বীজ-বাপক ও বীজ
বীজবাপকের দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে যীশু খ্রীষ্ট চিত্রিত করেছেন স্বর্গরাজ্যের বিষয়সমূহকে এবং নিজ লোকদের জন্য মহান প্রভুর কাজকে। বীজ-বাপক যেমন মাঠে বীজ বোনে, সেভাবে যীশু স্বর্গীয় সত্যের বীজ ছড়িয়ে দিতে এসেছেন। তাঁর দৃষ্টান্ত শিক্ষাগুলোই ছিল সেই বীজ, যার মধ্য দিয়ে তাঁর অনুগ্রহের সবচেয়ে মূল্যবান সত্যগুলো বপন করা হয়েছিল। বীজ-বাপকের দৃষ্টান্তটির সারল্য ও সহজবোধ্যতার কারণেই তা যেভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেভাবে করা হয়নি। প্রকৃতির মাটিতে বীজ বোনার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি আমাদের অন্তরে সুসমাচারের বীজ বপন করতে চান, যা বপনের মধ্য দিয়ে মানুষকে আবারও ঈশ্বরের প্রতি অনুগত করে তোলা সম্ভব হবে। যিনি ক্ষুদ্র বীজের দৃষ্টান্ত-কথা বলেছেন, তিনি স্বর্গের সর্বময় অধিকর্তা। জাগতিক বীজ বপনের জন্য যে নিয়ম প্রযোজ্য, ঈশ্বরীয় সত্যের বীজ বপনের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম প্রযোজ্য।COLBen 17.1
গালীল সাগরের তীরে এক দল লোক, অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ও মনে অনেক আশা নিয়ে, যীশুর কথা শুনতে ও তাঁকে দেখতে, জড়ো হয়েছিল। সেখানে অনেক অসুস্থলোকেরা তাদের খাটিয়ায় শুয়ে ছিল, যারা যীশুর কাছে নিজেদেরকে দেখাতে চেয়েছিল। পাপে পূর্ণ একটি জাতির দুঃখ-দুর্দশা উপশম করা ছিল যীশুর ঈশ্বর-প্রদত্ত অধিকার। সে কারণে তিনি রোগকে ধমক দিয়েছেন এবং তাঁর চারপাশে জীবন, সুস্থতা, ও শান্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন।COLBen 17.2
ভিড় যেমন ক্রমেই বেড়ে চলছিল, এবং মানুষ চাপাচাপি করতে করতে একেবারে যীশুর কাছে চলে এসেছিল, এক সময় সেখানে আর তিল ধারণের জায়গা রইল না। যীশু তখন জেলেদের নৌকায় থেকে তাদের উদ্দেশে কথা বলার জন্য, তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন যেন তাঁরা নৌকাটিকে ঠেলে পার থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি পারে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত মানুষের উদ্দেশে কথা বললেন।COLBen 18.1
সাগরের পাশেই ছিল মনোরম গিনেষরৎ সমভ‚মি, যার পেছনে উঠে গেছে পাহাড়ের সারি। সেই পাহাড়ের ঢালে এবং সমভ‚মিতে বীজ-বাপক ও ফসল কর্তনকারীরা তাদের কাজে ব্যস্ত ছিল। এক দল ক্ষেতে বীজ বুনছিল এবং অন্যরা আগাম শস্য কর্তন করছিল। এই দৃশ্য দেখে যীশু বলতে শুরু করলেন —COLBen 18.2
“দেখ, বীজ-বাপক বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময় কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে পক্ষীরা আসিয়া তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক বীজ পাষাণময় ভ‚মিতে পড়িল, যেখানে অধিক মৃত্তিকা ছিল না, তাহাতে অধিক মৃত্তিকা না পাওয়াতে তাহা শীঘ্র অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু সূর্য উঠিলে পর পুড়িয়া গেল, এবং তাহার মূল না থাকাতে শুকাইয়া গেল। আর কতক বীজ কাঁটাবনে পড়িল, তাহাতে কাঁটাগাছ বাড়িয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। আর কতক বীজ উত্তম ভ‚মিতে পড়িল ও ফল দিতে লাগিল; কতক শত গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক ত্রিশ গুণ।” COLBen 18.3
যীশুর সময়ের লোকেরা তাঁর মিশন কাজ বুঝতে পারেনি। তাঁর আগমন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘটেনি। প্রভু যীশু ছিলেন সমগ্র যিহূদী জাতিসত্তার অর্থনৈতিক ভিত্তি। যিহূদী জাতির পরিচর্যা ও সেবা কাজ নির্ধারিত হয়েছিল ঈশ্বরীয় প্রত্যাদেশ দ্বারা। তাদের দায়িত্ব ছিল লোকদেরকে এই শিক্ষা দেয়া যে, সেই অভিষিক্ত জন তাঁর নির্ধারিত সময়ে আসবেন যাঁর জন্য এই সকল আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু যিহূদীরা এই সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা ও রীতিনীতিকে অনেক বেশি বড় করে দেখেছিল এবং তারা তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। মানবীয় প্রথা, মূল্যবোধ, ও রীতি তাদেরকে সেই শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, যা ঈশ্বর তাদের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছিলেন। প্রকৃত ধর্ম উপলব্ধি ও অনুশীলনের জন্য এই সকল প্রা ও রীতিনীতি তাদের কাছে হয়ে উঠেছিল প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। বাস্তবে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন স্বশরীরে উপস্থিত হলেন, তখন তারা তাঁকে চিনতে পারল না, কারণ তিনি তাদের কল্পনাপ্রসূত প্রতিমূর্তি ছিলেন না। তারা প্রকৃত ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাদের মনগড়া সত্বা ও নিষ্ফল আনুষ্ঠানিকতাকে আঁকড়ে ধরেছিল। ঈশ্বরের পুত্র ঠিকই তাদের মাঝে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও তারা তাঁর কাছ থেকে চিহ্ন দাবী করেই চলছিল। “মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল,” প্রভুর এই বাণীর উত্তরে তারা কেবল অলৌকিক কাজ দেখতে চেয়েছিল; মথি ৩:২। খ্রীষ্টের সুসমাচার তাদের কাছে ছিল উছোট খাওয়ানো পাথরের মত, কারণ তারা একজন ত্রাণকর্তার বদলে চিহ্ন দাবী করেছিল। তারা আশা করেছিল, প্রতিজ্ঞাত মশীহ্, রাজ্য জয় করার মত কোন বিক্রম দেখিয়ে, এবং জাগতিক সমস্ত রাজ্য ধ্বংস করে দিয়ে, নিজ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তাঁর দাবী প্রমাণ করবেন। বীজবপাকের দৃষ্টান্তে প্রভু যীশু তাদের এই প্রত্যাশার জবাব দিয়েছেন। বাহু বলের দ্বারা, বা কোন সহিংস অবস্থান গ্রহণের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত হবে না; বরং মানুষের অন্তরে নতুন আদর্শ ও বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। COLBen 18.4
“যিনি ভাল বীজ বপন করেন, তিনি মনুষ্যপুত্র,” মথি ১৩:৩৭। খ্রীষ্ট কোন রাজা বা শাসনকর্তা হিসেবে আসেননি, বরং তিনি এসেছেন একজন বীজ-বাপক হিসেবে। তিনি জাগতিক কোন রাজ্য জয় করতে আসেননি, বরং বীজ ছড়িয়ে দিতে এসেছেন। তাঁর অনুসারীদেরকে তিনি জাগতিক রাজ্য জয় বা জাতিগতভাবে শীর্ষ স্থান অর্জনের জন্য নির্দেশ দেননি, বরং তাদেরকে তিনি ক্সধর্যপূর্বক কষ্ট করার মধ্য দিয়ে, ফসল আহরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যা অর্জন করা সম্ভব অনেক কিছু হারানো ও বারবার হতাশায় জর্জরিত হওয়ার মাধ্যমে।COLBen 19.1
