কয়িন ও হেবলের মধ্যে গভীর পার্থক্য
“বিশ্বাসে হেবল ঈশ্বরের উদ্দেশে কয়িন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ উৎসর্গ করিলেন।” ইব্রীয় ১১:৪। হেবল নিজকে একজন পাপীরূপে দেখতে পেলেন, এবং দেখতে পেলেন যে তার আত্মাও ঈশ্বরের মধ্যে পাপের শাস্তি, মৃত্যু দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি নিহত শিকারটি নিয়ে এলেন আর এইরূপে যে ব্যবস্থা লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেই ব্যবস্থার দাবী পূরণ করলেন। যে রক্ত বহানো হয়েছে তার মধ্য দিয়ে তিনি ক্রুশে মরণাপন্ন খ্রীষ্টের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। ওখানে যে দান দেয়া হবে তার উপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে তার একজন সাক্ষী যে তিনি বিশ্বস্ত এবং তার উপহার গৃহীত হল । PPBeng 40.3
হেবলের যে সুযোগ ছিল, ঐ সত্য সমূহ গ্রহণ করার সেই একই সুযোগ কয়িনেরও ছিল। এক ভাইকে গ্রহণ করার জন্য এবং অন্য ভাইকে অস্বীকার করার জন্য ঈশ্বর কোন মনোনয়ন করেন নি। হেবল বিশ্বাস ও বাধ্যতা বেছে নিয়েছিলেন; কয়িন বেছে নিয়েছিলেন অ-বিশ্বস্ততা ও বিদ্রোহ। PPBeng 40.4
কয়িন ও হেবল সেই দুই শ্রেণীর লোকের প্রতিনিধিত্ব করেন যারা কালের শেষ পর্য্যন্ত থাকবে। একদল যারা নিজেদের জন্য সুযোগ গ্রহণ করেন; অন্যদল যারা নিজেদের যোগ্যতার উপর নির্ভর করেন। যারা মনে করেন যে খ্রীষ্টের রক্তের কোন প্রয়োজন নাই, খারা মনে করেন যে তারা তাদের কাজের মাধ্যমেই ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারবেন, তারা কয়িনের মত একই ভুল করছেন। PPBeng 40.5
প্রত্যেক মিথ্যা ধর্মই এই একই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষ তার পরিত্রাণের জন্য নিজের উপর নির্ভর করতে পারে। অনেকে দাবী করেন যে মানব জাতি নিজকে বিশোধন, উন্নত, এবং পুনর্জীবিত করতে পারে। যে ভাবে কয়িন চিন্তা করেছিল যে বলির রক্ত ছাড়া অন্য একটি উপহারের মাধ্যমে সে স্বর্গীয় অনুমোদন লাভ করতে সক্ষম। ঐরূপ ঐ লোকেরাও একই ভাবে কোন প্রায়শ্চিত্ত ব্যতিরেকে মানবতাকে ঈশ্বরের মানে উন্নীত করতে চায়। কয়িনের ইতিহাস প্রমাণ করে যে মানবতা ঊর্ধ্বে স্বর্গের দিকে উন্নীত হয় না, কিন্তু নিম্নে, শয়তানের দিকে ধাবিত হয়। খ্রীষ্টই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশ। প্রেরিত ৪:১২ দেখুন । PPBeng 41.1
সত্যিকার বিশ্বাস সদাপ্রভুর সকল দাবির প্রতি বাধ্যতায় প্রকাশিত হয় । আদমের সময় হতে শুরু করে বর্ত্তমান কাল পৰ্য্যন্ত মহা-বিতর্ক হচ্ছে ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতা সম্পর্কিত। এ ধরণের মানুষ যুগে যুগে ছিল যারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ ও দয়া কামনা করেছে কিন্তু তার কিছু কিছু আহবানের প্রতি অবহেলা দেখিয়েছে। কিন্তু “কর্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল” এবং বিশ্বাস বিহীন হইলে কর্ম মৃত।” যাকোব ২:২২, ১৭। যে বলে সে ঈশ্বরকে জানে “তথাপি তাঁহার আজ্ঞা পালন না করে, সে মিথ্যাবাদী এবং তাহার অন্তরে সত্য নাই।” ১ যোহন ২:৪ । যখন কয়িন দেখতে পেল যে উপহার অস্বীকার করা হল তখন স্বৰ্গ হতে নির্দ্ধারিত বলি ব্যতিরেকে মানুষের প্রতিকল্প ঈশ্বর গ্রহণ করবেন না দেখে ক্রোধান্বিত হল, আর সে তার ভ্রাতার উপরও ক্রোধান্বিত হল যে সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যুক্ত না হয়ে সে ঈশ্বরের বাধ্য থাকাকে বেছে নিল । PPBeng 41.2
ঈশ্বর তাকে একাকী থাকতে না দিয়ে বরং যে এত অযৌক্তিকতার সাথেও যুক্তিতর্ক করার জন্য নীচে নামতে রাজী হলেন। “তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ন হইয়াছে? যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে।” যদি সে প্রতিজ্ঞাত ত্রাণকর্তার যোগ্যতায় বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হয় সে তাহার অনুগত লাভ করবে। আর যদি সে অ-বিশ্বাসী ও অবাধ্যতার মধ্যেই বিচরণ করতে থাকে, তবে ঈশ্বর তাকে অস্বীকার করলে তার অভিযোগ জানানোর কোন ভিত্তি নাই । PPBeng 41.3
তার পাপ স্বীকার করার পরিবর্ত্তে, কয়িন ঈশ্বরের অন্যায়পরায়াণতার অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকল এবং তার ভাইয়ের প্রতি ঈর্ষা ও ঘৃণা পোষণ করতে শুরু করল। নম্র ভাবে, কিন্তু দৃঢ়তার সহিত, হেবল ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা ও উত্তমতার পক্ষ সমর্থন করল। সে কয়িনের ভুল দেখিয়ে দিল এবং তাকে বুঝাতে চেষ্টা করল যে অন্যায় তার মধ্যেই রয়েছে। তাদের মাতা- পিতাকে মৃত্যু দ্বারা শাস্তি না দিয়ে তাদের জীবন রক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের যে দয়া নিহিত রয়েছে তার প্রতি সে নির্দেশ করল, এবং আবেদন জানাল যে ঈশ্বর তাদের ভালবাসেন। কারণ তা না হলে তিনি তাঁর নির্দোষ ও পবিত্র পুত্রকে তাদের প্রাপ্য যে শাস্তি সেই শাস্তি তাঁকে করতে দিতেন না। এই সমস্তই কয়িনের ক্রোধকে আরো প্রজ্জ্বলিত করল। যুক্তি ও বিবেক তাকে বলল যে হেবল সত্যি কথাই বলছে, কিন্তু সে ক্রুদ্ধ হলো যে সে তার বিদ্রোহে তার ভাইয়ের সহানুভূতি পাচ্ছিল না। ক্রোধে অন্ধ হয়ে সে তার ভাইকে হত্য করল । যুগে যুগে দুষ্ট লোকেরা যারা তাদের থেকে ভাল তাদের ঘৃণা করে। “কারণ যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে, এবং জ্যোতির নিকটে আইসে না, পাছে তাহার কর্ম সকলের দোষ ব্যক্ত হয়।” যোহন ৩:২০। PPBeng 41.4
হেবলের হত্যা সর্প ও নারীর বংশধরদের মধ্যের এবং শয়তান ও তার প্রজা এবং খ্রীষ্ট ও তাঁর অনুগামীদের মধ্যের, শত্রুতার প্রথম দৃষ্টান্ত। যখনই কোন আত্মা ঈশ্বরের মেষশাবকের উপর বিশ্বাস আনার মাধ্যমে পাপের দাসত্ব পরিত্যাগ করে তখনই শয়তান ক্রোধে জ্বলে উঠে। শয়তানের দাবী যে ঈশ্বরের ব্যবস্থা রক্ষা করা মানুষের জন্য অসাধ্য, হেবলের পবিত্র জীবন তার বিপক্ষে সাক্ষী দিচ্ছিল । যখন কয়িন দেখল যে সে হেবলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তখন সে এত ক্রোধান্বিত হলো যে সে হেবলের জীবনই ধ্বংস করে দিল । আর যখনই কেহ ঈশ্বরের ব্যবস্থা রক্ষার্থে দাঁড়াবে তখন এই একই ভাবের প্রকাশ পাবে। খ্রীষ্টের পক্ষে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি বিজয়ীরূপে মৃত্যু বরণ করেছেন। প্রকাশিত বাক্য ১২৪৯, ১১ দেখুন। PPBeng 42.1
ঘাতক কয়িনকে শীঘ্রই তার অপরাধের জবাবদিহী করতে আহবান করা হল । পরে সদাপ্রভু কয়িনকে কহিলেন, “তোমার ভাই হেবল কোথায়? সে উত্তর করিল, আমি জানি না; আমার ভ্রাতার রক্ষক কি আমি?” সে তার অপরাধ ঢাকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিল । PPBeng 42.2