Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First

    দুজন উপাসক

    লূক ১৮:৯-১৪ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

    “যাহারা আপনাদের উপরে বিশ্বাস রাখিত, মনে করিত যে, তাহারাই ধার্মিক, এবং অন্য সকলকে হেয় জ্ঞান করিত,” অর্থাৎ ফরীশী ও করগ্রাহীদের বিষয়ে খ্রীষ্ট এই দৃষ্টান্তটি বলেছেন। ফরীশী নিজেকে পাপী ও অপরাধী মনে করত বলে যে উপাসনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা করত তা নয়, বরং সে নিজেকে অনেক ধার্মিক বলে মনে করত এবং সে নিজেকে প্রশংসা পাবার যোগ্য বলে ভাবত। তার প্রার্থনাকে সে তার নিজ যোগ্যতার প্রমাণ বলে ভাবত, যার কারণে সে ঈশ্বরের কাছে প্রশংসিত হবে বলে ভেবেছিল। একই সাথে সে মানুষের কাছে নিজেকে অত্যন্ত ধার্মিক বলে জাহির করছিল। সেই একই সাথে মানুষ ও ঈশ্বরের কাছ থেকে আনুকূল্য পাওয়ার আশা করছিল। তার এই প্রার্থনার মূলে ছিল নিজের স্বার্থ চিন্তা। COLBen 130.1

    সে পুরো প্রার্থনা জুড়ে শুধু নিজের গুণগানই গেয়ে গেছে। সে মনে মনে নিজের ভালো জিনিসগুলো নিয়ে ভেবেছে, সোজা হেঁটে উপাসনালয়ের ভেতরে চলে গেছে, এবং প্রার্থনার মধ্যে নিজের প্রশংসা সূচক কথাই আউড়ে গেছে। নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করতে সে যেন মনে মনে বলে উঠেছিল, “স্বস্থানে থাক, আমার নিকটে আসিও না, কেননা তোমা অপেক্ষা আমি পবিত্র” (যিশাইয় ৬৫:৫) এবং সে দাঁড়িয়ে “নিজের সাথে নিজে” প্রার্থনা করেছিল। এই প্রার্থনায় সে পুরোপুরি সন্তুষ্ট ছিল এবং সে ভেবেছিল ঈশ্বর ও মানুষের চোখে সে মহা ধার্মিক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।COLBen 130.2

    “হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে,” সেই ফরীশী প্রার্থনায় বলছিল, “আমি অন্য সকল লোকের- উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের- মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি।” সে ঈশ্বরীয় চরিত্রের পবিত্রতা অনুসারে নিজের চরিত্রকে বিচার করে নি, বরং সে অন্য মানুষের চরিত্রের সাথে নিজের চরিত্রকে তুলনা করেছে। তার মন ঈশ্বরের দিক থেকে সরে গিয়ে মানুষের দিকে নিবদ্ধ হয়েছে। এটাই তার আত্ম সন্তুষ্টির মূল রহস্য। সে তার ভালো ভালো কাজের কথা বলে যেতে লাগল: “আমি সপ্তাহের মধ্যে দুই বার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি।” ধর্ম ফরীশীর আত্মাকে স্পর্শ করে নি। সে চরিত্রের ঈশ্বরীয় বৈশিষ্ট্য অন্বেষণ করে নি, ভালবাসা ও দয়ায় পূর্ণ অন্তর কামনা করে নি। সে এমন এক ধর্ম নিয়েই সন্তুষ্ট যা কেবল বাহ্যিক দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করে। তার ধার্মিকতা কেবল তার কাছেই সীমাবদ্ধ - তার নিজ কাজের ফল - এবং সে নিজেকেমানবীয় মান অনুসারে বিচার করেছে। COLBen 130.3

    যে ব্যক্তি নিজেকে ধার্মিক বলে মনে করবে সে অবশ্যই অন্যকে অবজ্ঞা করবে। ফরীশী যেমন নিজেকে অন্য লোকদের সাথে তুলনা করে বিচার করেছে, তেমনি সে অন্যদেরকে তার নিজের সাথে তুলনা করে বিচার করেছে। তাদের ধার্মিকতা অনুসারে সে নিজের ধার্মিকতাকে বিচার করেছে এবং তারা যত বেশি খারাপ সে নিজে তত বেশি নিজেকে ধার্মিক বলে প্রকাশ করতে চেয়েছে। তার আত্ম—ধার্মিকতার কারণে সে অন্যদেরকে অপবাদ দেয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে। “অন্য লোকদেরকে” সে ঈশ্বরের বিধান অমান্যকারী হিসেবে অপবাদ দিয়েছে। এভাবে সে তার নিজের মধ্যে শয়তানের কর্তৃত্ব প্রকাশ করেছে, যে ভাইদেরকে অপবাদ দেয়। এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে তার পক্ষে ঈশ্বরের সাথে এক সহভাগিতায় মিলিত হওয়া সম্ভব নয়। প্রার্থনা শেষ করে সে তার যে বাসগৃহে ফিরে গেছে, তা ঈশ্বরের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত।COLBen 131.1

