও বিজ্ঞানপ্রেমীদের উপরে এই নগরীর প্রচণ্ড মোহনীয় ক্ষমতা অনুধাবন করতে সক্ষম হলেন এবং তাঁর সামনে যে কাজ পড়ে আছে তার গুরুত্ব আরও একবার অনুধাবন করে তাঁর অন্তর দারুনভাবে আন্দোলিত হল।AABen 194.3

    এই মহানগরীতে, যেখানে ঈশ্বরের উপাসনা করা হত না, সেখানে পৌল নিজেকে কেমন যেন একাকী বোধ করতে লাগলেন এবং তিনি তাঁর সহকর্মীদের সাহচর্য দারুনভাবে পেতে চাইছিলেন। মানবীয় বন্ধুত্বের সম্পর্কের প্রশ্নে তিনি নিজেকে একাকী বোধ করছিলেন। থিষলনীকীয়দের কাছে তাঁর পত্রে তিনি তাঁর অনুভ‚তিকে এভাবে ব্যক্ত করেছেন, “আথীনীতে একাকী থাকা আমরা বিহিত বুঝিয়াছিলাম।” ১ থিষলনীকীয় ৩:১। সমস্যা ও বাধার পাহাড় তাঁর সামনে এমনভাবে এসে দাঁড়িয়েছিল যে, মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর ব্যাপারটি তাঁর কাছে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল।AABen 195.1

    সীল ও তীমথির জন্য অপেক্ষা করতে করতে পৌল অলস হয়ে বসে থাকেননি। তিনি “সমাজ—গৃহে যিহূদী ও ভক্ত লোকদের কাছে, এবং বাজারে প্রতিদিন যাহাদের সঙ্গে দেখা হইত, তাহাদের কাছে কথা প্রসঙ্গ করিতেন।” কিন্তু এথেন্সে তাঁর প্রধান কাজ ছিল তাদের কাছে পরিত্রাণের সুসংবাদ দেওয়া যাদের ঈশ্বরের সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাই ছিল না এবং এই অধঃপতিত মানব জাতির জন্য তাঁর যে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে সে ব্যাপারেও তারা কিছুই জানত না। এভাবেই প্রেরিত পৌল পৌত্তলিক পরজাতীয়দের পীঠস্থানে এসে তাঁর পরিচর্যা কাজের সূচনা ঘটালেন।AABen 195.2

    এথেন্স শহরের বিজ্ঞ নাগরিকরা বেশ দ্রুত জানতে পারল যে, তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক এসেছেন যিনি খুব অদ্ভুত ও নতুন এক মতবাদ শিক্ষা দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পৌলের কাছে গেল এবং তাঁর সাথে আলাপচারিতা করল। অবিলম্বে তাঁর চারপাশে বেশ বড়সড় শ্রোতামণ্ডলীর সমাগম ঘটল। তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করল তিনি সামাজিকভাবে ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাদের চেয়ে অনেক নিচু পর্যায়ে, যেজন্য তারা তাঁকে অবজ্ঞা করতে লাগল এবং নিজেদের মধ্যে বলতে শুরু করল, “এই বাচালটা কি কহিতে চায়?” আবার তিনি “যীশু ও পুনরুত্থান বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিতেন” বলে অন্যরা বলল, “উহাকে বিজাতীয় দেবতাদের প্রচারক বলিয়া বোধ হয়।”AABen 195.3

    যাদের সাথে পৌল বাজারে বসে কথা বলেছিলেন তাদের মধ্যে “ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয় কয়েক জন দার্শনিক” ছিল; কিন্তু তারা এবং অন্য আর যারা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন তারা খুব দ্রুত বুঝতে পারল তাদের চেয়েও পৌল আরও গভীর ও ব্যাপক বিজ্ঞতার অধিকারী। তাঁর এই বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি শিক্ষিতদের মধ্যে মর্যাদাসম্পন্ন হলেন। তাঁর ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য এবং বাকশৈলীর কারণে তিনি তাঁর শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম ছিলেন। তাঁর শ্রোতারা এ কথা বুঝতে সক্ষম হল যে, তিনি মোটেও শিক্ষানবীশ ছিলেন না, বরং তিনি সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে তাঁর প্রচারিত শিক্ষার বিপরীতে যথোপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে সক্ষম। এভাবেই প্রেরিত পৌল দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়ে তাঁর বিপক্ষদের বিরুদ্ধে তাদেরই ভূখণ্ডে মুখোমুখি দাঁড়ালেন এবং যুক্তি দিয়ে যুক্তি, দর্শন দিয়ে দর্শন ও বাগ্মিতা দিয়ে বাগ্মিতা খণ্ডন করলেন।AABen 195.4

    তাঁর পরজাতীয় বিপক্ষেরা তাঁকে সক্রেটিসের নিয়তি স্মরণ করিয়ে দিল, যিনি অদ্ভুত দেবতার মতাদর্শ প্রচার করেছিলেন বলে তাকে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল এবং তারা পৌলকে পরামর্শ দিল যেন তিনিও একই পথে হেঁটে নিজের জীবন বিপন্ন না করেন। কিন্তু প্রেরিত পৌলের বক্তব্য মানুষের মনোযোগ দারুনভাবে আকৃষ্ট করল এবং তাঁর নিখাদ জ্ঞান তাদের শ্রদ্ধা ও সমীহ কেড়ে নিল। বিজ্ঞানের যুক্তিতর্কে বা দার্শনিকদের পরিহাসে তিনি নীরব হয়ে যাননি। তিনি তাদেরকে এই হাসি হাসতে দেননি যে, তাদের কারণে পৌল আর সেখনে তাঁর দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারলেন না। বরং সমস্ত বাধা সহ্য করে তিনি যখন তাঁর কথা বলেই গেলেন তখন তারা তাঁর কথা শুনতে আগ্রহ দেখাল।AABen 196.1

    সে অনুসারে তারা তাকে আরেয়পাগে নিয়ে গেল। এটি ছিল সমগ্র এথেন্সের অন্যতম পবিত্র একটি স্থান এবং অনেকেই কাছেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কারণে এই স্থানটি ভিন্নভাবে দেখা হত। এখানেই অনেক সময় বিচারকরা ধর্মীয় বিভিন্ন বিচার নিষ্পত্তি করতেন বা জনতার বিভিন্ন নৈতিক প্রশ্নের জবাব দিতেন।AABen 196.2

    জনতার কোলাহল ও উপচে পড়া ভিড় এবং বিতর্ক ও পাল্টা বিতর্ক থেকে দূরে এসে এখানে প্রেরিত পৌলের কথা কোন প্রকার বিঘ্ন ছাড়াই শোনা যাবে। তাঁর চারপাশে জড়ো হলেন অনেক কবি, শিল্পী ও দার্শনিকরা — যারা ছিলেন এথেন্স নগরীর বিশেষ বিজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তি। তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন: “এই যে নূতন শিক্ষা আপনি প্রচার করিতেছেন, ইহা কি প্রকার, আমরা কি জানিতে পারি? কারণ আপনি কতকগুলি অদ্ভুত কথা আমাদের কর্ণে তুলিতেছেন; অতএব আমরা জানিতে বাসনা করি, এই সকল কথার অর্থ কি।”AABen 196.3

    পরিচর্যার দায়িত্ব পালনের এই চরম মুহূর্তে প্রেরিত পৌল ছিলেন শান্ত ও সংযত। তাঁর হৃদয় এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় ভারবহ হয়েছিল এবং তাঁর ওষ্ঠ থেকে যে বাক্য নির্গত হল তাতে বোঝা গেল তিনি কোন বাচাল নন। “হে আথীনীয় লোকেরা,” তিনি বললেন, “দেখিতেছি, তোমরা সর্ব বিষয়ে বড়ই দেবতাভক্ত। কেননা বেড়াইবার সময়ে তোমাদের উপাস্য বস্তু সকল দেখিতে দেখিতে একটি বেদি দেখিলাম, যাহার উপরে লিখিত আছে, ‘অপরিচিত দেবতার উদ্দেশে।’ অতএব তোমরা যে অপরিচিতের ভজনা করিতেছ, তাঁহাকে আমি তোমাদের নিকটে প্রচার করি।” তাদের এত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন তাকেই তারা জানত না। তথাপি তাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিল যারা মহত্ত্বর এক জ্যোতির সন্ধান করছিল। তারা অসীমের প্রতি অনুসন্ধান করছিল।AABen 197.1

