পাপ যে দুঃখজনক পরিবর্তন আনয়ন করল
মহান ব্যবস্থা দাতা আদম ও হবাকে তাদের অবাধ্যতার পরিণতি জানিয়ে দিতে প্রস্তুত হলেন। তারা যখন নির্দোষ ও পবিত্র ছিলেন তখন তারা তাদের স্রষ্টার আগমনকে স্বাগত জানাতেন; এখন তারা ভয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলেন। কিন্তু তখন ঈশ্বর আদমকে ডেকে বললেন, “তুমি কোথায়? তিনি উত্তর দিলেন, আমি উদ্যানে তোমার রব শুনিয়া ভীত হইলাম, কারণ আমি উলঙ্গ, তাই আমি নিজেকে লুকাইয়াছি। তিনি কহিলেন, “তুমি যে উলঙ্গ ইহা তোমাকে কে বলিল? যে বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তুমি কি তাহার ফল ভোজন করিয়াছ?” PPBeng 28.3
আদম তখন তাহার স্ত্রীর উপরে দোষ চাপিয়ে দিলেন এবং এই ভাবে ঈশ্বরকে দোষী করলেন। “তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি।” হবার প্রতি ভালবাসার কারণে, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবেই ঈশ্বরের অনুমোদন হারানকে বেছে নিলেন, এবং এক অনন্তকালীন আনন্দময় জীবন হারানকে বেছে নিলেন; এখন তিনি তার সঙ্গীকে, এমন কি ঈশ্বরকে, তার অবাধ্যতার জন্য দায়ী করলেন । PPBeng 29.1
যখন রমণীকে জিজ্ঞাসা করা হল, “তুমি এ কি করিলে।” তিনি উত্তর দিলেন, “সর্প আমাকে ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি।” “তুমি কেন সর্প তৈরি করলে? তুমি কেন তাকে এদনে ঢুকতে দিলে?” তার বাহানার মধ্যে এ প্রশ্নগুলিও প্রচ্ছন্নভাবে উপস্থিত ছিল। শয়তানের প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার পরপরই আমাদের প্রথম মাতা-পিতা আত্ম-সমর্থনে লিপ্ত হন, আর আদম সন্তানেরা তখন হতে আজ পর্য্যন্ত একই ভাবে আত্ম-পক্ষ সমর্থনে লিপ্ত রয়েছেন।PPBeng 29.2
তখন ঈশ্বর সর্পের উপর দন্ডাদেশ জারী করলেনঃ “তুমি এই কৰ্ম্ম করিয়াছ, এই জন্য গ্রাম্য ও বন্য পশুগণের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্ত; তুমি বুকে হাঁটিবে, এবং যাবজ্জীবন ধূলি ভোজন করিবে।” মাঠের সুন্দরতম প্রাণী হতে ইহা এখন সবচেয়ে অবলুন্ঠিত ও ঘৃণ্য প্রাণীতে পরিণত হবে, মানুষ এবং জীব সকলেই ইহাকে ভয় ও ঘৃণা করবে। পরবর্তি বাক্যগুলো যদিও সর্পকে বলা হল তথাপি তা শয়তানের উপর প্রযোজ্য, যা তার অন্তিম পরাজয় ও ধ্বংসের নির্দেশ করে, “আমি তোমাতে ও নারীতে, তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শুক্রতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে ।” PPBeng 29.3
যে দুঃখ ও ব্যথা তার অংশ হবে হবাকে সে সম্বন্ধে বলা হল । “স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্তৃত্ব করিবে।” ঈশ্বর তাকে আদমের সমতুল্য করেছিলেন। কিন্তু পাপ বিভেদ আনয়ন করল, আর এখন তাদের একতা রক্ষার জন্য এবং সঙ্গতীপূর্ণ সম্পর্ক রাখার উপায় হল একজনকে অন্য জনের অধীন হতে হবে। অবাধ্যতায় হবা প্রথম ছিলেন। তার প্ররোচনায় আদম পাপ করেছিলেন, তাই এখন তাকে তার স্বামীর অধীন করা হল । এইভাবে দত্ত কর্তৃত্বের অপব্যবহার প্রায়ই এখনকার মেয়েদের ভাগ্যকে তিক্ত এবং তার জীবনকে দুঃসহনীয় করে তোলে । PPBeng 29.4
নিজ স্বামীর পার্শ্বে হবা সুখী ছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর দ্বারা নির্ধারিত অবস্থানের চেয়ে আর উন্নত অবস্থানে পৌঁছার প্রত্যাশায় প্রলোভিত হলেন । তার মূল অবস্থানের উপরে উঠার চেষ্টা করার ফলে, তিনি তার অনেক নীচে পড়ে গেলেন। যে সমস্ত পদের জন্য ঈশ্বর তাদের নিরূপণ করেন নি, সেই সমস্ত পদে পৌছার জন্য চেষ্টা করে, অনেকেই সেই সমস্ত স্থান অপূর্ণ রাখেন, যেখানে তারা একটি আশীর্ব্বাদস্বরূপ হতে পারতেন । PPBeng 29.5
আদমকে ঈশ্বর বললেন, “যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি তাহা ভোজন করিও না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল ভোজন করিয়াছ, এই জন্য তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে; আর উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও শেয়াল-কাঁটা জন্মিবে, এবং তুমি ক্ষেত্রের ওষধি ভোজন করিবে। তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” PPBeng 30.1
ঈশ্বর তাহাদের বিনা মূল্যে সমস্ত ভাল জিনিষ দিয়াছিলেন এবং মন্দ জিনিষ সরিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছেন আর এখন মন্দের জ্ঞানও লাভ করবেন তাদের সারা জীবন ভরে । আনন্দ পূর্ণ শ্রমের পরিবর্ত্তে, দুশ্চিন্তা এবং পরিশ্রম তাদের ভাগ্যে থাকবে। তারা নৈরাশ্য, দুঃখ, এবং কষ্ট, আর পরিশেষে মৃত্যু, ভোগ করবেন। PPBeng 30.2
ঈশ্বর মানুষকে পৃথিবী ও সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি স্বর্গীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন, তখন নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীরাও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল । এই ভাবে ঈশ্বর মানুষকে তার অনুগ্রহের মানুষের নিকট তাঁর ব্যবস্থার পবিত্রতা প্রদর্শন করলেন এবং এর বিন্দুমাত্রকেও অবহেলাতে যে বিপদ নিহীত তাও দেখতে সাহায্য করলেন । PPBeng 30.3