    করগ্রাহী লোকটি অন্যান্য উপাসনাকারীদের সাথে ধর্মধামে গিয়েছিল, কিন্তু সে নিজেকে অন্যান্য লোকদের সাথে উপাসনায় মিলিত হওয়ার জন্য অযোগ্য বলে মনে করেছিল। সে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল, সে “স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত” করতে লাগল নিজের প্রতি তীব্র অসন্তোষ আর ঘৃণার কারণে। সে অনুভব করেছিল যে, সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছে। এমন কি যারা তার আশেপাশে ছিল তাদের কাছ থেকে সে কোন ধরনের সমবেদনাও আশা করে নি, কারণ প্রত্যেকেই তার দিকে ভর্ৎসনার চোখে তাকাচ্ছিল। সে জানত যে ঈশ্বরের সামনে নিজের প্রশংসা করার মত কোন কিছুই তার জীবনে নেই। আর তাই সে প্রচণ্ডবিষণœতায় আক্রান্ত হয়ে এই বলে কেঁদে উঠল, “হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর।” সে নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করে নি। প্রচণ্ডঅপরাধবোধে আক্রান্ত হয়ে সে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন সে একান্তভাবে শুধুমাত্র ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত রয়েছে। তার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল ক্ষমা ও শান্তি পাওয়া, তার একমাত্র চাওয়া ছিল ঈশ্বরের করুণা। আর সে তখনই আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছিল। “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি,” যীশু বললেন, “এই ব্যক্তি ধার্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়।” COLBen 131.2

    ফরীশী ও করগ্রাহী দুটি বৃহত্তর শ্রেণীকে নির্দেশ করে যাদের ভিত্তিতে ঈশ্বরের কাছে উপাসনায় আগত মানুষদেরকে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম দুই প্রতিনিধিকে আমরা দেখি দুটি শিশুর মাঝে, যারা এই পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেছিল। কয়িন নিজেকে ধার্মিক বলে মনে করেছিল এবং সে ঈশ্বরের কাছে শুধু ধন্যবাদের উৎসর্গ নিয়ে এসেছিল। সে কোন পাপ স্বীকারের উৎসর্গ করে নি এবং তার যে ঈশ্বরের দয়ার প্রয়োজন রয়েছে তা মনে করে নি। কিন্তু হেবল রক্ত সহকারে উৎসর্গ করতে এসেছিল, যা ঈশ্বরের মেষশাবককে নির্দেশ করে। সে নিজেকে একজন পাপী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল এবং নিজের পাপ স্বীকার করেছিল। তার একমাত্র আশা ছিল ঈশ্বরের অপ্রতিরোধ্য ভালবাসা। সদাপ্রভু তার উৎসর্গ গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু কয়িন এবং তার উৎসর্গ, প্রভু গ্রহণ করেন নি। ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রথমে যা প্রয়োজন তা হল ঈশ্বরের ক্ষমার প্রয়োজনীয়তা এবং আমাদের দীনতা ও পাপের স্বীকারোক্তি। “ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই,” মথি ৫:৩।COLBen 132.1

    ফরীশী ও করগ্রাহী যে দুটি শ্রেণীকে উপস্থাপন করেছে, তাদের উভয়ের জন্যই প্রেরিত পিতরের জীবন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে। খ্রীষ্টের শিষ্যত্বের শুরুর দিকে পিতর নিজেকে অনেক শক্তিশালী বলে ভাবতেন। ফরীশীদের মত তাঁরও নিজের সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, তিনি অন্য লোকদের মত নন। যখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়ার আগে তাঁর শিষ্যদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলছিলেন, “তোমরা সকলে বিঘ্ন পাইবে,” তখন পিতর প্রচণ্ডআত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, “যদিও সকলে বিঘ্ন পায়, তথাপি আমি পাইব না।” মার্ক ১৪:২৭, ২৯। পিতর তাঁর নিজের আসন্ন বিপদ বুঝতে পারেন নি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন যে, তিনি নিজেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই যখন সেই পরীক্ষার সময় উপস্থিত হল, তখন তিনি অভিশাপ দিয়ে ও শপথ করে তাঁর প্রভুকে অস্বীকার করলেন। COLBen 132.2

    মোরগ ডেকে ওঠার শব্দে যখন যীশুর বলা কথাগুলো তাঁর মনে পড়ে গেল, তখন তিনি এই মাত্র যে ভুলটি করেছেন তা বুঝতে পেরে, একাধারে বিস্মিত ও আতঙ্কিত হলেন এবং ঘুরে প্রভুর দিকে তাকালেন। ঠিক সেই মুহূর্তে যীশুও পিতরের দিকে তাকালেন এবং সেই মর্মাহত দৃষ্টির সাথে মিশে ছিল পিতরের জন্য সহানুভূতি ও ভালবাসা, যা পিতর সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারলেন। পিতর উঠে বাইরে চলে গেলেন এবং প্রচণ্ড কাঁদলেন। যীশুর সেই দৃষ্টি তাঁর হৃদয় ভেঙ্গে খান খান করে দিয়েছিল। পিতর সে সময় তাঁর জীবনের চরম এক ক্রান্তি লগ্নে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং অত্যন্ত তিক্ততার সাথে তিনি তাঁর পাপের জন্য অনুশোচনা করলেন। পাপ স্বীকার ও অনুশোচনা করার দিক থেকে তিনি ছিলেন ঐ করগ্রাহীর মত এবং করগ্রাহীর মত করেই তিনিও দয়া লাভ করেছিলেন। খ্রীষ্টের সেই দৃষ্টিই তাঁকে পাপের ক্ষমা লাভের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। COLBen 133.1

    পিতর সে সময় তাঁর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর কখনো তিনি এ ধরনের অহঙ্কার সূচক কথা উচ্চারণ করেন নি। COLBen 133.2

    যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পুনরুত্থানের পর পিতরকে তিন বার পরীক্ষা করেছিলেন। “হে যোহনের পুত্র শিমোন,” যীশু বললেন, “ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর?” পিতর এখন আর নিজেকে তাঁর অন্য ভাইদের চেয়ে উপরে স্থান দিলেন না। তিনি যীশুর কাছে তাঁর মনের কথাটিই বললেন, যিনি তাঁর মন আগে থেকেই জানতেন। “হাঁ, প্রভু;” পিতর বললেন, “আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভালবাসি।” যোহন ২১:১৫, ১৭। এর পর তিনি ক্সপ্ররিতিক দায়িত্ব লাভ করলেন। এর আগে তাঁকে যে দায়িত্বে অভিষেক দেয়া হয়েছিল তার তুলনায় এই দায়িত্ব অনেকগুণ ব্যাপক ও আরও বেশি গুরুতর। খ্রীষ্ট তাঁকে মেষদের ও মেষশাবকদের চরানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যাদের জন্য খ্রীষ্ট তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পিতরকে প্রদান করার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট পিতরকে ক্ষমা করার ও তাঁকে নিজ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিলেন। যিনি এক সময় অশান্ত, অহঙ্কারী, ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী শিষ্য ছিলেন, তিনি এখন হয়ে উঠলেন শান্ত ও সংযমী। পরবর্তীতে তিনি তাঁর প্রভুকে আত্মত্যাগ ও আত্যোৎসর্গের মধ্য দিয়ে অনুসরণ করেছিলেন। তিনি খ্রীষ্টের দুঃখভোগের অংশীদার হয়েছিলেন এবং যখন খ্রীষ্ট তাঁর গৌরবের সিংহাসনে আরোহণ করবেন, তখন পিতরও তাঁর গৌরবের অংশীদার হবেন।COLBen 133.3

    যে মন্দতা পিতরের পতন ঘটিয়েছিল এবং ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা থেকে ফরীশীকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, সেই একই মন্দতা আজ হাজার হাজার মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। গর্ব ও আত্মনির্ভরতার মত এমন আর কোন কিছু নেই যা ঈশ্বরের কাছে বিঘ্নজনক কিংবা মানুষের জন্য বিপজ্জনক। সকল প্রকার পাপের মধ্যে এই পাপটি থেকে মুক্ত হওয়ার আশা সবচেয়ে কম, অর্থাৎ এই পাপের ক্ষমা লাভ করা মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন।COLBen 134.1

    পিতর হঠাৎ করেই পাপে পতিত হন নি, বরং ক্রমাগত ভাবে একটু একটু করে তিনি পতনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস তাঁকে এই কথা ভাবতে বাধ্য করেছেন, যে তিনি তাঁর পাপ অপরাধ থেকে মুক্ত হয়েছেন, আর অন্য দিকে তিনি ক্রমাগতভাবে অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রভুকেই অস্বীকার করে বসলেন। আমরা কখনোই নিশ্চিন্তে নিজেদের উপরে নির্ভর করতে পারি না এবং ভাবতে পারি না যে, আমরা প্রলোভন থেকে সুরক্ষিত আছি।COLBen 134.2

    যারা খ্রীষ্টকে ত্রাণকর্তা হিসেবে স্বীকার করে তাদের মন পরিবর্তন যতই আন্তরিক হোক না কেন, তাদের কখনোই এ কথা বলা বা মনে করা উচিত নয় যে, তারা পরিত্রাণ পেয়ে গেছে। এতে করে তাদের অন্তর ভুল পথে পরিচালিত হয়। প্রত্যেকেরই উচিত আশা ও বিশ্বাস অন্তরে লালন করতে শেখা। যখন আমরা নিজেদেরকে খ্রীষ্টের কাছে উৎসর্গ করি এবং নিশ্চিত ভাবে এ কথা জানি যে, তিনি আমাদেরকে গ্রহণ করেছেন, তখনও কিন্তু আমরা প্রলোভনের আওতা থেকে দূরে নই। ঈশ্বরের বাক্য এ কথা ঘোষণা করে, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে, তাহা প্রভু তাহাদিগকেই দিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে।” ১ করিন্থীয় ১০:১২। আমাদের সুরক্ষা কেবল মাত্র নিজেদের উপরে অবিশ্বাস এবং খ্রীষ্টের উপরে নির্ভরতার মধ্যেই নিহিত।COLBen 134.3

    পিতরের নিজ চরিত্রের ত্রুটিগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ছিল এবং খ্রীষ্টের কাছ থেকে তাঁর শক্তি ও অনুগ্রহ লাভ করা প্রয়োজন ছিল। প্রভু তাঁকে পরীক্ষা থেকে রক্ষা করতে পারেন নি, কিন্তু তিনি তাঁকে সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। পিতর যদি খ্রীষ্টের সাবধান বাণী গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাহলে তিনি তখনই প্রার্থনা করতেন যেন তিনি পরীক্ষায় না পড়েন। তিনি ভয়ে ও কাঁপা কাঁপা পায়ে হাঁটতেন, পাছে তিনি হোঁচট খান। সর্বোপরি তিনি ঐশ্বরিক সহায়তা লাভ করতেন, যেন শয়তান তাঁর উপরে বিজয় লাভ করতে না পারে।COLBen 135.1

    নিজের উপরে অতিরিক্ত নির্ভর করার কারণে পিতরের পতন ঘটেছিল। আর অনুশোচনা ও নিজেকে নম্র করে তোলার মধ্য দিয়ে তিনি আবারও উঠে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। পিতরের এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা পাঠ করলে প্রত্যেক পাপী মানুষ আশা ও উৎসাহ খুঁজে পাবে। যদিও পিতর মহা পাপ করেছিলেন, তথাপি তাঁকে প্রভু ত্যাগ করেন নি। খ্রীষ্টের এই বাণী তাঁর অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল, “আমি তোমার নিমিত্ত বিনতি করিয়াছি, যেন তোমার বিশ্বাসের লোপ না হয়।” লূক ২২:৩২। তাঁর তিক্ত অনুশোচনা ও মর্মযাতনার মধ্যে এই প্রার্থনা এবং ভালবাসা ও করুণা মেশানো খ্রীষ্টের সেই চাহনির স্মৃতি যেন তাঁর নতুন আশা যুগিয়েছিল। পুনরুত্থিত হওয়ার পর খ্রীষ্ট পিতরকে স্মরণ করেছিলেন এবং স্বর্গদূতের মধ্য দিয়ে সেই নারীদেরকে এই বার্তা দিয়েছিলেন, “তোমরা যাও, তাঁহার শিষ্যগণকে আর পিতরকে বল, তিনি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইতেছেন; যেমন তিনি তোমাদিগকে বলিয়াছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে দেখিতে পাইবে।” মার্ক ১৬:৭। পাপের ক্ষমা দানকারী ত্রাণকর্তা পিতরের অনুশোচনা গ্রাহ্য করেছিলেন।COLBen 135.2

    যে সহানুভূতি ও দয়ার মনোভাব পিতরকে মন পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল এবং তাঁকে প্রলোভন থেকে উদ্ধার করেছিল, তা আজও সেই সমস্ত আত্মাকে স্পর্শ করে, যারা প্রলোভনের সম্মুখবর্তী হচ্ছে। শয়তান তার বিশেষ ছল চাতুরি খাটিয়ে মানুষকে পাপে পতিত করে এবং এর পর তাকে ত্যাগ করে অসহায় ও সন্ত্রস্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। আর সেই মানুষটি তখন তার পাপের জন্য ক্ষমা চাইতেও আতঙ্ক বোধ করে। কিন্তু কেন আমরা ভয় করব, যেখানে আমাদের সদাপ্রভু ঈশ্বর বলেছেন, “সে বরং আমার পরাক্রমের শরণ লউক, আমার সহিত মিলন করুক, আমার সহিত মিলনই করুক”? যিশাইয় ২৭:৫। ঈশ্বরের প্রত্যেকটি বিধান স্থাপিত হয়েছে আমাদের নিজ নিজ দুর্বলতা থেকে উঠে আসার জন্য। ঈশ্বরের বাক্যের প্রত্যেকটি উৎসাহ ব্যঞ্জক বাণী আমাদেরকে খ্রীষ্টের কাছে আসার আহ্বান জানায়।COLBen 136.1

    ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা পুনরুদ্ধার করার জন্যই খ্রীষ্ট আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবন দানের মধ্য দিয়ে মানুষকে আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন। “এই জন্য, যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন,” ইব্রীয় ৭:২৫। খ্রীষ্ট তাঁর নিষ্পাপ জীবন, তাঁর বাধ্যতা, কালভেরীর ক্রুশের উপরে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের হারিয়ে যাওয়া জাতিকে আবার উদ্ধার করেছেন। আর এখন আমাদের পরিত্রাণের অধিনায়ক শুধু পাপ থেকে মন ফেরানোর জন্য আমাদের কাছে আবেদন জানাতে আসেন নি, বরং তিনি একজন বিজয়ী বীর হয়ে তাঁর অধিকার দাবী করতে এসেছেন। তাঁর উৎসর্গ সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি আমাদের মধ্যস্থতাকারী হয়ে তাঁর নিজ দায়িত্ব সম্পূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করেছেন। তিনি ঈশ্বরের সম্মুখে তাঁর নির্দোষ চরিত্র ও সদগুণ, তাঁর প্রার্থনা ও স্বীকারোক্তি, এবং তাঁর লোকদের কৃতজ্ঞতা পূর্ণ প্রশংসা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর ধার্মিকতার সৌরভে পরিপূর্ণ হয়ে তা ঈশ্বরের কাছে এক সুগন্ধি উৎসর্গ হয়ে উপনীত হয়েছে। এই উৎসর্গ সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য এবং এই ক্ষমা সকল মানুষের সমস্ত পাপ ও অপরাধ ক্ষমা করে। COLBen 136.2

    খ্রীষ্ট নিজেকে আমাদের পরিবর্তে ও আমাদের নিশ্চয়তা হিসেবে উৎসর্গ করেছিলেন এবং তিনি একজন মানুষকেও পেছনে ফেলে যান নি। তিনি জানতেন যে, মানুষ খুব শীঘ্রই অনন্তকালীন ধ্বংসের পথে ধাবিত হতে চলেছে, যা তিনি কখনো হতে দেবেন না। আর এ কারণেই তিনি মানুষের মৃত্যুর বদলে তাঁর নিজের মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন। তিনি জানতেন যে, একজন মানুষও তার নিজ প্রচেষ্টা বা যোগ্যতায় নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, তাই তিনি তাঁর দয়া ও সহানুভূতির মন নিয়ে তাদেরকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেন। COLBen 137.1

    তিনি যখনই কোন দুর্বল মানুষকে দেখবেন, তাকে সম্পূর্ণ ভাবে সবল না করে তিনি তাকে ত্যাগ করবেন না। তিনি তাঁর নিজ মৃত্যু সাধনের মধ্য দিয়ে মানুষের নৈতিকতাকে এমন স্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন যেন তা স্খলিত না হয়, যেন তাঁর শক্তি সব সময় আমাদের সাথে সাথে থাকে। আমরা তাঁর পায়ের কাছে আমাদের সমস্ত পাপ ও অপরাধ এনে উপস্থিত করতে পারি; কারণ তিনি আমাদেরকে ভালবাসেন ও তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। তাঁর চাহনি ও তাঁর কথা আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়। তিনি আমাদের চরিত্র তাঁর ইচ্ছা অনুসারে পরিবর্তিত করবেন। COLBen 137.2

