Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

প্রেরিতগণের কার্য-বিবরণ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ৫৭ অধ্যায়—প্রকাশিত বাক্য

    পৌরতিক যুগে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা আন্তরিকতায় এবং প্রবল উৎসাহে পূর্ণ ছিল। তারা তাদের প্রভুর জন্য এত অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করেছিলেন যে, তীব্র বিরোধীতা সত্বেও প্রভুর রাজ্যের সুসমাচার জগতের সকল স্থানের লোকদের কাছে ঘোষিত হয়েছিল। ঐ সময় যীশুর অনুসারীদের মধ্য দিয়ে যে উৎসাহ ও উদ্দিপনা প্রকাশিত হয়েছিল তা সকল যুগের উৎসাহিদের জন্য অনুপ্রেরনার কলমে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ইফিসীয় মন্ডলী; যা প্রভু যীশু ই প্রেরিতীক যুগের সকল মন্ডলীর প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করেছেন, তাদের বিশ্বস্ত ও প্রকৃত সাক্ষী সম্পর্কে ঘোষনা করা হয়েছে: “আমি জানি তোমার কার্য সকল এবং তোমার পরিশ্রম ও ধৈর্য; আর আমি জানি যে, তুমি দুষ্টদিগকে সহ্য করিতে পার না, এবং আপনাদিগকে প্রেরিত বলিলেও যাহারা প্রেরিত নয়, তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছ ও মিথ্যাবাদী নিশ্চয় করিয়াছ; এবং তোমার ধৈর্য আছে, আর তুমি আমার নামের জন্য ভার বহন করিয়াছ, ক্লান্ত হও নাই।” প্রকাশিত বাক্য ২:২,৩।AABen 488.1

    ইফিষীয় মন্ডলীতে প্রথম দিকে শিশুর মত সরলতা এবং উৎসাহ উদ্দিপনা পরিলক্ষিত হয়েছিল। বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্য আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করার জন্য চেষ্টা করত এবং তাদের জীবনে খ্রীষ্টের প্রতি আন্তরীক এবং অকপট ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছিল। তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে খুব আনন্দ পেত, কারণ তারা তাদের অন্তরে ত্রানকর্তার জীবন্ত উপস্থিতি অনুভব করত। তাদের উদ্ধারকর্তার প্রতি ভালবাসায় তারা পূর্ণ ছিল, তাদের চুরান্ত লক্ষ্য ছিল প্রভুর জন্য আত্মা জয় করা। তারা খ্রীষ্টের অনুগ্রহের মহামূল্য ধনের জন্য চিন্তা করত না। তারা তাদের আহব্বানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিল; এবং “জগতের উপর শান্তি, সকল মানুষের প্রতি মঙ্গল ইচ্ছা”, এই বাক্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পৃথিবীর দূরবর্তী এলাকায় পরিত্রানের আনন্দময় সংবাদ বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আকাঙ্খিত ছিল। আর পৃথিবীর লাকদের তাদের সম্পর্কে এই ধারণা জন্মেছিল যে, তারা যীশুর অনুসারী। পাপী মানুষ অনুতাপ করে, ক্ষমা পেয়ে পরিস্কার হয়ে এবং পবিত্র হয়ে তার পুত্র প্রভু যীশুর মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হয়।AABen 488.2

    মন্ডলীর সদস্যরা চিন্তায় ও কাজে ঐক্যবদ্ধ ছিল। খ্রীষ্টের প্রতি ভালবাসা ছির সোনার শিকল যা পরস্পরকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। তারা প্রভুকে আরো যথার্থভাবে জানার জন্য ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল এবং তাদের জীবনে খ্রীষ্টের আনন্দ এবং শান্তি প্রকাশ পেয়েছিল। তারা অনাথ এবং বিধবাদের দুঃখ দুর্দশায় তাদের দেখাশুনা করত এবং তারা জগত থেকে নিষ্ফলক ভাবে রক্ষা করত, তারা উপলব্ধি করেছিল যে, যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হবে এবং তাদের ত্রানকর্তাকে অস্বীকার করা হবে।AABen 489.1

    প্রতিটি শহরে তাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষের জীবন পরিবর্তীত হয়েছিল, তারা তাদের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বুঝতে পেরেছিল যে, তারা যা গ্রহণ করছে, সেই অপরিমেয় ধনের কথা অবশ্যই লোকদের কাছে বলতে হবে। যে আলো তাদের অন্তরকে আলোকিত করেছেতা অন্যের উপরে যেন আলো প্রদান করে এজন্য তারা অবিশ্রান্তভাবে চেষ্টা করে যেত। অবিশ্বাসীর বাহুল্য খ্রীষ্টিয় আশা সম্পর্কে তাদের জ্ঞাত করা আবশ্যক ছিল। যারা ব্যাক্তিগত ইচ্ছা পরিতার্থ করতে গিয়ে ভুল করেছিল, তারা সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, এবং ঈশ্বরকে যারা ভালবাসত তাদের চেয়ে যারা আনন্দ আমোদ প্রমোদকে আরো বেশি ভালবাসতো তাদের কাছে প্রভু যীশুর সত্য প্রকাশের আবশ্যক ছিল। আর ইফিষীয় মন্ডলী সেই কাজ করেছিল।AABen 489.2

    কিন্তু পরবর্তী সময় বিশ্বাসীদের উৎসাহ হ্রাস পেতে শুরু করল এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার বৃদ্ধি কমে যেতে লাগল। মন্ডলীর মধ্যে শীতলতার উদ্রেক হল। যে সত্য তারা গ্রহণ করেছিল, সেই অপূর্ব পথের বিষয় তারা ভুলে গিয়েছিল। একে একে বৃদ্ধ প্রধান নেতারা পদ থেকে স্থলিত হলেন। কোন কোন তরুন পরিচর্যাকারীরা, যারা এই সকল পথ প্রদর্শকের বোঝা বহন করার অংশী হয়েছিল এবং এই ভাবে প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছিল, তারা সত্যকে পূনঃ পূনঃ ব্যাক্ত করতে ক্লান্ত বোধ করতে লাগল। তারা তাদের কিছু অদ্ভুদ এবং চমকপ্রদ ইচ্ছা চরিতার্থ করতে গিয়ে তারা মতোবাদের নতুন পরিকল্পনা প্রবর্তন করতে উদ্যত হল, যা অনেকের মনে এটি সুখকর বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু তা সুসমাচারের মূল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তাদের আত্মা বিশ্বাস এবং আত্মিক অন্ধত্বের জন্য তারা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, এইসব কূটতর্ক অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক প্রশেড়বর উৎপত্তির কারণ হতে পারে। আর এভাবে অনেক বিভ্রান্তি এবং অবিশ্বাসের সৃষ্টি হতে পারে।AABen 489.3

    এই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদ প্রবর্তন করা হয়েছিল, এতে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছিল এবং অনেকের যীশুর প্রতি যে লক্ষ্য ছিল তা থেকে তাদের লক্ষ্য ছিল তা থেকে তাদের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল, যিনি ছিলেন তাদের বিশ্বাসের ¯্রষ্টা এবং সমাপ্তকারী। যে সময় সুসমাচার প্রচার করে ব্যয় করা যেত সেই সময় দখল করে নিয়েছিল মতবাদের গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা এবং মানুষের উদ্ভাবিত গল্প কাহিনী নিয়ে চিন্তা করা। সত্যের যে বানী বিশ্বস্ততার সঙ্গে লোকদের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে তাদের দোষী করেছিল এবং পরিবর্তীত করেছিল তা অসতর্কভাবে ত্যাগ করেছিল। ঈশ্বর ভক্তি অতি দ্রুত ¤øান হয়ে গেলে এবং যারা খ্রীষ্টের অনুসারী বলে দাবী করত তাদের উপর শয়তান প্রভুত্ব করার জন্য তৎপর হয়েছিল।AABen 490.1

    মন্ডলীর ইতিহাসে যখন সংকটপূর্ণ সময় চলছিল তখন যোহন নির্বাসিত হওয়ার দন্ডাজ্ঞা পেয়েছিলেন। বর্তমানের মত মন্ডলীর মাধ্যমে তার বাণীর কখনও প্রয়োজন হয় নি। পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত পূর্বের তার সকল সঙ্গীরা সাক্ষ্যমরের মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করেছিলেন। অবশিষ্ট বিশ্বাসীরা তীব্র বিরোধীতার সম্মুখিন হয়েছিলেন। সমস্ত বাহ্যিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয়েছিল যে, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যখন খ্রীষ্টের মন্ডল ীর শত্রুরা বিজয়ের ধ্বনি দেবে।AABen 490.2

    কিন্তু প্রভুর অদৃশ্য হাত অন্ধকারের মধ্যে আন্দোলিত হচ্ছিল। ঈশ্বরের যত্নশীলতায় যোহনকে সেই স্থানে রাখা হয়েছিল যেখানে মন্ডলীকে আলো প্রদান করার জন্য ঈশ্বর তাকে তার বিস্ময়কর প্রত্যাদেশ দিতে পেরেছিলেন। যোহনের নির্বাসনের ফলে সত্যের শত্রুরা ভেবেছিল যে তারা ঈশ্বরের বিশ্বস্ত সাক্ষীর মুখ চির দিনের জন্য বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন; কিন্তু পাট্ম দ্বীপে প্রেরিত ঈশ্বরের কাছ থেকে বাণী পেয়েছিলেন, যা যুগের শেষ পর্যন্ত মন্ডলীকে অব্যাহতভাবে শকিন্তশালী করার জন্য উৎসাহিত করেছিল। যদিও তাদের অব্যয় কাজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত করা যায় নি, কিন্তু যারা নির্বাসিত হয়েছিল যোহন স্বর্গীয় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ঈশ্বরের সাহায্যকারী হাতে পরিনত হয়েছিলেন এবং নিভে যাওয়া আলো আবার যেন জ্বলে উঠে সত্যকে যেন স্পষ্ট দেখতে পারা যায় এজন্য জোরালভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।AABen 490.3

    সাব্বাথের দিনে গৌরবের প্রভু নির্বাসিত যোহনের কাছে প্রকাশিত হলেন। যোহন যিহুদার গ্রামে ও শহরে লোকদের কাছে প্রকাশিত হলেন। যোহন যিহুদার গ্রামে ও শহরে লোকদের কাছে প্রচার করার সময় যে ভাবে সাব্বাত পালন করেছিলেন ঠিক সেই ভাবে তিনি পাট্ম দ্বীপেও সাব্বাত পবিত্রভাবে পালন করেছিলেন। তার মহামূল্য প্রতিজ্ঞা অনুসারে সেই দিন সম্পর্কে যা বলেছিলেন তা দৃঢ়ভাবে বললেন যে, “আমি প্রভুর দিনে আত্মবিষ্ট হইলাম,” যোহন লিখেছেন, “আমি প্রভুর দিনে আত্মাবিষ্ট হইলাম, এবং আমার পশ্চাৎ ত‚রীধ্বনিবৎ এক মহারব শুনিলাম। কেহ কহিলেন, তুমি যাহা দেখিতেছ, তাহা পুস্তকে লিখ, এবং ইফিষ, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দি, ফিলাদিল্ফিয়া ও লায়দিকেয়া— এই সপ্ত মন্ডলীর নিকটে পাঠাইয়া দেও। তাহাতে আমার প্রতি যাঁহার বাণী হইতেছিল, তাঁহাকে দেখিবার জন্য আমি মুখ ফিরাইলাম; মুখ ফিরাইয়া দেখিলাম, সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ, ও সেই সকল দীপবৃক্ষের মধ্যে ‘‘মনুষ্যপুত্রের ন্যায় এক ব্যক্তি”; তিনি পাদ পর্যন্ত পরিচ্ছদে আচ্ছনড়ব।” প্রকাশিত বাক্য ১:১০—১৩।AABen 491.1

    এই প্রিয় শিষ্য অনুগ্রহের প্রাচুর্যে পূর্ণ ছিলেন। তিনি গেৎশিমনী বাগানে তাঁর প্রভুকে দেখেছিলেন; আগোনীর রক্তপাতের সঙ্গে তাঁর মুখকে চিহ্নিত করেছিলেন, “তার মুখ মানব সন্তানগন অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত।” যিশাইয় ৫২:১৪। রোমীয় সৈন্যদের হাতে বন্দী অবস্থায় তিনি তাকে দেখেছেন, তিনি তাকে পুরানো রক্তবর্ণ পোষাক পরিহিত অবস্থায় মাথায় কাঁটার মুকট পরা অবস্থায় দেখেছেন। তিনি তাঁকে কেলভেরীতে ক্রুশোরোপিত অবস্থায় দেখেছেন, তিনি দেখেছের কিভাবে তাকে ঠাট্টা বিদ্রæপ করা হয়েছে এবং তার উদ্দেশ্যে কটু কথা বলা হয়েছে। তখন যোহন আরো একবার তার প্রভুকে দেখবার সুযোগ লাভ করলেন। কিন্তু তার প্রকাশের কত পরিবর্তন হয়েছে। তিনি মানুষের দ্বারা অবগত এবং অপমানিত সেই খ্রীষ্ট যীশু নন। তিনি এখন স্বর্গীয় অতি উজ্জ্বল পোষাক পরিহিত রয়েছেন। “তাঁহার মস্তক ও কেশ”, “সুক্লবর্ণ মেষলোমের ন্যায়, হিমের ন্যায় সুক্লবর্ণ, এবং তাহার চক্ষু অগ্নিশিখার তুল্য, এবং তাহার চরণ অগ্নিকুন্ডে পরিস্কৃত সুপিত্তলের তুল্য”, প্রকাশিত বাক্য ১:১৪, ১৫, ১৭ পদ। তার কন্ঠস্বর ছিল বহুজলের শব্দের মত। তার মুখমন্ডল ছিল তেজোদ্বীপ্ত সূর্যের মত। তার ডান হাতে রয়েছে শক্ত তারা এবং তার মুখ থেকে নির্গত হচ্ছে তীক্ষ্ণ দ্বিধার তরবারী, তার বাক্যের ক্ষমতার প্রতীক। পাট্ম পুনরুত্থিত প্রভুর মহিমা দ্বারা আলোয় উদ্ভাসিত হল। “তাহাকে দেখিবা মাত্র”, যোহন লিখেছিলেন, “আমি মৃতবৎ হইয়া তাহার চরণে পরিলাম। তখন তিনি আমার গাত্রে দক্ষিন হস্ত দিয়া কহিলেন, ভয় করিও না।” ১৭ পদ।AABen 491.2

    যোহন তার মহিমান্বিত প্রভুর উপস্থিতিতে জীবনী শক্তি লাভ করলেন। আর তখন পূর্বের তার বিষ্ময়কর দর্শন স্বর্গের মহিমাতে প্রকাশ করল। তিনি ঈশ্বরের সিংহাসন দেখার, জগতের সংঘাতময় অবস্থার বাইরে তাকাবার, পাপ থেকে মুক্ত হওয়া সাদা পোষাক পরিহিত জনতা দেখার, স্বর্গ দূতগনের গান শোনার এবং সেই সেই সকল লোকদের বিজয় দৃপ্ত গান শোনার অনুমতি লাভ করেছিলেন। যারা মেষসাবকের রক্তে ধৌত হয়েছে এবং তাদের সাক্ষ্যের দ্বারা বিজল লাভ করেছে। প্রকাশিত বাক্যে ঈশ্বরের লোকদের অভিজ্ঞতায় রোমাঞ্চকর আগ্রহে বিশ্বের পরে উন্মুক্ত বিশ্ব দেওয়া হয়েছে এবং খুব কাছাকাছি সময়ের মন্ডলীর ইতিহাসের ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে। আকার এবং প্রতীকের মধ্যে যোহনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, এটি তার সময়কার যে সকল ঈশ্বরের লোক বেঁচে ছিলেন এবং ভবিষ্যত যুগের লোকদের সামনে বিপদ এবং বিরোধের বিষয় বুদ্ধিপূর্বেক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।AABen 492.1

    এই প্রকাশিত বাক্য সর্বত্র খ্রীষ্টিয়ানদের উদ্দেশ্যে মন্ডলীর দিক নির্দেশনা এবং সান্ত¦না স্বরূপ প্রদান করা হয়েছিল। তথাপি ধর্মীয় শিক্ষকরা ঘোষনা করেছেন যে, এটি মুদ্রাঙ্কিত পুস্তক এবং এই রহস্য ব্যাক্ত করা আদৌ সম্ভব হবে না। এই কারণে অনেকে এই ভবিষ্যত সম্পর্কিত বিবরণ থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এর নিরুপিত সময়কে অস্বীকার করে এবং রহস্য নিয়ে অধ্যায়ন করে না। কিন্তু ঈশ্বর চান না যে তার লোকেরা এই পুস্তক সম্পর্কে এই রকম ধারণা পোষন করে। এটি “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাহাকে দান করেছিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগনকে দেখাইয়া দেন।” “ধন্য, যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে,” প্রভু ঘোষনা করেছেন, “ও যাহারা শ্রবন করে এবং ইহাতে লিখিত সকল কথা পালন করে, কেননা কাল সনিড়বকট।” ১,৩ পদ। “যাহারা এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল শুনে, তাহাদের প্রত্যেক জনের কাছে আমি সাক্ষ্য দিয়া বলিতেছি, যদি কেহ ইহার সহিত আর কিছু যোগ করে, তবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিতে এই গ্রন্থে লিখিত আঘাত সকল যোগ করিবেন;আর যদি কেহ এই ভাববাণী—গ্রন্থের বচন হইতে কিছু হরণ করে, তবে ঈশ্বর এই গ্রন্থে লিখিত জীবন—বৃক্ষ হইতে ও পবিত্র নগর হইতে তাহার অংশ হরণ করিবেন।যিনি এই সকল কথার সাক্ষ্য দেন, তিনি কহিতেছেন, সত্য, আমি শীঘ্র আসিতেছি।” প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮—২০।AABen 492.2

    প্রকাশিত বাক্যে ঈশ্বরের নিগুঢ় বিষয় সকল চিত্রিত করা হয়েছে। অনুপ্রণীত হওয়ার পৃষ্ঠা সমূহের সর্ব প্রথমে এর নামকরণ করা হয়েছে, “প্রকাশিত বাক্য”, এটি এই মতামতের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করে যে এটি একটি মুদ্রাঙ্কিত পুস্তক। প্রকাশিত বাক্যে কিছু কিছু বিষয় প্রকাশ করেছে। প্রভু স্বয়ং তার দাসের কাছে এই পুস্তকের সনিড়ববেশিত রহস্যসমূহ প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এই ইচ্ছা পোষন করেছেন যে তারা সবকিছু অধ্যায়ন করার জন্য খুলে দেয়। যারা এই জগতে শেষ সময়ে বসবাস করেছে তাদের উদ্দেশ্যে এই সত্য উল্লেখ করা হয়েছে, একইভাবে যারা যোহনের সময়ে বসবাস করছিলেন তাদের উদ্দেশ্যেও এই সত্য নির্দেশ করে। এই ভবিষ্যদ্বানীর মধ্যে কোন কোন ঘটনার দৃশ্যাবলী ছিল অতীতের কোন ঘটনা এখন ঘটেছে ; কোন কোন ঘটনা অন্ধকারের শক্তি এবং স্বর্গের রাজার মধ্যে মহা সংঘর্ষের খুব কাছের দৃষ্যের কাছে নিয়ে যায়, এবং কোন কোন ঘটনা নতুন পৃথিবীকে মুক্তিপ্রাপ্ত লোকদের বিজয় উল্লাস এবং আনন্দকে প্রকাশ করেছে।AABen 493.1

    কেউ কেউ এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করে না, কারণ তারা প্রকাশিত বাক্যের মধ্যে প্রতিটি প্রতীকের অর্থ ব্যাক্ত করতে সমর্থ নয়, তারা মনে করে এই পুস্তকের মধ্যকার সত্যের অর্থ জানার জন্য অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টা অনাবশ্যক। যিনি যোহনের কাছে এই সকল নিগুঢ় বিষয় প্রকাশ করেছেন তিনি স্বর্গীয় বিষয়ের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য অধ্যাবসায়শীল অনুসন্ধানকারীর কাছে এটি প্রদান করেছেন। সত্য বহন করার জন্য যাদের হৃদয় উন্মুক্ত রয়েছে তারা এই শিক্ষা বুঝতে সমর্থ হবে, এবং যারা, “এই ভাববাণীর বাক্য সকল শ্রবণ করে এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে,” তাদের যে আশির্বাদ দেবার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, তাকে সেই আশির্বাদ দেওয়া হবে বলে স্বীকার করা হয়েছে।AABen 493.2

    প্রকাশিত বাক্যে পবিত্র বাইবেলের সকল পুস্তক মিলিত হয়েছে এবং পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এখানে দানিয়েল পুস্তকে প্রসংসা সূচক কথা বলা হয়েছে। এটি হল ভবিষ্যদ্বানী; আর অপরটি হল প্রত্যাদেশ। এই পুস্তকে প্রত্যাদেশ সীলমোহর করা হয়নি। কেবল মাত্র শেষ দিন সম্পর্কিত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বানীর অংশটুকু সীলমোহর করা হয়েছে। স্বর্গদূত আদেশ দিয়েছিলেন “কিন্তু হে দানিয়েল তুমি শেষকাল পর্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ করিয়া রাখ।” দানিয়েল ১২:৪।AABen 494.1

    খ্রীষ্ট যিনি প্রেরিতকে এটি লিখতে আদেশ দিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন যেন এটি তার সামনে খোলা হয়। “তুমি যাহা দেখিতেছ তাহা পত্রিকায় লেখ,” তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, “এবং ইফিস, স্মূর্ণা, পর্গাম, থুয়াতিরা, সার্দ্দি, ফিলাদিলফিয়া ও লায়দিকেয়া, এই সপ্ত মন্ডলীর নিকট পাঠাইয়া দেও।” “কেহ কহিলেন, তুমি যাহা দেখিতেছ, তাহা পুস্তকে লিখ, এবং ইফিষ, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দি, ফিলাদিল্ফিয়া ও লায়দিকেয়া— এই সপ্ত মন্ডলীর নিকটে পাঠাইয়া দেও। আমি মরিয়াছিলাম, আর দেখ, আমি যুগপর্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত; আর মৃত্যুর ও পাতালের চাবি আমার হস্তে আছে। অতএব তুমি যাহা যাহা দেখিলে, এবং যাহা যাহা আছে, ও ইহার পরে যাহা যাহা হইবে, সেই সমস্তই লিখ। আমার দক্ষিণ হস্তে যে সপ্ত তারা দেখিলে, তাহার নিগূঢ়তত্ব এবং সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ এই; সেই সপ্ত তারা ঐ সপ্ত মন্ডলীর দূত এবং সেই সপ্ত দীপবৃক্ষ ঐ সপ্ত মন্ডলী।” প্রকাশিত বাক্য ১:১১,১৮—২০।AABen 494.2

    সাতটি মন্ডলীর নাম হল, খ্রীষ্টিয় যুগের বিভিনড়ব সময়ের মন্ডলীর প্রতি। ৭ সংখ্যা পরিপূর্ণতাকে নির্দেশ করে এবং এটি ঘটনার প্রতীককেও নির্দেশ করে, যে এই বার্তা শেষকাল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছেন, এটি জগতের ইতিহাসের বিভিনড়ব সময়ের চার্চে প্রকাশ করার জন্য প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।AABen 494.3

    সুবর্ণ দীপ বৃক্ষের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছেন এমনভাবে খ্রীষ্ট কথা বলছেন। এই ভাবে এটি মন্ডলীর কাছে তার সম্পর্ককে প্রতীকস্বরূপ করেছে। তিনি হলেন তার লোকদের সঙ্গে যোগাযোগের বিশ্বস্ত মাধ্যম। তিনি তাদের প্রকৃত অবস্থা জানেন। তিনি তাদের শৃঙ্খলা, তাদের ঈশ্বরভক্তি, তাদের আরাধনা মনযোগের সঙ্গে দেখে থাকেন। যদিও তিনি মহা যাজক এবং মহা পবিত্র স্থানের মধ্যস্ততাকারী তথাপি তিনি প্রতিনিধি পৃথিবীতে তার মন্ডলীর মধ্যে আসা যাওয়া করেছেন। অক্লান্তভাবে উদ্দীপ্ত করার দ্বারা এবং অবিরাম রক্ষা করার দ্বারা তিনি লক্ষ্য করে দেখেছেন আদৌ তার পাহারার কোন আলো অনুজ্জল হয়ে গেছে নাকি নিভে যাচ্ছে। যদি দীপাধার কেবল মাত্র মানুষের সেবার জন্য অবস্থান করে তাহলে কেঁপে কেঁপে জ্বলে ওঠা শিখা অবসনড়ব হবে এবং নিভে যাবে, কিন্তু তিনি প্রভুর গৃহের প্রকৃত প্রহরী, মন্দিরের প্রাঙ্গনের প্রকৃত রক্ষক। তার অব্যাহত তত্বাবধান এবং অবিচল অনুগ্রহ জীবন ও আলোর উৎস।AABen 494.4

    খ্রীষ্ট প্রতীক স্বরূপ তার ডান হাতে সপ্ত তারা ধারণ করেছেন। এটি আমাদের নিশ্চিত করে যে মন্ডলী যদি বিশ্বস্তভাবে এর উপর নির্ভর করে তাহলে ব্যর্থ হবার জন্য ভয়ের আবশ্যক নেই। কারণ কোন তারা নেই যা অসীম শক্তিতে রক্ষা করে আছে তদা খ্রীষ্টের হাত থেকে উৎপাটিত হতে পারে।AABen 495.1

    “ইফিষস্থ মন্ডলীর দূতকে লিখ— যিনি নিজ দক্ষিণ হস্তে সেই সপ্ত তারা ধারণ করেন, যিনি সেই সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষের মধ্যে গমনাগমন করেন, তিনি এই কথা কহেন;” প্রকাশিত বাক্য ২:১। এই কথা মন্ডলীর শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে এই সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব ঈশ্বর কতৃক অর্পিত হয়েছে। এই প্রীতিকর প্রভাব যা ঈশ্বরের পরিচর্যাকারীর সঙ্গে মন্ডলীর মধ্যে যারা খ্রীষ্টের ভালোবাসাকে প্রকাশ করেছে তাদের মধ্যে অবস্থিত করবে। স্বর্গের তারা তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। তিনি তাদের আলো দিয়ে পূর্ন করে। তিনি তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করেন এবং পথ দেখান। যদি তিনি তা করিতে না পারেন তাহলে তারা পতিত তারায় পরিণত হবে। একই অবস্থা হবে তার পরিচর্যাকারীদের ক্ষেত্রেও। তারা কেবল তার হাতে সাহায্যকারী হবেন এবং সমস্ত উত্তম কাজ তার ক্ষমতার মধ্য দিয়ে সম্পনড়ব করবেন। তাদের মধ্য দিয়ে তার প্রদীপ সামনে আলো প্রদান করবে। তাদের মুক্তিদাতা হবেন তাদের কার্যক্ষমতার উৎস। তিনি যেভাবে তার পিতার দিকে তাকিয়ে থাকেন যদি তারা সেই ভাবে তার দিকে তাকান তাহলে তারা কাজ করার জন্য সমর্থ হবেন। তারা যেমন করে ঈশ্বরকে তাদের আস্থা করবেন সেই ভাবে জগতে প্রতিফলিত করার জন্য তাদের আলো দেবেন।AABen 495.2

    মন্ডলীর প্রাথমিক ইতিহাসে পাপের রহস্য প্রেরিত পৌলের মাধ্যমে এরম ন্দকাজ শুরু হওয়ার পূর্বে প্রেরিত পৌলের দ্বারা ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছিল। এবং এইভাবে পিতর ভন্ডশিক্ষকদের তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে বিশ্বাসীদের সতর্ক করেছিলেন। অনেকেই এই ভ্রান্ত শিক্ষার ফাঁকে নিজেদের জরিয়ে ফেলেছিলেন। কেউ কেউ পরীক্ষার ফলে দূর্বল হয়ে পরেছিল এবং বিশ্বাসকে ত্যাগ করার জন্য প্রলোভিত হয়েছিল। যে সময়ে যোহন কে এই প্রত্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন অনেকে সুসমাচারে সত্যের প্রতি তাদের প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু ঈশ্বর তার মহাদয়ায় মন্ডলীর অব্যাহত পশ্চাৎপদ অবস্থাতেও তাদের পরিত্যাগ করেন নি। অসীম দয়ার বার্তায় তিনি তাদের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এই আকাঙ্খা করেছিলেন যেন তারা অনন্তকালের কাজের জন্য নিশ্চিত হতে পারে। “স্বরণ কর,” তিনি প্রশ্নব উত্থাপন করলেন, “কোথা হইতে পতিত হইয়াছ, এবং মন ফিরাও ও প্রথম কর্ম সফল কর।” ২:৫ পদ।AABen 495.3

    মন্ডলী ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং কঠোর তিরস্কার করার ও শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজনে এবং যারা সুসমাচারের মূলনীতি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার ফলে তাদের পরিত্রানের আশাকে বিপদগ্রস্থ করেছে যোহন তাদের সতর্ক এবং কঠোর তিরস্কার করার বার্তা লিপিবদ্ধ করতে অনুপ্রাণীত হয়েছিলেন। কিন্তু সব সময়ই তিরস্কারের বাক্য যা তিনি অনুতাপকারী বিশ্বাসীদের দয়াপূর্ণ ভালোবাসায় এবং শান্তির প্রতীজ্ঞা দিয়ে বলার জন্য পাঠাবার আবশ্যকতা দেখতে পান। “দেখ, আমি দ্বারে দাড়াইয়া আছি ও আঘাত করিতেছি,” প্রভু সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, “কেহ যদি আমার রব শুনেও দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে আমি তাহার কাছে প্রবেশ করিব ও তাহার সহিত ভোজন করিব এবং সেও আমার সহিত ভোজন করিবে।” প্রকাশিত বাক্য ৩:২০ পদ।AABen 496.1

    আর যারা সংঘাত ও বিরোধের মধ্যে আছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে তাদের স্থির থাকতে হবে, প্রভুর প্রশংসায় এবং প্রতিজ্ঞায় বাক্য প্রদান করেছেন, “আমি জানি তোমার কার্য সকল দেখ আমি তোমার সম্মুখে এক খোলা দ্বার রাখিলাম, তাহা রুদ্ধ করিতে কাহারো সাধ্য নাই, কেননা তোমার কিঞ্চত শক্তি আছে, আর তুমি আমার বাক্য পালন করিয়াছ, আমার নাম অস্বীকার করো নাই।” “তুমি আমার ধৌর্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব, যাহা পৃথবীনিবাসীদের পরীক্ষা করিবার জন্য সমস্ত জগতে উপস্থিতি হইবে।” বিশ্বাসীদের সতর্ক করা হয়েছে, “জাগ্রত হও এবং অবশিষ্ট যে সকল বিষয় মৃতকল্প হইল, তাহা সুস্থির কর।” ” আমি শ্রীঘ্র আসিতেছি তোমার যাহা আছে তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর, যেন কেহ তোমার মুকুট অপহরণ না করে।” ৮,১০,২,১১ পদ।AABen 496.2

    এটি তার মদ্য দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল যিনি নিজেকে ঘোষনা করেছিলেন “ভ্রাতা এবং ক্লেশভোগের সহভাগী,” প্রকাশিত বাক্য ১:৯। যে বিষয়টি খ্রীষ্ট তার মন্ডলীর কাছে প্রকাশ করেছেন তা হল, তার নামের জন্য তাদের অবশ্যই কষ্ট ভোগ করতে হবে। অন্ধকার এবং কুসংস্কারের দীর্ঘ শতাব্দির মধ্য দিয়ে ফিরে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে যে নির্বাসনের যুগে তাদের শর্তের জন্য ভালোবাসার কারনে অগনিত লোক সাক্ষমরের কষ্টভোগ করেছিল। তিনি এটাও দেখেছিলেন যে, অত্যাচার নিপিড়নের শতাব্দির সময় তার বিশ্বস্ত অনুসারীরা যারা তার আদি সাক্ষ্যগুলো বহন করেছিল তিনি তাদের পরিত্যাগ করেন নি, তারা যেন শেষকালের পূর্ণ পর্যন্ত এই ভাবে এগিয়ে যায়। “তোমাকে যেই সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না।” প্রভু ঘোষনা করেছেন, “দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে; তাহাতে তোমাদের ক্লেশ হইবে: তুমি মরণ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাক তাহাতে আমি তোমাকে জীবন মুকুট দেব।” প্রকাশিত বাক্য ২:১০ পদ।AABen 497.1

    আর যারা বিশ্বস্ত থেকে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তাদের প্রত্যেকের জন্য এই প্রতিজ্ঞাটির কথা যোহন শুনেছেন: “যে জয় করে, তাহাকে আমি ঈশ্বরের পরম দেশস্থ জীবন বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে দেব।” “যে জয় করে, সে তদ্রæপ শুক্ল বস্ত্র পরিহিত হইবে; এবং আমি তাহার নাম কোনো ক্রমেই জীবন পুস্তক হইতে মুছিয়া ফেলিব না, কিন্তু আমার পিতার সাক্ষ্যাতে ও তাহার দূতগনের সাক্ষ্যাতে তাহার নাম স্বীকার করিব।” “যে জয় করে, তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দেব, যেমন আমি আপনি জয় করিয়াছি এবং আমার পিতার সহিত সিংহাসনে বসিয়াছি।” ৭ প, ৩:৫,২১ পদ।AABen 497.2

    যোহন প্রভুর দয়া, কোমলতা দেখেছেন এবং ঈশ্বরের ভালোবাসা তার পবিত্রতা, সততা এবং ক্ষমতার মধ্যে মিশে থাকতে দেখেছেন। তিনি দেখেছেন, যে সকল পাপী যাদের পাপ তাদের ভীত করেছে, তারা তার মধ্যে একজন পিতাকে খুঁজছে। মহা সংঘর্ষের শেষ সীমা বাইরে তাকিয়ে দেখলে, আর তার দৃষ্টি পড়ল সিয়নের উপর, “যাহারা বিজয়ী হইয়াছে, তাহারা ঐ কাঁচময় সমুদ্রের তীরে দাঁড়াইয়া আছে।” আর তারা “মোশির গান” এবং মেষপালকের গান গাইছে। প্রকাশিত বাক্য ১৫:২,৩ পদ।AABen 497.3

    মুক্তিদাতা যোহনের সামনে তাকে উপস্থিত করেছেন যিনি, “যিহুদা বংশীয় সিংহ” এবং “এক মেষ সাবক তাহাকে যেন বধ করা হইয়াছিল।” এই প্রতীকগুলো সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা এবং আত্মত্যাগের ভালোবাসার সম্মিলন কে উপস্থাপন করেছে। যেহুদার সিংহ, যিনি তার অনুগ্রহের প্রত্যাখানকারীর প্রতি অত্যন্ত ভয়ংকর তিনি ঈশ্বরের বাধ্য এবং বিশ্বস্তদের কাছে ঈশ্বরের মেষসাবক হবেন। অগ্নিস্তম্ভ যা ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘনকারীর জন্য আতঙ্ক এবং তীব্র ক্রোধ স্বরূপ তা ঈশ্বরের আদেশ পালনকারীদের জন্য আলোর নিদর্শন, করুনা এবং মুক্তির প্রতীক। জোরালভাবে বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রয়োগ করলে অনুগতদের মুক্ত করতে তা জোরালো ভূমিকা রাখবে। যারা বিশ্বস্ত তারা প্রত্যেকে রক্ষা পাবে। “আর তিনি মহা তূরীধ্বনি সহকারে আপন দূতগনকে প্রেরণ করবেন; তাহারা আকাশের এক সীমা অবধী অন্য সীমা পর্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাহার মনোনীতদের একত্র করিবেন।” মথি ২৪:৩১।AABen 498.1

    জগতের লক্ষ লক্ষ লোকদের সঙ্গে তুলনা করলে ঈশ্বরের লোকেরা যেভাবে আছে সেভাবেই ক্ষুদ্র মেষপাল রূপেই থাকবে; কিন্তু যদি তারা তার বাক্যে যে সত্য প্রকাশ পেয়েছে তাতে স্থির থাকে তাহলে তিনি তাদের আশ্রয়কারী হবেন। তারা মহা শক্তিশালী প্রশস্ত ঢালের নিচে অবস্থান করবে। ঈশ্বর সর্বসময়ই ক্ষমতাবান। যখন শেষ তূরি বাজবে মৃত্যর গৃহ থেকে বন্দীরা বের হয়ে আসবে এবং ধার্মীকরা বিজয় যাত্রা করে এগিয়ে যাবে আর চিৎকার করে বলবে, “মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়?” (১ করিন্থ ১৫:৫৫) তখন তারা ঈশ্বরের সঙ্গে, খ্রীষ্টের সঙ্গে, স্বর্গদূতদের সঙ্গে দাড়াবে এবং যারা সকল যুগের অনুগত এবং প্রকৃত ঈশ্বরের সন্তান তারা ঈশ্বরের দলের সঙ্গে যুক্ত হবে।AABen 498.2

    যারা প্রকৃত শিষ্য তাদের তীব্র বিরোধে, অবিচল আত্মত্যাগ এবং হতাশার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তাকে অনুসরণ করতে হবে; কিন্তু এটি তাদের অপরাধ এবং পাপের দুঃখ সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং এটি তাদের এমনভাবে পরিচালনা করবে যাতে তারা পাপ এবং অপরাধকে তীব্র ঘৃণার চোখে দেখে। যারা খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী তারা তার গৌরবের অংশী হবারজন্য গণ্য হবেন। প্রেরিত তার পবিত্র দর্শনে ঈশ্বরের অবশিষ্টাংশ মন্ডলীর শেষ বিজয় উৎসব দেখেছেন। তিনি লিখেছেন: “আর আমি দেখলাম, যেন অগ্নি মিশ্রিত কাঁচময় সমুদ্র এবং যাহার বিজয় হইয়াছে তাহারা ঐ কাঁচময় সমুদ্রের তীরে দাড়াইয়া আছে, তাহাদের হস্তে ঈশ্বরের বীণা। আর তাহারা ঈশ্বরের দাস তোশির গীত ও মেষসাবকের গীত গায়, বলে, মহৎ ও আশ্চর্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্বশক্তিমান; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগনের রাজন। “প্রকাশিত বাক্য ১৫:২,৩ পদ।AABen 498.3

    “পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ সেই মেষসাবক সিয়োন পর্বতের উপর দাড়াইয়া আছেন এবং তাহার সহিন এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহ¯্র লোক, তাহাদের ললাটে তাহার নাম ও তাহার পিতার নাম লিখিত।” প্রকাশিত বাক্য ১৪:১ পদ। এই জগতে তাদের অন্তর ঈম্বরের কাছে উৎসর্গকৃত ছিল; তারা বুদ্ধি ও অন্তর দিয়ে তার সেবা করছিল; আর এখন “তাহাদের ললাটে” তার নাম স্থাপন করেছেন। “এবং তাহারা যুগপর্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করবে।” প্রকাশিত বাক্য ২২:৫ পদ। ভিতরে যাওয়া আসা করার জন্য যেভাবে অন্যরা একটি স্থাবরের জন্য অনুরোধ করে তারা সেভাবে করবে না। তারা সেই জনতা হবে যাদের খ্রীষ্ট বলেছেন, “আইস আমার পিতার আশির্বাদ—পাত্রেরা, জগতের পাওনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য যে রাজ্য প্রস্তুত করা গিয়াছে তাহার অধিকারী হও।” তিনি তাদের তার সন্তান হিসাবে সাদরে গ্রহণ করবেন, তিনি বলবেন, “তুমি আমার প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।” মথি ২৫:৩৪,২১ পদ।AABen 499.1

    “যে কোন স্থানে মেষসাবক গমন করেন, সেই স্থানে ইহারা তাহার অনুগামী হয়।ইহারা ঈশ্বরের ও মেষসাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে।” প্রকাশিত বাক্য ১৪:৪ পদ। প্রেরিতের দর্শন এমনভাবে চিহ্নিত হয়েছে যে যেন তারা সিয়োন পাহাড়ে দাড়িয়ে পবিত্র আরাধনার জন্য বেষ্টন করে আছে, তারা সাদা পোষাক পরিহিত, যা সাধুদের ধার্মিকতার চিহ্ন। কিন্তু যে সকল লোকেরা স্বর্গে মেষসাবকের অনুগামী হয়েছে তাদের অবশ্যই এই জগতে তার অনুগামী হতে হবে, তবে তা বিরক্তপূর্ণ ভাবে নয় কিংবা খামখেয়ালি ভাবে নয়, কিন্তু তা বিশ্বস্তভাবে প্রেমপূর্ণ ভাবে বাধ্য থাকার জন্য ইচ্ছুক হয়ে, যে ভাবে মেষপাল মেষপালককে অনুসরণ করে।”AABen 499.2

    “আমি যে রব শুনিলাম, তাহাতে বোধ হইল যেন বীনাবাদক দল আপন আপন বীনা বাজাইতেছে: যেন তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে নূতন গীত গান করে: “পৃথিবী হইতে ক্রীত সেই এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহ¯্র লোক ব্যতিরেকে আর কেহ সেই গীত শিখাতে পারেন না। আর তাহাদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নাই; তাহারা নির্দোষ।” ২—৫ পদ।AABen 499.3

    “আর আমি দেখিলাম, পবিত্র নগরী, নূতন যিরুশালেম, স্বর্গ হইতে ঈশ্বরের নিকট হইতে নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল।” “তাহার জ্যোতি: বহুমূল্য মণির, স্ফটিকবৎ নির্মল সূর্যকান্তির তূল্য। তাহার বৃহৎ ও উচ্চ প্রাচীর আছে, দ্বাদশ পুরদ্বার আছে; সেই সকল দ্বারের দ্বাদশ দূতগন থাকেন এবং কয়েকটি নাম সেগুলোর উপর লিখিত আছে, সে সকল ইস্রায়েল সন্তানদের দ্বাদশ বংশের নাম।” “আর দ্বাদশ দ্বার দ্বাদশটি মুক্তা, এক এক দ্বার এক এক মুক্তায় নির্মিত এবং নগরের চক স্বচ্ছ কাঁচবৎ বিমল সুবর্ণ ময়। আর আমি নগরের মধ্যে কোন মন্দির দেখিলাম না; কারণ সর্ব শক্তিমান প্রভু ঈশ্বর এবং মেষ সাবক স্বয়ং তাহার মন্দির স্বরূপ।” প্রকাশিত বাক্য ২১:২, ১১, ১২, ২১, ২২ পদ।AABen 500.1

    “এবং কোন শাপ আর হইবে না: আর ঈশ্বরেরও মেষসাবকের সিংহাসন তাহার মধ্যে থাকিবে; এবং তাহার দাসেরা তাহার তাহার আরাধনা করিবে: ও তাহার মুক দর্শন করিবে; এবং তাহার নাম তাহাদের ললাটে থাকিবে । যেখানে রাত্রি আর হইবে না এবং প্রদীপের আলো কিংবা সূর্যের আলোতে লোকদের কিছু প্রয়োজন হইবে না, কারণ প্রভু ঈশ্বর তাহাদিগকে আলোকিত করিবেন।” প্রকাশিত বাক্য ২২:৩—৫ পদ।AABen 500.2

    “আর তিনি আমাকে জীবন জলের নদী দেখাইলেন, তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জল তাহা ঈশ্বরের ও মেষ সাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে। আর নদীর এপারে ওপারে জীবন বৃক্ষ আছে, যাহা দ্বাদশবার ফল উৎপনড়ব করে, এক এক মাসে আপন ফল দেয়: এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগনের আরোগ্য নিমিত্ত।” “ধন্য তাহারা যাহারা আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে, যেন তাহারা জীবন বৃক্ষের অধিকারী হয়, এবং দ্বার সকল গিয়া নগরে প্রবেশ করে।” ১,২, ১৪ পদ।AABen 500.3

    “পরে আমি সিংহাসন হইতে এই উচ্চবানী শুনিলাম,
    “দেখ মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস;
    তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন এবং তাহারা তাহার প্রজা হইবে;
    এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন,
    ও তাহা ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন।”
    প্রকাশিত বাক্য ২১:৩ পদ।
    AABen 500.4

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents