Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    “একটি সরিষা দানার তুল্য”

    মথি ১৩:৩১, ৩২; মার্ক ৪:৩০-৩২; লূক ১৩:১৮, ১৯ পদের উপর ভিত্তি করে রচিত

    সমাগত যে জনতা যীশুর শিক্ষা শুনছিল তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল ফরীশী। এ থেকে আমরা প্রচ্ছন্নভাবে বুঝতে পারি যে, তাঁর শ্রোতাদের মধ্যে কত কম লোকই না তাঁকে মশীহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনাও করেছিল যে, এই শিক্ষক কী করে ইস্রায়েলকে জাতিগণের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত করবেন। কোন সম্পদ, ক্ষমতা বা সম্মান ছাড়া তিনি কীভাবে নতুন রাজ্য স্থাপন করবেন? খ্রীষ্ট তাদের মনের চিন্তা পড়তে পেরেছিলেন, এবং তিনি তাদেরকে এই জবাব দিয়েছিলেন:COLBen 59.1

    “আমরা কিসের সহিত ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করিব? কোন্ দৃষ্টান্ত দ্বারাই বা তাহা ব্যক্ত করিব?” পৃথিবীতে এমন কিছুই আসলে নেই যার দ্বারা স্বর্গরাজ্যের তুলনা করা যেতে পারে। কোন মানুষই তাঁকে স্বর্গরাজ্যের কোন প্রতীক দেখাতে পারল না। তাই তিনি বললেন, “তাহা একটি সরিষা-দানার তৃল্য; সেই বীজ ভূমিতে বুনিবার সময়ে ভূমির সকল বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু বুনা হইলে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া সকল শাক হইতে বড় হইয়া উঠে, এবং বড় বড় ডাল ফেলে; তাহাতে আকাশের পক্ষীগণ তাহার ছায়ার নিচে বাস করিতে পারে।”COLBen 59.2

    ঈশ্বর প্রতিটি বীজের মধ্যেই জীবন সৃষ্টি করার শক্তি সুপ্তভাবে নিহিত রাখেন, যার ফলে তা অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে। কোন মানুষের শক্তির উপরে এর বৃদ্ধি নির্ভর করে না। খ্রীষ্টের রাজ্যও ঠিক তেমন। এটি একটি নতুন সৃষ্টি। যারা এই পৃথিবীর রাজ্যসমূহের নিয়মের অনুসারী হয়ে চলে তাদের বৃদ্ধি লাভের নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত এটি। পার্থিব শাসন ব্যবস্থা fগঠন হয় পেশী শক্তির চর্চার মধ্য দিয়ে; যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তা নিজ প্রতিপত্তি রক্ষা করে; কিন্তু নতুন রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শান্তির রাজা। পবিত্র আত্মা এই পৃথিবীর রাজ্যসমূহকে হিংস্র শিকারী পশু আকারে দেখিয়েছেন; কিন্তু খ্রীষ্ট হলেন “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান,” যোহন ১:২৯। খ্রীষ্টের শাসন ব্যবস্থায় বিবেককে জাগ্রত করে তোলার জন্য কোন বল প্রয়োগের আয়োজন নেই। পৃথিবীর অন্যান্য রাজ্য যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, ঈশ্বরের রাজ্য ঠিক সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে যিহুদীরা মনে করেছিল। ধার্মিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা বাহ্যিক শক্তির প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছিল। তারা নানা দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু খ্রীষ্ট একটি যুগান্তকারী নীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সত্য ও ধার্মিকতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি ভ্রান্তি ও পাপ মুছে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। COLBen 59.3

    যীশু যখন এই দৃষ্টান্তটি বলছিলেন, সে সময় নিশ্চয়ই কাছে বা দূরে কোথাও কোন সরিষা ক্ষেত দেখা যাচ্ছিল, সেই ক্ষেতের সরিষা গাছগুলো নিশ্চয়ই ঘাস ও শস্যগুলোর উপরে উঠেছিল এবং মৃদু মন্দ বাতাসে সেগুলোর শাখাগুলো দুলছিল। পাখিরা এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে বেড়াচ্ছিল এবং পাতায় ছাওয়া চাদোয়ার মধ্যে মিহি স্বরে ডাকছিল। তথাপি এত বড় একটি উদ্ভিদের উৎস হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষুদ্র বীজটি। প্রমে এই বীজটি থেকে খুব সূক্ষ্ম একটি শেকড় বেরিয়েছিল, কিন্তু সেটিই বীজটির অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করেছিল, এবং ধীরে ধীরে তা বীজটিকে তৃণতে রূপান্তরিত করে অবশেষে পূর্ণাঙ্গ একটি উদ্ভিদে রূপ দান করেছে। খ্রীষ্টের রাজ্যও শুরুতে এতটাই ম্রিয়মাণ ও তাৎপর্যহীন বলে মনে হয়েছিল। পৃথিবীর রাজ্যসমূহের সাথে তুলনা করলে এই রাজ্য অন্য যে কোন রাজ্যের তুলনায় নিকৃষ্ট বলে মনে হবে। খ্রীষ্ট নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা দেয়ায় পৃথিবীর শাসকগণ তাঁকে তুচ্ছ করেছিল। তথাপি তাঁর অনুসারীদের কাছে প্রদত্ত সেই শক্তিপূর্ণ সত্যের অন্তস্থিত সুসমাচারের রাজ্যে নিহিত ছিল এক স্বর্গীয় জীবন। কত না দ্রুত তা বৃদ্ধি পেল! কত না সুদূরপ্রসারী ছিল এর প্রভাব! যীশু যখন এই দৃষ্টান্তটি বলছিলেন সে সময় হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন গালীলীয় শ্রমজীবী মানুষ ছিলেন এই নতুন রাজ্যের প্রতিনিধি। তাদের দারিদ্র এবং তাদের সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণেই মানুষ বারবার যীশুকে অনুসরণকারী এই সরলমনা মানুষগুলোর সাথে নিজেদেরকে এক কাতারে দাঁড় করাতে চায়নি। কিন্তু সেই সরিষার দানা ঠিকই বেড়ে উঠেছে এবং তা সারা পৃথিবীতে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। মানুষের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হওয়া চাকচিক্যময় পার্থিব রাজ্য এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু খ্রীষ্টের রাজ্য চিরস্থায়ী এবং এই রাজ্যের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সুদূরপ্রসারী।COLBen 60.1

    এ কারণে মানুষের অন্তরে ঈশ্বরের অনুগ্রহের কাজ প্রারম্ভিকভাবে খুব ছোট পরিসরে শুরু হয়। একটি শব্দ উচ্চারিত হওয়ার পর আত্মার মাঝে একটি আলোক রশ্মি পতিত হয়, নতুন জীবনের সূচনা ঘটানোর জন্য তা এক নতুন উদ্দীপনার জন্ম দেয়। তা কী ফল বয়ে আনবে তা কে বলতে পারে?COLBen 61.1

    সরিষা দানার দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের রাজ্যে বৃদ্ধিকেই যে শুধু চিত্রায়িত করা হয়েছে তা নয়, বরং সেই সাথে দৃষ্টান্তে যে অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত হয়েছে তা এর বৃদ্ধির প্রত্যেকটি ধাপে পুনরাবৃত্তি হয়েছে। কারণ প্রতিটি প্রজন্মে ঈশ্বর তাঁর মণ্ডলীর জন্য একটি বিশেষ সত্য ও একটি বিশেষ কাজ নিহিত রেখেছেন। যে সত্য পার্থিব জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় পূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তা শিশুর মত সরল ও নম্র ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। এই সত্য আত্মোৎসর্গের আহ্বান জানায়। এই আহ্বান যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার ও তাতে জয় লাভ করার আহ্বান। পৃথিবীতে এই আহ্বানের স্বপক্ষে সাড়া দেয়ার মত মানুষের সংখ্যা খুব কম। পৃথিবীর বড় বড় ক্ষমতাশালী মানুষেরা এবং প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ যিহূদী মণ্ডলী এর বিরোধিতা করেছে। খ্রীষ্টের অগ্রদূত যোহন বাপ্তাইজকের কথা চিন্তা করুন, যিনি একা দাঁড়িয়ে যিহূদী জাতির ঔদ্ধত্য ও ধর্ম চর্চায় অতিমাত্রায় আনুষ্ঠানিকতা চর্চার জন্য তীব্রভাবে তাদের তিরস্কার করেছেন। ইউরোপে প্রম সুসমাচার প্রচারকারীদের কথা চিন্তা করুন। দুই তাঁবু নির্মাতা পৌল ও সীল যখন ত্রোয়া থেকে ফিলিপীর উদ্দেশে সমুদ্র পথে যাত্রা করলেন, তখন তাঁদের অন্তরে কত না অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তা কাজ করছিল। খ্রীষ্টের বাণী প্রচার করতে গিয়ে “বৃদ্ধ পৌল” রোম সম্রাট সিজারের হাতে কারাবন্দী হয়েছিলেন। বৃহৎ রোম সাম্রাজ্যের পৌত্তলিকতার বিপরীতে দাস ও শ্রমজীবীদের এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটির সংগ্রাম লক্ষ করুন। দেখুন মার্টিন লুথার কীভাবে সেই শক্তিশালী মণ্ডলীর বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়েছিলেন, যা ছিল পার্থিব জ্ঞানের পীঠস্থান। দেখুন তিনি কীভাবে সম্রাট ও পোপের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অটল অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন, “আমি আমার এই অবস্থানেই স্থির থাকব; এর ব্যতিক্রম কোন কিছু আমি করতে পারব না। স্বয়ং ঈশ্বর আমার সহায়।” দেখুন জন ওয়েসলি কীভাবে কট্টর আনুষ্ঠানিক ধর্মচর্চা, যৌনতা ও অনৈতিকতার আগ্রাসনের মধ্যেও খ্রীষ্ট ও তাঁর ধার্মিকতাকে প্রচার করেছেন। অবিশ্বাসীদের মাঝে খ্রীষ্টের প্রেম ও সুসমাচারের বার্তা নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রত্যেকে কতটা পরিশ্রম করেছেন তা দেখুন। আর এ প্রসঙ্গে একজন তথাকথিত জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া শুনুন: “থামো বাছা! ঈশ্বর যদি সত্যিই অবিশ্বাসীদের মন পরিবর্তন করতে চান, তাহলে তিনি তোমার বা আমার সাহায্য ছাড়াই তা করতে পারবেন।”COLBen 61.2

    বহু শতাব্দী আগে যারা এই সত্যের বীজ বপন করেছিলেন, তাদের নামে আজ এই প্রজন্মের বড় বড় ধর্মপ্রাণ নেতারা ভূয়সী প্রশংসা করেন ও তাদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। অনেকেই কি এই বীজ থেকে উৎসারিত মহীরূহের বৃদ্ধিতে আজও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন না? অতীতের মত আজও সেই একই চিৎকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, “আমরা জানি, ঈশ্বর মোশির সঙ্গে কথা বলিয়াছিলেন; কিন্তু এ [যীশু খ্রীষ্ট, যাঁকে স্বয়ং ঈশ্বর তাঁর দূত হিসেবে প্রেরণ করেছেন] কোথা হইতে আসিল, তাহা জানি না,” যোহন ৯:২৯। প্রাথমিক মণ্ডলীর যুগে জ্ঞানী বা প্রজ্ঞাবান মানুষদের কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর ছিল না; বরং এর উত্তর ছিল, সেই সমস্ত মানুষদের কাছে, যারা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করার মত ততটা শিক্ষিত বা জ্ঞানী ছিলেন না, তথাপি তারা ঈশ্বরের বাক্যের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। “কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতু মাংস অনুসারে জ্ঞানবান অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চপদস্থঅনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থমূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবানদিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন; এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ, যাহা যাহা কিছু নয়, সেই সকল ঈশ্বর মনোনীত করিলেন, যেন, যাহা যাহা আছে, সেই সকল অকিঞ্চন করেন” (১ করিন্থীয় ১:২৬-২৮); “যেন তোমাদের বিশ্বাস মনুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়” (১ করিন্থীয় ২:৫)।COLBen 62.1

    মানব জাতির সর্বশেষ প্রজন্মের কাছে সরিষা দানার দৃষ্টান্ত এক তাৎপর্যপূর্ণ ও সাফল্যমণ্ডিত পরিপূর্ণতা লাভ করবে। সেই ক্ষুদ্র বীজটি হয়ে উঠবে এক বৃক্ষে। সতর্কবাণী ও দয়ার শেষ বার্তা যাবে “প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা”র কাছে (প্রকা ১৪:৬-১৪), “ঈশ্বরের নামের জন্য পরজাতিগণের মধ্য হতে এক দল প্রজা গ্রহণ” (প্রেরিত ১৫:১৪; প্রকা ১৮:১)। আর পৃথিবী তাঁর গৌরবে আলোকময় হয়ে উঠবে।COLBen 63.1

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents