Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    ৪র্থ অধ্যায়—অধ্যায় পঞ্চাশত্তমী

    শিষ্যেরা জৈতুন পর্বত থেকে জেরুশালেমে ফিরে আসার পর লোকেরা তাদের চেহারার দিকে তাকালো এবং সেখানে দুঃখ, দন্দ এবং পরাজয়ের ছাপ দেখতে পাবে বলে আশা করলো। কিন্তু তারা সেখানে দেখল কেবল আনন্দ এবং বিজয়ের প্রতিচ্ছবি। শিষ্যেরা এখন আর নিরাশায় নিমজ্জিত ও শোকাহত নন। তারা তাদের পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তাকে দেখেছেন এবং বিদায়বেলায় তাঁর উচ্চারিত প্রতিজ্ঞাটি এখনো তাদের কানে ক্রমাগতভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।AABen 29.1

    খ্রীষ্টের আদেশের প্রতি বাধ্য হয়ে তারা পিতার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হওয়ার জন্য, অর্থাৎ পবিত্র আত্মা অবতীর্ণ হওয়ার জন্য জেরুশালেমে অপেক্ষা করতে লাগলেন। তারা সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন না। শাস্ত্র বলে, তারা “নিরন্তর ধর্মধামে থাকিয়া ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে থাকিলেন।” লূক ২৪:৫৩। তারা যীশুর নামে পিতার কাছে তাদের মিনতি উপস্থাপন করার জন্যও একত্রিত হয়েছিলেন। তারা জানতেন যে, স্বর্গে তাদের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন, ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে তাদের একজন মধ্যস্থতাকারী রয়েছেন। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ প্রার্থনায় বিনত হয়ে তারা এই আশ্বাসবাণী জপ করতে লাগলেন, “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, পিতার নিকটে যদি তোমরা কিছু যাচ্ঞা কর, তিনি আমার নামে তোমাদিগকে তাহা দিবেন। এ পর্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছু যাচ্ঞা কর নাই; যাচ্ঞা কর, তাহাতে পাইবে, যেন তোমাদের আনন্দ স¤পূর্ণ হয়।” যোহন ১৬:২৩, ২৪। তাদের বিশ্বাসের হাত উঁচু থেকে আরও উঁচু হচ্ছিল, কারণ তাদের শক্তি যোগাচ্ছিল এই নিষ্কপট সত্য, “খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।” রোমীয় ৮:৩৪।AABen 29.2

    এই অধ্যায়টি প্রেরিত ২:১—৩৯ অধ্যায়ের উপরে ভিত্তি করে রচিত।AABen 29.3

    শিষ্যরা যখন যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষারত ছিলেন সে সময় তাদের অন্তর প্রকৃত অনুতাপে বিনম্র ছিল এবং তারা তাদের সমস্ত অবিশ্বাসের জন্য অনুশোচনা করেছিলেন। খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যুর আগে তাদেরকে যে সমস্ত কথা বলে গিয়েছিলেন সেগুলো তারা যত বেশি করে স্মরণ করতে লাগলেন তত বেশি তারা সেগুলোর অর্থ অনুধাবন করতে লাগলেন। তাদের স্মৃতি থেকে যে সত্যগুলো মুছে গিয়েছিল সেগুলো আবারও তাদের অন্তরে ফিরে আসতে লাগল এবং তারা একে অপরকে সেই সত্যগুলো জ্ঞাত করতে লাগলেন। ত্রাণকর্তাকে তারা ভুল বুঝেছিলেন বলে একে অপরকে দুষতে লাগলেন। আলোর মিছিলের মত প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অপূর্ব জীবনের একটির পর একটি দৃশ্য তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। যখন তারা খ্রীষ্টের নিখাদ ও পবিত্র জীবন ধ্যান করলেন তখন তাদের মনে হতে লাগল যেন কোন যন্ত্রণাই আর অসহনীয় নয়, কোন আত্মত্যাগই আর অসম্ভব নয়, যদি তারা খ্রীষ্টের চরিত্রের প্রেমময়তার আলো নিজেদের জীবনে সাক্ষ্যস্বরূপ বহন করেন। তারা ভাবতে লাগলেন, আহা, আবারও যদি তারা তাদের জীবনের সেই তিনটি বছর ফিরে পেতেন তাহলে তাদের কাজে কত না পার্থক্য পরিলক্ষিত হত! যদি তারা আবার তাদের প্রভুকে দেখতে পেতেন তাহলে তারা একাগ্রভাবে দেখাতেন যে, তাঁকে তারা কতটা ভালবাসেন এবং তাদের কথায় ও কাজে সামান্যতম অবিশ্বাসের পরিচয় পেয়ে তিনি যে কষ্ট পেতেন তার জন্য তারা এখন কতটা অনুতপ্ত। কিন্তু তারা এই কারণে সান্ত্বনা পাচ্ছিলেন যে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে এই প্রত্যয়ও ধারণ করলেন যে, পৃথিবীর সামনে সাহসের সাথে খ্রীষ্টের নামের সাক্ষ্য বহন করার মাধ্যমে তারা যতটা সম্ভব তাদের অবিশ্বাসের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন।AABen 30.1