    শয়তান তার সমস্ত শক্তি দিয়েও সেই আত্মাকে কখনো জয় করতে পারবে না, যে খ্রীষ্টের উপরে তার বিশ্বাস স্থাপন করেছে। “তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন।” যিশাইয় ৪০:২৯। COLBen 137.3

    “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” সদাপ্রভু বলেছেন, “কেবলমাত্র তোমার এই অপরাধ স্বীকার কর যে, তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অধর্মাচরণ করিয়াছ, ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে বিদেশীদের সহিত আপন আচার ভ্রষ্ট করিয়াছ, আর তোমরা আমার রবে অবধান কর নাই।” “আর আমি তোমাদের উপরে শুচি জল প্রক্ষেপ করিব, তাহাতে তোমরা শুচি হইবে; আমি তোমাদের সকল অশৌচ হইতে ও তোমাদের সকল পুত্তলি হইতে তোমাদিগকে শুচি করিব।” ১ যোহন ১:৯; যিরমিয় ৩:১৩; যিহিস্কেল ৩৬:২৫। COLBen 137.4

    কিন্তু আমাদের অবশ্যই নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যে জ্ঞানের কারণে আমরা ক্ষমা ও শান্তি পাওয়ার আগে আমাদের নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারব। দৃষ্টান্তে উল্লিখিত ফরীশী নিজেকে পাপী বলে মনে করত না। পবিত্র আত্মা তার অন্তরে কাজ করতে পারেন নি। সে তার নিজের ধার্মিকতা নিয়ে এত বেশি অহঙ্কারী ছিল এবং সেই অহঙ্কারকে সে তার আত্মার চারপাশে এমন এক দুর্ভেদ্য বর্ম বানিয়ে রেখেছিল যে, ঈশ্বরের ও স্বর্গদূতদের সমস্ত বাহিনীর শক্তি তা ভেদ করতে পারে নি। যে ব্যক্তি নিজেই নিজের পাপ চিহ্নিত করতে পারে, তাকেই খ্রীষ্ট রক্ষা করতে পারেন। তিনি এসেছেন “দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য; বন্দিগণের কাছে মুক্তি প্রচার করিবার জন্য, অন্ধদের কাছে চক্ষুদান প্রচার করিবার জন্য, উপদ্রুতদিগকে নিস্তার করিয়া বিদায় করিবার জন্য।” লূক ৪:১৮। “সুস্থলোকদের চিকিৎসকের প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িত লোকদেরই প্রয়োজন আছে।” লূক ৫:৩১। আমাদের অবশ্যই নিজেদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে, নতুবা আমরা নিজেদের জীবনের জন্য খ্রীষ্টের সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করতে পারব না। আমাদের অবশ্যই নিজেদের বিপদ ভালো করে বুঝতে হবে, নতুবা আমরা আশ্রয় গ্রহণের জন্য বিপদ থেকে পালাতে পারব না। আমাদের অবশ্যই নিজ নিজ আঘাতের বেদনা অনুভব করতে হবে, নতুবা আমরা সুস্থহওয়ার প্রয়োজন অনুভব করতে পারব না। COLBen 138.1

    প্রভু বলেছেন, “তুমি কহিতেছ, আমি ধনবান, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই; কিন্তু জান না যে, তুমিই দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ। আমি তোমাকে এক পরামর্শ দিই; তুমি আমার কাছে এই সকল দ্রব্য ক্রয় কর - অগ্নি দ্বারা পরিষ্কৃত স্বর্ণ, যেন ধনবান হও; শুক্ল বস্ত্র, যেন বস্ত্র পরিহিত হও, আর তোমার উলঙ্গতার লজ্জা প্রকাশিত না হয়; চক্ষুতে লেপনীয় অঞ্জন, যেন দেখিতে পাও।” প্রকাশিত বাক্য ৩:১৭, ১৮। বিশ্বাস হচ্ছে আগুনে পুড়ে খাঁটি হওয়া সোনার মত, যা ভালবাসার মধ্য দিয়ে কাজ করে। একমাত্র এই ভালবাসাই আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে একাত্ম করতে পারে। আমরা সক্রিয় হতে পারি, আমরা অনেক কাজ করতে পারি; কিন্তু যে ভালবাসা খ্রীষ্টের অন্তরে অবস্থান করে, সেই ভালবাসা ব্যতীত আমরা কোনভাবেই ঈশ্বরের স্বর্গীয় পরিবারের সদস্য বলে পরিগণিত হতে পারি না। COLBen 138.2

    কোন মানুষই নিজে থেকে তার ভুলগুলো বুঝতে পারে না। “অন্তঃকরণ সর্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য, কে তাহা জানিতে পারে?” যিরমিয় ১৭:৯। ঠোঁট আত্মার দৈন্যতার কথা বললেও অন্তর তা অস্বীকার করতে পারে। ঈশ্বরের কাছে যখন আমরা আত্মার দৈন্যতার কথা বলি, তখন আমাদের অন্তর হয়তো নিজ নম্রতা ও ধার্মিকতাকে উঁচু করে দেখার প্রবণতায় দোদুল্যমান অবস্থায় থাকে। কেবল মাত্র একটি উপায়েই আমরা নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি। আমাদের অবশ্যই খ্রীষ্টকে দর্শন করতে হবে। তাঁর সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে মানুষ নিজ ধার্মিকতাকে অনেক বেশি উঁচু করে দেখা শুরু করে। যখন আমরা তাঁর পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অবলোকন করব, তখন আমরা আমাদের নিজেদের দুর্বলতা ও দৈন্যতা দেখতে পাব, এবং আমাদের যে সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি আছে সেগুলোও প্রকৃত অবস্থানে দেখতে পাব। আমরা দেখব যে, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি এবং আশাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছি, নিজেদের ধার্মিকতার আবরণে নিজেদেরকে জড়িয়ে আমরা শ্বাস রুদ্ধ করে ফেলছি, অন্যান্য পাপী মানুষের মত করে। আমরা দেখতে পাব যে, যদি আমাদের এ থেকে উদ্ধার পেতে হয় তাহলে নিজেদের কোন ভালো কাজের জোরেCOLBen 139.1

