সেবার উদ্দেশ্য
খ্রীষ্টের সেবার কোন কার্পণ্য ছিল না। তিনি তাঁর কাজকে সময় দ্বারা মাপেননি। তাঁর সময়, তাঁর অন্তঃকরণ, তার আত্মা এবং তাঁর শক্তি সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য দিয়েছিলেন। সারা দিনের কঠিন শ্রমে তিনি ক্লান্ত হতেন, এবং গভীর রাত পর্যন্ততিনি উবুর হয়ে আশীর্বাদ চাইতেন যেন তিনি আরো কাজের জন্য ক্সধর্য ও অনুগ্রহ প্রাপ্ত হন। তিনি চোখের জলে ক্রন্দন করতেন যেন তিনি শক্তিপ্রাপ্ত হন যদ্বারা তিনি শয়তানের সবরকম প্রতারণা ও বিরোধিতার প্রতিরোধ করতে পারেন এবং মানব জাতিকে উদ্ধারকল্পে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়। তাঁর কার্যকারীদের জন্য তিনি বলেছেন, “কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর।”(যোহন ১৩:১৫)।MHBen 481.4
প্রেরিত পৌল বলেছেন, “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে।”(২য় করিন্থীয় ৫:১৪) এটা ছিল তার জীবনের নীতিমালা এবং তার কার্য পরিকল্পনার শক্তি। তাঁর দায়িত্ব পালনের যে বাসনা তা থেকে ক্রুশের প্রতি এক নজর দৃষ্টি যা তার মনকে নতুন শক্তিতে উদ্দীপ্ত করেছে এবং আত্ম-ত্যাগস্বীকার করে অগ্রসর হতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাঁর সহ ভাইদের জন্য সেবা করার জন্য তিনি খ্রীষ্টের ঐশি প্রেমের ত্যাগস্বীকারের শক্তিতে নির্ভরশীল ছিলেন।MHBen 481.5
তাঁর আবেদন কত না আকুল এবং হৃদয়স্পর্শী: “কেননা তোমরা আমাদের খ্রীষ্টের অনুগ্রহ জ্ঞাত আছ; তিনি ধনবান হইলেও তোমাদের জন্য দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান হও।”(২করিন্থীয় ৮:৯)।MHBen 482.1
আপনারা জানেন তিনি কোন উচ্চ স্থান থেকে দরিদ্রতার গভীরে নেমেছিলেন। তাঁর পদক্ষেপ ত্যাগস্বীকারের শেষ প্রান্ত পর্যন্তছিল; যতক্ষণ না তিনি জীবন বিসর্জন দিলেন। স্বর্গ থেকে ক্রুশ পর্যন্ততাঁর কোন বিশ্রাম ছিল না। মানুষের জন্য তাঁর প্রেম সব সম্মান পরিহার এবং যাতনা, বহন করতে পরিচালিত করেছে। MHBen 482.2
প্রেরিত পৌল আমাদের উপদেশ দিয়েছেন, “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।”(ফিলিপীয় ২:৪) তিনি আমাদের স্মরণে রাখতে আবেদন জানিয়েছেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরে লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু মানুষের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্তআজ্ঞাবহ হইলেন।”(ফিলিপীয় ২:৫-৮)।MHBen 482.3
প্রেরিত পৌল গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন যেন জীবনদাতার নম্রতা উপলব্ধি ও তা দেখতে পায়। তিনি জীবন দিয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, মানুষ যদি স্বর্গের মহান ব্যক্তির অপূর্ব ত্যাগস্বীকারকে উপলব্ধি করে, তবে স্বার্থপরতা জীবন থেকে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। প্রেরিত পৌল একটার পর একটা কারণ দর্শিয়েছেন যেন আমরা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি যে জীবনদাতা পাপীদের জন্য কি মহৎ আশ্চর্য কাজ সাধন করেছেন। প্রথমে তিনি আমাদের মন আকর্ষণ করেছেন, খ্রীষ্ট স্বর্গে তাঁর পিতার পাশে যে পদ মর্যাদায় আছেন তাঁর ওপর; তারপর তিনি তাঁকে প্রকাশ করেছেন, কিভাবে তিনি তার স্বর্গের মহিমা স্বেছায় ত্যাগ করে নিজেকে নত করে সাধারণ মানুষের রূপ ধারণ করলেন। এবং সেবকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে মনস্থ করলেন। তিনি অত্যন্ত কলঙ্কজনক, উপহাসের পাত্র হয়ে, নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা ভোগ পূর্বক ক্রুশে মৃত্যু পর্যন্তবিশ্বস্ত ছিলেন। আমরা কি ঈশ্বরের এ অপূর্ব প্রেমকে প্রকাশ করার জন্য কৃতজ্ঞতা এবং ভালবাসা না দেখিয়ে থাকতে পারি যে গভীর অনুভূতি হচ্ছে- আমরা আর আমাদের নিজেদের নই? এ মহান প্রভুকে কোন প্রকার ঈর্ষা এবং স্বার্থপরতা নিয়ে সেবা করা যায় না। MHBen 482.4
পিতর বলেন, “তোমরা ত জান,...তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রোউপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই।”১পিতর ১:১৮। মানুষের জন্য পরিত্রাণ যদি ক্রয় করা সম্ভব হতো, তবে তাঁর পক্ষে এটা কতই না সহজ হতো যিনি বলেন, “রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই।”(হগয় ২:৮)। কিন্তু পাপীদের জীবন শুধুমাত্র ঈশপুত্রের অমূল্য রক্তের দ্বারা পরিত্রাণ সম্ভব। যারা এ অপূর্ব মহান ত্যাগ বলির প্রশংসা করতে ব্যর্থ, খ্রীষ্টের আত্মোৎসর্গকে নিজেদের জন্য গ্রহণ করেন না, তারা তাদের নিজেদের বিনষ্ট নিজেরাই করবেন।MHBen 483.1