Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    ১২শ অধ্যায়—অত্যাচারী থেকে শিষ্য

    যিহূদী নেতাদের মধ্যে যারা সুসমাচার প্রচারে চরম সাফল্য অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন তার্ষ নগরীর শৌল। জন্মসুত্রে রোমীয় নাগরিক শৌল ছিলেন একজন কট্টরপন্থী যিহূদী, এক্সিনি যিরূশালেমে প্রখ্যাত ধর্মগুরুদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। “ইস্রায়েল—জাতীয় বিন্যামীন বংশীয়” শৌল ছিলেন “ইব্রীয়—কুলজাত ইব্রীয়, ব্যবস্থার সম্বন্ধে ফরীশী, উদ্যেগ সম্বন্ধে মণ্ডলীর তাড়নাকারী, ব্যসবস্থাগত ধার্মিকতা সম্বন্ধে আনন্দনীয়।” ফিলিপীয় ৩:৫, ৬।ধর্মাগুরুরা তাঁকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একজন মানুষ হিসেবে দেখতেন এবং তাঁর ব্যাপারে অনেকেরই বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল যে , তিনিই প্রাচীন যিহূদী ধর্মবিশ্বাসের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবেন। মহাসভার একজন সস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি প্রচণ্ড ক্ষমতাশলী একটি অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন।AABen 90.1

    স্তিফানের বিচার ও মৃত্যুতে শৌলের বিশেষ ভূমিকা ছিল এবং এই সাক্ষ্যমরের সাথে ঈশ্বরের বিস্ময়কর উপস্থিতির কারণে শৌল দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে উঠেছিলেন যে, যীশুর অনুসারীদেরকে তিনি যে কারণে তাড়না করছেন তা আদৌ ন্যায্য কিনা। তাঁর মন দারুনভাবে আন্দোলিত হচ্ছিল। এই জটিলতায় আক্রান্ত হয়র তিনি সেই মানুষদের কাছে গিয়েছিলেন যাদের প্রজ্ঞা ও বিবেচনার উপরে তাঁর পূর্ণ আস্থা ছিল। যাজক ও শাসকদের পরামর্শে তিনি অবশেষে আশ্বস্ত হলেন যে, স্তিফান একজন ইশ্বর—নিন্দাকারী ছিলেন, সাক্ষ্যমর শিষ্য যে যীশুর কথা প্রচার করছিলেন তিনি একজন দেশদ্রোহী ছিলেন এবং যারা ঈশ্বরের পবিত্র মন্দিরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সকলেই ঈশ্বরের ইচ্ছার পরিচর্যা করেছেন।AABen 90.2

    শৌল যে একেবারে হঠকারিভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন তা নয়। বস্তুত তাঁর শিক্ষাদীক্ষা ও ধ্যান্ধারণা, তাঁর প্রাক্তন শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ এবং তাঁর জনপ্রিয়তাই তাঁকে বিবেকের কন্ঠস্বর ও ঈশ্বেরের অনুগ্রহের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করেছিল। যাজক ও ফরীশীরা সম্পূর্ণ সঠিক এমনটা ধরে নিয়েই শৌল যিশুর শিষ্যদের প্রচার করা ধর্মমতের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তাঁর কার্যক্রমের মধ্যে ঈশ্বরভক্ত নারী ও পুরুষদেরকে ধরে বিচারে নিয়ে আসা, যেখানে কাউকে কাউকে বিচারে কারাদণ্ড দেওয়া হত আবার কাউকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হত, কেবলমাত্র যীশু খ্রীষ্টের প্রতি তাদের বিশ্বাসের জন্য। এতে করে সদ্য গঠিত মণ্ডলীগুলোতে দুঃখ ও শোকের ছায়া নেমে আসতে লাগল এবং অনেকেই নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র চলে যেতে লাগলেন।AABen 90.3

    যিরূশালেম থেকে যারা এই নির্যাতনের জন্য বিতাড়িত হয়েছিলেন তারা “চারদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল।” প্রেরিত ৮:৪। তারা যে সমস্ত নগরীতে গিয়েছিলেন তাঁর মধ্যে ছিল দামেস্ক, যেখানে এই নতুন বিশ্বাস বহু অনুসারী লাভ করেছিল।AABen 91.1

    যাজক ও শাসনকর্তারা ভেবেছিলেন সহিংস আক্রমণ ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তারা এই ধর্মপ্রসারকে রুদ্ধ করে দিতে পারবেন। কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারলেন যে, যিরূশালেমে তারা এই নতুন ধর্মমতের বিরুধে যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন সেই একই পক্ষেপ এখন অন্যান্য স্থানেও নিতে হবে। দামেস্কে তারা যে পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন সেখানে শৌল বিশেষভাবে অংশ নিতে চাইলেন। “প্রভুর শিষ্যহদের বিরিদ্ধে ভয় প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস “টানতে টানতে শৌল “মহাযাজকের নিকটে গিয়া , দম্মেশকস্থ সমাজ সকলের সমাজ সকলের প্রতি পত্র যাচ্ঞা করিলেন , যেন সেই পথাবলম্বী পুরুষ ও স্ত্রী যে সমস্ত লোককে পান, তাঁহাদিগকে বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিতে পারেন। ” সুতরাং “প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতা ও আজ্ঞাপত্র লইয়া” (প্রেরিত ২৬:১২) তার্ষ নগরীর শৌল পৌরুষদীপ্ত ও বলীয়ান হয়ে, এক ভান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে স্মরণীয় এক যাত্রায় সামিল হলেন, যে যাত্রাপথের অবিস্মরণীয় ঘটনা তাঁর পুরো জীবনটাকেই পাল্টে দিয়েছিল।AABen 91.2

    যাত্রার শেষ দিনে “মধ্যাহ্নকালে, ” সাধারণত যে সময় ক্লান্ত পথিকেরা দামেস্কের কাছাকাছি পৌছায়, তাদের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে বিস্তৃত উর্বর ভূমি, সুশোভিত উদ্যান এবং ফলের বাগিচা, সেই সাথে কাছের পর্বত থেকে নেমে আসা কুলকুল শব্দের ঝর্ণাধারা। ধু ধু মরুভূমির ভেতর দিয়ে যাত্রাপথ অতিক্রম করে এসে শেষ বেলায় এই মনোরম দৃশ্য সত্যিই মনকে দারুণভাবে সতেজ করে তোলে । শৌল তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে যখন এই মনোরম দৃশ্য অবলোকন করছিলেন এমন সময় “হঠাৎ,” যেমনটা তিনি পরে বলেছেন, “আকাশ হইতে সূর্যতেজ অপেক্ষাও তেজময় জ্যোতি আমার ও আমার সহযাত্রীদের চারদিকে দেদীপ্যমান” (প্রেরিত ২৬:১৩) , এতটা উজ্জ্বল যা নশ্বর মানুষের পক্ষে চোখ মেকে দেখা সম্ভব নয়। অন্ধ ও দিশেহারা হয়ে শৌল মাটিতে পড়ে গেলেন।AABen 91.3

    সেই অতি উজ্জ্বল আলোর মধ্য থেকে শৌল শুনতে পেলেন “এক বাণি . . . ইব্রীয় ভাষায়” প্রেরিত ২৬:১৪) বলছে শৌল, শৌল কেন আমাকে তাড়না করিতেছ ? তিনি কহিলেন, প্রভু , আপনি কে ? প্রভু কহিলেন, আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ; কন্টকের মুখে পদাঘাত করা তোমার দুষ্কর।”AABen 92.1

    একাধারে অত্যন্ত আতঙ্কিত এবং তীব্র আলোতে অন্ধ শৌলের সঙ্গীরাও একটি কন্ঠস্বর শুন্তে পেকেন, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। কিন্তু শৌল বুঝতে পারছিলেন কি নলা হচ্ছে এবং তাঁর কাছে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, কে কথা বলছেন— তিনি স্বয়ং ঈস্বরের পুত্র। তাঁর সামনে যিনি এসে দড়িয়েছিলেন তিনি ছিলেন সেই ক্রূশবিদ্ধ ব্যক্তি। এই যিহূদীর কঠিন্ম অন্তরাত্মায় ত্রাণকর্তার মূর্তি চিরকালের জন্য গেঁথে গেল। নির্গত বাণিগুলো তাঁর হৃদয়কে যেন শেলবিদ্ধ করল। তাঁর মনের অন্ধকার কুঠরী হঠাৎ করেই যেন আলোর বন্যায় ভেসে গেল এবং তাঁর অতীত জীবনের সমস্ত অজ্ঞানতা ও ভ্রান্তি ধুয়ে মুছে গেল, অন্যদিকে পবিত্র আত্মার আলোকবর্তিকা এখন তাঁর জীবনে কতটা প্রয়োজন সেটাও উন্মোচিত হল।AABen 92.2

    স্বর্গীয় এই পেত্যাদেশের ক্ষণে শৌলের মনে দারুণ দ্রুততার সাথে কাজ করছিল। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় তাঁর প্রজ্ঞার দ্বারা তখন খুলে গেল। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন যে, যিহূদীদের কর্তৃক যীশুকে প্রত্যাখ্যান , তাঁর ক্রূশারোপণ , পুনরুত্থান এবং স্বর্গারোহণ ভাববাদীরা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং তাঁকে প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে আগেই প্রমাণ দিয়ে গেছেন। স্তিফান তাঁর মৃত্যুর আগমুহূর্তে যে বাক্য প্রচার করছিলেন, “দেখ, আমি দেখিতেছি স্বর্গ খোলা রহিয়াছে, এবং মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন।” প্রেরিত ৭:৫৫, ৫৬। যাজকেরা বলেছিলেন এর সবই ঈশ্বে—নিন্দা, কিন্তু শৌল এখন জানেন এসবই সত্যি ।AABen 92.3

    এক অত্যাচারীর জন্য কতনা সাংঘাতিক এক প্রত্যাদেশ! শৌল এখন নিঃসন্দেহে জানেন যে, সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ নাসরতীয় যীশু হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং যাদেরকে তিনি মুক্তি দিতে এসেছিলেন তারাই তাঁকে ক্রূশে দিয়ে হত্যা করল। তিনি আরও জানালেন যে, ত্রাণকর্তা বিজয়ীর বেশে কবর থেকে উঠেছেন এবং স্বর্গে আরোহণ করেছেন। ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশের ঐ মুহূর্তে শৌল এ কথা মনে করে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়লেন,যে স্তিফান ক্রূশাহত ও পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তার সাক্ষ্য বহন করছিলেন, তাঁকে তিনিই হত্যা করার জন্য সমর্থন দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে তাঁরই হাতে যীশু খ্রীষ্টের আরও অনেক অনুসারী নিষ্ঠুর অত্যাচার সহ্য করেছেন ও মৃত্যুবরণ করেছেন। ত্রাণকর্তা স্তিফানের মধ্য দিয়ে শৌলের সাথে কথা বলেছেন, যার স্পষ্ট যুক্তিকে ভুল বোঝার কোন অবকাশই ছিল না। যিহূদী ধর্মগুরুরা স্তিফানের চেহারায় খ্রীষ্টের প্রতাপের আলো দেখেছিলেন— যেন মনে হচ্ছিল “তাঁহার মুখ স্বর্গদূতের মুখের তুল্য। “প্রেরিত ৬:১৫। তিনি দেখেছেন কত বিশ্বাসী হাসতে হাতে তাদের বিশ্বাসে অটোল থেকে জীবন দিয়েছেন।AABen 93.1

    এই সব চিন্তা এক মুহূর্তের মধ্যে শৌলের অন্তরে এক তীব্র মর্মবেদনা তৈরি করল এবং এই সর্বব্যাপী চিন্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করে তুলল যে, যীশুই হলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ। একটা সময় তিনি সারা রাত ধরে এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য কত না কষ্ট করেছেন এবং প্রতিবারই তিনি জোর করে নিজের এই চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে , যীশু কোন মশীহ নন এবং তাঁর শিষ্যেরা কল্পনাপ্রসূত ধর্মমত প্রচার করছেন।AABen 93.2

    এখন খ্রীষ্ট স্বয়ং শৌলের সাথে তাঁর নিজ কন্ঠে কথা বললেন। তিনি তাঁকে বললেন, “শৌল,শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ?” তখন শৌল প্রশ্ন করলেন, “প্রভু, আপনি কে?” আর তাঁর বলদে একই কন্ঠ থেকে এই জবাব ভেসে এল, “আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ।” খ্রীষ্ট এখানে নিজেকে তাঁর লোকদের সাথে এক করে দেখালেন। যীশুর অনুসারীসদেরকে তাড়না করার মধ্য দিয়ে আসলে শৌল সরাসরি স্বর্গে প্রভুর প্রতিই আঘাত করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দোষী হিসেবে অভিযুক্ত করছিলেন ও সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন।AABen 93.3

    শৌলের মনে আর এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকল না যে, যিনি তাঁর সাথে কথা বলছেন তিনি আসলে নাসরতীয় যীশু, সেই বহুল প্রতীক্ষিত মশীহ , ইস্রায়েলের সান্ত্বনা ও মুক্তিদাতা। ভয়ে কাপতে কাপতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, প্রভু আমাকে কী করতে হবে ? প্রভু তখন তাঁকে বললেন, “উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে তাহা বলা যাইবে।”AABen 94.1

    সেই উজ্জ্বল আলো যখন অদৃশ্য হয়ে গেল এবং শৌল মাটি থেকে উঠলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে । খ্রীষ্টের প্রতাপের জ্যোতি তাঁর নশ্বর চোখের জন্য অনেক বেশি তীব্র ছিল; আর যখন তা তুলে নেওয়া হল তখন তাঁর দৃষ্টি রাত্রির ঘন অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে, এই অন্ধত্ব ছিল যীশুর অনুসারীদের প্রতি তাঁর নিষ্ঠুর অত্যাচারের কারণে ঈশ্বরদত্ত শাস্তি । তিনি ভয়ানক অন্ধকারের ভেতরে হাতড়ে বেড়াতে লাগলেন এবং তাঁর সঙ্গীরা ভয়ে ও বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে “তাঁহার হস্ত ধরিয়া তাঁহাকে দম্মেশকে লইয়া গেল।”AABen 94.2

    ঘটনাবহুক এই দিনটির সকালে শৌল অত্যন্ত আত্মাতুষ্টি নিয়ে দামেস্কের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, কারণ মহাযাজক পরম বিশ্বাসের এই দায়িত্বভার তাঁর উপরে দিয়েছিলেন। তাঁর উপরে এক গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল যেন তিনি দামেস্কে নতুন এই ধরমবিশ্বাসের প্রচার রুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে যিহুদী ধরমকে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে তীব্র আসাবাদী ছিলেন যে, তাঁর এই অভিযান সর্বাংশে সফল হবে এবং সেখানে ফিয়ে তিনি এক সন্তোষজনক ওভীজ্ঞটাড় শোম্মূখিণ হোবেণ বলে প্রত্যাশা করছিলেন।AABen 94.3

    কিন্তু তাঁর প্রত্যাশার সাথে বাস্তবের কেমন অমিল ছিল ? অন্ধত্বে আক্রান্ত, আসহায়, অনুশোচনায় দগদ্ধ, তাঁর জন্য আরও কী কী শাস্তি অপেক্ষা করছে তা অজানা , এমন অবস্থায় তিনি যিহূদা নামের এক শিষ্যের গৃহে আশ্রয় নিলেন, যেখানে তিনি নিভৃতে প্রার্থনা ও আত্মোপলব্ধির জন্য প্রচুর সময় পেয়েছেন।AABen 94.4

    তিন দিন ধরে শৌল “দৃষ্টিহীন থাকিলেন, এবং কিছুই ভোজন কি পান করিলেন না। “আত্মার অনুসোচনার এই দিনগুলো তাঁর কাছে একেকটি বছরের সমান ছিল। বারবার তিনি স্মরণ করতে লাগলেন স্তিফানকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়ার কথা , আর অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলেন। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি ভাবতে লাগলেন যাজকদের ও ফরীশীদের ধ্যান ধারণা ও আক্রোশপূর্ণ ষড়যন্ত্রে চালিত হয়ে তিনি কত না মারাত্মক পাপ করেছেন , এমনকি স্তিফানের চেহারা যখন স্বর্গীয় আলোকছ্বটায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল তখন্ব তিনি নিজেকে ফেরাননি। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন ও ভগ্ন চিত্ত নিয়ে তিনি ভাবছিলেন, কতবার তিনি নাসরতীয় যীশুর বিশ্বাসীদের উপরে নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছেন এবং এখন তখনও তিনি কীভাবে নিজেদের চোখ ও কান বন্ধ রেখেছেন।AABen 94.5

    আত্মা—নিরীক্ষা ও হৃদয়কে নম্র করার এই দিনগুলোতে তিনি নিজেকে পুরোপুরি একাকী করে রেখেছিলেন। দামেস্কের বিশ্বাসীদেরকে শৌলের আগমনের কারণ সম্পর্কে আগেই সাবধান করে দেওয়ার জন্য ভান করছেন; আর তাই তারা নিজেদেরকে শৈলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন এবং কোন ধরনের সহানুভূতি প্রদর্শন করা থেকে বিরত ছিলেন। যে কঠিনমনা যিহূদীদের সাথে মিলে তিনি দামেস্কের বিশাসীদের উপর নির্যাতন চালানোর কথা ভাবছিলেন, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়ার কোন ইচ্ছা তাঁর ছিল না ; কারণ তিনি জানতেন তারা এই ঘটনার কথা শুনতেই চাইবে না। এ কারণে তিনি আপাতদৃষ্টিতে সব ধরনের মানবীয় সহমর্মিতা ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাঁর একমাত্র আশা ছিলেন দয়াময় ঈশ্বর এবং তিনি তাঁরই কাছে ভগ্নচূর্ণ হৃদয়ে প্রার্থনা করলেন।AABen 95.1

    শৌল যখন একাকী ঈশ্বরের সাথে সময় কাটাচ্ছিলেন , সেই দীর্ঘ প্রহরগুলোতে তিনি পবিত্র শাস্ত্রের বেশ কিছু অংশ স্মরণ করতে লাগলেন যেখানে যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তিনি খুব সতর্কতার সাথে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে পর্যালোচনা করলেন। যেহেতু এখন তিনি সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে নিজ হৃদয়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করতেছিলেন, সে ভবিষ্যদ্বাণিগুলোর অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন, সে সময় তিনি তাঁর পূর্বেকার সমস্ত উপলব্ধির অন্ধত্ব এবং সার্বিকভাবে যিহূদী জাতির অন্ধত্বের কথা চিন্তা করে হতবাক হলেন, কারণ এই অন্ধত্বের কারণেই তারা প্রতিজ্ঞাত মশিহ যীশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।AABen 95.2

    পবিত্র আত্মার পরিশুদ্ধকারী ক্ষমতায় শৌল নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করায় তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত ভুলগুলোকে দেখত্রে পেলেন এবং ঈশ্বরের বিধানের সুদূরপ্রসারী দাবীগুলোকে উপলব্ধি করলেন । যিনি এক সময় একজন গর্বিত ফরীশী ছিলেন, যিনি ঈশ্বরের কাজ করেছেন বলে পরম আত্মাবিশ্বাসী ছিলেন ,তিনিই এখন শিশুর মত নম্রতা ও সরলতায় ঈশ্বরের সামনে নতজানু হয়ে তাঁর অযোগ্যতার কথা স্বীকার করেছেন এবং ক্রূশবিদ্ধ ও পুনরুত্থিত ত্রাণকর্তার করুণা যাচ্ঞা করেছেন। শৌল এখন পিতা ও পুত্রের সাথে পূর্ণতায় স্মমিলিত হওয়ার সুযোগ চাইছেন; এবং অনুগ্রহের সিংহাসনে কাছে ক্ষমাভিক্ষা পূর্বক গৃহীত হওয়ার জন্য আর্তি প্রকাশ করছেন।AABen 95.3

    অনুতপ্ত এই ফরীশীর প্রার্থনা বিফলে যায়নি। তাঁর অন্তরের চিন্তা ও আবেগগুলো স্বর্গীয় অনুগ্রহ দ্বারা রূপান্তরিত হয়েছিল; এবং তাঁর মহত্তর গুঙুলোকে ঈশ্বরের চুড়ান্ত লক্ষ্য সাধনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হয়েছিল। খ্রীষ্ট ও তাঁর ধার্মিকতা শৌলের কাছে গোটা জগতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।AABen 96.1

    শৌলের মন পরিবর্তন একজন পাপীর মনকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে পবিত্র আত্মার ক্ষমতার সর্বসেরা দৃষ্টান্ত । তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, নাসরতীয় যীশু ঈশ্বরের আদেশ মান্য করার কোন মানে নেই। কিন্তু এই পরিবর্তনের পর শৌল স্বীকার করলেন যে যীশুই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি এই জগতে কেবলমাত্র তাঁর পিতার বিধান রক্ষা করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে ,যীশুই গোটা যিহূদী ধর্মে বলি উৎসর্গের সমস্ত সংস্কৃতির মূল । তিনি দেখেছিওলেন যে , ক্রূশারোপণের মধ্য দিয়ে যীশু ইস্রায়েলেরে ত্রাণকর্তা হিসেবে পুরাতন নিয়মের সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছেন।AABen 96.2

    শৌলের মন পরিবর্তনের ঘটনা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধি আমাদের জন্য সুপালনীয় হিসেবে দেখা দেয় , যা অবশ্যই স্মরণে রাখা প্রয়োজন। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যাকে খ্রীষ্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য নির্বাচন করেছিওলেন, যাকে স্বয়ং খ্রীষ্ট “মনোনীত বাহক” হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন; তথাপি তাকে যে কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে তা তখনই প্রভু তাঁকে বলেননি। তিনি তাঁকে পথিমধ্যে অবরুদ্ধ করলেন এবং তাঁর পাপের জন্য অভিযুক্ত করলেন; কিন্তু শৌল যখন জিজ্ঞেস করলেন, আমার কাছে আপনি কী চান, তখন ত্রাণকর্তা এই অনুস্নধানী যীহূদীদের তাঁর মণ্ডলীর সাথে যুক্ত করে দিলেন , যেন সেখানে তিনি তাঁর সম্পর্কে ঈশ্বরের পরিকল্পনা জ্ঞাত হতে পারেন।AABen 96.3

    যে চমৎকার আলো শৌলের অন্ধকারকে দূর করে দিয়েছিল তা ছিল স্বয়ং প্রভুর কাজ; কিন্তু তিনি শিষ্যদের দ্বারাও তাঁর জন্য কিছু কাজ করার ছিল । খ্রীষ্ট শপৌলের কাছে প্রত্যাদেশ দান এবং তাঁকে অভিযুক্ত করার কাজটি করেছিলেন; আর এখন এই অনুশোচনাকারী ব্যক্তিটির প্রয়োজন ছিল তাদের কাছ থেকে জানা যাদেরকে ঈশ্বর তাঁর সত্যের বাক্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য অভিষেক দান করেছেন।AABen 97.1

    শৌল যখন যিহুদার গৃহে প্রার্থনায় ও অনুশোচনায় একাকী সময় কাটাচ্ছিলেন, তখন প্রভু” দ্মমেশকে অননিয় নামে” একজন শিষ্যের কাছে দর্শনে উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে বললেন যে , তার্ষ নগরীর শৌল প্রার্থনা করেছেন এবং তাঁর বিশেষভাবে সাহায্যের প্রয়োজন। “তুমি উঠিয়া সল নামক পথে গিয়া যিহূদার বাটিতে তার্ষ নগরীয় শৌল নামক ব্যক্তির অন্বেষ্ণ কর; প্রভু তাঁকে বললেন, “কেননা দেখ, সে প্রার্থনা করিতেছে; আর সে দেখিয়াছে অননিয় নামে এক ব্যক্তি আসিয়া তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিতেছে, যেন সে দৃষ্টি পায়।”AABen 97.2

    অননিয় প্রভুর এই আদেশের প্রেক্ষিতে কথা না বলে থাকলতে পারলেন না ; কারণ যিরূশালেমের সাধুদের উপরে শৌলের নৃশংস নির্যাতনের কথা সবার মুখে ,মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ করে বলে উঠলেন, “প্রভু, আমি অনেকের কাছে এই ব্যাক্তির বুষ্যে শুনিয়াছি , সে যিরূশালেমে তোমার পবিত্রগণের প্রতি কত উপদ্রব করিয়াছে, এই স্থানেও , যত লোক তোমার নামে ডাকে , সেই সকলকে বন্ধন করিবার ক্ষমতা সে প্রধান যাজকদের নিকট পাইয়াছে।” কিন্তু তাঁর প্রতি আদেশ ছিল অত্যান্ত সুস্পষ্টঃ “তুমি যাও, কেনণা জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল—সন্তানগণের নিকটে আমার নাম বহনার্থে সে আমার মনোনীত পাত্র।”AABen 97.3

    প্রভুর বাধ্যগত হয়ে অননিয় সেই লোকটির খোঁজে বের হয়ে পড়লেন যিনি খুব সম্প্রতি যীশুর নামধারী প্রত্যেকের প্রতি হুমকি বরষণ করছিলেন; এবং সেই অনুশোচনাকারী ব্যক্তিটির মাথায় হাত রেখে তিনি বললেন, “ভ্রাতঃ শৌল, প্রভু, সেই যীশু, যিনি তোমার আসিবার পথে তোমাকে দর্শন দিলেন, তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন তুমি দৃষ্টি পাও রবং আত্মায় পরিপূর্ণ হও।AABen 97.4

    “আর অমনি তাঁহার চক্ষু হইতে যেন আইস পড়িয়া গেল, তিনি দৃষ্টিপ্রাপ্ত হইলেন, এবং উঠিয়া বাপ্তাইজিত হইলেন।”AABen 98.1

    এভাবেই যীশু তাঁর সংগঠিক মণ্ডলীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করলেন এবং শৌলকে জগতে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করলেন। খ্রীষ্টের এখন এমন একটি মণ্ডলী আছে যা পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে এবং তাঁর মধ্য দিয়ে জগতের সমস্ত অনুতাপকারী পাপীদের ফিরিয়ে আনার কাজ সম্পাদন হচ্ছে।AABen 98.2

    অনেকেই মনে করে থাকেন যে, পাপীদের কাছে পরিত্রাণের আলো ও অভিজ্ঞতা দানের ক্ষমতাটি একান্তভাবে খ্রীষ্টের। যীশু প্রত্যেক পাপীর বন্ধু এবং তাঁর অন্তর তাদের দুঃখ আন্দোলিত হয়। স্বর্গে ও পৃথিবীতে তিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী; কিন্তু যাদেরকে তিনি মানুষের আলোকিতকরণ ও পরিত্রাণের জন্য অভিষেক দিয়েছেন তাদেরকে তিনি কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন; তিনি পাপীদেরকে মণ্ডলীতে আসার পথ দেখিয়ে দেন, যা তিনি এই জগতে তার আলো আগমনের উপায় হিসেবে নিরূপিত করে দিয়েছেন।AABen 98.3

    অন্ধত্বপূরণ ভ্রান্তি ও ভুল ধারণার মধ্যে যখন শৌলকে খ্রীষ্ট এই প্রত্যাদেশ দেন , যে খ্রীষ্টকে তিনিই এতদিন তাড়না করছিলেন, তখন তিনি মণ্ডলীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হলেন, যা এই জগতের আলো । এক্ষেত্রে অননিয় খ্রীষ্টের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেছেন এবং সেই সাথে জগতে খ্রীষ্টের সকল পরিচর্যাকারীদের প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। খ্রীষ্টের পক্ষস্বরূপ অননিয় শৌলের চোখ স্পর্শ করেছিলেন, যেন তিনি দৃষ্টি লাভ করেন। তিনি খ্রীষ্টের পক্ষে তাঁর উপরে হস্তার্পণ করেছিলেন যেন শৌল পবিত্র আত্মা লাভ করেন। এর সবাই সাধিত হয়েছিল খ্রীষ্টের নামে ও তাঁরই কর্তৃত্বে খ্রীষ্ট হলেন ঝর্ণা; আর মণ্ডলী তাঁরই স্রোতধারা।AABen 98.4