৩৩—ঈশ্বরের লোকদের ভয়ঙ্কর প্রতিবাদ
ইস্রায়েলের সরকার খুব সুসংহতিপূর্ণ একটি সংগঠন ছিল, পূর্ণতায় ও সরলতায় এটি ছিল বিস্ময়কর। ঈশ্বর ছিলেন এই সরকারের কেন্দ্রিক নেতা, ইস্রায়েলদের রাজাধিরাজ। নেতা হিসাবে মোশি তাঁর (ঈশ্বরের) নামেই ব্যবস্থার বিধান দিতেন। জাতির সাধারণ দৈনন্দিন কার্য্যে সহায়তার জন্য পরবর্তী কালে ৭০ জনের একটি পরিষদ গঠিত হয়। এর পর হলেন পুরোহিতরা, যারা ধর্মধামে সদাপ্রভুর নিকট পরামর্শ চাইতেন। দলপতিরা অথবা রাজকুমাররা নিজ নিজ গোত্রের প্রশাসন চালনা করতেন। এদের অধীনে ছিলেন “সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশপতি, দশপতি ও কর্মচারী।” দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৫। PPBeng 264.1
যিহূদী শিবির তিনটি বৃহৎ অংশে বিভক্ত ছিল। কেন্দ স্থলে ছিল সমাগম-তাম্বু অদৃশ্য রাজার আবাস স্থল। এর চতুর্দিকে ছিলেন যাজকগণ ও লেবীয়রা। এর পর অন্যান্য গোত্র তাম্বু স্থাপন করতেন । PPBeng 264.2
প্রত্যেক গোত্রের অবস্থান নির্দ্দিষ্ট করা ছিল। যে ভাবে সদাপ্রভু আদেশ করেছিলেন, প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পতাকার নিকট তাঁবু স্থাপন করতেন। গণনা ২৪২, ১৭। যে সকল মিশ্রিত জনতা যারা মিসর হতে ইস্রায়েলের সহিত বেরিয়ে এসেছিল তারা তাঁবুর বাইরে অবস্থান করত, এবং দ্বিতীয় বংশধর পর্য্যন্ত যিহূদী সমাজের অন্তর্ভূক্ত হতে পারত না। দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৭,৮। এত অগণিত জনতার মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কঠিন শৃঙ্খলা ও শৌচ বিষয়ে বিশেষ কঠোর নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করা হত। এটা আরো প্রয়োজন ছিল যে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা ও পবিত্রতা রক্ষা করা হয়। ঈশ্বর ঘোষণা করলেন; “কেননা তোমাকে রক্ষা করিতে ও তোমার শত্রুদিগকে তোমার সম্মুখে সমর্পণ করিতে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার শিবিরের মধ্যে গমনাগমন করেন; অতএব তোমার শিবির পবিত্র হইক।” দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১৪ । PPBeng 264.3
ইস্রায়েলের যাত্রাকালে, “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিন্দুক তাহাদের জন্য বিশ্রাম স্থান অন্বেষনের জন্য...তাহাদের অগ্রগামী হইল।” রূপার তুরী বহনকারী পুরোহিতগণ এর নিকটে অবস্থান করতেন। এই সকল পুরোহিতরা মোশির নিকট হতে নির্দ্দেশ লাভ করতেন যা শৃঙ্গ বাঁজিয়ে তারা লোকদের জানিয়ে দিতেন। আর তুরীর বাজনা দ্বারা যে যে নির্দেশ দেয়া হত তা লোকদের জানানোর দায়িত্ব ছিল শিবিরের নেতাদের উপর। PPBeng 264.4
ঈশ্বর শৃঙ্খলা বিধানকারী। স্বর্গের সহিত সম্পর্কিত সকল কিছুই শৃঙ্খলাপূর্ণ। স্বর্গীয় দূতদের মধ্যে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা বিরাজমান। ইস্রায়েলদের সময়ের ন্যায় বর্তমানকালেও শৃঙ্খলা ও ঐক্যবদ্ধতা কৃতকার্য্যতার বাহক। PPBeng 265.1
ঈশ্বর নিজে ইস্রায়েলদের যাত্রার পরিচালক ছিলেন। মেঘস্তম্ভ নীচে নেমে এসে তাদের শিবির স্থাপনের স্থান নির্দ্দেশ করত; আর যতক্ষণ তাদের শিবিরে অবস্থান করার কথা ততক্ষণই মেঘস্তম্ভ সমাগম তাঁবুর উপর অবস্থান করত। আর তাদের যাত্রা শুরু করার সময় ইহা পবিত্র তাঁবুর অনেক উপরে উঠে যেত । PPBeng 265.2
কনানের সীমায় অবস্থিত কাদেশ ও সীনয়ের মধ্যে মাত্র এগার দিনের যাত্রা বাকী ছিল। মেঘস্তম্ভ নিৰ্দ্দেশ দেয়ার পর ঐ স্থানে প্রবেশের প্রত্যাশায় ইস্রায়েলবাহিনী তাদের যাত্রা শুরু করলেন। সর্বশক্তিমানের মনোনীত লোকরূপে স্বীকৃত হওয়ার পর কোন আশীর্বাদের প্রত্যাশা তারা করতে না পারতেন? PPBeng 265.3
অনেকেই অনিচ্ছা সহকারে তাদের শিবির স্থান পরিত্যাগ করে যাত্রা শুরু করলেন। এই স্থানটি ঈশ্বর ও পবিত্র দূতদের উপস্থিতির সহিত এত জড়িত যে. স্থানটি অতি পবিত্র মনে হচ্ছিল ও ইহা নিশ্চিন্ত ও আনন্দ সহকারে পরিত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তুরীধ্বনির সাথে সাথেই কোন্ পথে যেতে হবে তা দেখার জন্য প্রত্যেকের চক্ষু মেঘস্তম্ভের উপর পড়ল। যখন ইহা পূর্ব দিকে যাত্রা করল, যে দিকে কালো ও নির্জন পর্বত শ্রেণী বিরাজমান ছিল, তখন অনেকের হৃদয়ে হতাশা ও সন্দেহ উদয় হল । PPBeng 265.4
তারা যতই অগ্রসর হতে থাকলেন, রাস্তা ততই কঠিন হতে লাগল। তাদের পথ ছিল প্রস্তরময়, গিরিখাত ও বৃক্ষহীন মরুপথ, “মরুভূমি ও গর্তময় ভূমি,” “জলবিহীনতার ও মৃত্যুচ্ছায়ার ভূমি”, “পথিকবিহীন ও নিবাসী বর্জ্জিত ভূমি”। যিরমিয় ২৪৬। তাদের অগ্রগতি ছিল ধীর ও কষ্ট সাধ্য, এবং জনতা পথের বিপদ ও কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত ছিল না । PPBeng 265.5