    বা যোগ্যতায় আমরা তা থেকে উদ্ধার পেতে পারি না, একমাত্র ঈশ্বরের অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহের কারণে আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি। করগ্রাহী লোকটির প্রার্থনা ঈশ্বর শ্রবণ করেছিলেন, কারণ তার প্রার্থনায় সর্বময় ক্ষমতাশালী ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ পেয়েছিল। করগ্রাহীটি নিজেকে নিয়ে কেবল লজ্জিত ছিল। যারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে তাদের প্রত্যেককে এই মন নিয়েই ঈশ্বরের কাছে আসতে হবে। কেবল মাত্র বিশ্বাস - যে বিশ্বাস নিজের উপরে সব ধরনের নির্ভরতা ত্যাগ করে - সেই বিশ্বাসের উপরে ভর করেই প্রত্যেক দীনহীন ও পাপী মানুষকে ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করতে হবে।COLBen 139.2

    বাহ্যিক কোন কিছু দেখে বিশ্বাস ও আত্মত্যাগ উপলব্ধি করা যায় না। কোন মানুষই তার আমিত্বকে সম্পূর্ণ ভাবে ত্যাগ করতে পারে না। আমরা কেবল খ্রীষ্টের কাজে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করতে পারি। সে সময় আমাদের আত্মার বক্তব্য হবে ঠিক এমন: প্রভু, আমার হৃদয় তুমি গ্রহণ কর; কারণ আমি তা দিতে পারি না। এই হৃদয় তোমারই অধিকার। তুমিই তা পরিশুদ্ধ কর, কারণ আমি তা তোমার জন্য পবিত্র রাখতে পারি নি। তুমি আমাকে রক্ষা কর, আমার দুর্বল ও খ্রীষ্টবিহীন সত্তাকে উদ্ধার কর। আমাকে পরিবর্তিত কর, তোমার মত করে সাজাও, আমাকে এক খাঁটি ও পবিত্র স্থানে উপনীত কর, যেখানে তোমার তীব্র ভালবাসার প্রবাহ আমার আত্মার মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হতে থাকবে। COLBen 139.3

    নিজ সত্তার এই পুনর্গঠন শুধু যে খ্রীষ্টিয় জীবনের শুরুতেই সাধন করতে হবে তা নয়। স্বর্গের পথে প্রতিটি পদক্ষেপেই আমাদেরকে নতুনীকৃত হতে হবে। আমাদের সমস্ত ভাল কাজ নির্ভর করছে এমন এক শক্তির উপরে যা আমাদের মধ্যে অবস্থান করে না, যা আসে বাইরে থেকে। এ কারণে ঈশ্বরের সম্মুখে নিজ আত্মা সমর্পণ করার পূর্বে আমাদের ক্রমাগত ভাবে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের পাপ স্বীকার এবং নিজেদেরকে নম্র করার প্রয়োজন রয়েছে। কেবল মাত্র সার্বক্ষণিক ক্রমাগত ভাবে নিজেকে পরিবর্তন করা ও খ্রীষ্টের উপরে নির্ভর করার মধ্য দিয়েই আমরা নিরাপদে পথ চলতে পারি। COLBen 140.1

    যত বেশি আমরা যীশুর কাছাকাছি আসব তত স্পষ্ট করে আমরা তাঁর চরিত্রের শুদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারব। যত বেশি আমরা আমাদের পাপের পাপময়তার কথা চিন্তা করব, তত বেশি করে আমরা নিজেদেরকে উঁচু করা থেকে বিরত থাকতে পারব। ঈশ্বরের চোখে যারা পবিত্র মানুষ হিসেবে বিবেচিত হন, তারা নিজেদেরকে ভাল বলে জাহির করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকেন। প্রেরিত পিতর খ্রীষ্টের একজন বিশ্বস্ত পরিচর্যাকারী হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি স্বর্গীয় আলো ও শক্তিতে দারুনভাবে সম্মানিত হয়েছিলেন। খ্রীষ্টের মণ্ডলী প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। কিন্তু পিতর কখনোই তাঁর অধঃপতনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা ভুলে যান নি। তাঁর পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। তথাপি তিনি খুব ভালো করে জানতেন যে, তাঁর চরিত্রের দুর্বলতার কারণে তিনি যা হারিয়েছিলেন, তা একমাত্র খ্রীষ্টের অনুগ্রহণ তাঁকে আবারও ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি তাঁর নিজের ভেতরে এমন কোন কিছুই খুঁজে পান নি যার জন্য গৌরব করা যায়। COLBen 140.2

    প্রেরিত বা ভাববাদীদের কেউই কখনো এই দাবী করেন নি যে, তাঁরা নিষ্পাপ। যে সকল মানুষ ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করেছেন, যারা জেনে শুনে কোন অন্যায় বা পাপ করার বদলে বরং নিজের জীবন ত্যাগ করার মত সঙ্কল্প রাখতেন, যাদেরকে ঈশ্বর তাঁর স্বর্গীয় আলো ও ক্ষমতা দান করেছিলেন, তারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ স্বভাবের পাপময়তার কথা স্বীকার করেছেন। তারা নিজেদের রক্ত মাংসের উপরে কখনো বিশ্বাস করেন নি, তারা কখনো নিজেদের ধার্মিক বলে দাবী করেন নি, বরং তারা সম্পূর্ণ ভাবে খ্রীষ্টের ধার্মিকতার উপরে নির্ভর করেছেন। যারা খ্রীষ্টকে দর্শন করবে তাদের প্রত্যেকের জীবনেও ঠিক এমনটি হওয়া উচিত।COLBen 141.1

    খ্রীষ্টিয় অভিজ্ঞতার প্রত্যেকটি ধাপে আমাদের অনুশোচনা আরও গভীরতর হবে। যাদেরকে প্রভু ক্ষমা করে দিয়েছেন, যাদেরকে তিনি তাঁর নিজের লোক বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “তখন তোমরা আপনাদের মন্দ আচরণ ও অসৎক্রিয়া সকল স্মরণ করিবে, এবং আপনাদের অপরাধ ও জঘন্য কার্য প্রযুক্ত আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে অতিশয় ঘৃণা করিবে।” যিহিস্কেল ৩৬:৩১। আবারও তিনি বলেছেন, “বাস্তবিক আমিই তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিব; তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; অভিপ্রায় এই, আমি যখন তোমার ক্রিয়া সকল মার্জনা করিব, তখন তুমি যেন তাহা স্মরণ করিয়া লজ্জিতা হও, ও নিজ অপমান প্রযুক্ত আর কখনও মুখ না খুল, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন।” যিহিস্কেল ১৬:৬২, ৬৩। তখন আর আমাদের ঠোঁট নিজেদের গর্বের ও অহঙ্কারের কথা উচ্চারণ করবে না। তখন আমরা বুঝতে পারব যে, একমাত্র খ্রীষ্টের উপরেই আমাদের জীবন নির্ভর করছে। আমরা প্রেরিত পৌলের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারি, “যেহেতু আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না।” রোমীয় ৭:১৮। “কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ ছাড়া আমি যে আর কোন বিষয়ে শ্লাঘা করি, তাহা দূরে থাকুক; তাঁহারই দ্বারা আমার জন্য জগৎ, এবং জগতের জন্য আমি ক্রুশারোপিত।” গালাতীয় ৬:১৪।COLBen 141.2

    এই অভিজ্ঞতার সাথে খুব সুন্দর সঙ্গতি রয়েছে এই আদেশটির, “অতএব, হে আমার প্রিয়তমেরা, তোমরা সর্বদা যেমন আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি আমার সাক্ষাতে যেরূপ কেবল সেইরূপ নয়, বরং এখন আরও অধিকতররূপে আমার অসাক্ষাতে, সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।” ফিলিপীয় ২:১২, ১৩। ঈশ্বর আপনাকে এই ভয় দেন না যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করতে অসমর্থ হবেন, বা তিনি তাঁর ধৈর্য ধারণ করতে ব্যর্থ হবেন, কিংবা তাঁর সহানুভূতি ও দয়া হ্রাস পাবে। আমাদের বরং এই ভয় করা উচিত যে, পাছে আমরা আর খ্রীষ্টের ইচ্ছার অধীন না থাকি, পাছে আমাদের চরিত্রের বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। “ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য উভয়ের সাধনকারী।” এই ভেবে ভয় করুন যে, পাছে আপনার আত্মা ও মহান কার্য সাধনকারীর মধ্যে আপনার আমিত্ব এসে স্থান করে নেয়। ভয় করুন, পাছে আপনি আপনার নিজের শক্তির উপরে নির্ভর করতে শুরু করেন, পাছে আপনি খ্রীষ্টের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেন এবং তাঁর উপস্থিতি ব্যতিরেকে এই জীবনের পথ চলতে চেষ্টা করেন। COLBen 142.1

    আমাদের গর্ব ও আত্ম অহঙ্কারকে উৎসাহিত করে এমন সমস্ত কিছুকে আমাদের অবশ্যই দমন করা প্রয়োজন; এ কারণে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে যেন আমরা কাউকে তোষামোদ না করি, এবং নিজেদের প্রতি অন্যদের করা কোন তোষামোদি বা প্রশংসা গ্রহণ না করি। তোষামোদি করা শয়তানের কাজ। সে এক দিকে যেমন তোষামোদি করায় পটু, তেমনি অন্য দিকে সে অভিযোগ করতেও ওস্তাদ। এভাবেই সে আমাদের আত্মা বিনষ্ট করে দেয়ার চেষ্টায় রত থাকে। যে সমস্ত মানুষ অন্য মানুষের গৌরব প্রশংসা করে তাদেরকে শয়তান তার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। খ্রীষ্টের প্রত্যেক কার্য সাধনকারী তাদের দিক থেকে প্রশংসা সূচক সমস্ত কথা দূরে সরিয়ে দিক। দৃষ্টিপথ থেকে সরে যাক আমিত্ব। কেবল খ্রীষ্টকেই উচ্চীকৃত করা হোক। “যিনি আমাদিগকে প্রেম করেন, ও নিজ রক্তে আমাদের পাপ হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন,” তাঁর প্রতিই প্রতিটি মানুষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করুক, এবং প্রত্যেক অন্তর থেকে তাঁর প্রতিই প্রশংসা নির্গত হোক। প্রকাশিত বাক্য ১:৫। যে জীবনে সদাপ্রভুর প্রতি ভয় নিহিত রয়েছে তা কোন দুঃখ ও গ্লানির জীবন নয়। বরং আমাদের জীবনে খ্রীষ্টের অনুপস্থিতিই আমাদেরকে দুঃখার্ত করে তোলে এবং জীবনকে করে তোলে গ্লানি ও দুর্দশাগ্রস্ত। যাদের ভেতরে রয়েছে আত্মঅহঙ্কার ও নিজের প্রতি প্রচণ্ডভালবাসা, তারা খ্রীষ্টের সাথে জীবন ধারণ করা ও তাঁর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। যে হৃদয় সেই পাথরের উপরে পতিত হয় নি, সেই হৃদয় তার নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে গর্ব করে। মানুষ তার নিজের সম্মান ও মর্যাদা লাভ করতে চায়। মানুষ চায় এমন এক পথ ধরে হাঁটতে যা তার নিজের সফলতার কথা বলবে। নিজের প্রতি ভালবাসা, জনপ্রিয়তার ও প্রশংসা পাওয়ার মোহ তাদের অন্তর থেকে ত্রাণকর্তা খ্রীষ্টকে পৃক করে দেয়, এবং খ্রীষ্টবিহীন তাদের অন্তর হয়ে পড়ে বিষণœতা ও দুঃখে ঘেরা। কিন্তু যে আত্মায় খ্রীষ্ট বসতি করেন তা সব সময় আনন্দিত থাকে। কারণ যারা যারা তাঁকে গ্রহণ করে, তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্যের সর্ব প্রধান অর্থ হচ্ছে আনন্দ। COLBen 142.2

    “কেননা যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি অনন্তকাল-নিবাসী, যাঁহার নাম ‘‘পবিত্র”, তিনি এই কথা কহেন, আমি ঊর্ধ্বলোকে ও পবিত্র স্থানে বাস করি, চূর্ণ ও নম্র আত্মা মনুষ্যের সঙ্গেও বাস করি, যেন নম্রদের আত্মাকে সঞ্জীবিত করি ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করি।” যিশাইয় ৫৭:১৫। COLBen 143.1

    যখন মোশি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের গৌরব দেখতে পেয়েছিলেন। আমরা যখন পাথর স্বরূপ খ্রীষ্টের আড়ালে নিজেদের আশ্রয় গ্রহণ করি, তখন তিনি আমাদেরকে তাঁর ক্রুশবিদ্ধ হাত দিয়ে আগলে ধরেন, এবং তখন আমরা শুনব সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁর নিজ দাসদেরকে কী কথা বলেছেন। ঠিক যেমন মোশির কাছে সদাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন, তেমনি তিনি আমাদের কাছেও নিজেকে প্রকাশ করবেন: “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্যন্ত দয়ারক্ষক। অপরাধের, অধর্মের ও পাপের ক্ষমাকারী।” যাত্রা ৩৪:৬, ৭। COLBen 143.2

    আমাদের পরিত্রাণের কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে এমন কিছু নিগূঢ় তত্ত্ব যা উপলব্ধি করা মানুষের আসলেই বেশ কঠিন বিষয়। “চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই, যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” ১ করিন্থীয় ২:৯। পাপী মানুষ যখন খ্রীষ্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে তাঁর কাছে আনীত হয়, ক্রুশের কাছে উপনীত হয়, এবং নিজেকে ক্রুশের সাথে একাত্ম করে দেয়, তখনই এক নতুন সত্তার সৃষ্টি হয়। তাকে এক নতুন হৃদয় দেয়া হয়। সে খ্রীষ্ট যীশুর সাথে এক নতুন মানুষে পরিণত হয়। তাকে পবিত্র করে তোলার জন্য আর কোন কিছুর তখন আর প্রয়োজন হয় না। স্বয়ং ঈশ্বর “যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্মিক গণনা করেন,” রোমীয় ৩:২৬। আর তিনি “যাহাদিগকে আহ্বান করিলেন, তাহাদিগকে ধার্মিক গণিতও করিলেন,” রোমীয় ৮:৩০। পাপের শাস্তি হিসেবে মানুষকে যেমন মহা লজ্জা ও পতনের সম্মুখীন হতে হয়, তেমনি পরিত্রাণের ভালবাসার মধ্য দিয়ে লাভ করা যায় আরও মহা সম্মান ও উচ্চীকৃত অবস্থান। মানুষ যখন ঐশ্বরিক প্রতিমূর্তির আদলে নিজেকে পরিবর্তিত করে নতুন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, তখন তাকে স্বর্গীয় ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা প্রদান করা যায়, যা তাকে দাঁড় করায় সেই স্বর্গদূতদের চেয়েও উচ্চ এক অবস্থানে, যারা কখনো অধঃপতিত হয় নি। COLBen 143.3

    “যে ব্যক্তি মনুষ্যের অবজ্ঞাত, প্রজাবৃন্দের ঘৃণাস্পদ ও কর্তৃত্বকারীদের দাস, তাহাকে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মুক্তিদাতা ও তাহার পবিত্রতম, এই কথা কহেন, তোমাকে দেখিলে রাজারা উঠিয়া দাঁড়াইবে, অধ্যক্ষেরা প্রণিপাত করিবে; সদাপ্রভুর নিমিত্তই করিবে, তিনি তো বিশ্বসনীয়; ইস্রায়েলের পবিত্রতমের নিমিত্ত করিবে, তিনি তো তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।” যিশাইয় ৪৯:৭। COLBen 144.1

    “কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” COLBen 144.2