Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    ৪২ অধ্যায়—সমুদ্রযাত্রা ও জাহাজভঙ্গ

    এই অধ্যায়টা প্রেরিত ২৭ ; ২৮:১—১০ পদেও ওপর ভিত্তি করে লেখা

    অবশেষে পৌল রোমের পথে। লূক লিখেছেন, “যখন স্থির হইল যে, আমরা জাহাজে ইতালিয়ায় যাত্রা করিব,তখন পৌল ও অন্যান্য কয়েক জন বন্দি আগস্তর সৈন্যদলের যুলিয় নামে এক শতপতির হস্তে সমর্পিত হইলেন। পরে আমরা এমন একখান আদ্রামত্তীয় জাহাজে উঠিয়া যাত্রা করিলাম, যে জাহাজ এশিয়ার উপকূলের নানা স্থানে যাইবে। মাকিদনিয়ার থিষলনীকী—নিবাসী আরিষ্টার্খ আমাদের সঙ্গে ছিলেন।”AABen 366.1

    খ্রীষ্টিয় যুগের প্রথম শতাব্দিতে সমুদ্রযাত্রার সঙ্গে বিশেষ কষ্ট ও বিপদ সংযুক্ত ছিল। নাবিকেরা তাদের যাত্রা পথের অধিকাংশই সূর্য ও তারার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত করতো ; আর যখন এগুলো দেখা যেত না, আর ঝড়ের আশঙ্কা থাকতো, তখন জাহাজের মালিকেরা বহির্সমুদ্রে যেতে ভয় পেতো। বছরের কোন এক অংশে, নির্ভয়ে নৌচালনা প্রায় অসম্ভব ছিল।AABen 366.2

    একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ বন্দিরূপে ইটালী যাবার দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রায় পৌলকে এখন কষ্টকর অভিজ্ঞকার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। একটা ব্যাপার তার কষ্টকে অনেকাংশে লাঘব করে দিয়েছিল তা হল, লূক ও আরিষ্টর্খকে তার সঙ্গীরূপে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কলসীয়দের কাছে পত্রে পরে পৌল তাদের “সহবন্দি” বলে উল্লেখ করেছেন (কলসীয় ৪:১০ পদ) ; কিন্তু আরিষ্টার্খ পৌলের বন্দিত্বে সাথে থেকে তার কষ্টের সময় তার সেবা করার জন্য স্বেচ্ছায় তার সঙ্গী হয়েছিলেন।AABen 366.3

    যাত্রা সাফল্যজনক ভাবে আরম্ভ হল। পরের দিন তারা সীদোন বন্দরে নঙ্গর ফেলল্। এখানে যুলিয় শতপতি ,“পৌলের প্রতি সৌজন্য ব্যবহার” করল, আর সেখানে অনেক খ্রীষ্টিয়ান আছে জেনে, “তাঁহাকে বন্ধু—বান্ধবের নিকটে গিয়া প্রাণ জুড়াইবার অনুমতি দিলেন।” এই অনুমতি দুর্ব্বল স্বাস্থ্যের প্রেরিত খুব প্রশংসা করেছিলেন।AABen 366.4

    সীদোন ছেড়ে আসার পরে জাহাজ সম্মুখ বাতাসে পড়ল ; সোজা পথ ছেঢ়ে আসতে বাধ্য হওয়ায়, যাত্রার গতি মন্থর হয়ে পড়ল। লুকিয়া প্রদেশের মুরায় শতপতি ইটালীগামী একটা বড় আলেকসান্দ্রিয় জাহাজ পেয়ে তৎক্ষণাৎ বন্দিদের সেই জাহাজে তুলে দিলেন। কিন্তু বাতাস তখনো বিপরীতমূখী ছিল, আর জাহাজের সামনের দিকে যাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। লূক লিখছেন, “পওে বহু দিবস ধীরে ধীরৈ চলিয়া ক্লীদের সম্মুখে উপস্থিত হইলে, বাতাসে আর অগ্রসর হইতে না পারাতে, আমরা সলমোনীর সম্মুখ দিয়া ক্রীতী দ্বীপের আড়ালে আড়ালে চলিলাম। পওে কষ্টে উপকূলের নিকট দিয়া যাইতে যাইতে ‘সুন্দর পোতাশ্রয়’ নামক স্থানে উপস্থিত হইলাম।”AABen 367.1

    সুন্দর পোতাশ্রয়ে তারা কয়েক দিন অনুকুল বাতাসের অপেক্ষায় থাকতে বাধ্য হল। শীত খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়ছিল ;” সমুদ্রযাত্রা এই সময় বিপজ্জনক ; আর এ বছরের জন্য সমুদ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে বলে, জাহাজের কর্মকর্তারা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যে, তারা এই সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারবেন কি—না। এখন এক মাত্র প্রশ্নব বিবেচনা করার প্রয়োজন ছিল তা হল তারা কি সুন্দর পোতাশ্রয়ে থাকবে না শীতকাল যাপনের জন্য অন্য কোন জ্ায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।AABen 367.2

    প্রশ্নবটা আন্তরিকভাবে আলোচনা করা হল, আর অবশেষে শতপতি তা পৌলের কাছে পেশ করলেন, কারণ পৌল নাবিক ও সৈনিকদের সম্মান অর্জ্জন করেছিলেন। প্রেরিত ইতঃস্তত না করেই যেখানে তারা আছেন সেখানেই থাকার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, “আমি দেখিতেছি যে, এই যাত্রায় অনিষ্ট ও অনেক ক্ষতি হইবে, তাহা কেবল মালের ও জাহাজের, এমন নয়, আমাদের প্রাণেরও হইবে।” কিন্তু ” শতপতি পৌলের কথা অপেক্ষা প্রধান নাবিকের ও জাহাজের কর্ত্তার কথায় অধিক কর্ণপাত করিলেন,” অধিকাংশ নাবিক ও যাত্রীরা এই পরামর্শ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিল না। কারণ যে পোতাশ্রয়ে তারা নঙ্গর করেছিলেন সেখানে “শীতকাল যাপনের সুবিধা না হওয়াতে অধিকাংশ লোক সেখান হইতে যাত্রা করিবার পরামর্শ করিল, যেন কোন প্রকারে ফৈনীকায় পঁহুছিয়া সেখানে শীতকাল যাপন করিতে পারে। সেই স্থান ক্রীতীর এক পোতাশ্রয়, তাহা উত্তরপূর্বব ও দক্ষিণপূর্বব অভিমুখীন।”AABen 367.3

    শতপতি অধিকাংশর মতামত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই ভাবে, “যখন দক্ষিণ বায়ু মন্দ মন্দ বহিতে লাগিল,” তখন তারা সুন্দর পোতাশ্রয় ছেড়ে এল এই আশায় যে তারা তাড়াতাড়ি তাদের কাঙ্খিত পোতাশ্রয়ে পৌঁছাতে পারবে। “কিন্তু অল্প কাল পরে কূল হইতে . . . অতি প্রচন্ড এক বায়ু আঘ্তা করিতে লাগিল ;” “তখন জাহাজ ঝড়ের মধ্যে পড়িয়া বায়ুর প্রতিরোধ করিতে না পারাতে আমরা তাহা ভাসিয়া যাইতে দিলাম।”AABen 368.1

    ঝড়ে তাড়িত হয়ে, জাহাজটা ক্লৌদা (কৌদা) নামে একটা ছোট দ্বীপের নিকটবর্তী হল, আড়ালে চলতে চলতে মাল্লারা আরও বিপদের জন্য প্রস্তুত হতে লাগল। জীবনতরী, জাহাজ ডুবে গেলে তাদের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন, পাশে বাঁধা ছিল যা যে কোনো মূহূর্তে আঘাতের ফলে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। জাহাজের ওপর নৌকাটাকে তুলে নেওয়া তাদের প্রথম কাজ ছিল। ঝড়ের মধ্যে টিকে থাকবার জন্য জাহাজটাকে শক্ত করবার সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করা হল। ছোট দ্বীপটার আড়াল তাদের খুব বেশীক্ষণ টিকলো না, খুব তাড়াতাড়ি তারা ঝড়ের পূর্ণ তান্ডবের সম্মুখীন হল।AABen 368.2

    সারা রাত ব্যাপী ঝড়ের তান্ডব চলল, সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করা সত্তে¡ও জাহাজ ফুটো হয়ে গেল। “পর দিন তাহারা মাল জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল।” আবার রাত হলো, কিন্তু বাতাস থামলো না। পাল ছেড়া, মাস্তুল ভাঙ্গা, ঝড়ে বিদ্ধস্ত জাহাজ প্রবল বাতাসের গর্জ্জনে এদিক ওদিক ভেসে যেতে থাকলো। ঝড়ের আঘাতে জাহাজ ঘুর্ণিপাকে পড়ে এমন থরথর করে কাঁপছিল যে, প্রতি মূহূর্তে মনে হচ্ছিল জাহাজের তক্তাগুলো বুঝি খুলে পড়ে যাবে। আস্তে আস্তে জাহাজের ফুটো বড় হতে থাকলো, যাত্রী ও নাবিকেরা অনবরত জল ফেলতে থাকলো। জাহাজে যারা ছিলো তাদের কেউই এক মূহূর্তের জন্য বিশ্রাম পায়নি। লূক লিখেছেন, “তৃতীয় দিবসে তাহারা স্বহস্তে জাহাজের সরঞ্জাম ফেলিয়া দিল। আর অনেক দিন পর্য্যন্ত সুর্য্য কি তারা প্রকাশ না পাওয়াতে, এবং ভারী ঝড়ে উৎপাত করাতে, আমাদের রক্ষা পাইবার সমস্ত আশা ক্রমে দূরীভূত হইল।”AABen 368.3

    চোদ্দ দিন পর্যন্ত তারা সূর্য বিহীন ও তারা বিহীন আকাশের নিচে ভেসে বেড়ালেন। প্রেরিত নিজে যদিও শারীরিক ভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন, এই কাল রাতে তিনি আশার বাণী দিয়েছেন, যে কোন জরুরী অবস্থায় তাদেও জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাসে অসীম শক্তির হাত ধরে ছিলেন, আর তার হৃদয় ঈশ্বরের ওপর স্থির ছিল। তার নিজের জন্য কোন ভয় ছিল না ; তিনি জানতেন যে, রোমে খ্রীষ্টের সত্যের সাক্ষ্য বহন করবার জন্য ঈশ্বর তাকে সংরক্ষণ করবেন। কিন্তু তার চারিপাশের পাপী, অবদমিত, মৃত্যুর জন্য অপ্রস্তুত, দীনহীন আত্মাগুলোর জন্য তার হৃদয় ব্যথিত হয়ে উঠেছিল। তাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যখন আন্তরিক ভাবে ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ করছিলেন, তখন তার কাছে প্রকাশিত হয়েছিল যে, তার প্রার্থনা গ্রাহ্য করা হয়েছে।AABen 368.4

    ঝড়ের কিছুটা প্রসমিত হবার সুযোগ নিয়ে, পৌল জাহাজের পাটাতনের ওপর দা্ড়াঁলেন, তিনি উচ্চৈস্বরে বললেন, “হে মহাশয়েরা, আমার কথা গ্রাহ্য করিয়া ক্রীতী হইতে জাহাজ না ছাড়া, এই অনিষ্ট ও ক্ষতি হইতে না দেওয়া, আপনাদের উচিত ছিল। কিন্তু এক্ষণে আমার পরামর্শ এই, আপনারা সাহস করুন, কেননা আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না , কেবল জাহাজের হইবে। কারণ আমি যে ঈশ্বরের লোক এবং যাঁহার সেবা করি, তাঁহার এক দূত গত রাত্রিতে আমার নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, পৌল, ভয় করিও না, কৈসরের সম্মুখে তোমাকে দাঁড়াইতে হইবে। আর দেখ, যাহারা তোমার সঙ্গে যাইতেছে, ঈশ্বর তাহাদের সকলকেই তোমায় দান করিয়াছেন। অতএব মহাশয়েরা সাহস করুন, কেননা ঈশ্বরে আমার এমন বিশ্বাস আছে যে, আমার নিকটে যেরূপ উক্ত হইয়াছে, সেইরূপই ঘটিবে। কিন্তু কোন দ্বীপে গিয়া আমাদিগকে পড়িতে হইবে।”AABen 369.1

    এই কথায়, তাদের আশা উজ্জিবিত হলো। যাত্রী ও নাবিকেরা তাদের ঔদাসীন্যভাব কাটিয়ে উঠলো। এখনো অনেক কিচু করা বাকি ছিল, আর ধ্বঙস এড়াবার জন্য তাদের ক্ষমতার সব প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।AABen 369.2

    প্রচন্ড কাল ঢেউর আঘাতে এদিক ওদিক ভেসে বেড়াবার চোদ্দতম রাত্রের “প্রায় মধ্যরাত্রে” নাবিকেরা ঢেউ ভাঙ্গার শব্দে “অনুমান করিতে লাগিল যে, তাহারা কোন দেশের নিকটবর্ত্তী হইতেছে। আর তাতারা জল মাপিয়া বিশ বাঁউ (বাঁউ=৬ফুট) জল পাইল ; একটু পরে পুনর্ববার জল মাপিয়া পনর বাঁউ পাইল। আর পাছে,” লূক লিখেছেন, “আমরা শৈলময় স্থানে গিয়া পড়ি, এই আশঙ্কায় তাহারা জাহাজের পশ্চাদ্ভাগ হইতে চারিটি নঙ্গর ফেলিয়া দিবসের আকাঙ্ক্ষায় থাকিল।” সকাল হলে পরে ঝোড়ো তীরের সীমারেখা অস্পষ্ট দেখা গেল, কিন্তু স্থলের বৈশিষ্টপূর্ণ কোনো পরিচিত চিহ্ন দেখা গেল না। দৃশ্য এত অস্পষ্ট ছিল যে পৌত্তলিক নাবিকেরা সব সাহস হারিয়ে , “জাহাজ হইতে পলায়ন করিবার চেষ্টা করিতেছিল,” “আর গরহীর কিঞ্চিৎ অগ্রে লঙ্গর ফেলিবার ছল করিয়া নৌকাখানি সমুদ্রে নামাইয়া দিয়াছিল।” পৌল তাদের অসৎ মতলবের কথা বুঝতে পেরে শতপতিকে ও সেনাদের বললেন, “উহারা জাহাজে না থাকিলে আপনারা রক্ষা পাইতে পারিবেন না।” সেনারা তঃক্ষণাৎ, “নৌকাখানির রজ্জু কাটিয়া তাহা” সমুদ্রে “পড়িতে দিল।”AABen 369.3

    আরো জটিলতম সময় তাদের সামনে অপেক্ষা করছিল। আবার প্রেরিত উৎসাহের কথা বললেন, নাবিক ও যাত্রীদের সবাইকে অনুরোধ করে বললেন, “অদ্য চৌদ্দ দিন হইল, আপনারা অপেক্ষা করিয়া আছেন, কিছু খাদ্য গ্রহণ না করিয়া অনাহারে কালক্ষেপ করিতেছেন। অতএব বিনতি করি, আহার করুন, কেননা তাহা আপনাদের রক্ষার জন্য উপকারী হইবে ; কারণ আপনাদের কাহারও মস্তকের এক গাছি কেশও নষ্ট হইবে না।”AABen 370.1

    “ইহা বলিয়া পৌল রুটি লইয়া সকলের সাক্ষাতে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিলেন, পরে তাহা ভাঙ্গিয়া ভোজন করিতে আরম্ভ করিলেন।” তখন সেই ক্লান্ত ও নিরুৎসাহিত দুশ পচাত্তর জনের দলটা, যারা পৌল ছাড়া সবাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল, প্রেরিতের সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ করতে অংশী হল। “সকলে খাদ্যে তৃপ্ত হইলে পর তাহারা সমস্ত গম সমুদ্রে ফেলিয়া দিয়া জাহাজের ভার লাঘব করিল।”AABen 370.2

    দিনের আলো পূর্ণভাবে এসে পড়ল, তারা এমন কোন চিহ্ন দেখতে পেল না যা দিয়ে স্থানটাকে চিনতে পারা যায়। যা হোক, তারা তীর বিশিষ্ট একটা খাঁড়ি আবিস্কার করল, আর তারা স্থির করলো, সেই তীরের ওপর জাহাজ উঠিয়ে দেবে। তারা নঙ্গর কেটে সমুদ্রে ফেলে দিল, হালের বাঁধন খুলে দিল, বাতাসে সামনের পাল তুলে বালুকাময় তীরের দিকে চলতে থাকলো। আর দুদিকে সমুদ্রাহত কোন জায়গায় এসে পড়ায় জাহাজ চরে আটকে গেল ; তাতে জাহাজের গলই আটকে গিয়ে অচল হয়ে গেল, কিন্তু ঢেউর আগাতে পেছনের দিক ভেঙ্গে যেতে লাগল।AABen 370.3

    পৌল ও অন্যান্য বন্দিরা জাহাজভঙ্গ থেকেও বেশী ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হল। সেনারা দেখল যে পারে ওঠার চেষ্টার সময় বন্দিদের নিয়ন্ত্রনে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ যে যেভাবে পারে বাঁচার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবুও বন্দিদের কেউ হারিয়ে গেলে, তাদের দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের প্রাণ যাবে। তাই সেনারা সব বন্দিদের হত্যা করবার পরিকল্পনা করল। রোমীয় আইন এই নিষ্ঠুর পদ্ধতি অনুমোদন করে, আর পরিকল্পনাটা তৎক্ষণাৎ কার্যকর করতে হতো, কিন্তু তার মত সবাই—ই গভীর দায়িত্বের মধ্যে ছিল। শতপতি যুলিয় জানতেন যে পৌল জাহাজের সব কজনের জীবন রক্ষার জন্য কাজ করেছেন, তা ছাড়া বুঝতে পেরেছিলেন যে, সদাপ্রভু তার সহবর্তী, তাই তার কোনো ক্ষতি করতে ভয় পেলেন। তাই তিনি “এই আজ্ঞা দিলেন, যাহারা সাঁতার জানে, তাহারা অগ্রে ঝাঁপ দিয়া ডাঙ্গায় উঠূক ; আর অবশিষ্ট সকলে তক্তা কিম্বা জাহাজের যাহা পায়, তাহা ধরিয়া ডাঙ্গায় ্উঠুক। এইরূপে সকলে ডাঙ্গায় উঠিয়া রক্ষা পাইল।” যখন নাম ডাকা হল, তখন একজনও অনুপস্থিত ছিল না।AABen 370.4

    মিলিতার বর্ববরেরা ভগড়ব জাহাজের নাবিকদের প্রতি অসাধারণ সৌজন্য প্রকাশ করল। লূক লিখেছেন, “উপস্থিত বৃষ্টি ও শীত প্রযুক্ত আগুন জ্বালিয়া আমাদের সকলকে অভ্যর্থনা করিল।” যারা অন্যদের আরামের জন্য কাজ করছিল পৌল তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি “এক বোঝা কাষ্ঠ কুড়াইয়া ঐ আগুনের উপরে ফেলিয়া দিলে আগুনের উত্তাপে একটা কালসর্প বাহির হইয়া তাঁহার হাতে লাগিয়া রহিল।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন ভয়ে বিহবল হয়ে পৌলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ দেখে বুঝল যে তিনি একজন বন্দি, তাই তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, “এই ব্যক্তি নিশ্চয খুনি, সমুদ্র হইতে রক্ষা পাইলেও ধর্ম্ম ইহাকে বাঁচিতে দিলেন না। কিন্তু পৌল হাত ঝেড়ে জন্তুটাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলেন আর তার কোনো ক্ষতি হল না। জন্তুটাকে বিষাক্ত জেনে, তারা অপেক্ষা করে ছিল যে তিনি যে কোনো মূহূর্তে ভীষণ ব্যথায় পড়ে যাবেন। “কিন্তু অনেক ক্ষণ পর্য্যন্ত অপেক্ষায় থাকিলে পর, তাঁহার প্রতি কোন বিষম ব্যাপার গটিতেছে না দেখিয়া, তাহারা অন্য বিচার করিয়া বলিতে লাগিল, উনি দেবতা।”AABen 371.1

    মিলিতায় তিন মাস ব্যাপী জাহাজে অবস্থিত দল থাকার সময় , পৌল ও তার সহকর্মীরা সুসমাচার প্রচার সুযোগের সদ্ববহার । সদাপ্রভু তাদের মধ্য দিয়ে অসাধারণ ভাবে কাজ করেছিলেন। পৌলের কারণে ভগড়ব জাহাজের সব যাত্রীরা অত্যন্ত দয়ার সঙ্গে আপ্যায়িত হয়েছিল, তাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করা হয়েছিল, আর চলে আসার সময় তাদের যাত্রা পথে প্রয়োজনীয় সব কিছু প্রচুর পরিমানে দিয়েছিল। তাদে সেখানে থাকাকালিন সময়ের প্রধান প্রধান ঘটনা লূক এইভাবে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন:AABen 371.2

    “ঐ স্থানের নিকটে সেই দ্বীপের পুবিয নামক প্রধানের ভূসম্পত্তি ছিল ; তিনি আমাদিগকে সাদরে গ্রহণ করিয়া সৌজন্য সহকারে তিন দিন পর্য্যন্ত আমাদের আতিথ্য করিলেন। তৎকালে পুবিয়ের পিতা জ্বর ও আমাশয় রোগে পীড়িত হইয়া শয্যাগত ছিলেন। আর পৌল ভিতরে তাঁহার নিকটে গিয়া প্রার্থনাপূর্ববক তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাঁহাকে সুস্থ করিলেন। এই ঘটনা হইলে পর অন্য যত রোগী ঐ দ্বীপে ছিল, তাহারা আসিয়া সুস্থ হইল। আর তাহারা বিস্তর সমাদরে আমাদিগকে সমাদর করিল, এবং আমাদের প্রস্থান সময়ে নানাপ্রকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী জাহাজে আনিয়া দিল।”AABen 372.1