    শিষ্যেরা প্রচন্ড একাগ্রতার সাথে প্রার্থনা করে চলেছিলেন যেন তারা মানুষের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর মত সক্ষমতা অর্জন করেন এবং যেন তারা প্রতিনিয়ত পাপীদেরকে খ্রীষ্টের পথে পরিচালনা দানের মত মুখের ভাষা পান। সমস্ত ভেদাভেদ, নেতৃত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা দূরে সরিয়ে দিয়ে তারা খ্রীষ্টিয় সহভাগিতায় একত্রিত হয়েছিলেন। তারা যতই আরও বেশি করে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হচ্ছিলেন ততই যেন তারা অনুভব করতে পারছিলেন যে, খ্রীষ্টের এতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারাটা তাদের জন্য কত বড় এক সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। তাঁদের হৃদয় দুঃখে আচ্ছন্ন হল এই চিন্তা করে যে, কতবার তাঁরা তাঁদের মঙ্গলের জন্য খ্রীষ্টের প্রদত্ত শিক্ষাগুলোকে অনুধাবনে ধীর ছিলেন, কখনো কখনো তা উপলব্ধি করতেই তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।AABen 30.2

    প্রস্তুতির এই দিনগুলো ছিল অন্তরের গভীরে অনুসন্ধানের দিন। শিষ্যরা তাঁদের আত্মিক অভাব অনুভব করেছিলেন এবং প্রভুর কাছে পবিত্র অভিষেক লাভের জন্য ক্রন্দন করছিলেন যা তাঁদেরকে আত্মা জয়ের কাজের জন্য উপযোগী করে তুলতে অপরিহার্য ছিল। তাঁরা শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের জন্য আশীর্বাদ যাচ্ঞা করেননি। তাঁদেরকে পরিমাপ করা হয়েছিল আত্মার পরিত্রাণের ভার সহকারে। তাঁরা অনুধাবন করেছিলেন সুসমাচারকে পৃথিবীর কাছে বহন করে নিয়ে যেতে হবে এবং এজন্যই তাঁরা খ্রীষ্টের প্রতিজ্ঞাত সেই শক্তি ও ক্ষমতা দাবী করেছিলেন।AABen 31.1

    আদিপুস্তকে পিতৃকুলপতিদের যুগে পবিত্র আত্মা অনেক সময় চিহ্নিত কিছু পন্থায় প্রকাশিত হয়েছেন, কিন্তু কখনোই তা পূর্ণতায় প্রকাশ পায়নি। আর এখন ত্রাণকর্তার বাক্যে অনুগত হয়ে শিষ্যরা এই দান গ্রহণের জন্য যাচ্ঞা করছেন এবং স্বর্গে খ্রীষ্ট তাঁর মধ্যস্থতাকারীর ভ‚মিকা পালন করছেন। তিনি আত্মার দান দাবী করেছেন যেন তাঁর লোকদের উপরে তিনি তা বর্ষণ করতে পারেন।AABen 31.2

    “পরে পঞ্চাশত্তমীর দিন উপস্থিত হইলে তাঁহারা সকলে এক স্থানে সমবেত ছিলেন। আর হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচন্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্বত্র ব্যাপ্ত হইল।”AABen 31.3

    অপেক্ষারত ও প্রার্থনারত শিষ্যদের উপরে পবিত্র আত্মা এমন এক পূর্ণতা নিয়ে আবিভর্‚ত হলেন যা প্রত্যেকের হৃদয় স্পর্শ করল। সেই অসীম ব্যক্তি নিজেকে তাঁর মন্ডলীর সামনে সবলে প্রকাশ করলেন। যেন বহু যুগ ধরে এই শক্তি অবরুদ্ধ হয়ে ছিল এবং আজ মন্ডলীর উপরে পবিত্র আত্মার অনুগ্রহ প্রচুররূপে বর্ষিত হওয়ার কারণে স্বর্গ যেন আনন্দে উদ্ভাসিত। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় অনুতাপ ও পাপ স্বীকারের কথামালা যেন পাপের ক্ষমা ঘোষণার জন্য প্রশংসা গীতের সাথে মিলেমিশে একাকার। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও ভবিষ্যদ্বাণীর কথামালা শোনা যাচ্ছিল। পুরো স্বর্গই যেন মাথা নুইয়ে তুলনাহীন ও বুদ্ধির অতীত এই ভালবাসার প্রজ্ঞাকে সমাদর করছিল। বিস্ময়ে বিহবল হয়ে প্রেরিতগণ বলে উঠলেন, “এখানেই প্রেম নিহিত।” তাঁরা এই নিখাদ দান গ্রহণ করলেন। তারপর কী ঘটল? স্বর্গীয় জ্যোতির দ্বারা বলীয়মান ও সিক্ত দ্বিধার আত্মার খড়গ অবিশ্বাসের পর্দা ছিন্নভিন্ন করে দিল। এক দিনে হাজার হাজার মানুষ ধর্মান্তরিত হল।AABen 31.4

    “আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল,” খ্রীষ্ট নিজেই এ কথা তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন; “কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় তোমাদের নিকটে আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব।” “পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন।” যোহন ১৬:৭, ১৩।AABen 32.1

    খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণই ছিল তাঁর শিষ্যদের জন্য সেই প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদ গ্রহণের চিহ্ন। এজন্য তাঁরা তাঁদের কাজে প্রবেশ করার আগে অপেক্ষা করেছিলেন। যখন খ্রীষ্ট স্বর্গের দ্বার অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি স্বর্গদূতদের মাঝখানে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলেন। এই মহা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর পরই পবিত্র আত্মা সবেগে শিষ্যদের উপরে বর্ষিত হলেন। আর এতে প্রভু যীশু খ্রীষ্টও মহিমান্বিত হয়েছিলেন, যে মহিমা যুক্ত হয়েছিল পিতার কাছ থেকে পাওয়া সর্বকালের মহিমার সাথে। পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মার অবতরণ ছিল স্বর্গীয় একটি সংযোগ সাধন যা ত্রাণকর্তার স্বর্গীয় সিংহাসনে আরোহণকে সম্পন্ন করেছিল। প্রতিজ্ঞা অনুসারে স্বর্গ থেকে তাঁর শিষ্যদের কাছে পবিত্র আত্মা প্রেরণ করার কথা ছিল, যা এই চিহ্ন বহন করে যে, স্বর্গ ও পৃথিবীতে তিনি মহাপুরোহিত ও রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত এবং তিনিই তাঁর লোকদের জন্য সেই অভিষিক্ত জন।AABen 32.2

    “আর অংশ অংশ হইয়া পড়িতেছে, এমন অনেক অগ্নিবৎ জিহবা তাঁহাদের দৃৃষ্টিগোচর হইল; এবং তাঁহাদের প্রত্যেক জনের উপরে বসিল। তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।” পবিত্র আত্মা আগুনের শিখার আকৃতি ধারণ করে প্রত্যেকের উপরে অবস্থান নিলেন। এটিই ছিল শিষ্যদের প্রতি খ্রীষ্টের উপহার প্রদানের চিহ্ন, যা তাঁদেরকে এমন সব ভাষায় কথা বলতে সমর্থ করে তুলেছিল যেসব ভাষা তাঁরা আগে জানতেনই না। দৃশ্যমান আগুনের শিখা এমন এক অদম্য ও প্রবল উদ্দীপনাকে নির্দেশ করে যাতে উদ্বুদ্ধ ও বলিষ্ঠ হয়ে প্রেরিতগণ তাঁদের কাজে নিযুক্ত হবেন।AABen 32.3

    “ঐ সময়ে যিহূদীরা, আকাশের নি¤ড়বস্থিত সমস্ত জাতি হইতে আগত ভক্ত লোকেরা, যিরূশালেমে বাস করিতেছিল।” যিহূদীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার পর সারা পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বাসযোগ্য স্থানে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছিল এবং বন্দীদশার সময় তারা বিভিন্ন ভাষাও শিখেছিল। এসব যিহূদীদের অনেকেই চলমান ধর্মীয় পর্বে যোগদানের জন্য যিরূশালেমে এসেছিল। সেখানে যারা সমবেত হয়েছিল তাদের প্রায় প্রত্যেকের ভাষাতেই পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত শিষ্যরা কথা বলেছিলেন। ভাষার বৈচিত্র্য সুসমাচার প্রচারের জন্য বড় একটি অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারত; এজন্যই ঈশ্বর অলৌকিকভাবে প্রেরিতদেরকে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তারা সারা জীবনেও যে কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হতেন না সেটিই পবিত্র আত্মা তাদেরকে নিমিষের মধ্যে করে ফেলতে শক্তি যোগালেন। এখন তারা ভিন্ন দেশে গিয়েও সুসমাচারের সত্য প্রচার করতে সক্ষম হবেন এবং যাদের কাছে যাচ্ছেন তাদের ভাষাতেই নিখুঁতভাবে সুসমাচার প্রচার করতে পারবেন। এই অলৌকিক দান জগতের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তারা স্বর্গীয় অভিষেক লাভ করেছেন। এরপর থেকে শিষ্যরা তাদের মাতৃভাষায় বা পরজাতীয় যে কোন ভাষায় শুদ্ধ, সাবলীল ও নির্ভুলভাবে কথা বলেছেন ও সুসমাচার প্রচার করেছেন।AABen 33.1

    “আর সেই ধ্বনি হইলে অনেক লোক সমাগত হইল, এবং তাঁহারা হতবুদ্ধি হইয়া পড়িল, কারণ প্রত্যেক জন আপন আপন ভাষায় তাঁহাদিগকে কথা কহিতে শুনিতেছিল। তখন সকলে অতিশয় আশ্চর্যান্বিত ও চমৎকৃত হইয়া বলিতে লাগিল, দেখ, এই যে লোকেরা কথা কহিতেছে, ইহারা সকলে কি গালীলীয় নহে?”AABen 33.2

    পুরোহিত ও শাসকরা এই বিস্ময়কর প্রত্যাদেশে দারুনভাবে ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন, কিন্তু জনতার রোষের শিকার হওয়ার ভয়ে তারা শিষ্যদের উপরে তাদের ক্রোধ প্রকাশ করার সাহস পেলেন না। তারা সেই নাসরতীয়কে হত্যা করেছে বটে; কিন্তু এখন তাঁর পরিচর্যাকারীরা, গালীলের অশিক্ষিত লোকগুলো তৎকালীন প্রচলিত সমস্ত ভাষায় তাঁর জীবন ও পরিচর্যার কাহিনী প্রচার করছে। পুরোহিতরা শিষ্যদের এই অলৌকিক ক্ষমতাকে পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলেন এবং বললেন, তারা উৎসবের জন্য প্রস্তুতকৃত নতুন দ্রাক্ষারস পান করে মাতাল হয়েছেন। সেখানে উপস্থিত সবচেয়ে নির্বোধ কিছু লোক এই কথাটিই সত্য বলে ধরে নিল, কিন্তু বুদ্ধিমানেরা বুঝতে পারল এটি সত্য নয়। আর যারা বিভিন্ন ভাষা জানত তারাই সাক্ষ্য দিল শিষ্যরা যে ভাষাগুলো ব্যবহার করছিলেন সেগুলো যথার্থ ছিল কিনা।AABen 33.3

    পুরোহিতদের অভিযোগের উত্তরে পিতর তাদেরকে দেখালেন যে, এই ঘটনাটি ভাববাদী যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীকে প্রত্যক্ষভাবে পরিপূর্ণ করেছে, কারণ তিনি বলেছিলেন এমন এক শক্তি মানুষের উপরে আরোপিত হবে যা তাদেরকে বিশেষ কাজের জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। “হে যিহূদী লোকেরা, হে যিরূশালেম নিবাসী সকলে, তোমরা ইহা জ্ঞাত হও, এবং আমার কথায় কর্ণপাত কর। কেননা তোমরা যে অনুমান করিতেছ, ইহারা মত্ত, তাহা নয়, কারণ এখন বেলা তিন ঘটিকা মাত্র। কিন্তু এটি সেই ঘটনা, যাহার কথা যোয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে,” “শেষ কালে এইরূপ হইবে, ইহা ঈশ্বর বলিতেছেন, আমি মর্ত্যমাত্রের উপরে আপন আত্মা সেচন করিব;তাহাতে তোমাদের পুত্রগণ ও তোমাদের কন্যাগণ ভাববাণী বলিবে,আর তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে,আর তোমাদের প্রাচীনেরা স¦পড়ব দেখিবে।আবার আমার দাসদের উপরে এবং আমার দাসীদের উপরেসেই সময়ে আমি আমার আত্মা সেচন করিব,আর তাহারা ভাববাণী বলিবে।”AABen 34.1

    সুস্পষ্ট স্বরে ও বলিষ্ঠভাবে পিতর খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সাক্ষ্য বহন করেছেন: “হে ইস্রায়েলীয়েরা, এই সকল কথা শুন। নাসরতীয় যীশু পরাক্রম—কার্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন সমূহ দ্বারা তোমাদের নিকটে ঈশ্বর—কর্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ঐ সকল কার্য করিয়াছেন, যেমন তোমরা নিজেরাই জান... তোমরা তাঁহাকে অধর্মীদের হস্ত দ্বারা ক্রুশে দিয়া বধ করিয়াছিলে।ঈশ্বর মৃত্যু—যন্ত্রণা মুক্ত করিয়া তাঁহাকে উঠাইয়াছেন; কেননা তাঁহাকে ধরিয়া রাখিতে মৃত্যুর সাধ্য ছিল না।”AABen 34.2

    পিতর তাঁর অবস্থান প্রমাণ করার জন্য খ্রীষ্টের শিক্ষা উদ্ধৃত করেননি, কারণ তিনি জানতেন তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে এতটাই গোঁড়ামি ছিল যে তাদের কাছে এই কথাগুলো বলা একেবারেই নিষ্ফল হবে। কাজেই সেসব কথা না বলে তিনি বরং তাদের কাছে দাউদের কথা বললেন, যিনি ছিলেন যিহূদীদের কাছে একান্ত পূজনীয় এবং তাদের জাতির অন্যতম একজন পূর্বপুরুষ। “দায়ূদ তাঁহার বিষয়ে বলেন,” পিতর ঘোষণা করলেন, “আমি প্রভুকে নিয়তই আমার সম্মুখে দেখিতাম...AABen 34.3

    (ইংরেজি বইয়ের পৃষ্ঠা ৪২—৪৩ নেই)

    .... পার্থিব ধন সম্পদ ও গৌরব লাভের প্রত্যাশী ছিলেন। তারা খ্রীষ্টের কাছে তাঁর জ্যোতি গ্রহণের জন্য আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না।AABen 36.1

    এই স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিষ্যরা পূর্বে খ্রীষ্টের কাছে বাক্যের যে শিক্ষা পেয়েছিলেন সেগুলো যেন যথার্থ সত্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাতে লাগল। যা কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে সে সব শিষ্যরা এতকাল দেখতে পারছিলেন না একটি পর্দার জন্য, আর আজ সেই পর্দা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা খ্রীষ্টের পরিচর্যা কাজ ও তাঁর রাজ্যের বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা ত্রাণকর্তার ক্ষমতায় কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন; আর যখন তাঁরা তাঁদের শ্রোতাদের কাছে পরিত্রাণের বাণী উন্মোচন করেছেন, তখন অনেকেই বিশ্বাস করেছে এবং প্রণোদিত হয়েছে। যাজকদের আরোপিত সমস্ত রীতিনীতি ও সংস্কারগুলো তাদের অন্তর থেকে নিঃশেষে মুছে ফেলা হয়েছে এবং ত্রাণকর্তার শিক্ষা তারা অন্তরে ধারণ করেছেন।AABen 36.2

    “তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল।”AABen 36.3

    যিহূদী নেতারা ভেবেছিলেন খ্রীষ্টের মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁর কাজেরও অবসান ঘটবে; কিন্তু তার বদলে তারা পঞ্চাশত্তমী দিনের অপরূপ এই দৃশ্যের সাক্ষী হলেন। তারা শিষ্যদেরকে এক অজানা শক্তি ও ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে খ্রীষ্টের নাম প্রচার করতে দেখলেন, আর তাঁদের এই বাণীর সাক্ষ্য দান করছিল বিভিন্ন চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ। যিহূদী ধর্মের দুর্গ যিরূশালেম নগরীতে হাজার হাজার মানুষ নাসরতীয় যীশুকে তাদের একমাত্র মসীহ্ বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল।AABen 36.4

    শিষ্যরা এত বিপুল পরিমাণে আত্মা জয়ের ঘটনায় একাধারে অত্যন্ত বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছিলেন। তাঁরা এই অভ‚তপূর্ব সম্মিলনকে তাঁদের নিজেদের কৃতিত্ব বলে মনে করেননি; তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, তাঁরা ভিন্ন কারও পরিশ্রমের ফল লাভ করছেন। আদমের পাপে পতনের পর থেকে শুরু করে খ্রীষ্ট মানুষের হৃদয়ে তাঁর বাক্যের বীজ বপন করার জন্য একে একে তাঁর পরিচর্যাকারীদেরকে মনোনীত করেছেন। পৃথিবীতে তাঁর জীবনকালেও তিনি সত্যের বীজ বপন করেছেন এবং তাঁর রক্ত দিয়ে তাতে সেচন করেছেন। পঞ্চাশত্তমীর দিনে যে বিপুল পরিমাণ মানুষ মন পরিবর্তন করেছিল তারা ছিল খ্রীষ্টের পরিচর্যা কাজেরই ফল, যা তাঁর শিক্ষার ক্ষমতা প্রকাশ করে।AABen 36.5

    প্রেরিতগণ যে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন সেগুলোই কেবল মানুষের মধ্য থেকে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস দূর করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু পবিত্র আত্মাই তাঁর স্বর্গীয় বলে মানুষের অন্তর থেকে সেই সমস্ত ভ্রান্তি দূর করে দিয়েছিলেন। প্রেরিতদের মুখের কথা ছিল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সুতীক্ষ্ণ তীরের মত, যা প্রত্যেকটি মানুষকে প্রভুর মহিমা প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল এবং তাদের অন্তরে গভীর অনুশোচনাবোধ জাগিয়ে তুলেছিল।AABen 37.1

    খ্রীষ্টের অধীনে থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে শিষ্যরা তাঁদের জন্য পবিত্র আত্মার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। পবিত্র আত্মার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁরা তাঁদের সর্বশেষ গুণটি লাভ করেছিলেন এবং তাঁদের জীবনের নিরূপিত কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁর আর অশিক্ষিত বা গেঁয়ো ছিলেন না। তাঁরা আর একদল স্বাধীনচেতা, বিশৃঙ্খল বা দন্দমুখর মানুষ ছিলেন না। তাঁদের কোন প্রত্যাশাই আর পার্থিব কোন বিষয়ের উপরে নির্ভর ছিল না। তাঁরা ছিলেন “একচিত্ত” এবং “একপ্রাণ” বিশিষ্ট। প্রেরিত ২:৪৬; ৪:৩২। খ্রীষ্ট তাঁদের চিন্তা ও অন্তর জুড়ে ছিলেন; তাঁর রাজ্যের প্রসারই ছিল তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। অন্তরে ও স্বভাবে তাঁর তাঁদের প্রভুর মত হয়ে উঠেছিলেন এবং অন্যরা “চিনিতে পারিলেন যে, ইঁহারা যীশুর সঙ্গে ছিলেন।” প্রেরিত ৪:১৩।AABen 37.2

    পঞ্চাশত্তমীর মধ্য দিয়ে তাঁরা স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ লাভ করেছিলেন। খ্রীষ্টের সাথে থাকার সময় তাঁরা যে সত্য উপলব্ধি করতে পারেননি আজ সেই সত্য তাঁদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। যে বিশ্বাস ও নিশ্চয়তা এর আগে কখনো তাদের অন্তরে দেখা দেয়নি, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজ তাঁরা পবিত্র বাক্যের সমস্ত শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। খ্রীষ্টই যে ঈশ্বরের পুত্র সেটা আজ আর তাঁদের কাছে বিশ্বাসের কোন বিষয় নয়। এখন তাঁরা জানেন যে, মাংসিক দেহ পরিধান করলেও তিনিই আসলে মসীহ্। তাঁরা এই সত্যটিকে জগতের কাছে এমন সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রচার করেছেন যে, মানুষ উপলব্ধি করেছে ঈশ্বর তাদের সাথে উপস্থিত আছেন।AABen 37.3

    তাঁরা পরম নির্ভরতার সাথে যীশুর নাম উচ্চারণ করতেন; কারণ তিনি ছিলেন একাধারে তাঁদের বন্ধু এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। খ্রীষ্টের সহভাগিতায় মিলিত হয়ে তাঁরা তাঁর সাথে স্বর্গীয় অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সেই জ্বলন্ত বাক্যের দ্বারা আবৃত হয়ে তাঁরা তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য বহন করেছেন! তাঁদের অন্তর এমন এক গভীর ও সুদূরপ্রসারী বদান্যতায় পূর্ণ ছিল যে, এর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তাঁরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত খ্রীষ্টের শক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দানের জন্য যেতে প্রত্যয়ী হয়েছিলেন। তিনি যে কাজ করছিলেন তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিষ্যরা এক অদম্য আগ্রহে পূর্ণ ছিলেন। স্বর্গের রাজার প্রতি তাঁদের অপরিমেয় ঋণ এবং তাঁদের দায়িত্বসমূহ তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। পবিত্র আত্মার দানে বলীয়ান হয়ে তাঁরা ক্রুশের বিজয়কে আরও প্রসারিত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। আত্মা তাঁদেরকে সক্রিয় করেছেন এবং তাঁদের মধ্য দিয়ে কথা বলেছেন। খ্রীষ্টের শান্তি তাঁদের মুখমন্ডলে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁরা তাঁদের জীবন খ্রীষ্টের সেবায় উৎসর্গ করেছেন এবং তাঁদের সমস্ত স্বভাবে ও আচরণে সেই আত্মসমর্পণই প্রতি মুহূর্তে মূর্ত হয়ে উঠেছে।AABen 37.4