    প্রতিমায় পূর্ণ মন্দিরগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে পৌল তাঁর আত্মার সমস্ত ভার ঢেলে দিলেন এবং এথেন্সবাসীর ফাঁপা ধর্মকর্মের স্বরূপ প্রকাশ করলেন। তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বিজ্ঞ ছিলেন তারা তাঁর যুক্তি তর্ক শুনে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছিল। তিনি দেখালেন যে, তাদের শিল্প, সাহিত্য ও তাদের ধর্ম সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। তাদের সমস্ত দেব দেবীর মূর্তির দিকে নির্দেশ করে তিনি বললেন যে, ঈশ্বরকে কখনো মানুষের কল্পনাপ্রসূত প্রতিমা দিয়ে তুলনা করা যায় না। এই সব পাথরের ও কাঠের মূর্তিগুলো কোন অবস্থাতেই যিহোবার মহিমার স্বরূপ হতে পারে না। তিনি তাদেরকে মনে করিয়ে দিলেন যে, এই প্রতিমাগুলোর কোন জীবন নেই, বরং তা একান্তভাবে মানবীয় শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন মানুষের হাতের শক্তিতেই কেবল সে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে; আর সে কারণে যারা তার পূজা করে তারা সব দিক থেকেই যার পূজা করা হচ্ছে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।AABen 197.2

    পৌল তাঁর শ্রোতাদেরকে তাদের অসার ধর্মের গণ্ডি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এক সত্য ঈশ্বরের প্রতি নিবদ্ধ করতে আহ্বান জানালেন, যাকে তারা “অপরিচিত দেবতা” নাম দিয়েছিল। এই যে দেবতাকে তাদের কাছে ঘোষণা করা হল তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং তাঁর মহিমা ও পরাক্রমে মানুষের দ্বারা কোন কিছু যোগ করার নেই।AABen 197.3

    সত্য ঈশ্বরের সমস্ত বৈশিষ্ট্য চমৎকারভাবে উপস্থাপন করায় লোকেরা পৌলের প্রশংসা শুরু করল। তারা ঈশ্বরের সৃষ্টির ক্ষমতা এবং তাঁর সর্বময় বিরাজমান শাসন ও কর্তৃত্বের কথা জানতে পেরে অভিভূত হল। অত্যন্ত আন্তরিক ও আকর্ষণীয় বাগ্মিতা দ্বারা পৌল ঘোষণা করলেন, “ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্মাণ করিয়াছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং হস্তনির্মিত মন্দিরে বাস করেন না; কোন কিছুর অভাব প্রযুক্ত মনুষ্যদের হস্ত দ্বারা সেবিতও হন না, তিনিই সকলকে জীবন, শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।” আকাশমণ্ডল ঈশ্বরকে ধারণ করার মত যথেষ্ট প্রকাণ্ড নয়, আর সেখানে মানুষের হাতে তৈরি মন্দির কত না ক্ষুদ্র!AABen 198.1

    বর্ণবাদের সেই যুগে যখন মানুষের মৌলিক অধিকার কথায় কথায় ক্ষুন্ন করা হত, সে সময় পৌল মানবীয় ভ্রাতৃত্ববোধ ও একতার এক চরম সত্য উপস্থাপন করে বলেছেন যে, ঈশ্বর “এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে।” ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমরা সকলেই সমান এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর সৃষ্ট সমস্ত মানুষই শ্রেষ্ঠত্বে সমমর্যাদা সম্পন্ন। এরপর পৌল দেখালেন কীভাবে মানুষের প্রতি ঈশ্বরের সমস্ত কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের পরিকল্পনা এক স্বর্ণালী সূত্রের মত প্রবাহিত হয়েছে। তিনি “তাহাদের নির্দিষ্ট কাল ও নিবাসের সীমা স্থির করিয়া দিয়াছেন; যেন তাহারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, যদি কোন মতে হাঁতড়াইয়া হাঁতড়াইয়া তাঁহার উদ্দেশ পায়; অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”AABen 198.2

    তাঁর কাছেই ছিল তাদের এক কবির লেখা একটি কবিতার খোদাইকৃত শিলালিপি, যার আলোকে তিনি অসীম ঈশ্বরকে এমন এক পিতা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যাঁর সন্তানেরা হল সমগ্র মানব জাতি। “কেননা তাঁহাতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্তা,” তিনি বলেছেন, “যেমন তোমাদের কয়েক জন কবিও বলিয়াছেন, ‘কারণ আমরাও তাঁহার বংশ’। অতএব আমরা যখন ঈশ্বরের বংশ, তখন ঈশ্বরের স¦রূপকে মনুষ্যের শিল্প ও কল্পনা অনুসারে ক্ষোদিত স্বর্ণের কি রৌপ্যের কি প্রস্তরের সদৃশ জ্ঞান করা আমাদের কর্তব্য নহে।AABen 198.3

    “ঈশ্বর সেই অজ্ঞানতার কাল উপেক্ষা করিয়াছিলেন, কিন্তু এখন সর্বস্থানের সকল মনুষ্যকে মনপরিবর্তন করিতে আজ্ঞা দিতেছেন।” খ্রীষ্টের আগমনের পূর্বে অন্ধকার যুগে ঈশ্বর পরজাতীয়দেরকে পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত হতে দিয়েছেন; কিন্তু এখন তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে তিনি সত্যের আলো দেখানোর জন্য দূতদের প্রেরণ করছেন; আর তিনি প্রত্যাশা করছেন যেন সকলে পরিত্রাণ লাভের জন্য মন পরিবর্তন করে, তবে শুধুমাত্র দরিদ্র ও নম্রদের নয়, সেই সাথে গর্বিত দার্শনিক ও সারা জগতের সমস্ত রাজাদের জন্যও তিনি মন পরিবর্তনের এই আহ্বান জানাচ্ছেন। “কেননা তিনি একটি দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎ সংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাস যোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।” পৌল যখনই মৃতদের মধ্য হতে পুনরুত্থানের বিষয় বললেন, তখন “কেহ কেহ উপহাস করিতে লাগিল; কিন্তু আর কেহ কেহ বলিল, আপনার কাছে এই বিষয় আর একবার শুনিব।”AABen 199.1

    এভাবেই পরজাতীয়দের জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রপীঠ এথেন্সে পৌলের পরিচর্যা কাজের সমাপ্তি ঘটল, কারণ এথেনীয়রা তাদের পৌত্তলিকতার প্রতি দারুনভাবে আকৃষ্ট ছিল এবং তারা সত্য ধর্মের আলো থেকে সম্পূর্ণভাবে মুখ ফিরিয়ে ছিল। একটি জাতি যখন নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকে তখন আর তাদের কাছ থেকে কিছু আশা করা সম্ভব হয় না। এথেনীয়রা নিজেদের শিক্ষা ও চাকচিক্য নিয়ে অনেক গর্ব করলেও তারা দিনে দিনে তাদের পৌত্তলিকতার অসারতার কারণে আরও বেশি করে কলুষিত ও অনৈতিকতা পূর্ণ হয়ে পড়ছিল।AABen 199.2

    যারা পৌলের কথা শুনেছিল তাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যাদের অন্তরে এই সত্য বিশ্বাসের সূচনা ঘটিয়েছিল, কিন্তু তারা নম্র না হওয়াতে ঈশ্বর ও তাঁর পরিত্রাণের পরিকল্পনাকে তারা গ্রহণ করতে পারেনি। কোন প্রকার বাগ্মিতা, কোন প্রকার যুক্তি তর্কই একজন পাপীর মন পরিবর্তন করতে পারে না। একমাত্র ঈশ্বরের শক্তিই পারে অন্তরে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে। যে এই শক্তি থেকে ক্রমাগতভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে কখনো তার লক্ষ্য খুঁজে পায় না। গ্রীকরা জ্ঞানের অনুসন্ধান করেছিল, তথাপি ক্রুশের সুসমাচার তাদের কাছে বোকামি মনে হয়েছিল কারণ তারা ঊর্ধ্ব থেকে আসা জ্ঞানের চাইতে তাদের নিজেদের জ্ঞান ও ধ্যানধারণাকে আরও অনেক বেশি উঁচুতে মর্যাদা দিয়েছিল।AABen 199.3

    এথেনীয়দের জ্ঞান বিজ্ঞান ও মানবীয় প্রজ্ঞা নিয়ে তাদের গর্বের কারণে বোঝা যায় কেন তাদের মধ্যে সুসমাচারের বার্তা ততটা সাফল্য পায়নি। পার্থিব জ্ঞানী ব্যক্তিরা যখন খ্রীষ্টের কাছে একজন হতভাগ্য ও হারানো পাপী হিসেবে আসে তখন তারা পরিত্রাণ থেকে প্রকৃত জ্ঞানী হয়ে ওঠেন। কিন্তু যারা নিজেদেরকে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে ভেবে নিজেদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের উপরে নির্ভর করেন তারা সেই জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত হন যা একমাত্র প্রভু দিতে পারেন।AABen 200.1

    এভাবেই পৌল তাঁর সময়কার পৌত্তলিকতাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এথেন্সে তাঁর শ্রম পুরোপুরি বৃথা যায়নি। দিয়নুষিয় সহ সেখানকার আরও কয়েকজন মর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সুসমাচারের বার্তা গ্রহণ করেন এবং নিজেদেরকে বিশ্বাসীদের মণ্ডলীতে যুক্ত করেন।AABen 200.2

    পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা আমাদেরকে এথেনীয়দের জীবনের এই দিকটিতে আলোকপাত করতে সাহায্য করে যে, যারা সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্পের উৎকর্ষ ও জাঁকজমকে পরিপূর্ণ ছিল, তারাই আত্মিকভাবে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, যেন এর মধ্য দিয়ে পরিলক্ষিত হয় যে, কীভাবে ঈশ্বর তাঁর সেবকের মধ্য দিয়ে একটি গর্বিত ও আত্মম্ভরী জাতির পৌত্তলিকতা ও সমস্ত পাপের জন্য তিরস্কার করছেন। প্রেরিত পৌলের বক্তব্য এবং তাঁর সম্যক জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের যে চিত্র লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে, তা যুগে যুগে সকল প্রজন্মের কাছে আদর্শ হিসেবে উপস্থিত হবে, যা তাঁর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, একাকীত্ব ও প্রতিবন্ধকতার মুখেও তাঁর সাহসিকতা এবং পৌত্তলিকতার উৎসভ‚মিতে খ্রীষ্টত্বের বিজয় লাভের সাক্ষ্য বহন করছে।AABen 200.3

    পৌলের এই বক্তব্যে মণ্ডলীর জন্য এক দারুন জ্ঞানের আধার রয়েছে। তিনি যে অবস্থানে ছিলেন সেখানে তিনি খুব সহজেই এমন কিছু বলতে পারতেন যা তাঁর উদ্ধত শ্রোতাদেরকে খেপিয়ে তুলত এবং তিনি সমস্যায় পড়তে পারতেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি তাদের দেবতাদের ও সেই শহরের বিশেষ ব্যক্তিদের প্রতি অবমাননাকর কোন কথা বলতেন তাহলে তাঁরও সক্রেটিসের মত পরিণতি বরণ করার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু স্বর্গীয় প্রেমে পূর্ণ হয়ে সতর্কতার সাথে তিনি তাদের মনকে পৌত্তলিক দেবতাদের দিক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন এবং তাদের কাছে একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে উন্মোচিত করেছেন, যিনি তাদের কাছে অপরিচিত ছিলেন।AABen 200.4

    আজ সুসমাচারের সত্য এই পৃথিবীর বড় বড় মানুষের কাছে নিয়ে উপস্থাপন করা প্রয়োজন, যেন তারা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও মন্দতার অধিপতির আনুগত্য এই দুইয়ের মধ্যে বেছে নিতে পারেন। ঈশ্বর তাদের সামনে চিরন্তন সত্য উপস্থাপন করেছেন — যে সত্য তাদেরকে পরিত্রাণ লাভের জন্য জ্ঞানী করে তুলবে, কিন্তু তিনি তাদেরকে তা গ্রহণ করার জন্য জোর করছেন না। যদি তারা তা থেকে ফিরে আসে, তাহলে তিনি তাদেরনিজেদেরকে নিয়েই থাকতে দেবেন, যেন তারা নিজ নিজ কর্মফলের ভারে ভারাক্রান্ত হতে থাকে।AABen 201.1

    “কারণ সেই ক্রুশের কথা, যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু পরিত্রাণ পাইতেছি যে আমরা, আমাদের কাছে তাহা ঈশ্বরের পরাক্রমস্বরূপ। কারণ লিখিত আছে, ‘‘আমি জ্ঞানবানদের জ্ঞান নষ্ট করিব, বিবেচক লোকদের বিবেচনা ব্যর্থ করিব।” “কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবানদিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন; এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ, যাহা যাহা কিছু নয়, সেই সকল ঈশ্বর মনোনীত করিলেন, যেন, যাহা যাহা আছে, সেই সকল অকিঞ্চন করেন।” ১ করিন্থীয় ১:১৮, ১৯, ২৭, ২৮। অনেক বিজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তি, অত্যন্ত বিখ্যাত ব্যক্তিরাও শেষ কালে ঈশ্বরের জ্যোতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে কারণ এই জগতের জ্ঞান ঈশ্বরকে জানে না। তথাপি ঈশ্বরের পরিচারকেরা এই লোকদের কাছে সত্যকে জ্ঞাত করার জন্য প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করবেন। অনেকে ঈশ্বরকে জ্ঞাত না থাকার জন্য তাদের অজ্ঞতার কথা স্বীকার করবে এবং নম্র শ্রোতা ও শিক্ষার্থী হয়ে সর্বোত্তম শিক্ষক যীশুর চরণতলে বসবে।AABen 201.2

    উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের কাছে পৌঁছানোর প্রত্যেকটি ধাপে ঈশ্বরের সেবকদের তাঁর কাছ থেকে শক্তি যাচ্ঞা করা প্রয়োজন। তাদের চেহারা ও পরিচ্ছদ দেখে অনাকর্ষণীয় মনে হতে পারে, কিন্তু অন্ধকার কালে উর্ধ্ব থেকে আলো নেমে আসবে। যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে ও তাঁর সেবা করে তাদের শক্তি প্রতিদিন নতুন করে সঞ্জীবিত হবে। অসীমকে উপলব্ধি করার মধ্য দিয়ে তারা তাদের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন যেন কোনভাবে তারা তাঁর উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হন। এই কর্মীরা তাদের আত্মবিশ্বাসকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখুক, যেন তারা স্মরণ করেন যে ঈশ্বরের সত্যের আলো আমাদের জগতের সমস্ত অন্ধকারের উপরে জ্যোতি দেবে। ঈশ্বরের পরিচর্যা কাজে চ‚ড়ান্তভাবে কখনোই হতাশা আসবে না। অভিষিক্ত পরিচর্যকারীদের বিশ্বাসের উপরে যতই পরীক্ষা আসুক না কেন তা কখনোই টলে যাবে না। ঈশ্বর তাঁর পরিচর্যাকারীদেরকে প্রয়োজনীয় সমস্ত শক্তি ও জ্ঞান দান করতে সক্ষম ও ইচ্ছুক। যারা তাঁর উপরে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের সমস্ত প্রত্যাশা তিনি অপূর্ণ রাখবেন না।AABen 201.3

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents