Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ২১শ অধ্যায়—গণ্ডির বাইরে

    এশিয়া মাইনরের সীমাবদ্ধতার বাইরে সুসমাচার প্রচারের সময় এসে গেল। পৌর এবং তার সহকর্মীদের জন্য ইউরোপে পাড়ি দেবার পথ প্রস্তুত হয়েছিল। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল ত্রোয়াতে, “রাত্রিকালে পৌল এক দর্শন পাইলেন; এক মাকদনীয় পুরুষ দাড়াইয়া বিনতিপূর্বক তাহাকে বলিতেছে, পার হইয়া মাকিদনিয়াতে আসিয়া আমাদের উপকার করুন।”AABen 173.3

    এই আহব্বান অত্যন্ত জরুরী ছিল, তাই বিলম্ব করার কোন অবকাশ ছিল না। “তিনি সেই দর্শন পাইলে,” লূক, যিনি পৌল, সীল এবং তিমথীয়র সঙ্গে ইউরোপে পাড়ি দেবার জন্য সহযাএী ছিলেন, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “আমরা অবিলম্বে মাকিদনিয়া দেশে যাইতে চেষ্টা করিলাম, কারণ বুঝিলাম, তথাকার লোকদের নিকট সুসমাচার প্রচার করিতে ঈশ্বর আমাদিগকে ডাকিয়াছেন।”AABen 174.1

    “বিশ্রামবারে” লূক আরো উল্লেখ করেছেন যে, “নগরদ্বারের বাইরে নদীতীরে গেলাম, মনে করিলাম, সেখানে প্রার্থনা স্থান আছে; আর আমরা বসিয়া সমাগত স্ত্রীলোকের কাছে কথা কহিতে লাগিলাম। আর থুয়াতীরা নগরের লুদিয়া নাম্মী একটি ঈশ্বর ভক্ত স্ত্রীলোক, যিনি বেগুনিয়া কাপড় বিক্রয় করিতেন, আমাদের কথা শুনিতেছিলেন, আর প্রভু তাহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ দেন।” লুদিয়া আনন্দের সঙ্গে সুসমাচারের সত্য গ্রহন করলেন। তিনি এবং তার পরিবার খ্রীষ্টধর্মে দিক্ষীত হইলেন এবং বাপ্তাইজিত হলেন। তিনি সবিনয় অনুরোধ করলেন যেন তারা তার গৃহে অবস্থান করেন।AABen 174.2

    এই ক্রুশের বার্তাবাহকেরা যখন শিক্ষা দেবার কাজে যাচ্ছিলেন তখন দৈবজ্ঞ আত্মাবিশিষ্ট্য একজন স্ত্রীলোক তাদের পিছনে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে লাগল, “এই ব্যাক্তিরা পরাৎপর ঈশ্বরের দাস, ইহারা তোমাদিগকে পরিত্রানের পথ জানাইতেছেন। সে অনেক দিন পর্যন্ত এইরূপ করিতে লাগিল।” এই স্ত্রীলোকটি শয়তানের বিশেষ একটি মাধ্যম ছিল এবং ভবিষ্যদ্বানী বলার মাধ্যমে তার কর্তাদের জন্য অনেক অর্থ আয় করত। তার প্রভাবে মূর্তিপূজা করার জন্য শক্তি যুগিয়েছিল। শয়তান জানতো যে তার রাজ্য আক্রান্ত হবে এবং সে তার এই বিরুদ্ধ উদ্দেশ্যকে ঈশ্বরের কাজ হিসাবে অবলম্বন করল, যারা সুসমাচারের বাক্য প্রচার করেন তাদের সত্য শিক্ষার সঙ্গে তার মন্দ বিষয়টিকে মেশাবার চেষ্টা করল। স্ত্রীলোকটির মুখ থেকে যে প্রসংশাসূচক কথা প্রকাশ পাচ্ছিল তা সত্যের জন্য খুব ক্ষতিকর ছিল, প্রেরিতদের শিক্ষা থেকে লোকদের মন অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, এবং সুসমাচারের উপর দুর্নাম বয়ে আনছিল, তাদের দ্বারা এই কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, যারা পবিত্র আত্মার এবং ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা কথা বলেন তারা শয়তানের দূতের এই একই রকম আত্মা দ্বারা কার্য সাধন করেন।AABen 174.3

    কিছু কালের জন্য প্রেরিতরা এই বিরোধীতা সহ্য করলেন; এরপর পবিত্র আত্মা দ্বারা অনুপ্রণিত হয়ে পৌল মন্দ আত্মাকে আদেশ দিলেন যেন স্ত্রীলোকটির মধ্য থেকে বের হয়ে যায়। সেই মুহুর্তে স্ত্রীলোকটিকে এই কার্য থেকে বিরত করার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে এই প্রেরিতরা ঈশ্বরের দাস ছিলেন এবং এইভাবে মন্দ শক্তি দ্বারা তাদের বশ্যতা স্বীকার করে এবং তাদের আদেশ পালন করে।AABen 175.1

    স্ত্রীলোকটির মধ্য থেকে মন্দ আত্মা বের হয়ে যাওয়া এবং তার পূর্বের সঠিক চিন্তায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে স্ত্রীলোকটি খ্রীষ্টের অনুসারী হিসাবে পরিণত হল। তখন তার কর্তারা তাদের শঠতার জন্য ভীত হয়ে পড়ল। তারা দেখতে পেল যে এই স্ত্রীলোকটির মন্দ আত্মা দ্বারা বলা ভবিষ্যদ্বানী এবং ভাগ্য কথন দ্বারা টাকা লাভের সমস্ত আশা শেষ হয়ে গেছে এবং তারা এটিও বুঝেছিল যে, যদি প্রেরিতদের সুসমাচার প্রচারের কাজ এভাবে অব্যাহতভাবে চলতে থাকে তাহলে তাদের টাকা আয়ের উৎস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।AABen 175.2

    শহরের মধ্যে অন্যান্য অনেকেরই শয়তানীপূর্ণ প্রবঞ্চনার দ্বারা অর্থ লাভের দিকে বিশেষ মনোযোগ ছিল, আর এরা একটি ক্ষমতার প্রভাবে ভীত হয়ে পড়েছিল যা তাদের কাজ অত্যন্ত কার্যকর ভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল, তারা ঈশ্বরের দাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উত্থাপন করল। তারা প্রেরিতদের শাসনকর্তাদের কাছে এনে এই অীভযোগ করল, “এই ব্যাক্তিরা আমাদের নগর অতিশয় অস্থির করিয়া তুলিতেছে, ইহারা যিহুদী; আর আমরা রোমীয়, আমাদের যেরূপ রীতিনীতি প্রহন কি পালন করিতে নাই ইহারা তাহাই প্রচার করিতেছে।”AABen 175.3

    ভীষন উন্মত্ততার কার্যকলাপের দ্বারা অনেক লোক প্রেরিতদের বিরুদ্ধে উঠল। একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রভাব বিস্তার করল এবং এটি শাসনকর্তাদের দ্বারা অনুমোদন লাভ করেছিল যারা প্রেরিতদের উপরের পোশাক খুলে ফেলেছিল এবং এই আদেশ দিলেন তাদের যেন চাবুক মারা হয়। “এবং তাহাদিগকে বিস্তর প্রহর করাইলে পর কারাগারে নিক্ষেপ করিলেন এবং সাবধানে রক্ষা করিতে কারারক্ষককে আজ্ঞা দিলেন: এই প্রকার আদেশ প্রাপ্ত হইয়া সে তাহাদিগকে ভিতরের কারাগারে বদ্ধ করিল এবং তাহাদের পায়ে হাড়িকাঠ দিয়া রাখিল।”AABen 175.4

    যে কষ্টসাধ্য কাজের জন্য তারা সমার্পিত ছিলেন তার কারণে প্রেরিতরা ভীষন যাতনা ভোগ করেছিলেন, কিন্তু তারা অসন্তোষ বা বিরক্ত প্রকাশ করেন নি। এর পরিবর্তে সম্পূর্ণ অন্ধকারময় এবং নিরানন্দময় মাটির নিচের কারাগারে অবস্থান করে তারা একে অন্যকে উৎসাহিত করার জন্য প্রাথনা এবং ঈশ্বরের প্রশংসা গান করছিলেন, কারণ তারা তার নামের কারণে অপমান ভোগ করার যোগ হয়েছিলেন। তাদের ত্রানকর্তার জন্য গভীর এবং আন্তরিক ভালোবাসার দ্বারা তাদের হৃদয় আনন্দে পূর্ণ হয়েছিল।AABen 176.1

    তিনি আনন্দ করেছিলেন যে, গৌরবময় সত্যের ক্ষমতা যা তিনি কোন এক সময় অবজ্ঞা ও ঘৃণা করেছিলেন তা দেখার জন্য তার চোখ উন্মুক্ত আছে এবং তা অনুভব করার জন্য তার হৃদয় প্রস্তুত হয়ে আছে।AABen 176.2

    কারাগারের ভিতর থেকে বের হয়ে আসা প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের প্রশংসা গান অন্যান্য বন্দীরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে শুনছিল। তারা রাতের নীরবতা ভঙ্গকারী তীক্ষ্ণ চিৎকার এবং গোঙ্গানীর শব্দ, অভিশাপ এবং শপথ করার কথা শুনতেই অভ্যস্ত কিন্তু এই স্যাতস্যাতে কারাগারের মধ্য থেকে এমন প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের প্রশংসার গান আগে কখনো শুনতে পায় নি তারা। সৈন্যরা এবং বন্দীরা অত্যন্ত অবাক হল এবং তারা পরস্পর জিজ্ঞাসা করল এই লোকেরা কারা হতে পারে, যারা শীতার্থ, ক্ষুধার্থ এবং নির্যাতিত হয়েও আনন্দ করতে পারে।AABen 176.3

    ইতিমধ্যে শাসনকর্তারা তাদের গৃহে ফিরে গেলেনএবং খুব তৎপরতার সঙ্গে এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তারা একটি ভয়ংকর বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রশমিত করতে পেরেছিলেন বলে পরস্পরকে অভিনন্দন করলেন। কিন্তু পথিমধ্যে তারা এই ব্যাক্তিদের স্বভাব এবং তাদের কাজ সম্পর্কে বিশেষভাবে জানতে পেরেছিলেন এবং তারা প্রেরিতদের চাবুক মারতে এবং কারারুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিল। তারা সেই স্ত্রীলোকদের দেখেছিলেন যে মন্দক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছিল এবং তার মুখমন্ডল এবং আচরনে শান্ত ভাবের পরিবর্তন দেখতে পেরেছিলেন। এর আগে তার কারণে শহরে অনেক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু এখন সে সম্পূর্ণ শান্ত এবং শান্তিপ্রবণ। তারা এভাবে উপলব্ধি করেছিলেন যে এই দুই নিরোপরাধ ব্যাক্তিদের উপর রোমের আইনের নির্দয় দন্ড বিধান করার সম্ভব্য সব কিছু করেছেন এবং এই সব তাদের প্রতি ঘৃণার কারনে করেছেন। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পরদিন সকালে তারা এই আদেশ পাবেন যেন প্রেরিতদের গোপনে ছেড়ে দেয় এবং শহর থেকে বিতাড়িত করে, জনতার সহিংসতার বিপদ থেকে দূরে চলে যায়।AABen 176.4

    কিন্তু যাদের উপর পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল লোকেরা যখন তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর এবং প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে উঠেছিল কিংবা অপরাধীর মত অবহেলা করেছিল তখন ঈশ্বর তার দাসের প্রতি দয়াশীল হতে ভুলে যান নি। স্বর্গের সকলেই এই লোকদের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন যারা খ্রীষ্টের জন্য কষ্টভোগ করেছে এবং কারাগারে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য স্বর্গদুতকে পাঠানো হয়েছিল। অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বন্ধ থাকা কারাগারের দরজাগুলো খুলে গিয়েছিল; বন্দীদের হাতের শৃক্সখল এবং পায়ের বেড়ি খুলে পড়ে গিয়েছিল এবং এক অতি উজ্জল আলোয় কারাগার আপ্লুত হয়েছিল।AABen 177.1

    বন্দী প্রেরিতদের প্রার্থনা এবং প্রশংসা গান কারারক্ষক প্রচন্ড বিস্মিত হয়ে শুনেছিল। যখন তাদের কারাগারের ভিতরে আনা হয়েছিল তখন তিনি তাদের আঘাতে ফুলে যাওয়া গ্রহ্নি এবং তাদের আঘাতের স্থান থেকে রক্ত ঝরতে দেখিছিলেন। এবং তিনি নিজ হাতে তাদের পায়ের বেড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই প্রত্যাশা করেছিলেন যে তাদের কাছ থেকে তীব্র যন্ত্রনায় কাতর ধ্বনী এবং তাদের মুখ থেকে অভিশাপ্ত শুনতে পাবেন কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি তাদের কাছ থেকে আনন্দের গান এবং ঈশ্বরের প্রশংসা শুনতে পেলেন। এই গান এবং প্রশংসার ধ্বনী তার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করার পর তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলেন। আর এই ঘুম থেকে তিনি জেগে উঠেছিলেন ভূমিকম্প এবং কারাগারের দেওয়াল কম্পনের ফলে।AABen 177.2

    বিপদসংকেত শুরু হল, তিনি অত্যন্ত আকাঙ্খিত হয়ে দেখতে পেলেন যে কারাগারের সমস্ত দরজা খুলে গেছে এবং সমস্ত বন্দীরা পালিয়ে গেছে ভেবে তিনি প্রচন্ড ভয়ে কেঁপে উঠলেন, রাত শুরু হবার আগে পৌল এবং সীলের তত্ত্বাবধান করার জন্য তার উপর গুরুতর দায়িত্ব ন্যাস্ত করা হয়েছিল তা তিনি স্মরণ করলেন এবং তিনি নিশ্চিত হলেন যে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান তার অবিশ্বস্ততার স্বরূপ মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। এই অবস্থায় তার মন এমন হতাশাগ্রস্থ হয়ে গেল যে তিনি উপলব্ধি করলেন যে অসম্মানজনক এবং লজ্জাজনক মৃত্যুদন্ড ভোগ করার চেয়ে বরং আত্মহত্যা করা আরও অধিক শ্রেয়। তিনি তার তরোয়ার বের করে নিজেকে আঘিান করতে উদ্যত হলেন, ঐ সময় পৌলের উচ্চ কন্ঠের চিৎকার শোনা গেল, ওহে আপনার হিংসা করিও না, কেননা আমরা সকলেই এই স্থানে আছি।” প্রত্যেকটি লোক তাদের নিজ নিজ স্থানে ছিল এবং একজন সহবন্দীর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের ক্ষমতা দেখা গেল, যার দ্বারা সমস্ত বন্দীদের নিয়ন্ত্রনে রেখেছিল।AABen 177.3

    প্রেরিতদের সঙ্গে কারারক্ষক অত্যন্ত কঠোর আচরণ করলেও প্রেরিতদের মনে কোন অসন্তোষ বা উদ্রেগের সৃষ্টি হয় নি। পৌল এবং সীলের মধ্যে ছিল খ্রীষ্টের মনোভাব, প্রতিহিংসার মনোভাব ছিল না। তাদের হৃদয় ত্রানকর্তার ভালোবাসায় পূর্ণ ছিল, তাই তাদের অত্যাচারকারীদের বিরুদ্ধে তাদের মনে কোন বিদ্বেষ এবং ক্ষতি করার মনোভাব স্থান পায় নি।AABen 178.1

    কারারক্ষক হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিলেন এবং একজনকে আলো আনতে জলে দৌড় কারাকক্ষের ভেতরে গেলেন। এই লোকদের আচরণ কি রকম তা দেখতে পেলেন তিনি দেখতে পেলেন যে যাদের সঙ্গে তিনি নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন তারাই তার সঙ্গে দয়াপূর্ণ আচরণ করছেন। তিনি যে স্থানে ছিলেন সেই স্থানে এসে তিনি তাদের পায়ের উপর পড়লেন এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন। এরপর তিনি তাদের কারাগার থেকে বাইরে এনে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহাশয়েরা পরিত্রান পাওয়ার জন্য আমাদের কি করিতে হইবে?”AABen 178.2

    ভূমিকম্পের মাধ্যমে ঈশ্বরের ক্রোধ এইভাবে প্রকাশিত হতে দেখে কারারক্ষক অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছিলেন, তিনি যখন মনে করেছিলেন যে, সমস্ত বন্দীরা মুক্ত হয়ে গেছে তখন তিনি নিজ হাতে নিজের প্রাণ বধ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু এই সমস্ত বিষয় নতুন ঘটনার সঙ্গে তুলনা করলে এর খুব সামান্যই গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে হবে, অজানা ভয় তার মনকে আলোড়িত করেছিল, কষ্টভোগ এবং অন্যায়ব্যাবহার ভোগকারা প্রেরিতদের প্রতি আনন্দপূর্ণ ব্যবহার দেখাবার মাধ্যমে নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে চাইলেন। তিনি তাদের মুখে মন্ডলে স্বর্গের আলো দেখতে পেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে ঈশ্বর আশ্চর্যজনক উপায়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছেন এবং মন্দ আত্মাবিশিষ্ট স্ত্রীলোকটি নঅত্যন্ত জোড়ালোভাবে যে কথাগুলো বলেছিল তা তারা মনে করল, “এই ব্যাক্তিরা পরাৎপর ঈশ্বরের দাস, ইহারা তোমাদিগকে পরিত্রানের পথ জানাইতেছে।”AABen 178.3

    অত্যন্ত নম্রতার সহিত প্রেরিতদের অনুরোধ করলেন যেন তারা তাকে জীবনের পথ দেখায়। প্রেরিতদের উত্তর দিলেন, “তুমি ও তোমার পরিবার প্রভু যীশুকে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রান হইবে।” “পরে তাহারা তাহাকে এবং তাহার বাটিতে উপস্থিত সকল লোককে ঈশ্বরের বাক্য বলিবেন।” এরপর কারারক্ষক প্রেরিতদের আঘাতের স্থান ধৌত করে দিলেন এবং তাদের সেবা শুশ্রুষা করলেন, এবং এই সব কিছুর পর তাদের দ্বারা তিনি এবং তার পরিবারের সবাই বাপ্তাইজিত হলেন। একটি পবিত্র প্রভাব কারাগারের অন্যান্য বন্দীদের মধ্যে স্বয়ং পরিব্যাক্ত হল, এবং প্রেরিতরা সত্য সম্পর্কে যেই সব কথা বলেছিলেন তারা তা কান পেতে শুনেছিল। তাদের এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এই ব্যাক্তিরা যে ঈশ্বরের সেবা করেন সেই ঈশ্বর তাদের অলৌকিকভাবে এই বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করেছেন।AABen 178.4

    ভূমিকম্পের ফলে ফিলিপীয়র নাগরীকরা ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল এবং সকাল বেলা কারাগারের কর্মকর্তারা যখন শাষনকর্তাদের কাছে গত রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বললেন, তখন তারা সতর্ক হয়ে গেলেন এবং প্রেরিতদের ছেড়ে দেবার জন্য সার্জেন্টদের পাঠালেন। কিন্তু পৌল ধীর কন্ঠে বললেন, “তাহারা আমাদিগকে বিচারে দোষী না করিয়া সর্ব সাধারণের সাক্ষাতে প্রহার করাইয়া কারাগারে নিক্ষেপ করিয়াছেন, আমরা রোমীয় লোক, এক্ষনে কি গোপনে আমাদেরকে বাহির করিয়া দিতেছেন? তাহা হইবে না; তাহারা নিজে আসিয়া আমাদের বাহিরে লইয়া যাউন।”AABen 179.1

    প্রেরিতরা ছিলেন রোমীয় নাগরিক, একজন রোমীয় নাগরিককে চাবুক মারা, একজন ভয়ানক অপরাধীকে বাচানোর জন্য অথবা ন্যায্য বিচার ছাড়া তার মুক্তি পাওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল। পৌল এবং সীলকে সর্ব সাধারণের সামনে বন্দী করা হয়েছিল এবং এখন তারা শাসনকর্তাদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যাখ্যা ছাড়া গোপনে মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করলেন।AABen 179.2

    এই কথা যখন শাসনকর্তাদের কাছে বলা হল তখন তারা এই আশঙ্কায় ভীত হয়ে গেলেন যে, প্রেরিতরা হয়তো সম্রাটের কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন এবং তারা কাল বিলম্ব না করে কারাগারে গিয়ে তাদের সঙ্গে যে অন্যায় এবং অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তার জন্য পৌল ও সীলের কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং ব্যাক্তিগতভাবে তাদের কারাগারের বাইরে আসতে সাহায্য করলেন, শহর থেকে বাইরে চলে যাওয়ার জন্য সনির্বদ্ধ অনুরোধ করলেন। প্রেরিতরা লোকদের উপর যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এত শাসন কর্তারা ভীত হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা সেই শক্তিকেও ভয় পেয়েছিলেন যা এই নিরপরাধ লোকদের পক্ষে মধ্যস্থা করেছে।AABen 179.3

    খ্রীষ্টে প্রদত্ত শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন, প্রেরিতরা তাই তার বর্তমান অবস্থার জন্য কোন বাদানুবাদ করেন নি, এটি সেখানে আকাঙ্খিত ছিল না। “তখন তাহারা কারাগার হইতে বাহির হইয়া লুদিয়ার বাটিতে প্রবেশ করিলেন, আর ভ্রাতৃগনের সঙ্গে দেখা হইলে তাহাদিগকে আশ্বাস দিলেন; পরে প্রস্থান করিলেন।”AABen 180.1

    প্রেরিতরা ফিলিপীতে তাদের কাজকে ব্যর্থ হিসাবে বিবেচনা করেন নি। তারা অনেক বেশী বিরোধিতা এবং অত্যাচার ও নিপীড়নের সম্মুখিন হয়েছিলেন; কিন্তু তাদের পক্ষে ঈশ্বরের দয়াশীলতা এবং কারারক্ষক ও তার পরিজন প্রভু যীশুতে বিশ্বাসী হওয়া, তাদের অপমানিত হওয়া ও নির্যাতন ভোগ করার চেয়ে আরো বেশি অন্যায়ভাবে তাদের কারারুদ্ধ করা এবং অলৌকিক ভাবে তাদের কারাগার থেকে মুক্ত লোকেরা অবহিত হল এবং এই বিষয়টি প্রেরিতদের কাজকে সেই সমস্ত লোকদের মনোযোগ আকর্ষন করেছিল যাদের কাছে কোন ভাবে সুসমাচার প্রচার করা যেত না।AABen 180.2

    ফিলিপীতে মন্ডলী প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছিল পৌলের ফিলিপীতে পরিচর্যার ফল, যার বিশ্বাসীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তার গভীর উৎসাহ ও উদ্দিপনা এবং আত্মনিবেদন, আর সর্বপরি খ্রীষ্টের জন্য সেচ্ছায় কষ্টভোগ, নব বিশ্বাসীদের উপর গভীর এবং দৃঢ় প্রভাব প্রদর্শন করেছিলেন। যাদের জন্য প্রেরিতরা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তাদেরকে মহা মূল্যবান সত্য পুরস্কার দিয়েছিল এবং তাদের পরিত্রানের জন্য তারা নিজেদের সর্বান্তঃকরণে সমর্পন করেছিলেন।AABen 180.3

    এই মন্ডলী যে, দুঃখভোগ করা থেকে মুক্ত নয় তা তাদের কাছে লেখা পৌলের পত্রে উল্লেখ করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যেহেতুক তোমাদিগকে খ্রীষ্টের নিমিত্ত এই বর দেওয়া হইয়াছে, যেন তাহাতে কেবল বিশ্বাস কর, তাহা নয়, কিন্তু তাহার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর; কারণ আমাতে যে রূপ দেখিয়াছ এবং এখনও আমাতে হইতেছে শুনিতেছ সেইরূপ প্রাণপন তোমাদেরও হইতেছে।” তথাপি তাদের বিশ্বাসে এমন দৃঢ়তা ছিল যা তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “যখনই তোমাদিগকে স্মরণ হয়, সর্বদাই আমি আমার সমস্ত বিনতিতে তোমাদের সকলের জন্য আনন্দ সহকারে আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; কারণ প্রথম দিবসবধি অদ্য পর্যন্ত সুসমাচারের পক্ষে তোমাদেরও সহভাগীতা আছে।” ফিলিপীয় ১:২৯, ৩০, ৩—৫।AABen 180.4

    ভয়ানক বিশৃঙ্খলা যা ভাল শক্তির মধ্যে স্থান লাভ করে নেয় এবং যেখানে সত্যের বার্তাবাহকদের কাজ করার জন্য ডাকা হয় সেখানে শয়তান তার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র স্থাপন করে। “রক্ত মাংসের সহিত নয়,” পৌল উল্লেখ করেছেন, “কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকার জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগনের সহিত সআমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” ইফিষীয় ৬:১২। যুগের শেষ সময় পর্যন্ত ঈশ্বরের মন্ডলী এবং যারা দুষ্টতার আত্মগনের নিয়ন্ত্রনে চালিত হয় তাদের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকবে।AABen 181.1

    আদি খ্রীষ্টিয়ানেরা প্রায়ই অন্ধকারের শক্তির সামনা সামনি হয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। কটতর্কের দ্বারা এবং কষ্টভোগের দ্বারা শত্রুরা সত্যের বিশ্বাস থেকে তাদের বিচ্যুত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সময়ে যখন জগতের সব কিছু অতি দ্রুত শেষ হয়ে যাবার সময় কাছে এসে যাবে তখন শয়তান জগতকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হবে। মনকে জয় করার জন্য সে অনেক পরিকল্পনা উদ্ভাবন করবে এবং পরিত্রানের জন্য অপরিহার্য সত্য থেকে মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করবে। প্রত্যেক শহরে শয়তানের অনুচরেরা অত্যন্ত তৎপরতার সাথে সেই সব লোকদের সংঘবদ্ধ করবে যারা ঈশ্বরের আজ্ঞা ও নিয়মের প্রতিরোধ করে। দুষ্ট প্রতারক সন্দেহ এবং বিদ্রোহের উপাদান উপস্থাপন করার কাজে ব্যস্ত থাকবে। এবং লোকেরা আগ্রহে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে যা জ্ঞান অনুযায়ী নয়।AABen 181.2

    দুষ্টতা এমন এক উচ্চতায় পৌঁছাবে যেখানে আগে কখনো পৌঁছাতে পারে নি। তথাপি অনেক সুসমাচার প্রচারক উচ্চ কন্ঠে বলবে, “শান্তি এবং নিরাপদ।” কিন্তু ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সুসমাচার প্রচারকেরা দৃঢ়তাপূর্ণ ভাবে তাদের কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। স্বর্গীয় পোশাকে সজ্জিত হয়ে নির্ভয়ে এবং বিজয়দৃপ্তভাবে অগ্রসর হবে। এই সময়ের মধ্যে তাদের আয়ত্বের মধ্যে যে আত্মা রয়েছে তাদের সকলে সত্যের বার্তা গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাদের এই যুদ্ধাবস্থা থামবে না।AABen 181.3

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents