পরিত্রাণের আরো প্রসারিত লক্ষ্য
মানুষের পরিত্রাণ ছাড়াও পরিত্রাণ পরিকল্পনার আরো গভীর ও প্রসারিত লক্ষ্য ছিল। এটা শুধুমাত্র এই ছিল না যে এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর অধিবাসীগণ ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে যে ভাবে মান্য করা উচিত সে ভাবে মান্য করবে, কিন্তু ইহা ছিল সমগ্র বিশ্বের নিকট ঈশ্বরের চরিত্রের যথার্থতা প্রমাণ করার পদ্ধতি। পরিত্রাণদাতা এই দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন যখন তার ক্রুশে বিদ্ধ হওয়ার ঠিক পূর্বে তিনি বলেছিলেন, “এখন এ জগতের বিচার উপস্থিত, এখন এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে। আর আমি ভূতল হইতে উচ্চীকৃত হইলে সকলকে আমার নিকট আকর্ষণ করিব।” যোহন ১২:৩১, ৩২। মানুষের পরিত্রাণের জন্য খ্রীষ্টের মৃত্যু ঈশ্বর ও তার পুত্রের শয়তানের প্রতি ব্যবহারের যথার্থতা প্রমাণ করবে, ঈশ্বর ব্যবস্থা স্থাপন করবেন, এবং পাপের প্রকৃতি ও তার ফল সমূহকে প্রকাশ করবে । PPBeng 37.2
প্রথম থেকেই ঈশ্বরের নিয়মই ছিল মহা বিতর্কের কারণ। শয়তান প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছিল যে ঈশ্বর অন্যায়কারী, তাঁর ব্যবস্থা ভ্রান্তিপূর্ণ, বিশ্বের মঙ্গলের জন্য এর পরিবর্তন প্রয়োজন। ব্যবস্থাকে আক্রমণের মাধ্যমে সে এর প্রণেতাকে পরাস্ত করার লক্ষ্য স্থির করেছিল । PPBeng 37.3
যখন শয়তান আদম ও হবাকে পরাস্ত করেছিল, সে মনে করল যে সে সমস্ত পৃথিবীর অধিকার লাভ করেছে, “কেননা,” সে বলেছিল, “তারা আমাকে তাদের অধিপতি মনোনীত করেছে।” সে দাবী করেছিল যে ক্ষমা প্রদান করা মোটেও সম্ভব নয়; পতিত জাতি যথার্থই তার প্রজা, এবং পৃথিবী তারই। কিন্তু পাপের শাস্তি ভোগের জন্য ঈশ্বর তার পুত্রকে দান করলেন । এই ভাবেই তারা তাঁর অনুগ্রহ পুনঃ লাভ করবে এবং তাদের আবাস স্থল এদনে ফিরে আসবেন। যে মহা বিতর্ক স্বর্গে আরম্ভ হয়েছিল তার সিদ্ধান্ত এই পৃথিবীতে, একই ক্ষেত্রে, যা শয়তান তার বলে দাবী করে, গৃহিত হতে হবে। PPBeng 38.1
এটা সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল যে খ্রীষ্ট পতিত মানবের জন্য অত্যন্ত নীচে নেমে যাবেন। যখন খ্রীষ্ট মানুষরূপে পৃথিবীতে আসলেন, তখন গোশালা হতে কালভেরী পর্য্যন্ত রক্তাক্ত পথে ভ্রমণ রত খ্রীষ্টকে সকলেই গভীর ঔৎসুক্যের সহিত অনুসরণ করেছিল। যে সমস্ত অপমান ও ঠাট্টা বিদ্রূপ তাঁকে করা হচ্ছিল স্বর্গে তা সকলই লিখিত হল, এবং এটা জানা ছিল যে এ সকলই শয়তানের প্ররোচনায় করা হচ্ছিল। আলো ও অন্ধকারের মধ্যে যুদ্ধ যখন তীব্রতর হলো, তখন সকলেই মনোযোগ সহকারে তা অবলোকন করল। আর ক্রুশে যীশু যখন চীৎকার করে বললেন, “সমাপ্ত হইল” তখন সব কয়টি পৃথিবী ও স্বর্গেও উল্লাসিত বিজয় রব ধ্বনিত হলো । মহা দ্বন্দ্বের সিদ্ধান্ত এমন হয়ে গেল যে খ্রীষ্টই বিজয়ী হলেন। তাঁর মৃত্যু এই প্রশ্নের উত্তর দিল যে ঈশ্বর ও তার পুত্রের মানুষের প্রতি প্রেম কি এত গভীর যে আত্ম-অস্বীকার ও আত্ম- ত্যাগ প্রদর্শন করা হবে? শয়তান মিথ্যাবাদী ও হত্যাকারীরূপে নিজেকে প্রকাশ করল । সমগ্র বিশ্বস্ত বিশ্ব এক স্বরে স্বর্গীয় শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করল । PPBeng 38.2
আর যেমন অনেকে দাবী করে থাকেন, যদি ব্যবস্থা ক্রুশে লোপ করা হত তবে যে নিদারুণ যন্ত্রণা ও মৃত্যু ঈশ্বরের প্রিয় পুত্রকে সহ্য করতে হলো তাতে শয়তান যা চেয়েছিল তাই তাকে দেয়া হল; তা হলেও অন্ধকারের অধিপতি বিজয় লাভ করল, এবং স্বর্গীয় রাজত্বের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ সমূহ যথার্থ প্রমাণিত হল। মানুষের অবাধ্যতার শাস্তি যে খ্রীষ্টকে বহন করতে হল, তাই এ বিষয়ের পক্ষে একটি জোরালো সাক্ষ্য যে ব্যবস্থা অপরিবর্তনীয়; ঈশ্বর ধার্মিক, দয়ালু, আত্মত্যাগী, আর তার প্রশাসনে অসীম ন্যায়পরায়ণতা ও অসীম দয়া একীভূত হয়েছে। PPBeng 38.3