তাদের ভাষা পরিবর্তনে ঈশ্বরের লক্ষ্য
এ পর্যন্ত সকল মানুষই এক ভাষায় কথা বলত। এখন যারা পরস্পরের ভাষা বুঝত তারা এক এক দলে একত্রিত হল। এক দল এক দিকে গেল, আর অন্য দল অন্য দিকে চলে গেল। “আর সদাপ্রভু তথা হইতে সমস্ত ভূমন্ডলে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন।” এই ছিন্ন ভিন্ন করাই ছিল সমস্ত পৃথিবীকে বসতিপূর্ণ করার মাধ্যম; এভাবে যে মাধ্যমের ব্যবহার দ্বারা মানুষ ঈশ্বরের লক্ষ্যকে ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, সেই একই মাধ্যমের ব্যবহার দ্বারা ঈশ্বর তার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করলেন । PPBeng 73.1
কিন্তু কি ক্ষতি স্বীকারের মাধ্যমেই না তা করা হল! ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল যে মানুষ যখন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়াতে থাকবে, তারা তাদের সহিত সত্যের আলো নিয়ে যাবে। বিশ্বস্ত নোহ সেই ধার্মিকতার প্রচারক প্লাবনের পরে তিনশ পঞ্চাশ বছর বেঁচে রইলেন, আর শেম বাঁচলেন পাঁচ শত বছর; আর এই ভাবে তাদের বংশধরদের সুযোগ ছিল যে তারা ঈশ্বরের নিয়মকানুন সম্বন্ধে তাদের পূর্ব পুরুষদের সহিত তাঁর আচরণ সম্বন্ধে অবগত হয়। কিন্তু তারা ঈশ্বরকে তাদের জ্ঞানের মধ্যে রাখতে কোন ইচ্ছাই প্রকাশ করল না; এবং ভাষার বৈষম্য সৃষ্টির জন্য তারা তাদের সহিত আদান প্রদান হতে নিবৃত হল যারা হয়ত তাদের সত্যের আলো দিতে পারত । PPBeng 73.2
শয়তান সেই বলির উপর ঘৃণা জন্মানোর চেষ্টা করছিল যে বলি খ্রীষ্টের মৃত্যুর আগে প্রচলিত ছিল। যেহেতু পৌত্তলিকতা মানুষের মনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলল, তাই সে তাদের ঐ বলির নিয়মের নকল তৈরী করে তাদের নিজ নিজ সন্তানদের তাদের দেবতার বেদীর উপর বলি দেবার দিকে পরিচালিত করল । যখন মানুষ ঈশ্বরের নিকট হতে দূরে সরে গেল, তখন ঈশ্বরীয় গুণ ন্যায় বিচার, পবিত্রতা, এবং প্রেম অত্যাচার, নিপীড়ন ও হিংস্রতা দ্বারা স্থানান্তরিত হ'ল । PPBeng 73.3
বাবিলের লোকেরা ঈশ্বর হতে স্বাধীন একটি সরকার স্থাপন করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য সদাপ্রভুকে ভয় করত। এই বিশ্বাসী লোকদের জন্যই ঈশ্বর তার বিচার বিলম্বিত করলেন এবং লোকদের সময় দিলেন যেন তারা তাদের আসল চরিত্র প্রকাশ করে। ঈশ্বরের সন্তানেরা অবশ্য তাদের লক্ষ্য থেকে তাদের নিবৃত্ত করতে চাইল, কিন্তু লোকেরা ঈশ্বরকে তুচ্ছ করার সিদ্ধান্তে একত্রিত হলো। যদি তাদের বাধা দেয়া না হত তবে তারা সমস্ত পৃথিবীকে এর শিশুকালেই নৈতিকতা-বর্জণে পরিণত করত। যদি এই মিত্র-সঙ্ঘকে অনুমতি দেয়া হ'ত, তবে এক প্রচন্ড ক্ষমতা ধার্মিকতাকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হ'ত আর এর সাথে শান্তি, সুখ ও নিরাপত্তা পৃথিবী হ'তে নির্বাসিত হ'ত। PPBeng 74.1
যারা ঈশ্বরকে ভয় করত তারা তার কাছে আর্জি পেশ করল যেন তিনি বাধা দেন। “পরে মনুষ্য-সন্তানেরা যে নগর ও উচ্চগৃহ নির্মাণ করিতেছিল, তাহা দেখিতে সদাপ্রভু নামিয়া আসিলেন।” পৃথিবীর প্রতি তার দয়ার জন্যই তিনি চূড়া নির্মাণকারীদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিলেন। তার অনুগ্রহের জন্যই তিনি তাদের ভাষায় তালগোল পাকিয়ে দিলেন, এবং তাদের বিদ্রোহে বাধার সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর দীর্ঘকাল যাবৎ মানুষের দুষ্কর্মের প্রতি ধৈর্যশীল থাকেন এবং তাদের অনুশোচনা করার সুযোগ দেন। মাঝে মাঝে অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে দেয়া হয় যেন তাদের অন্যায় কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। বিশ্বের স্রষ্টাই যে স্বর্গ ও পৃথিবীর রাজা তার অকাট্য প্রমাণ দেয়া হয়। কেউ বিনা দ্বন্দ্বে তাঁর ক্ষমতার অবাধ্য হতে পারে না । PPBeng 74.2
আমাদের সময়েও চূড়া নির্মাতারা রয়েছেন। অবিশ্বাসীরা মনে হয় যেন ঈশ্বরের নৈতিক শাসন ব্যবস্থার উপর দন্ডাজ্ঞা নির্ধারণ করে থাকে। তারা তার ব্যবস্থাকে ঘৃণা করে এবং মানুষের জ্ঞানের সম্মান করে। তখন, “দুষ্কর্মের দন্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম করিতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়।” উপদেশক ৮:১১। PPBeng 74.3