আশ্রয় নগরসমূহ
যে ছয়টি শহর লেবীয়দের দেয়া হয়েছিল সেগুলিকে আশ্রয় নগররূপে নির্ধারিত করা হল যেন “যে প্রমাদবশতঃ কাহারও প্রাণ নষ্ট করে, এমন নরহন্তা যেন তথায় পলায়ন করিতে পারে। ফলতঃ সেই নগর সকল...তোমাদের আশ্রয় স্থান হইবে; যেন নরহন্তা বিচারার্থে মন্ডলীর সম্মুখে উপস্থিত হইবার পূর্বে মারা না পড়ে।” গণনা ৩৫:১১। এই সদয় বন্দোবস্ত এই জন্য প্রয়োজন ছিল যেহেতু হত্যার জন্য শাস্তি দানের ভার নিহত ব্যক্তির নিকটতম আত্মীয়ের উপর বর্তাত । যখন অপরাধ স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হত, তখন বিচারকের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন হত না। প্রতিশোধ গ্রহণকারী অপরাধীকে অনুসন্ধান করে যেখানে পায় সেখানেই তাকে হত্যা করতে পারত। এই নিয়মটি রদ করলেন না, কিন্তু যারা অনিচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করে তাদের জন্য তিনি নিরাপত্তা বিধান করলেন। PPBeng 368.1
দেশের যে কোন স্থান হতে আশ্রয়-নগরে পৌঁছাতে আধা দিন সময় লাগত, আর যে সকল রাস্তা দিয়ে ঐসকল শহরে পৌছাতে হত সেগুলিকে সর্বদাই খুব ভাল ভাবে মেরামত করা হত। সহজ ও বড় বড় অক্ষরে আশ্রয়- নগর কথাটি লেখা থাকত যেন পলায়নকারীকে এক মুহূর্তেও দেরী করতে না হয়। যিহূদী, অতিথি অথবা অস্থায়ী-বাসিন্দা যে কোন জনই এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারত। পলাতকের মোকদ্দমাটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা সুষ্টু ভাবে বিচারিত হওয়ার বন্দোবস্ত ছিল, আর যখন তাকে স্বেচ্ছাকৃত হত্যার দায় হতে মুক্তি দেয়া হত শুধু তখনই সে ঐ আশ্রয়-নগরে আশ্রয় গ্রহণ করে রক্ষা পেতে পারত। অপরাধীকে প্রতিশোধ গ্রহণকারীর হস্তে ছেড়ে দেয়া হত। আর মহা যাজকের মৃত্যু হলে পর আশ্রয়-নগরে আশ্রয় গ্রহণকারী সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরে যেতে পারত । PPBeng 368.2
যদিও কোন হত্যা মামলায় অবস্থা ভিত্তিক প্রমাণাদি পৰ্যাপ্ত থাকত, তথাপি অভিযুক্ত একটি মাত্র সাক্ষীর জবানবন্দীতে দোষী সাব্যস্ত করা হত না। “যে ব্যক্তি কোন লোককে বধ করে, সেই নরহন্তা সাক্ষীদের কথায় হত হইবে; কিন্তু কোন লোকের প্রতিকূলে একমাত্র সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রাণদন্ডার্থে গ্রাহ্য হইবে না।” গণনা ৩৫:৩০। খ্রীষ্টই ইস্রায়েলদের জন্য মোশিকে এই সকল নিয়ম দিয়েছিলেন; এবং যখন মহান গুরু পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন তিনি আবারও পুনরোক্তি করেছিলেন যে, একজন সাক্ষীর জবানবন্দীতে কাউকে দোষী বা নির্দোষ করা চলবেনা। একজনের মতামত কোন বিবাদের মীমাংসা দিতে পারবেনা। “যেন দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষির মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।” মথি ১৮:১৬। PPBeng 368.3
খুনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলে, কোন প্রায়শ্চিত্ত বা মুক্তিই আর তাকে রক্ষা করতে পারত না। “আর প্রাণ দন্ডের অপরাধী নরহন্তার প্রাণের জন্য তোমরা কোন প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করিবে না; তাহার প্রাণদন্ড অবশ্য হইবে।” “এইরূপে তোমরা আপনাদের নিবাস- দেশ অপবিত্র করিবে না; কেননা রক্ত দেশকে অপবিত্র করে।” গণনা ৩৫:৩১, ৩৩। জাতির নিরাপত্তা ও পবিত্রতা হত্যার অপরাধের কঠিন শাস্তি বিধানের উপর নির্ভরশীল ছিল। PPBeng 369.1
আশ্রয়-নগর সমূহ ছিল খ্রীষ্টের মাধ্যমে যে আশ্রয় পাওয়া যায় তারই প্রতীক। মুক্তিদাতা আপন রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে ঈশ্বরের আদেশ অমান্যকারীর জন্য একটি নিশ্চিত আশ্রয়স্থল নির্ধারণ করলেন যেখানে পালিয়ে গিয়ে সে দ্বিতীয়বার মৃত্যুর হস্ত হতে রক্ষা পেতে পারে। যে আত্মা পাপের ক্ষমার জন্য তার কাছে যাবে কোন শক্তিই তাকে তার হস্ত হতে ছিনিয়ে নিতে পারবে না । PPBeng 369.2
যে ব্যক্তি আশ্রয়-নগরের দিকে ধাবিত হত তার কোনরূপ বিলম্ব করার উপায় ছিল না। প্রিয়জনের নিকট হতে বিদায় নেবার কোন সময় থাকত না। ক্লান্তি ভুলে যেতে হত, কষ্টের প্রতি কোন মনোযোগ দেয়া হত না। শহরের ভিতরে প্রবেশের পূর্ব পর্য্যন্ত পলাতকের গতি শ্লথ করার কোন উপায় ছিল না । PPBeng 369.3
যেরূপ ইতঃস্তত ভ্রমণ ও অমনোযোগীতা পলাতকের জীবনের একমাত্র সুযোগ কেড়ে নিতে পারত, তদ্রূপ বিলম্ব ও অমনোযোগীতা আত্মার ধ্বংসের কারণ হতে পারে । প্রত্যেকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারীর পথে রয়েছে, মানুষের মহা শত্রু শয়তান, আর যে আশ্রয়ের জন্য চিরন্তন আশ্রয় স্থলের নিকট না যায়, সে ধ্বংসকারীর শিকারে পরিণত হবে। PPBeng 369.4
যদি কোন ব্যক্তি কখনো আশ্রয়-নগরের বাইরে যেত তাকে হত্যার বদলা গ্রহণকারীর হস্তে ছেড়ে দেয়া হত । একই ভাবে, কোন পাপী পাপ ক্ষমার জন্য শুধু বিশ্বাস আনলেই চলবে না; সে বিশ্বাস ও বাধ্যতার মাধ্যমে সর্বদা তার নিকট সমর্পিত থাকতে হবে। PPBeng 369.5