১—পাপ কেন অনুমোদন করা হল?
“ঈশ্বর প্রেম।” তাঁর প্রকৃতি, তাঁর আজ্ঞা প্রেম। ঈশ্বর সর্বদাই প্রেমকারী ছিলেন, সর্ব্বদাই তদ্রূপ থাকবেন। তাঁর সৃষ্টি-ক্ষমতার প্রত্যেক কাজই তাঁর অসীম প্রেমের প্রকাশ। স্বর্গের শুরু হওয়ার মুহূর্ত থেকে ভাল ও মন্দের মধ্যেকার প্রচন্ড সংঘাতের ইতিহাস ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় প্রেমেরই প্রমাণ । PPBeng 11.1
নিখিল-বিশ্বের রাজা তাঁর হিতকর কাজে একা ছিলেন না। তাঁর একজন সাথী ছিলেন যিনি তাঁর উদ্দেশ্য যথাযথ ভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন এবং সৃষ্ট প্রাণীকে আনন্দ দানে যিনি তাঁর আনন্দের সহভাগী হতে পারতেন। যোহন ১:১, ২ দেখুন । PPBeng 11.2
যীশু যিনি বাক্যে, চিরস্থায়ী পিতার সাথে প্রকৃতিতে, চরিত্রে এবং উদ্দেশে একই ছিলেন। “তাঁহার নাম হইবে” “আশ্চৰ্য্য মন্ত্রী, পরামর্শ দাতা, বিক্রমশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তিরাজ।” যিশাইয় ৯:৬। তাঁর কাৰ্য্য সকল “প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল পৰ্য্যন্ত ।” মীখা ৫:২। PPBeng 11.3
পিতা তাঁর পুত্রের মাধ্যমে সমস্ত স্বৰ্গীয় বাহিনী সৃষ্টি করলেন। “স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যে কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্য হউক, কি কর্তৃত্ব হউক, সকলই তাঁহার দ্বারা...সৃষ্ট হইয়াছে।” কলসীয় ১:১৬। স্বর্গীয় দূতেরা হলেন পবিত্র ঈশ্বরের পরিচর্য্যাকারী এবং তারা তাঁর ইচ্ছা দ্রুত বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু তাঁর পুত্র, যিনি “তাহার প্রতাপের প্রভা ও তত্ত্বের মুদ্রাঙ্ক, এবং আপন পরাক্রমের বাক্যে সমুদয়ের ধারণকর্তা,” তাদের সকলের উপর কর্তৃত্ব করেন। ইব্রীয় ১৪৩, ৮। PPBeng 11.4
ঈশ্বর তাঁর সমস্ত সৃষ্টির নিকট থেকে প্রেমের সেবা আশা করেন। সেই সেবা যা তাঁর চরিত্রের মাহাত্ম অনুভবের মাধ্যমে আসে। তিনি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্যতা স্বীকার করানতে সুখী হন না, এবং তিনি প্রত্যেককে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেন, যেন তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাঁর সেবা করে । PPBeng 11.5
যতক্ষণ প্রত্যেক সৃষ্ট জীব তাঁর প্রেমের প্রতি বাধ্যতা প্রদর্শন করল, ততক্ষণ ঈশ্বরের সমগ্র বিশ্বে পূর্ণ ঐকতান বিরাজমান ছিল । ঐ স্বর্গীয় ঐকতানে কোন বেসুর আওয়াজ ছিল না। PPBeng 11.6
কিন্তু ঐ আনন্দঘন পরিবেশে একটি পরিবর্তন আসল। একজন ছিল সে ঈশ্বর তার সৃষ্টিকে যে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তা বিনষ্ট করল। পাপ তার থেকেই উৎপত্তি হলো, যে, খ্রীষ্টের পরেই ঈশ্বরের নিকটতম ছিল, সে ঈশ্বরের সবচেয়ে প্রিয় পাত্র এবং স্বর্গ নিবাসীদের মধ্যে ছিল সর্ব্ব উচ্চ। “ঊষা নন্দন” (যিশাইয় ১৪:১২) লূসিফর ছিল পবিত্র ও নিষ্কলুষ । সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “তুমি সৌন্দর্য্যে সিদ্ধ...তুমি অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে, আমি তোমাকে স্থাপন করিয়াছিলাম, তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পর্বতে ছিলে, তুমি অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্যে গমনাগমন করিতে। তোমার সৃষ্টি দিন হইতে তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল।” PPBeng 12.1
ধীরে ধীরে লূসিফর হৃদয়ে আত্ম-মহিমান্বয়নের কামনা পোষণ করতে শুরু করল। “তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্য্যে গর্বিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ; যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৫, ১৭। তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে,...ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের উর্দ্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব;... আমি পরাৎপরের তুল্য হইব। যিশাইয় ১৪:১৩, ১৪। যদিও স্বর্গীয় সমস্ত দূতগণের মধ্যে সে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী ছিল, তথাপি সে সেই সম্মানের আকাঙ্ক্ষা করল যা শুধু মাত্র সৃষ্টিকর্তার প্রাপ্য। স্বর্গীয় দূতগণের নেতা সেই ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষী হলো যা শুধু মাত্র খ্রীষ্টের প্রাপ্য। PPBeng 12.2
সুতরাং স্বর্গের পূর্ণ ঐকতানে ভাঙ্গন আসল। স্বর্গীয় পরামর্শ সভায় অন্যান্য দূতগণ লূসিফরকে অনেক অনুনয় বিনয় করল। ঈশ্বরের পুত্র ঈশ্বরের মাহাত্ম ও ন্যায়পরায়ণতার বিষয় লুসিফরের নিকট উপস্থাপন করলেন এবং তার আজ্ঞার অপরিবর্তনীয়তার ব্যাখ্যা করলেন । ইহা হতে সরে গেলে, লুসিফর নিজ স্রষ্টার অবমাননা করবে এবং নিজের উপর ধ্বংস আনয়ন করবে। কিন্তু অসীম প্রেম ও অনুগ্রহের মাধ্যমে দেয়া সতর্কবাণী লূসিফরের মনে আরো প্রতিকুলতারই সৃষ্টি করল। খ্রীষ্টের প্রতি তার ঈর্ষা লূসিফরের মনে আরো গভীর হতে দিল, এবং সে অধিকতর সংকল্পবদ্ধ হ'ল । PPBeng 12.3
বিশ্বের রাজা স্বর্গের সমস্ত দূতগণকে তার সামনে আহবান করলেন যেন তাদের উপস্থিতিতে তিনি নিজ পুত্রের প্রকৃত অবস্থান স্থির করতে পারেন এবং সমস্ত সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর (পুত্রের) সম্পর্ক দেখাতে পারেন। ঈশ্বরের পুত্র নিজ পিতার সিংহাসনের অংশীদার ছিলেন, এবং চিরন্তন, আত্ম-বিদ্যমানের গৌরব উভয়কে ঘিরে থাকত। সিংহাসনের চতুর্দিকে সমস্ত পবিত্র দূতগণ একত্রিত হলেন, “অযুত গুণ অযুত ও সহস্র গুণ সহস্র।” প্রকাশিত বাক্য ৫:১১। স্বর্গের সমস্ত নিবাসীদের উপস্থিতিতে রাজা ঘোষণা করলেন যে খ্রীষ্ট ভিন্ন আর কেউ নয় তাঁর (রাজার) সমস্ত উদ্দেশের নিগূঢ়ে প্রবেশ করতে এবং তাঁর ইচ্ছার পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। খ্রীষ্ট তাঁর ঐশ্বরিক ক্ষমতা দ্বারা পৃথিবী ও তার নিবাসীদের সৃষ্টি করবেন। PPBeng 12.4