Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা

    খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত দ্বারা শিক্ষায় যে আদর্শ অনুসরণ করা হয়েছে, সেই একই আদর্শ, এই পৃথিবীতে তাঁর নিজের পরিচর্যা কাজের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি। আমরা যেন খ্রীষ্টের স্বর্গীয় চরিত্র ও জীবনের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারি, সেজন্য খ্রীষ্ট আমাদের স্বভাব ধারণ করলেন ও আমাদের মধ্যে বসবাস করলেন। ঈশ্বরত্ব প্রকাশিত হলেন মানবত্বে; অদৃশ্য মহিমা প্রকাশিত হলেন দৃশ্যমান মানবরূপে। মানুষ যা জানে তার মধ্য দিয়ে অজানাকে শিখতে পেল; পার্থিব সত্তার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল স্বর্গীয় সত্তা; ঈশ্বর নিজেকে মানুষের মত করে প্রকাশ করলেন। খ্রীষ্টের শিক্ষাতেও ঠিক সেটাই আমরা দেখতে পাই: জানা বিষয়ের মধ্য দিয়ে অজানা বিষয় প্রকাশ পেল; স্বর্গীয় সত্য প্রকাশ পেল পার্থিব বস্তুর মধ্য দিয়ে, যেগুলোর সাথে মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল।COLBen 7.1

    পবিত্র শাস্ত্র বলে, “এই সমস্ত কথা যীশু দৃষ্টান্ত দ্বারা লোকসমূহকে কহিলেন, . . . যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “আমি দৃষ্টান্ত কথায় আপন মুখ খুলিব, জগতের পত্তনাবধি যাহা যাহা গুপ্ত আছে, সেই সকল ব্যক্ত করিব।” মথি ১৩:৩৪, ৩৫। প্রকৃতিগত বিষয়গুলো আত্মিক বিষয়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে; প্রকৃতিগত বিভিন্ন বিষয় এবং তাঁর শ্রোতাদের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাগুলো লিখিত বাক্যের সত্যের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এভাবেই প্রাকৃতিক থেকে আত্মিক রাজ্যে বিচরণের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত কথাগুলো সত্যের সেই বাঁধনে সংযোগ সাধনকারী হিসেবে কাজ করেছে, যে সত্য মানুষকে ঈশ্বরের সাথে এবং পৃথিবীকে স্বর্গের সাথে সংযুক্ত করেছে। COLBen 7.2

    প্রকৃতি থেকে শিক্ষা দিতে গিয়ে, খ্রীষ্ট এমন বস্তুর কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলোকে তিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং যেগুলোকে তিনি নিজেই বিশেষ গুণ ও শক্তি প্রদান করেছেন। সমস্ত সৃষ্ট বস্তুই নিজ নিজ অকৃত্রিম সিদ্ধতায় ঈশ্বরের চিন্তার একেকটি প্রতিফলন। এদন উদ্যানের প্রাকৃতিক বাসস্থানটি আদম ও হবার কাছে ঈশ্বরের জ্ঞানে এবং স্বর্গীয় শিক্ষায় পরিপূর্ণ ছিল। তখন প্রজ্ঞা চোখের সঙ্গে কথা বলত এবং তা অন্তরে প্রত্যক্ষভাবে গৃহীত হত; কারণ তারা সে সময় ঈশ্বরের সৃষ্টকর্মের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। এই পবিত্র দম্পতি যখনই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিধান লঙ্ঘন করলেন, তখন থেকেই ঈশ্বরের মুখমÐলের উজ্জ্বলতা প্রকৃতির উপর থেকে প্রস্থান করল। পৃথিবী এখন পাপে পূর্ণ ও কলুষিত। তথাপি পৃথিবী তার পঙ্কিলতম অবস্থানেও এখন পর্যন্ত অপার সৌন্দর্যে ভরপুর। ঈশ্বরের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ক্ষুণ্ণ হয় নি; তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করা হয়েছে, প্রকৃতি তার স্রষ্টার মুখস্বরূপ হয়েছে।COLBen 7.3

    যীশু খ্রীষ্টের দিনগুলোতে এই শিক্ষাগুলো মানুষের দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়নি। যীশুর কাজে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে মানুষ সে সময় অগ্রাহ্য করেছে। মানবতার এই পাপময়তা সৃষ্টি জগতের শুভ্র মুখশ্রীর উপরে এক পঙ্কিল কালিমা ফেলেছিল। ঈশ্বরের গৌরব করার বদলে তাঁর সৃষ্টি তাঁরই বিরোধিতা করেছে, তাঁর কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। মানুষ “সৃষ্টিকর্তার বদলে তাঁর সৃষ্ট প্রাণীর অধিক আরাধনা ও পরিচর্যা করেছে।”এভাবেই ঈশ্বরবিহীনেরা “তাদের তর্কবিতর্কে অসার হয়ে পড়েছে এবং তাদের অবোধ হৃদয় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।” রোমীয় ১:২৫, ২১। এ কারণে ইসরায়েলে ঈশ্বরীয় শিক্ষার স্থলে মানবীয় শিক্ষাকে প্রতিস্থাপন করাহয়েছিল। শুধু প্রকৃতিগত শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, বরং সেই সাথে উৎসর্গমূলক পরিচর্যা এবং পবিত্র শাস্ত্রের ক্ষেত্রেও - যা কিছু ঈশ্বরের প্রত্যাদেশে প্রকাশিত হয়েছে - সেগুলো এতটাই বিকৃত করে তোলা হয়েছিল যে, সেগুলোই তাঁর জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠেছিল। COLBen 8.1

    সত্যকে যা আবৃত করে রেখেছিল, খ্রীষ্ট সেটা অপসারণ করতেই এসেছিলেন। প্রকৃতির মুখশ্রীর উপরে পাপ যে আবরণ তৈরি করে রেখেছিল, তিনি তা সরিয়ে ফেলতে এসেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সৃষ্ট জগতের উপরে হারানো আত্মিক মহিমা আবার ফিরিয়ে আনতে, যা পুরো পৃথিবীর প্রত্যেকটি সৃষ্টবস্তুর মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়ার কথা।COLBen 8.2

    যীশু একটি সুন্দর কানুড় পুষ্প তুললেন এবং সেটাকে শিশু ও তরুণদের হাতে দিলেন। তারা যখন যীশুর নিজের তারুণ্যে ভরা চেহারার দিকে তাকাল, সেখানে তারা পিতা ঈশ্বরের উপস্থিতির উজ্জ্বলতায় পূর্ণ সৌম্যকান্তি দেখতে পেল। তিনি তাদেরকে এই শিক্ষা দিলেন, “কানুড় পুষ্পের বিষয় বিবেচনা কর, সেইগুলি কেমন বাড়ে [প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাবলীলতার বিবেচনায়]; সেই সকল কোন শ্রম করে না, সূতাও কাটে না, তথাপি আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না।” এরপরেই তিনি দিলেন সুমিষ্ট আশ্বাস এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি, “ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এইরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কত অধিক নিশ্চয় বিভ‚ষিত করিবেন!”COLBen 8.3

    পর্বতে দত্ত উপদেশের এই কথাগুলো শিশু ও তরুণদের পাশাপাশি অন্যদের জন্যও বলা হয়েছিল। এই কথাগুলো বলা হয়েছিল জনতার উদ্দেশে। এদের মাঝে ছিল এমন নারী ও পুরুষেরা, যারা দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ ছিল, যারা হতাশা ও বেদনায় জর্জরিত ছিল। যীশু তাদের জন্য বলে চললেন: “আর, কি ভোজন করিব, কি পান করিব, বা কি পরিব? কেননা এই বিষয়ে তোমরা সচেষ্ট হইও না, এবং সন্দিগ্ধচিত্ত হইও না (কারণ এই সমস্ত বস্তুর জন্যই সমস্ত অ-যিহূদীরা উদ্বিগড়ব ছিল)। কেননা জগতের জাতিগণ এই সকল বিষয়ে সচেষ্ট; কিন্তু তোমাদের পিতা জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে।” এরপর তিনি সেই জনসমুদ্রের দিকে তাঁর হাত প্রসারিত করে বললেন, “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।” মথি ৬:২৮-৩৩। COLBen 9.1

    এভাবেই যীশু খ্রীষ্ট স্বয়ং কানুড় পুষ্প এবং মাঠের ঘাস সম্পর্কে যে বার্তা দিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা নিজেই প্রকাশ করলেন। তিনি চান যেন আমরা প্রত্যেকটি কানুড় পুষ্প ও ঘাসের মাঝে লেখা একথা পাঠ করি।তাঁর বাক্য নিশ্চয়তায় পূর্ণ এবং তা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে নিশ্চিত করে।COLBen 9.2

    প্রভু যীশুর সত্যের দর্শন এতটাই প্রশস্ত ছিল, তাঁর শিক্ষার ক্ষেত্র এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, প্রকৃতির প্রত্যেকটি স্তর তাঁর শিক্ষার চিত্রায়িত সত্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। যে দৃশ্যের উপরে প্রতিদিন আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সেসব এক আধ্যাত্মিক সত্যের দ্বারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, যেন পুরো প্রকৃতি মহান প্রভুর দৃষ্টান্তের আবরণে আচ্ছাদিত।COLBen 9.3

    যীশু লোকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তিনি উদাসীনদের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং তাদের হৃদয়ে সত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। দৃষ্টান্ত দ্বারা শিক্ষা দান ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং তা বক্তার জন্য যেমন সম্মানের বিষয় ছিল, তেমনি তা শ্রোতাদের মনোযোগ কাড়তেও সহায়ক ছিল। এই কৌশলটি শুধু যিহূদীদের ক্ষেত্রে নয়, বরং সেই সাথে অন্যান্য সকল জাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। তিনি শিক্ষা ও নির্দেশনা দানের জন্য এর চেয়ে বেশি কার্যকর কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি তাঁর শ্রোতাদের ঈশ্বরীয় বিষয়ের জ্ঞান লাভের জন্য আকাক্সক্ষা থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাঁর বাক্যের অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হবে; কারণ যারা সরল হৃদয়ে জ্ঞানের অন্বেষণ করে, তাদেরকে বুঝিয়ে বলার জন্য তিনি সব সময় ইচ্ছুক থাকেন।COLBen 10.1

    আবার, যীশু খ্রীষ্ট এমন সত্য লোকদের সামনে উপস্থাপন করছিলেন যা গ্রহণ করতে বা এমনকি উপলব্ধি করতেও তারা প্রস্তুত ছিল না। এই কারণে তিনি তাদেরকে দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিতেন। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যপট, অভিজ্ঞতা, প্রকৃতির সাথে তাঁর শিক্ষাকে COLBen 10.2

    -------------------------------

    প্রভু যীশু তাঁর পরিচর্যা কাজের শুরুর দিকে, লোকদেরকে এমন সরল ভাষায় শিক্ষা দিয়েছেন, যেন তাঁর শ্রোতারা তাদের পরিত্রাণ লাভের জন্য অপরিহার্য সত্যটিকে খুব সহজে আয়ত্ব করে নিতে পারে। কিন্তু অনেকের হৃদয়েই সেই সত্য শেকড় গাড়তে পারেনি এবং তা খুব দ্রæত উচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। “এই জন্য আমি তাহাদিগকে দৃষ্টান্ত দ্বারা কথা বলিতেছি,” তিনি বলেছেন, “কারণ তাহারা দেখিয়াও দেখে না, শুনিয়াও শোনে না, এবং বুঝেও না। . . . কেননা এই লোকদের হৃদয় অসার হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে।” মথি ১৩:১৩-১৫। যুক্ত করে তিনি তাদের মনোযোগ ধরে রাখতেন এবং তাদের অন্তরকে প্রভাবিত করতেন। পরবর্তীতে যখনই তারা তাঁর দৃষ্টান্তে অলঙ্কৃত বস্তুগুলোর দিকে দৃষ্টি দিত, তখনই তারা তাদের স্বর্গীয় শিক্ষকের বাণী স্মরণ করতে পারত। যে সকল অন্তর পবিত্র আত্মার কাছে নিজেদেরকে খুলে দেয়, পরিত্রাতার শিক্ষাগুলোর অর্থ তাদের কাছে আরও বেশি করে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। রহস্যগুলো পরিষ্কার হয়ে যায় যা আয়ত্ব করা কঠিন ছিল তা এসে পড়ে হাতের নাগালে।COLBen 10.3

