৫৮—ভাববাদীদের বিদ্যালয়
ঈশ্বর যিহূদীদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা তাদের সন্তানদের তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে তাঁর আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দেবে। ঈশ্বরের মহান কার্যাবলী এবং মুক্তিদাতার প্রতিজ্ঞা প্রায়ই যেন আলোচিত হয়। সংখ্যা ও প্রতীক দ্বারা এই শিক্ষাসমূহ স্মৃতির মধ্যে স্থায়ী ভাবে গেঁথে দেবার বন্দোবস্ত ছিল । শিশু মন প্রকৃতির দৃশ্যে ও ঈশ্বরকে দেখার ও বুঝার প্রশিক্ষা লাভ করত । স্বর্গের তারা, বনের গাছ ও ফুল, পর্বতরাজি, প্রবাহমান সমস্ত কিছুই স্রষ্টার কথা প্রকাশ করতো। ধর্মধামের আরাধনা ও ভাববাদীদের বাণীসমূহ ঈশ্বর প্রকাশ করতেন । PPBeng 431.1
গোশেনে মোশি, শমূয়েলকে হান্না; বেথলেহাম, দাউদ, দানিয়েল বন্দি হয়ে তার পিতার কাছ হতে পৃথক হবার আগে; খ্রীষ্ট নাসারথে; এরা সকলেই এই একই পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তীমথিয় তার মাতামহী লোয়ীর ও মা উনীকীর কাছ হতে একই পদ্ধতিতে শিক্ষা লাভ করেছিলেন । ২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৫ । PPBeng 431.2
ভাববাদীদের বিদ্যালয়ে যুবক-যুবতীদের শিক্ষাদানের জন্য আরো অধিক বন্দোবস্ত ছিল। কোন যুবক বা যুবতী ইস্রায়েলে শিক্ষকতা করতে আকাঙ্খী হয়ে আরো গভীর ভাবে সত্যের অনুসন্ধান করতে আগ্রহী হত, তখন ঐ বিদ্যালয় তাদের জন্য খোলা ছিল। বহুল প্রসারিত মন্দতাকে বাধা দানের জন্য, যুবক-যুবতীদের নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির জন্য, যোগ্য নেতা ও পরামর্শ-দাতা সৃষ্টি করে জাতির উন্নতি বিধানের জন্য । শমূয়েল সেই সকল যুবক-যুবতীদের একত্রিত করতেন যারা ছিল ধার্ম্মিক, বুদ্ধিমান, ও লেখা-পড়ায় আগ্রহী। এদের ভাববাদীদের সন্তান নামে অভিহিত করা হত। স্বর্গীয় সত্যে উপযুক্তরূপে শিক্ষিত শিক্ষকরা নিজেরা ও ঈশ্বরের সহিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তাঁরা পবিত্র আত্মা দ্বারা পূর্ণ ছিলেন। তারা লোকদের আস্থা ভাজন ছিলেন PPBeng 431.3
শমূয়েলের সময়ে ঐ প্রকার দু'টি বিদ্যালয় ছিল একটি রামাতে আর অন্যটি কিরিয়যিয়ারীমে। অন্যগুলি পরে স্থাপিত হয়। PPBeng 432.1
ছাত্ররা মাঠে চাষ করে অথবা অন্য কোন কারিগরী কাজ দ্বারা নিজদের ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ চালাত। প্রয়োজনীয় কাজ শিক্ষা না করে সন্ত ানদের বড় হতে দেয়াকে ইস্রায়েলে একটি অপরাধ মনে করা হত। প্রত্যেক সন্তানকেই কোন না কোন কাজ শিক্ষা দেয়া হত, এমন কি সে কোন পবিত্র দায়িত্বে নিযুক্ত হবার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করার সময়ও হাতের কাজ শিখতে হতো। অনেক ধর্মীয় শিক্ষকরা দৈহিক কাজ করে নিজদের ভরণপোষণ যোগাড় করতেন। এমন কি প্রেরিতদের সময়ও পৌল ও আক্কিলা তাঁবু তৈরীর মাধ্যমে জীবন ধারণ করতেন । PPBeng 432.2
ঐ সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষার বিষয় সমূহ ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থা, ধর্মীয় ইতিহাস, ধর্মীয় সঙ্গীত, ও কাব্য। বর্ত্তমান কালের শিক্ষা পদ্ধতির সহিত ঐ শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান পার্থক্য এই ছিল যে বর্তমান কালের ধর্মীয় শিক্ষায় স্নাতক ব্যক্তিরা ঈশ্বর ও ধর্মীয় সত্য সম্পর্কে বিদ্যালয়ে যাবার আগে যা জানতেন বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে তার চেয়ে কম জানেন। সমস্ত শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে ও তাঁর প্রতি মানুষের কর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা । ধর্মীয় ইতিহাসে ঈশ্বরের পদক্ষেপ সমূহ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হত । প্রতীক দ্বারা যে মহান সত্য উপস্থিত করা হয় তা শিক্ষা দেয়া হত, এবং বিশ্বাসের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য শিক্ষাদান করা হত । ঈশ্বরের মেষ পৃথিবীর পাপ বহন করে নিয়ে যাবেন। PPBeng 432.3
ছাত্রদের শিক্ষা দেয়া হত কি ভাবে প্রার্থনা করতে হয়, কি ভাবে তাদের স্রষ্টার কাছে যেতে হয়, কি ভাবে তাঁর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করতে হয়, এবং কি ভাবে পবিত্র আত্মার শিক্ষা বুঝতে হয় ও মানতে হয়। ভবিষ্যদ্বাণী ও ধর্মীয় গানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আত্মার প্রকাশ ঘটত। PPBeng 432.4