ফরীশীরা খ্রীষ্টের এই দৃষ্টান্তটির অর্থ বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু এই শিক্ষাটি তারা গ্রহণ করেনি। তারা শিক্ষাটি উপলব্ধি করতে পেরেও তা দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন এই শিক্ষকের উদ্দেশ্য তখনও রহস্যে ঘনীভূত ছিল, কিন্তু তাঁর কথা তাদের অন্তরকে আশ্চর্যজনকভাবে পরিবর্তন করেছিল এবং তিক্ততার সাথে আশাহত হতে হয়েছিল। শিষ্যরা নিজেরাও তাঁর এই দৃষ্টান্তটি বুঝতে পারেননি, কিন্তু তাঁদের ভেতরে আগ্রহের সঞ্চার ঠিকই ঘটেছিল। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে যীশুর কাছে এসে এর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন।COLBen 19.2
এই আকাঙ্ক্ষাকেই খ্রীষ্ট জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেন তিনি এরপরে তাদেরকে আরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে পারেন। তিনি তাদেরকে দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন। কারণ যারা আন্তরিক হৃদয় নিয়ে তাঁর খোঁজ করে তাদেরকে তিনি তাঁর বাক্য সহজ করে বুঝিয়ে বলেন। যারা উন্মুক্ত হৃদয় নিয়ে ঈশ্বরের বাক্য ধ্যান করে তারা পবিত্র আত্মায় আলোকিত হয় এবং বাক্যের অর্থ তাদের কাছে আর অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে না। খ্রীষ্ট বলেছেন, “যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর হইতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি,” যোহন ৭:১৭। যারা সত্য সম্পর্কে আরও স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করার জন্য খ্রীষ্টের কাছে আসে তারা তা লাভ করে। তিনি তাদের কাছে স্বর্গরাজ্যের রহস্য উন্মোচন করবেন। যারা এই সত্য জানতে আকাঙ্ক্ষা করবে, তারা অন্তর দিয়ে এই রহস্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। তাদের হৃদয় মন্দিরে এক স্বর্গীয় আলো প্রজ্বলিত হবে এবং অন্ধকার পথে প্রদীপ শিখার মত তা অন্যদের জন্যও আলো হয়ে প্রকাশিত হবে।COLBen 20.1
“বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল।” তৎকালীন প্রাচ্যে মানুষের অবস্থা ছিল অনির্দিষ্ট। সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা তখন এতটা বেশি ছিল যে, মানুষ মূলত দেয়াল ঘেরা শহরে বসবাস করত এবং কৃষকেরা তাদের চাষাবাদ করার জন্য প্রতিদিন দেয়ালের বাইরে ক্ষেতে কাজ করতে যেত। একইভাবে স্বর্গীয় বীজ-বাপক খ্রীষ্ট, বীজ বপন করতে গেলেন। শান্তি ও সুরক্ষায় ঘেরা তাঁর আবাসস্থল তিনি ত্যাগ করলেন। পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে পিতার সাথে তাঁর যে গৌরবময় অবস্থান ছিল তা তিনি ত্যাগ করলেন। নিখিল বিশ্বের অধিকর্তা হিসেবে তাঁর যে সিংহাসন তা তিনি ত্যাগ করলেন। একজন কষ্টভোগকারী ও পরীক্ষিত মানুষ হয়ে তিনি পৃথিবীতে এলেন। তিনি একাকী অশ্রু দ্বারা সেই জীবনরূপ বীজ বপনের জন্য, যা পৃথিবী হারিয়ে ফেলেছে। তাঁর রক্ত দ্বারা তিনি সেই বপনকৃত বীজে জল সেচন করলেন।COLBen 20.2
তাঁর যে দাসেরা তাঁরই মত মননের অধিকারী, তাদের অবশ্যই বীজ বপন করতে এগিয়ে যেতে হবে। অব্রাহামকে যখন সত্যের বীজবাপক হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হল, তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, “তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পৈতৃক বাটী পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল।” আদিপুস্তক ১২:১। “এবং কোথায় যাইতেছেন, তাহা না জানিয়া যাত্রা করিলেন।” আদিপুস্তক ১১:৮। ঠিক একইভাবে যিরূশালেম মন্দিরে প্রার্থনারত প্রেরিত পৌলের কাছেও ঈশ্বরের এই বার্তা প্রদান করা হয়েছিল, “প্রস্থান কর, কেননা আমি তোমাকে দূরে পরজাতিগণের কাছে প্রেরণ করিব।” প্রেরিত ২২:২১। কাজেই যাদেরকে খ্রীষ্টের সাথে একতায় মিলিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়, তাদের অবশ্যই সব কিছু পরিত্যাগ করে তাঁকে অনুসরণ করা বিধেয়। পুরাতন সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলতে হবে, জীবন নিয়ে যত পরিকল্পনাCOLBen 21.1
ছিল তা মুছে ফেলতে হবে, পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে। চোখের জল ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে, একাকীত্বে থেকে, এবং শত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েও বীজ অবশ্যই বপন করে যেতে হবে।COLBen 21.2
“বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল।” খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে সত্যের সহিত বীজ বপন করতে এসেছিলেন। মানুষের পতনের সময় থেকেই শয়তান পৃথিবীতে ভ্রান্তির বীজ বপন করে চলেছে। একটি মিথ্যার মধ্য দিয়ে সে প্রম মানুষের উপরে নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে এবং এভাবেই সে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যকে ভ‚লুণ্ঠিত করার জন্য ও মানুষকে তার নিজের অধীনে নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। খ্রীষ্ট, উর্ধ্বস্থজগত থেকে আগত একজন বীজ-বাপক, যিনি এখানে সত্যের বীজ বপন করতে এসেছিলেন। যিনি ঈশ্বরের সভায় দণ্ডায়মান হন, যিনি অনন্তকালীন সর্বান্তস্থিত আরাধনা স্থলে বসতি করেন, তিনি মানুষের অন্তরে খাঁটি সত্যের বীজ বপন করতে পারেন। মানুষের পতনের পর থেকে খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে মানুষের কাছে সত্যের উন্মোচনকারী হয়ে দেখা দিয়েছেন। তাঁর মধ্য দিয়ে সেই অক্ষয় বীজ “ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য” মানুষের কাছে উপস্থিত হয়েছে, ১ পিতর ১:২৩। এদন উদ্যানে আমাদের আদি পিতা মাতার কাছে প্রম যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট সুসমাচারের বীজ বপন করেছিলেন। কিন্তু মানুষের মাঝে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচর্যা কাজ এবং বিভিন্ন শিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা বীজবাপকের দৃষ্টান্তটি বিশেষভাবে তুলে ধরে।COLBen 21.3
ঈশ্বরের বাক্যই হচ্ছে এই বীজ। প্রত্যেকটি বীজের মধ্যেই রয়েছে অঙ্কুরোদগমের একটি শক্তি। এর মাঝে নিহিত থাকে একটি উদ্ভিদের প্রাণ। ঈশ্বরের বাক্যও ঠিক তেমন। খ্রীষ্ট বলেছেন, “আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা কহিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন,” যোহন ৬:৬৩। “যে ব্যক্তি আমার বাক্য শুনে, ও যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হইয়াছে,” যোহন ৫:২৪। ঈশ্বরের বাক্যের প্রত্যেকটি আদেশে এবং প্রত্যেকটি প্রতিজ্ঞায় রয়েছে সেই শক্তি, যা স্বয়ং ঈশ্বরের প্রাণস্বরূপ, যার মধ্য দিয়ে সমস্ত আদেশ বাস্তবায়িত হয় এবং সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণতা লাভ করে। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এই বাক্য ধারণ ও লালন করবে, সে ঈশ্বরীয় জীবন ও চরিত্র অর্জন করবে।COLBen 22.1
প্রত্যেকটি বীজ তার নিজ জাতের ফল উৎপন্ন করে। সঠিক পরিবেশে বীজ বপন করলে তা একটি উদ্ভিদের জন্ম দেয়ার মধ্য দিয়ে তার নিজ জীবন ধারণ করবে। বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আত্মায় বাক্যের অক্ষয় বীজ ধারণ করলে তা ঈশ্বরীয় চরিত্র ও জীবনের সদৃশ এক পবিত্র চরিত্র ও জীবন সৃষ্টি করবে।COLBen 22.2
ইসরায়েল জাতির ধর্মীয় শিক্ষকেরা ঈশ্বরের বাক্যের বীজ বপন করছিলেন না। যীশু খ্রীষ্টের সময়কার রব্বি বা ধর্মগুরুদের শিক্ষার তুলনায় শিক্ষক হিসেবে খ্রীষ্টের প্রকাশিত সত্য ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা তাদের প্রথা ও রীতিনীতি, মানবীয় তত্ব ও মতাদর্শ এবং নিজস্ব ধ্যান ধারণার উপর নির্ভর করত। শিক্ষা দিতে গিয়ে তারা যে সমস্ত কথা বলত সেগুলোকে তারা ঈশ্বরের বাক্যের উপরে স্থান দিত। আত্মাকে সঞ্জীবিত করে তোলার জন্য কোন শক্তি তাদের শিক্ষার মাঝে ছিল না। খ্রীষ্টের প্রচার ও শিক্ষা দানের মূল বিষয় ছিল ঈশ্বরের বাক্য। তাঁকে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি পরিষ্কারভাবে এই জবাব দিতেন, “এ কথা লেখা আছে।” “শাস্ত্র কী বলে?” “তুমি কি এই বাক্য পাঠ করনি?” বন্ধু হোক বা শত্রু হোক, যে ব্যক্তির কথায় যখনই বাক্য সম্পর্কে উল্লেখ করার কোন সুযোগ এসেছে তখনই তিনি ঈশ্বরের বাক্যের বীজ বপন করেছেন। যিনি পথ, সত্য ও জীবন, যিনি স্বয়ং জীবন্ত বাক্য, তিনিই পবিত্র শাস্ত্রের প্রতি নির্দেশ করে বলেছেন, “তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়।” শিষ্যদেরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে তিনি “মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন।” যোহন ৫:৩৯; লূক ২৪:২৭।COLBen 22.3
খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারীদের এই একই কাজ করতে হবে। প্রাচীনকালের মত আমাদের আজকের এই দিনেও মানবীয় দর্শন ও ধ্যান ধারণার কারণে ঈশ্বরের বাক্যের অপরিহার্য সত্যকে মানুষ হারিয়ে ফেলছে। সুসমাচারের তথাকথিত অনেক পরিচর্যাকারী বিশ্বাস করেন না যে, সমগ্র বাইবেল ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিত লিখিত বাক্য। একজন পণ্ডিত একটি অংশকে বর্জন করেন, তো আরেকজন অন্য কোন অংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা তাদের বিচার বুদ্ধিকে ঈশ্বরের বাক্যের উপরে স্থান দেন। আর নিজেরা বাক্য থেকে যা শিক্ষা দেন তা তারা নিজেদের মত করে নিয়ন্ত্রণ করেন। তখন বাক্যের ঈশ্বরীয় পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়। এভাবেই অধার্মিকতার বীজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ তখন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং কী বিশ্বাস করতে হবে তা বুঝতে পারে না। এমন অনেক বিশ্বাস আছে যা অন্তরে ধারণ করতে দেয়ার কোন অবকাশই নেই। যীশু খ্রীষ্টের সময়ে ধর্মগুরুরা বা ফরীশীরা পবিত্র শাস্ত্রের অনেক অংশের উপরে তাদের মনগড়া বিভিন্ন অংশ জুড়ে দিত। যেহেতু ঈশ্বর বাক্যে খুব সহজ সরলভাবে তাদের মানবীয় রীতিনীতি ও আচার আচরণকে তিরস্কার করা হয়েছে, সে কারণে তারা এই বাক্যের শক্তিকে খর্ব করতে চেয়েছিল। একই ঘটনা আজকের দিনেও ঘটছে। ঈশ্বরের বিধান অমান্য করার অজুহাত খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে মানুষ ঈশ্বরের বাক্যকে রহস্যাবৃত ও অস্পষ্ট করে রাখছে। যীশু খ্রীষ্ট তাঁর সময়ে এই ধরনের কাজকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, ঈশ্বরের বাক্য সকলকে অনুধাবন করতে হবে। তিনি পবিত্র শাস্ত্রকে প্রশ্নাতীত কর্তৃত্বের অধিকারী হিসেবে প্রকাশ করেছেন এবং আমাদেরও সেই একই ভাবধারায় পবিত্র শাস্ত্রকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাইবেলকে আমাদের উপস্থাপন করতে হবে অনন্ত ও অসীম ঈশ্বরের বাক্য হিসেবে, সমস্ত মতপার্থক্যের অবসান হিসেবে, এবং খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে। COLBen 23.1
বাইবেলের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে এবং এর ফলে আত্মিক জীবনের মান নিম্নগামী হয়ে পড়েছে। আজকের দিনে পুলপিট থেকে যে বাক্য প্রচার করা হয়, তাতে সেই স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ থাকে অনুপস্থিত, যা বিবেককে জাগ্রত করে এবং আত্মায় জীবন ফিরিয়ে আনে। শ্রোতারা এ কথা বলতে পারে না, “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না?” লূক ২৪:৩২। এমন অনেকে রয়েছে যারা জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য ক্রন্দন করছে, তাঁর ঐশ্বরিক উপস্থিতির জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে। দার্শনিক তত্ত¡ বা সাহিত্য সমৃদ্ধ গদ্য যতই বুদ্ধিদীপ্ত হোক না কেন, তা কখনোই আত্মাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। মানুষের নিজস্ব চিন্তাধারা ও উদ্ভাবনের আদৌ কোন মূল্য নেই। ঈশ্বরের বাক্য মানুষের সাথে কথা বলুক। যারা শুধুই মানবীয় রীতিনীতি ও মানবীয় দর্শন শুনে এসেছে এত দিন, তারা সেই কণ্ঠস্বর শুনুক যা আত্মাকে অনন্তকালীন জীবনে রূপান্তরিত করতে পারে।COLBen 24.1
যীশু খ্রীষ্টের বাক্য প্রচারের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিল ঈশ্বরের পিতৃসুলভ ভালবাসা এবং ঈশ্বরের অপার অনুগ্রহ। তিনি তাঁর চরিত্রের পবিত্রতা এবং তাঁর বিধানের উপরেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন; তিনি নিজেকে লোকদের কাছে প্রকাশ করেছেন পথ, সত্য ও জীবন হিসেবে। এগুলোই হোক খ্রীষ্টের পরিচর্যাকারীদের আজকের দিনের প্রচারের বিষয়বস্তু। যীশু নিজে যেমন সত্য ছিলেন, সেই সত্যকেই কেবল প্রকাশ করা হোক। ঈশ্বরীয় বিধান ও সুসমাচার যা বলে তা সহজ সরলভাবে ব্যক্ত করা হোক। খ্রীষ্টের আত্মত্যাগ ও উৎসর্গকৃত জীবনের কথা প্রচার করা প্রয়োজন। আরও প্রচার করা প্রয়োজন তাঁর লাঞ্ছনা ও মৃত্যুর কথা; তাঁর পুনরুত্থান ও স্বর্গারোহণের কথা; ঈশ্বরের বিচারাসনের সামনে মানুষের জন্যCOLBen 24.2
মধ্যস্থতা করার কথা; তাঁর এই প্রতিজ্ঞার কথা: “আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব।” যোহন ১৪:৩।COLBen 24.3
ভ্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা না করে কিংবা সুসমাচারের বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে বরং খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত। ঈশ্বরের ধন ভাণ্ডার থেকে সঞ্জীবনী সত্য আমাদের জীবনে প্রবাহিত হোক। “তুমি বাক্য প্রচার কর।” “জল¯্রােতের তীরে বীজ-বাপন কর।” “সময়ে অসময়ে কার্যে অনুরক্ত হও।” “যে আমার বাক্য পাইয়াছে, সে বিশ্বস্তভাবে আমার বাক্যই বলুক। সদাপ্রভু কহেন, শস্যের কাছে পোয়াল কি?” “ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ; . . . তাঁহার বাক্যকলাপে কিছু যোগ করিও না; পাছে তিনি তোমার দোষ ব্যক্ত করেন, আর তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হও।” ২ তীমথি ৪:২; যিশাইয় ৩২:২০; যিরমিয় ২৩:২৮; হিতোপদেশ ৩০:৫, ৬।COLBen 24.4