    যীশু প্রত্যেকটি অন্তরে প্রবেশের জন্য চেষ্টা করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে, তিনি শুধু যে প্রকৃত সত্যই বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন তা নয়, বরং সেই সাথে তিনি বিভিন্ন ধরনের শ্রোতাদের কাছেও এর আবেদন ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের দৈনন্দিন জীবনের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বস্তু বা উপাদানের মধ্য দিয়ে তিনি তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছেন। যারা পরিত্রাতার কথা শুনবে তারা কেউই নিজেদেরকে অবহেলিত বা ভুলে যাওয়া মানুষ বলে ভাববে না। সবচেয়ে নিচু অবস্থানের মানুষটি বা সবচেয়ে পাপী মানুষটি যীশুর শিক্ষার মাঝে এমন এক স্বর শুনতে পায় যা তাদের কাছে সহানুভ‚তি ও সান্ত¡নার কথা বলে।COLBen 11.1

    দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দেয়ার পেছনে তাঁর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল। তাঁর চারপাশে যে জনসমাগম হত, তাদের মধ্যে অনেকে ছিল পুরোহিত এবং ফরীশী, ধর্মবেত্তা ও প্রাচীনবর্গ, হেরোদীয় এবং শাসনকর্তা, জগতকে ভালবাসে এমন মানুষ, গর্বে উদ্ধত, উচ্চাভিলাসী মানুষ, যারা যে কোন ছুতো ধরে যীশুর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ আনার চেষ্টায় থাকত। তাদের গুপ্তচরেরা দিনের পর দিন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করত, যেন তারা তাঁর মুখ থেকে নির্গত এমন কোন কথা ধরতে পারে, যা দিয়ে তারা তাঁকে অভিযুক্ত করতে পারবে। তাদের ইচ্ছা ছিল সেই মহান ব্যক্তির কণ্ঠকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়ার, যিনি সারা পৃথিবীকে তাঁর অনুসারী করে তুলেছিলেন। আমাদের ত্রাণকর্তা এই সমস্ত লোকদের চরিত্র খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে তিনি সত্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন যেন তারা সন্হেদ্রিনের সামনে তাঁর বিপক্ষে উপস্থাপন করার মত কোন কিছু খুঁজে না পায়। তিনি তাঁর দৃষ্টান্তগুলোতে সমাজের উচ্চপদস্থ মানুষগুলোর ভণ্ডামি এবং মন্দ কাজগুলোকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেছেন। তিনি এই সকল তিরস্কারগুলোকে এমন দৃষ্টান্তকথার আবরণে প্রকাশ করেছেন যে, যদি এগুলো সোজাসুজি ভঙ্গিতে বলা হত তাহলে তারা কোনমতেই সেসব কথা সহ্য করতে পারত না এবং তারা সেই মুহূর্তেই যীশুর পরিচর্যা কাজ বন্ধ করে দিত। কিন্তু যখনই যীশু তাঁর পেছনে থাকা গুপ্তচরদের আক্রমণ করতেন, তিনি সব সময় সত্যকে এমন পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতেন যে, তাদের ভুলগুলো প্রকাশ পেয়ে যেত এবং যারা অন্তরে শুদ্ধ তারা তাঁর শিক্ষা পেয়ে উপকৃত হত। স্বর্গীয় জ্ঞান ও অপরিসীম অনুগ্রহ ঈশ্বরের সৃষ্ট জগতের বিভিন্ন উপাদানের মধ্য দিয়ে সরলভাবে উন্মোচন করা হয়েছিল। প্রকৃতি ও জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈশ্বর সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেছিল। “তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে,” রোমীয় ১:২০।COLBen 11.2

    আমাদের ত্রাণকর্তার দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রদত্ত শিক্ষায় আমরা দেখতে পাই যে, প্রকৃত “উচ্চতর শিক্ষা” বলতে আসলে কী বোঝায়। খ্রীষ্ট হয়তো বিজ্ঞানের নিগূঢ় সত্য মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারতেন। তিনি পারতেন সেই সকল রহস্য উন্মোচন করতে যা ভেদ করতে বহু শতাব্দীর কঠোর সাধনা ও জ্ঞান চর্চার প্রয়োজন। তিনি পারতেন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এমন ধারণা দিতে, যার ফলে মানুষ চিন্তার খোরাক পেত এবং এমন উদ্ভাবনী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হত যা তৎকালীন প্রজন্মকে বর্তমান যুগের দ্বারপ্রান্তে এক লহমায় পৌঁছে দিতে পারত। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি মানুষের কৌত‚হল নিবৃত্ত করার জন্য বা জাগতিক মহত্ব দ্বারা নিজেদেরকে পূর্ণ করার জন্য মানুষের যে উচ্চাভিলাষ তা পূর্ণ করার জন্য কিছুই করেননি। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর সমস্ত শিক্ষায় মানুষের মননকে সংযুক্ত করেছেন স্বর্গীয় অসীম মননের সাথে। ঈশ্বর, তাঁর বাক্য ও তাঁর কাজ সম্পর্কে মানুষের তৈরি যে তত্ত¡ রয়েছে তা শেখার জন্য তিনি তাঁর কাছে আগত লোকদেরকে নির্দেশনা দেননি। তাঁর কাজ, তাঁর বাক্য এবং তাঁর প্রত্যাদেশের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে তথা ঈশ্বরকে প্রকাশ করেছেন এবং তাঁকেই অবলোকন করার জন্য তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। COLBen 12.1

    খ্রীষ্ট কোন বিমূর্ত তত্ব নিয়ে শিক্ষা দেননি, বরং যা কিছু উত্তম চরিত্র গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য, যা ঈশ্বরকে জানার জন্য মানুষের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করবে এবং ভাল কাজ করার জন্য তার সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে, এমন বিষয়ই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সেই সকল সত্যের কথা বলেছেন, যেগুলো জীবন-যাপন প্রণালীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং যা মানুষের অনন্ত জীবন লাভে সহায়ক।COLBen 13.1

    খ্রীষ্টই ইসরায়েলের শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিচালনা দান করেছেন। প্রভুর আদেশ ও অধ্যাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এই সকল যত্নবপূর্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্ত বিষয়ে কথোপকথন করিবে। আর তোমার হস্তে চিহ্ন স্বরূপে সেই সকল বাঁধিয়া রাখিবে, ও সেই সকল ভূষণস্বরূপে তোমার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে থাকিবে। আর তোমার গৃহদ্বারের কপালে ও তোমার বহির্দ্বারে তাহা লিখিয়া রাখিবে।” দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭-৯। যীশু তাঁর নিজ শিক্ষায় দেখিয়েছেন কী করে এই আদেশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে Ñ কী করে ঈশ্বরের রাজ্যের আইন ও নীতিমালা এমনভাবে উপস্থাপন করা যায়, যার মধ্য দিয়ে সেগুলোর সৌন্দর্য ও মহামূল্য প্রকাশ পায়। প্রভু যখন ইসরায়েলকে তাঁর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন, সে সময় তিনি তাদেরকে পাহাড়ে ও উপত্যকায় থাকতে দিয়েছিলেন। তারা তাদের গৃহস্থালি জীবন ও ধর্মীয় পরিচর্যা কাজে সব সময় প্রকৃতির সংস্পর্শে ও ঈশ্বরে বাক্যের সান্নিধ্যে অবস্থান করত। সে কারণে খ্রীষ্টও তাঁর শিষ্যদেরকে হ্রদের পারে, পর্বতের চুড়ায়, মাঠে ও চারণভূমিতে শিক্ষা দিয়েছেন, যেন তিনি তাঁর শিক্ষাকে প্রকৃতির যে সকল উপাদান দিয়ে চিত্রিত করে তুলেছেন সেগুলো তাঁর শিষ্যেরা স্বচক্ষে অবলোকন করতে পারে। শিষ্যরা যখন খ্রীষ্টের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, সে সময় তারা খ্রীষ্টকে তাঁর পরিচর্যা কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে তাদের এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছিলেন।COLBen 13.2

    এ কারণে সৃষ্টি জগতের মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচিত হয়ে উঠি। সৃষ্টি জগত আমাদের জন্য এক অসীম জ্ঞানের ও শিক্ষার ভাণ্ডার, যার সাথে সুসমাচারের যোগসূত্র সাধন করে আমরা অন্যদেরকে প্রভুর চরিত্র সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারি এবং হারানো মেষদেরকে ঈশ্বরের খোঁয়াড়ে আবারও পরিচালনা করি। যখন আমরা ঈশ্বরের কার্যাবলী নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের অন্তরে বিশ্বাস তৈরি করেন। তবে এই বিশ্বাস এমন নয় যে তা আমাদের মনে যুক্তি তর্কের উদ্ভব ঘটাবে; বরং আমাদের মন যখন এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে যে আমরা ঈশ্বরকে জানতে পারি না, যখন আমাদের দৃষ্টি এতটাই ঘোলাটে হয়ে পড়ে যে আমরা তাঁকে দেখতে পারি না, আমাদের কান যখন এতটাই বধির হয়ে পড়ে যে আমরা তাঁর বাক্য শুনতে পাই না, তখন এই বিশ্বাস আমাদের অন্তরে আরও গভীর অর্থ প্রকাশ করে এবং পবিত্র শাস্ত্রের লিখিত বাক্যের নিগূঢ় আত্মিক সত্য আমাদের মনে আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে।COLBen 14.1

    প্রকৃতি থেকে গৃহীত এই সকল শিক্ষার মাঝে এমন সরলতা ও শুদ্ধতা রয়েছে যা এই শিক্ষাকে সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষায় পরিণত করে। প্রত্যেকের উচিত প্রকৃতি থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করা। এর মাঝে প্রকৃতির যে সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে তা আমাদের আত্মাকে পাপ থেকে এবং জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সেই সাথে তা আমাদেরকে শুদ্ধতা, শান্তি, ও ঈশ্বরের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের মন প্রায়শই মানুষের তৈরি তত্ত¡ ও মতবাদে পূর্ণ হয়ে থাকে, যেগুলোকে বিজ্ঞান ও দর্শন নামে উল্লেখ করে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তাদেরকে প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আনা প্রয়োজন। তাদের জানা প্রয়োজন যে, সৃষ্টি জগত এবং খ্রীষ্ট ধর্মের একজনই ঈশ্বর রয়েছেন। প্রাকৃতিক জগতের সাথে আত্মিক জগতের যে সম্প্রীতি রয়েছে তা তাদের শেখা দরকার। তাদের চোখ যা কিছু দেখে ও তাদের হাত যা কিছু স্পর্শ করে সে সমস্ত কিছু তাদের চরিত্র গঠনে শিক্ষা হিসেবে কাজ করুক। এভাবেই তাদের মানসিক শক্তি আরও জোরদার হবে, তাদের চরিত্র সুগঠিত হবে, এবং তাদের সমগ্র জীবন হয়ে উঠবে মহত্তর।COLBen 14.2

    দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার পেছনে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের যে উদ্দেশ্য ছিল তার সাথে শাব্বাথের উদ্দেশ্য প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত। ঈশ্বর চান মানুষ যেন তাঁর সৃষ্টিকারী ক্ষমতা স্মরণে রাখে, যাতে তারা তাঁর হাতের সৃষ্টকর্মের মাঝে তাঁর উপস্থিতি আবিষ্কার করে। শাব্বাথ আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টকর্মের মধ্য দিয়ে তাঁর গৌরব অবলোকন করতে আহŸান জানায়। আর এর কারণ হচ্ছে, তিনি চান, যেন আমরা প্রাকৃতিক উপকরণের সৌন্দর্যের সাথে যীশুর মহামূল্য শিক্ষার সম্মিলন ঘটিয়ে, তা আমাদের জীবনে ধারণ করি। অন্য সকল দিনের চেয়ে মহান এই দিনে, এই পবিত্র বিশ্রাম বারে, যা ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট প্রকৃতির মাঝে আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন, আমাদের উচিত সেই বার্তা অধ্যয়ন করা। আমাদের উচিত ত্রাণকর্তার দৃষ্টান্তগুলো অধ্যয়ন করা, যেখানে তিনি সবুজ মাঠে ও চারণভ‚মিতে, খোলা আকাশের নিচে, ঘাস ও ফুলের মাঝে বসে, তাঁর শ্রোতাদের কাছে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা যত প্রকৃতির অন্তঃস্থলের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারব, খ্রীষ্ট তাঁর উপস্থিতি আমাদের কাছে তত বেশি বাস্তব ও স্পষ্ট করে তুলবেন এবং তাঁর শান্তি ও ভালবাসার কথা, আমাদের হৃদয়ে জানাবেন।COLBen 15.1

    প্রভু যীশু তাঁর শিক্ষাকে শুধু বিশ্রাম দিনের সাথে সংযুক্ত করেন নি, তিনি শ্রমমুখর সপ্তাহের সাথেও তার সংযোগ ঘটিয়েছেন। যে ব্যক্তি জমি চাষ করে ও বীজ বপন করে, তার জন্যও তাঁর কাছে দেবার মত জ্ঞান রয়েছে। জমি চাষ করা ও বীজ বোনা, ফসলের পরিচর্যা করা ও ফসল কাটার গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের অন্তরে তাঁর অনুগ্রহপূর্ণ কাজের এক অপূর্ব চিত্র অবলোকন করতে পারি। সে কারণে যে কোন যথোপযুক্ত শ্রম এবং জীবন ও জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটি কাজে তিনি আমাদেরকে ঈশ্বরীয় সত্যের শিক্ষা দান করতে চান। তখন প্রতিদিনের কষ্ট ও শ্রম আর আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেবে না এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে দেবে না। এই শিক্ষা প্রতিনিয়ত আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও ত্রাণকর্তার কথা মনে করিয়ে দেবে। আমাদের সকল জাগতিক চিন্তা ও কাজের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর বিষয়ক চিন্তা যেন এক সোনার সুতার মত বিচরণ করবে। আমাদের জন্য ঈশ্বরেরCOLBen 15.2

    মুখমণ্ডলের গৌরব আরও একবার প্রকৃতির উপরে অবস্থান করবে। আমরা চিরকাল স্বর্গীয় সত্যের নতুন নতুন শিক্ষা লাভ করতে থাকব এবং তাঁর পবিত্রতার প্রতিমূর্তিতে নিজেকে গড়ে তুলব। এভাবেই আমরা “সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে।” এবং আমাদের সোভাগ্য যে, সেখানে আমরা ঈশ্বরের কাছে থাকব।” যিশাইয় ৫৪:১৩; ১ কারিন্থীয় ৭:২৪।COLBen 16.1

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents