ব্যায়ামের উপকারিতা
কাজই আমাদের সত্ত্বার একটা নিয়ম। শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নির্ধারিত কাজ রয়েছে, যেগুলো কাজের ওপরে উন্নয়ন এবং শক্তি নির্ভর করে। সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজ শক্তি এবং জীবন দান করে; একই সময়ে অপব্যবহারের প্রবণতা ক্ষয় এবং মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া। কয়েক সপ্তাহের জন্য একখানা হাত বেঁধে রাখুন, পরে ঐ বাঁধন খুলে দিন, পরে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, হাতখানি অন্য হাত খানার চাইতে দুর্বল হয়ে গেছে যে হাতটা আপনি একই সময় ব্যাপি স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। কর্মহীনতা সমগ্র মাংসপেশীর ওপরে একই প্রভাব সৃষ্টি করে।MHBen 220.3
অকর্মন্যতা ব্যাধি পীড়ার একটি ফলপ্রসূ কারণ। ব্যায়াম রক্ত চলাচলকে ত্বরান্বিত করে এবং সমতা রক্ষা করে, কিন্তু আলস্য সময় যাপনে রক্ত অবাধে চলাচল করতে পারে না; এবং এর মধ্যে জীবন এবং স্বাস্থ্যে আবশ্যকীয় পরিবর্তন সাধিত হয় না। চর্মও অকেজো হয়ে আসে। অপদ্রব্য নির্গত হয় না যেমনটা হওয়া উচিত। যদি ব্যায়াম দ্বারা রক্ত চলাচল ত্বরান্বিত করা হয় তবে চর্ম স্বাস্থ্যসম্মত থাকবে, এবং ফুসফুসে প্রচুর বিশুদ্ধ বায়ু পাবে। এই পদ্ধতি নিঃসরণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওপরে দ্বিগুণ বোঝা চেপে দেয়, যার পরিণাম অসুস্থতা।MHBen 221.1
অচল ব্যক্তিদেরকে অকর্মন্য থাকতে উৎসাহিত করা উচিত নয়। যখন যে কোন একদিকে ভয়ানক, মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, তবে কিছু সময়ের জন্য পূর্ণ বিশ্রাম ভয়াবহ অসুস্থতা প্রতিহত করবে; কিন্তু নিশ্চিত অচলাবস্থার ক্ষেত্রে, সব কর্মকান্ড থেকে বিরতি দেয়া ঠিক হবে না। যারা মানসিক শ্রম থেকে অচলাবস্থায় এসে পড়েছে তাদের শ্রান্তি-কর চিন্তাথেকে বিশ্রাম প্রয়োজন; কিন্তু তাদের এ বিশ্বাস করতে হবে না যে, তাদের সম্পূর্ণরূপে মানসিক শক্তির ব্যবহার বিপজ্জনক। অনেকে মনে করে থাকে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা নয়। মনের এই অবস্থা সুস্থতা লাভের পক্ষে নয়, এবং এতে উৎসাহিত করা ঠিক নয়।MHBen 221.2
সুসমাচার প্রচারকেরা, শিক্ষকেরা, ছাত্রছাত্রীরা, এবং অন্যান্য মানসিক কার্যকারীরা প্রায়ই অত্যধিক মানসিক কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের শারীরিক পরিশ্রম হয় না। এই ব্যক্তিদের যা প্রয়োজন তা হল সক্রিয় জীবন। কড়াকড়ি মিতাচার অভ্যাস, উপযুক্ত ব্যায়াম, মানসিক এবং শারীরিক প্রাণশক্তি নিশ্চিত করবে, এবং সমস্ত মানসিক কার্যকারীদেরকে সহ্য শক্তি দান করবে।MHBen 221.3
যারা অত্যধিক শারীরিক শক্তি ব্যয় করেছে, তারা সার্বক্ষণিক ক্সদহিক শ্রমে নিয়োজিত থাকবে না। কিন্তু যে শ্রম সর্বশ্রেষ্ঠ উপকার আনয়ন করবে তা হবে নিয়মানুগ এবং মনোরম ও উপযোগী। খোলা জায়গায় ব্যায়াম সর্বোত্তম; এটা এমনভাবে পরিকল্পনা করে করতে হবে, যাতে করে দুর্বল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে শক্তি লাভ হয়; এবং এর মধ্যে মনও থাকবে; হস্তের শ্রম কখনো মর্যাদাহীনভাবে এক ঘেয়ে করবেন না।MHBen 222.1
যখন রুগ্ন ও দুর্বল ব্যক্তিদের তাদের সময় কাটাবার এবং মনোযোগ আকর্ষণের কিছুই থাকবে না, তখন তাদের চিন্তারাশি কেবল তাদের প্রতিই কেন্দ্রীভূত থাকবে, এবং তারা দুর্বল এবং অস্বস্তিকর এবং খিটখিটে হয়ে আসবে। অনেকবার তারা তাদের মন্দ অনুভূতি নিয়েই থাকে যে পর্যন্তনা তারা নিজেদের বিষয় অধিক মন্দ চিন্তাকরে, যতটা তারা নয়; এবং যে কোন কাজ করতে তারা সম্পূর্ণ অপারগ।MHBen 222.2
এসবের মধ্যে সুপরিচালিত শারীরিক ব্যায়াম একটি ফলপ্রসূ নিরাময় দানকারী প্রতিনিধি স্বরূপ। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পুনরুদ্বার কল্পে অপরিহার্য। হস্তের শ্রমের সঙ্গে ইছাও থাকবে; আর এই দুর্বলদের জন্য তা হল তাদের ইছার উদ্রেক। ইছা যখন ঘুমন্ত, তখন কল্পনা অস্বাভাবিক হয়ে আসে এবং ব্যাধি পীড়া প্রতিরোধ করা অসম্ভব। MHBen 222.3
কর্মহীনতা সর্বশ্রেষ্ঠ অভিশাপ যা অধিকাংশ রুগ্ন, এবং দুর্বলদের ওপর আসে। উপকারী শ্রমে হালকা কাজ যা শরীর মনের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে না, তা উভয়ের ওপরে একটি সুখময় প্রভাব রয়েছে। এটি মাংস পেশীকে শক্তিশালী করে, রক্ত চলাচলের উন্নতিসাধন করে, এবং দুর্বল এবং রুগ্ন ব্যক্তিকে তৃপ্তি দান করে যে, সে এই ব্যস্ত পৃথিবীতে সম্পূর্ণ অযোগ্য ব্যক্তি নয়। সে সর্ব প্রথম অল্প কিছু করতে সমর্থ, কিন্তু সে অতি সত্ত্বার দেখবে তার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং তার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ব্যায়াম, পরিপাক যন্ত্রের এক সুস্থ স্থিতিস্থাপকতা দিয়ে অজীর্ণ রোগে সাহায্য করে। খাবার কেবলই পরে খুব অত্যধিক পড়াশুনা বা শারীরিক ব্যায়াম হজমক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে; কিন্তু আহারের পরে মাথা সোজা করে এবং ঘাড় পিছে, করে একটু অল্পক্ষণ হাঁটা খুব উপকারী।MHBen 222.4
সে যা-ই হোক, যা কিছু বলা হয়েছে এবং গুরুত্ব সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে, এখনো অনেকে রয়েছে যারা শারীরিক ব্যায়াম অবহেলা করে। কোন কোন লোক অত্যধিক মোটা হয়, কারণ দৈহিক গঠনতন্ত্র আঁটকে গেছে; অন্যান্যরা রুগ্ন এবং অত্যধিক খাদ্য গ্রহণ হেতু তাদের জীবনী শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। দুষিত রক্ত পরিষ্কারকরণের কারণে লিভার বোঝাগ্রস্ত হয়ে যায়, পরিণামে ব্যাধিপীড়ার শিকার হতে হয়।MHBen 223.1
যাদের কেবল বসে থাকা অভ্যাস, তারা প্রতিদিন ভাল আবহাওয়ায় ব্যায়াম করবে; গ্রীষ্মে কি শীতে। গাড়ী চালানো অথবা গাড়ীতে চলা অপেক্ষা হাটা অধিক গ্রহণযোগ্য কেননা হাটলে মাংস পেশীর অধিক ব্যায়াম হয়। ফুসফুস অধিক কাজ করতে বাধ্য হয় যেহেতু ফুসফুসকে স্ফীত না করে হাঁটা অসম্ভব। এরূপ স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম ওষুধ অপেক্ষা শ্রেয়। ডাক্তাররা প্রায়ই তাদের সমুদ্র যাত্রায় যেতে বলেন, কোন অজৈব ঝর্ণায় যেতে বলেন, অথবা আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে যেতে বলেন, যখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে, যদি তারা পরিমিত আহার গ্রহণ করে, এবং খুশী মনে স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম করে, তারা সুস্থ হবে এবং সময় ও অর্থ বাঁচবে।MHBen 223.2
*****