“বীজবাপক বীজ-বপন করিল।” এখানে সেই মহান নীতি উপস্থাপিত হয়েছে যা সকল শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত বিষয়কে তুলে ধরে। “বীজ হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য।” কিন্তু আমাদের সময়কার বহু বিদ্যালয়েই ঈশ্বরের বাক্যকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। অন্যান্য বিষয় দ্বারা হৃদয় পূর্ণ করল। অধার্মিক লেখকদের বিভিন্ন রচনা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশকে গ্রাস করেছে। বিদ্যালয়ের বইগুলোর বিষয়বস্তুর পরতে পরতে দার্শনিক ভাবাবেগ জুড়ে দেয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা শিক্ষার্থীদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করছে, কারণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে এবং তা বিকৃত করে ফেলা হচ্ছে। ঈশ্বরের বাক্যকে তুলনা করা হচ্ছে মানবীয় জ্ঞান প্রসূত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার সাথে, এবং তা অনিশ্চিত ও অবিশ্বাস্য বাক্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এভাবেই যুবক-যুবতিদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করা হচ্ছে। প্রলোভনের সময়ে তা অঙ্কুরিত হয়ে উঠবে। যখন ঈশ্বরের বাক্যের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে যায়, তখন আত্মা আর কোন দিক খুঁজে পায় না, কোন নিরাপত্তা খুঁজে পায় না। যুবকরা তখন এমন এক পথে চলে যায় যা তাদেরকে ঈশ্বর ও অনন্ত জীবনের পথ থেকে অনেক দূরে পরিচালিত করে। COLBen 25.1
এর কারণ অনেকাংশে আমাদের বর্তমান সভ্যতায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া অনৈতিকতা ও ঈশ্বরবিহীনতা। যখন ঈশ্বরের বাক্যকে দূরে সরিয়ে রাখা, হয় তখন মানুষের অন্তরের মন্দ বাসনা ও মানবীয় স্বভাবকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিকেও প্রত্যাখ্যান করা হয়। মানুষ মাংসে বীজ বপন করে, এবং মাংস থেকে তারা কলুষিত ফল চয়ন করে।COLBen 25.2
এর কারণেই দেখা দেয় মানসিক দুর্বলতা ও অকার্যকারিতা। ঈশ্বরের বাক্য থেকে দূরে সরে গিয়ে পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণা বিহীন মানুষের রচনা আত্মস্থকরার কারণে মানুষের মন হয়ে পড়ে সঙ্কীর্ণ ও চটুল। চিরন্তন সত্যের গভীর ও ব্যাপক বিস্তৃত আদর্শের পরিচয় মানুষ পায় না। মানুষের বোধগম্যতা শুধুমাত্র তার উপলব্ধির পরিধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকার কারণে এবং জাগতিক বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তা ভাবনা করার কারণে মানুষের মন দুর্বল হয়ে পড়ে, এর শক্তি ক্ষয় হয়, একটু সময় পড়ে তা আর চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে না।COLBen 26.1
এর সবই মিথ্যা শিক্ষা। সকল শিক্ষকের উচিত যুবকদের মনকে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার বাক্যের সত্যতার উপরে অবস্থান করানো। এই জীবনের জন্য এবং আসন্ন অনন্ত জীবনের জন্য এই শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।COLBen 26.2
এ কথা ভাবা উচিত হবে না যে, এর কারণে আমরা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা ছেড়ে দেব, কিংবা শিক্ষার মান অবনত করব। ঈশ্বরের জ্ঞান স্বর্গের ন্যায় উচু এবং নিখিল বিশ্বের মত ব্যাপক। আমাদের অনন্ত জীবনের সাথে সম্পর্কিত এমন আর কোন শিক্ষা বা জ্ঞানের বিষয় নেই, যা আমাদের জন্য এতটা অত্যাবশ্যকীয়। যুবকদের এই সকল ঈশ্বর প্রদত্ত সত্যকে নিজেদের জীবনে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং তাতে করে তাদের মন আরও প্রশস্ত হবে এবং তাদের মন প্রসারিত ও আত্মিক ভাবে চেষ্টা করলে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এতে করে যে সকল শিক্ষার্থী বিস্তৃত চিন্তার জগতে ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী, তারা নিজেদের জন্য ঈশ্বরের অক্ষয় জ্ঞানের সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম হবে।COLBen 26.3
পবিত্র শাস্ত্রের অন্বেষণ করার মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা লাভ করা যায় তা আমাদের পরিত্রাণ পরিকল্পনার গবেষণালব্ধ জ্ঞান দান করে। এ ধরণের শিক্ষা আত্মার মাঝে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি আবারও পুনঃস্থাপন করে। এই শিক্ষা সকল প্রকার প্রলোভনের বিরুদ্ধে আমাদের মনকে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত করে তুলবে। এই শিক্ষা তার শিক্ষার্থীকে খ্রীষ্টের সাথে পৃথিবীতে তাঁর দয়া ও করুণার পরিচর্যা কাজে সহ কার্যকারী হিসেবে কাজ করার জন্য যোগ্য করে তোলে। এই শিক্ষা তাকে স্বর্গীয় পরিবারের একজন সদস্য করে তোলে এবং সাধুদের সাথে স্বর্গীয় আলো উপভোগ করার জন্য উত্তরাধিকার প্রদান করবে।COLBen 26.4
কিন্তু পবিত্র সত্যের শিক্ষক শুধুমাত্র সেই শিক্ষাই অন্যদেরকে দিতে পারেন যা তিনি নিজে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে লাভ করেছেন। “বীজবাপক তার বীজ বপন করল।” খ্রীষ্ট এই শিক্ষা দিয়েছেন কারণ তিনি নিজেই ছিলেন সেই সত্য। তাঁর নিজের চিন্তা, তাঁর নিজ চরিত্র, তাঁর নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁর শিক্ষার সাথে মিশে গিয়েছিল। তাঁর প্রত্যেক পরিচর্যাকারীর ক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়া আবশ্যক: যারা বাক্য শিক্ষা দেবেন তাদের উচিত হবে তা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা দ্বারা অর্জন করা। তাদের অবশ্যই আগে জানতে হবে যে, তাদের পবিত্রীকরণ ও পরিত্রাণের জন্য স্বয়ং খ্রীষ্ট কী জ্ঞান ও ধার্মিকতায় নিজেকে পরিপূর্ণ করেছিলেন। ঈশ্বরের বাক্য অন্যদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য তাদের কোন ভাবেই “মনে করি” কিংবা “হতে পারে” এমন কথা বা ভাব প্রকাশ করলে চলবে না। তাদেরকে প্রেরিত পিতরের মত দৃঢ় ভাবে ঘোষণা দিতে হবে, “কারণ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, তখন আমরা কৌশল-কল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁহার মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হইয়াছিলাম।” ২ পিতর ১:১৬। খ্রীষ্টের প্রত্যেক পরিচর্যাকারী এবং প্রত্যেক শিক্ষককে অবশ্যই সাধু যোহনের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে, “আর সেই জীবন প্রকাশিত হইলেন, এবং আমরা দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিতেছি; এবং যিনি পিতার কাছে ছিলেন ও আমাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন, সেই অনন্ত জীবনস্বরূপের সংবাদ তোমাদিগকে দিতেছি।” ১ যোহন ১:২।COLBen 27.1