Loading...
Larger font
Smaller font
Copy
Print
Contents

স্বাস্থ্য এবং সুখ

 - Contents
  • Results
  • Related
  • Featured
No results found for: "".
  • Weighted Relevancy
  • Content Sequence
  • Relevancy
  • Earliest First
  • Latest First
    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents

    ২ - পরিচর্যা কাজের দিনগুলো

    “পৃথিবীতে এমন দিন আর আগে কখনো আসেনি।
    মানুষের মাঝে স্বর্গ আনীত হল।”

    কফর নাহূমের জেলে পিতরের শাশুড়ীর “খুব জ্বর ছিল, ফলে তিনি শুইয়া ছিলেন” এবং “তাঁহার কথা তাহাকে বলা হইল।” যীশু “তাহার হস্ত ধরিয়া তাঁহাকে তুলিলেন,” (লূক ৪:৩৮, ৩৯; মার্ক ১:৩০, ৩১; মথি ৮:১৫), তখন তিনি ওঠে ত্রাণকর্তা ও তাঁর অনুসারীদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।MHBen 17.1

    দ্রুত খবর প্রচার হয়ে গেল। এই অলৌকিক কাজটি বিশ্রামবারে করা হয়েছিল এবং ধর্মগুরুদের ভয়ে লোকেরা সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত সুস্থ হতে আসতে সাহস পেল না। সন্ধ্যা হলে ঘরবাড়ী দোকান, হাটবাজার ও শহরের লোকজন যীশু যে সাধারণ ঘরে ছিলেন সেখানে জড়ো হতে লাগল। অসুস্থরা খাটের ওপর শোয়ান অবস্থায়, লাঠিতে ভর করে বা বন্ধুদের সাহায্যে খোড়াতে খোড়াতে পরিত্রাণকর্তার সামনে আসতে লাগল।MHBen 17.2

    ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তারা আসতে ও সুস্থ হয়ে চলে যেতে লাগলো, কেননা তাদের কেউ জানত না যে আগামীকাল তারা নিরাময়কারীকে তাদের মাঝে পাবে কিনা। কফরনাহূমের লোকেরা এ ধরনের দিন এর আগে কখনো দেখেনি। সমস্ত আকাশ বাতাস বিজয়োলাসে ও মানুষের কোলাহলে পরিপূর্ণ হল।MHBen 17.3

    উপদ্রুত লোকদেরকে মুক্ত না করা পর্যন্ত যীশু তাঁর কাজ অব্যাহত রাখলেন। রাত গভীর হলে জনতা চলে গেল আর তখন শিমোনের বাড়ী নিস্তব্ধ হল। দীর্ঘ উত্তেজনাপূর্ণ দিনের অবসান হল, আর যীশু বিশ্রামের স্থানে অন্বেষণ করলেন। কিন্তু নগর যখন নিস্তব্ধতায় নিমজ্জিত ছিল “ভোরের অন্ধকার থাকতেই” পরিত্রাণকর্তা “উঠিলেন এবং ঘর ছাড়িয়া একটা নির্জন স্থানে গিয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন।” (মার্ক ১:৩৫)।MHBen 17.4

    সকাল হতে না হতেই পিতর ও তার সঙ্গী-সাথীরা যীশুর কাছে এসে বললেন যে, কফরনাহূমের লোকেরা এরই মধ্যে তাঁর খোজ করছে। বিষ্ময়ের সাথে তাঁরা শুনলেন মশীহ্ বলছেন, “অন্য অন্য নগরেও আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি (লূক ৪:৪৩)।MHBen 18.1

    যে উত্তেজনা কফরনাহূমে তখন বিরাজ করছিল, তাতে এই পৃথিবীতে তাঁহার উদ্দেশ্য বিফল হওয়ার উপক্রম হল। যীশু কেবল লোকদের কাছে একজনকে অলৌকিক কার্য সাধকরূপে কিম্বা শারীরিক বিমারী আরোগ্যকারীরূপে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করে তৃপ্ত হতে চাননি। তিনি মানুষকে তাঁর প্রতি ত্রাণকর্তারূপে আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। লোকেরা যখন বিশ্বাস করতে আগ্রহী ছিল যে তিনি একটা পার্থিব রাজ্য স্থাপন করতে এসেছেন, ঠিক তখনই তিনি তাদের চিন্তাধারাকে পৃথিবী হতে আত্মিক বিষয়ের প্রতি ফেরাতে বাসনা করলেন। কেবলমাত্র পার্থিব কৃতকার্যতা তাঁর কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।MHBen 18.2

    তার এই ভাবনাহীন জনতার হৃদয়ের বাসনা তাঁর হৃদয় মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করল। নিজের গৌরব জাহিরের কোন মনোভাব তাঁর কর্ম জীবনে বিজড়িত ছিল না। পৃথিবীর মানুষ পদমর্যাদা, শানশওকত, কিম্বা যোগ্যতার প্রতি যে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তা ছিল ঈশ্বরের পুত্রের কাছে অনুপস্থিত। আনুগত্য প্রকাশ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে যে সব উপায় অবলম্বন করা হয়, যীশু তা করেন নি। তাঁর জন্মের শত শত বছর পূর্বে তার বিষয়ে ভবিষ্যতের কথা বলা ছিল, “তিনি চিৎকার করিবেন না, উ‪চ্চশব্দ করিবেন না, পথে আপন রব শুনাইবেন না। তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্বাপিত করিবেন না; সত্যে তিনি ন্যায়বিচার প্রচলিত করিবেন।” (যিশাইয় ৪২:২,৩)।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 18.3

    ফরীশীরা তাদের ধর্মীয় পর্ব পালন সংক্রান্ত খুঁত খুঁতে ভাব দ্বারা এবং তাদের প্রার্থনা ও পরসেবার জ্ঞান করে অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের দ্বারা নিজেদেরকে পৃথক দেখাতে ই‪চ্ছে করত। তারা ধর্মকে আলোচনার মূখ্য বিষয় করে ধর্মের জন্য তাদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা প্রমাণ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬ করতে চেষ্টা করত। বিপরীত মত পোষণকারীদের মধ্যে বিতর্ক উ‪চস্বরে এবং দীর্ঘকাল যাবৎ শোনা যেত, আর শাস্ত্রে উ‪চ শিক্ষিত ডক্টরেট ডিগ্রীধারীদের ক্রুদ্ধ বিতর্ক শোনা কোন বিচিত্র কিছু ছিল না। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 18.4

    যীশুর জীবন ছিল এর সাথে লক্ষ্যণীয়ভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁর জীবনে কোলাহলপূর্ণ কোন বিতর্ক, লৌকিকতা পূর্ণ কোন প্রার্থনা এবং বাহাবা পাবার নিমিত্ত কোন কাজ পরিলক্ষিত হয়নি। মশীহ্ ঈশ্বরের মাঝে অন্তর্নিহিত ছিলেন এবং তার পুত্রের আচরণের মাঝে স্বয়ং ঈশ্বর প্রকাশিত হতে চেয়েছিলেন। আর এই প্রকাশ প্রাপ্তির জন্য যীশু চেয়েছিলেন লোকদের মনকে আকর্ষণ করতে।MHBen 19.1

    ধার্মিকতার সূর্য তাঁর প্রতাপে ইন্দ্রিয়গুলোকে ধাঁধিয়ে দেবার জন্য পৃথিবীর ওপরে মহা সমারোহে হাজির হননি। যীশু সম্পর্কে লেখা আছে, “অরুণোদয়ের ন্যায় তাঁহার উদয় নিশ্চিত” (হোশেয় ৬:৩)। নীরবে আস্তে আস্তে যেমন পৃথিবীতে সকালের আলো প্রকাশ পায়, অন্ধকার দূর করে দিয়ে পৃথিবীতে প্রাণ সঞ্চার করে, তদ্রুপ “তোমাদের প্রতি ধার্ম্মিকতা-সূর্য উদিত হইবেন, তাঁহার পক্ষপুট আরোগ্যদায়ক” (মালাখি ৪:২)।MHBen 19.2

    “ঐ দেখ আমার দাস, আমি তাঁহাকে ধারণ করি;
    তিনি আমার মনোনীত, আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত;
    আমি তাঁহার উপরে আপন আত্মাকে স্থাপন করিলাম;
    তিনি জাতিগণের কাছে ন্যায় বিচার উপস্থিত করিবেন।”
    MHBen 19.3

    (যিশা ৪২:১ পদ)।

    “কেননা তুমি দরিদ্রের দৃঢ় দুর্গ, সঙ্কটে দীনহীনের দৃঢ় দুর্গ, ঝটিকা নিবারক আশ্রয়, রৌদ্রনিবারক ছায়া হইয়াছ, যখন দুর্দরন্তদর নিশ্বাস দেওয়ালে ঝটিকার ন্যায় হয়।” (যিশা ২৫:৪)।MHBen 19.4

    “সদাপ্রভু ঈশ্বর, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ও তাহা বিস্তার করিয়াছেন, যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিঃশ্বাস দেন, ও তথাকার সমস্ত জঙ্গমকে জীবাত্মা দেন, তিনি এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু ধর্মশীলতায় তোমাকে আহ্বান করিয়াছি, আর আমি তোমার হস্ত ধরিব, তোমাকে রক্ষা করিব; এবং তোমাকে প্রজাগণের নিয়মস্বরূপ ও জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিয়া নিযুক্ত করিব; তুমি অন্ধদিগকে চক্ষু দিবে, তুমি কারাকূপ হইতে বন্দিদিগকে ও কারাগার হইতে অন্ধকারবাসিগণকে বাহির করিয়া আনিবে।” যিশা ৪২:৫-৭।MHBen 19.5

    “আমি অন্ধদিগকে তাহাদের অবিদিত পথ দিয়া লইয়া যাইব; যে সকল মার্গ তাহারা জানে না, সেই সকল মার্গ দিয়া তাহাদিগকে চালাইব; আমি তাহাদের অগ্রে অন্ধকারকে আলোক, ও বক্রভূমিকে সরল করিব; এই সমস্ত আমি করিব, তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিব না।” (যিশা ৪২:১৬)।MHBen 20.1

    “হে সমুদ্রগামীরা ও সাগরস্থ সকলে, হে উপকূলসমূহ ও
    তন্নিবাসীরা, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন গীত গাও, পৃথিবীর প্রান্ত
    হইতে তাঁহার প্রশংসা গাও। প্রান্তের ও তথাকার নগর সকল উচ্চৌঃস্বর
    করুক,কেদরের বসতি গ্রাম সকল তাহা করুক, শেলা-নিবাসীরা
    আনন্দ-রব করুক,
    পর্বতগণের চূড়া হইতে মহানাদ করুক; তাহারা সদাপ্রভুর
    গৌরব স্বীকার করুক, উপকূল সমূহের মধ্যে তাঁহার প্রশংসা প্রচার
    করুক। সদাপ্রভু বীরের ন্যায় যাত্রা করিবেন, যোদ্ধার ন্যায় উদ্যোগ
    উত্তেজিত করিবেন; তিনি জয়ধ্বনি করিবেন,
    হাঁ, মহানাদ করিবেন; তিনি শত্রুদের বিপরীতে পরাক্রম দেখাইবেন;
    আমি অনেক ন চুপ করিয়া আছি, নীরব আছি,
    ক্ষান্ত রহিয়াছি; এখন প্রসবকারিণী স্ত্রীর ন্যায় কোঁকাইয়া উঠিব;
    আমি এককালে নিঃশ্বাস টানিয়া ফুৎকার করিব।
    আমি পর্বত ও উপপর্বতগণকে ধ্বংস করিব,
    তদুপরিস্থ সমস্ত তৃণ শুষ্ক করিব, এবং নদনদীকে উপকূল,
    ও জলাশয় সকল শুষ্ক করিব।”
    MHBen 20.2

    (যিশা ৪২:১০-১৫)।

    “হে স্বর্গ সকল, তোমরা আনন্দরব কর,
    কেননা সদাপ্রভু কার্য সাধন করিয়াছেন;
    হে পৃথিবীর অধঃস্থান সকল জয়-জয় ধ্বনি কর;
    হে পর্বতগণ, উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর,
    হে কানন ও তন্মধ্যস্থ বৃক্ষ, [তোমরাও কর]
    কেননা সদাপ্রভু যাকোবকে মুক্ত করিয়াছেন,
    এবং ইস্রায়েলের মধ্যে আপনাকে শোভান্বিত করিবেন।”
    MHBen 20.3

    (যিশা ৪৪:২৩)।

    ত্রাণকর্তার কাজ সম্পর্কে হতাশা ও বিভ্রান্তির মাঝে হেরোদের জেলখানায় বসে যোহন বাপ্তাইজক নিরীক্ষণ ও অপেক্ষা করলেন এবং তিনি তাঁর দু’জন অনুসারীকে যীশুর কাছে এই খবর দিয়ে পাঠালেন:MHBen 21.1

    “যাঁহার আগমন হইবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকিব?” মথি ১১:৩।MHBen 21.2

    ত্রাণকর্তা সঙ্গে সঙ্গে শিষ্যদের প্রশ্নের জবাব দেন নি। যেমন তাঁরা তাঁর নীরবতা বিস্ময়ের সাথে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, ক্লেশাপন্ন লোকেরা তাঁর কাছে আসছিল। বধিরের কানে মহান চিকিৎসকের স্বর ঢুকছে। একটা কথা ও তাঁর হাতের একটা স্পর্শ কানার চোখ খুলে দিচ্ছে যেন দিনের আলো প্রাকৃতিক দৃশ্যমালা, বন্ধুদের মুখ এবং নিস্তার কর্তাকে দেখতে পায়। তাঁর স্বর মরা মানুষের কানে ঢুকছে এবং তারা স্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তিপূর্ণ হয়ে জীবিত হ‪চ্ছে। অবশ রোগী ও ভূতগ্রস্তরা তাঁর কথার বাধ্য হ‪চ্ছে, তাদের উন্মাদনা চলে যা‪চ্ছে এবং তারা তাঁর উপাসনা করছে। গরীব চাষী ও শ্রমিকরা যাদের ধর্মগুরুরা অপবিত্র বলে পরিহাস করত তারা তাঁর কাছে এসে ভিড় করছে আর তিনি তাদের কাছে স্বর্গীয় জীবনের কথা বলছেন। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 21.3

    যোহন বাপ্তাইজকের শিষ্যদের এভাবে যীশুর এই সব কথা শুনতে ও দেখতে দেখতে দিন কেটে গেল। শেষে যীশু তাদেরকে তাঁর কাছে ডাকলেন তারা যা দেখেছেন তা যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বলতে আদেশ করলেন এবং যোগ করলেন; “আর ধন্য সে-ই যে আমাকে নিয়ে মনে মনে কোন বাধা না পায়।” মথি ১১:৬। শিষ্যরা এই বাণী বয়ে নিয়ে গেলেন আর তাই ছিল যথেষ্ট।MHBen 21.4

    যোহন বাপ্তাইজক ত্রাণকর্তা সম্পর্কে ভাববাণী স্মরণ করলেন, “প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি, ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি।” যিশা ৬১:১,২। নাসরতের যীশু ছিলেন প্রতিজ্ঞাত ব্যক্তি। দুঃস্থ শোকার্ত মানুষদের প্রয়োজন তাঁর সেবামূলক কাজের মাধ্যমে তিনি যে ঈশ্বরের পরিবারের অবস্থা শ্রবণের মাধ্যমে তাঁর মহিমা প্রকাশ পেল।MHBen 21.5

    তিনি যে মশীহ্ ছিলেন, যীশুর কাজ কেবল তাই ব্যক্ত করেনি বরং তাঁর রাজ্য কেমনভাবে স্থাপিত হবে তাও প্রকাশ করেছিল। সেই সত্য এলিয়ের কাছে প্রকাশ পেল যে সত্য মরুভূমিতে তাকে দেখান হয়েছিল, “আর দেখ, সদাপ্রভু সেই স্থান দিয়া গমন করিলেন; এবং সদাপ্রভুর অগ্রগামী প্রবল প্রচÐ বায়ু পব্বর্তমালা বিদীর্ণ করিল, ও ক্সশল সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল; কিন্তু সেই বায়ুতে সদাপ্রভু ছিলেন না। বায়ুর পরে ভূমিকম্প হইল, কিন্তু সেই ভূমিকম্পে সদাপ্রভু ছিলেন না। ভূমিকম্পের পরে জীবন্ত অগ্নি হইল, কিন্তু সেই অগ্নিতে সদাপ্রভু ছিলেন না। অগ্নির পরে ঈষৎ শব্দকারী ক্ষুদ্র এক স্বর হইল;” ১ম রাজা ১৯:১১,১২। একইভাবে যীশুকে তাঁর কাজ করতে হবে রাজ্য ও সিংহাসন উৎখাত করে নয়, জাঁকজমকপূর্ণ বিজয়োল্লাস ও বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে নয় বরং অনুগ্রহ, দয়া ও আত্মত্যাগী জীবনের মাধ্যমে মানুষের অন্তড়ঃকরণে কথা বলার মাধ্যমে।MHBen 22.1

    ঈশ্বরের রাজ্য বাহ্যিক আড়ম্বর নিয়ে আসে না। তা আসে তাঁর বাক্যের অনুপ্রেরণার প্রতিশ্রুতি নিয়ে, তাঁর আত্মার আভ্যন্তরীণ কাজের মাধ্যমে, যাঁর সঙ্গে তার প্রাণের সম্পর্ক। মানব চরিত্র এর ক্ষমতার সবচেয়ে মহান্ প্রকাশ প্রাপ্তি যীশুর চরিত্রের সিদ্ধতায় প্রতিফলিত হল। যীশুর অনুসারীদের পৃথিবীর আলো হতে হবে কিন্তু ঈশ্বর এই আলো জ্বালানোর জন্য কাকেও পরিশ্রম করতে নির্দেশ দেন নি। কোন আত্মতৃপ্তি মূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অধিকতর নিজ প্রশংসা জাহির করাকে তিনি সমর্থন করেন না। তিনি চান যে, তাদের আত্মা স্বর্গীয় মূলনীতিতে সিক্ত হয়, তা হলে যখন তারা দুনিয়ার মানুষের সাথে মিশবে তখন তাদের মাঝে যে আলো আছে তা তারা প্রকাশ করবে। জীবনের প্রতিটি কাজে তাদের শক্ত আনুগত্য আলোর উৎসে পরিণত হবে।MHBen 22.2

    দৌলত, উ‪চ্চাসন, দামী দামী জিনিসপত্র, দালান কোঠা, সাজসরঞ্জাম, আসবাবপত্র ঈশ্বরের কাজের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন নেই। অবশ্য জাগতিক কোন মনোরম প্রদর্শনী আরোপ ঈশ্বরের নজরে মূল্যহীন। দৃশ্য ও জাগতিকতার ওপরে তিনি অনন্তও অদৃশ্য বিষয়ে বেশী মূল্য দিয়ে থাকেন। পরেরটি বর্ণনা করার জন্যই কেবল আগেরটি প্রয়োজন। চরিত্রের যে সৌন্দর্য যা আত্মার মধ্যে কর্মরত, পবিত্র আত্মার ফল, এর সাথে শিল্প কর্মের দ্বারা উৎপাদিত সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় সৌন্দর্য তুল্য নয়।MHBen 23.1

    ঈশ্বর যখন তাঁর পুত্রকে আমাদের জগতে পাঠালেন, তিনি মানব জাতিকে এক অক্ষয় সম্পদে সমৃদ্ধ করলেন, যে সম্পদের তুলনায় পৃথিবীর উৎপত্তি হতে শুরু করে যত ধন-দৌলত মানুষকে দেয়া হয়েছে তা কিছুই না। যীশু পৃথিবীতে এসে মানব-সন্তানদের কাছে অনন্তকালীন প্রেমের ভান্ডার নিয়ে হাজির হলেন, আর এই সেই ধনদৌলত যা তাঁর সঙ্গে আমাদের যোগসূত্রের মাধ্যমে পেতে হবে, প্রকাশ করতে হবে এবং অন্যদেরকে দান করতে হবে।MHBen 23.2

    কার্যকারিদের একান্ত আন্তরিকতার সাথে উৎসর্গানুসারে ঈশ্বরের কাজে মানব প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হতে পারে,- জীবন রূপান্তরের মাধ্যমে খ্রীষ্টের অনুগ্রহের ক্ষমতা প্রকাশ পায়। আমরা পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন, এর কারণ ঈশ্বরের সিলে (ষ্ট্যাম্পে) আমাদের মুদ্রাঙ্কিত করা হয়েছে আর তা হলো তাঁর প্রেমশীল চরিত্র। আমাদের মুক্তিদাতা তাঁর ধার্মিকতায় আমাদের জড়িয়ে রাখেন। তাঁর কাজের জন্য স্ত্রী-পুরুষ বাছাইয়ে ঈশ্বরের জাগতিক ধনদৌলত, শিক্ষাগত যোগ্যতা কিম্বা বাকপটুতা আছে কিনা তা দেখেন না। তিনি জানতে চান, তারা কেমন বিনম্রভাবে চলে, যাতে আমি আমার পথ তাদেরকে শিক্ষা দিতে পারি? আমি কি আমার কথা তাদের ওষ্ঠাধরে দিতে পারি? তারা কি আমাকে প্রতিনিধিত্ব করবে?MHBen 23.3

    আত্মিক মন্দিরে তাঁর আত্মাকে তিনি যতটা প্রতিস্থান করতে পারেন, ঈশ্বর সে হারেই প্রত্যেক ব্যক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন। যে কাজের দ্বারা তাঁর চেহারা প্রতিফলিত হয় সেই কাজই তিনি গ্রহণ করেন। পৃথিবীর মাঝে তাঁর অনুসারীদের পরিচয় পত্র হবে - তাঁর চিরস্থায়ী মূলনীতি সম্বলিত অলেপনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ।MHBen 23.4

    তাঁর বাহু দ্বারা তিনি মেষের বা‪চাদের একত্র করবেন‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬
    ‬‬‬ এবং তাঁর কোলে তাদেরকে তুলে নেবেন।
    MHBen 24.1

    যীশু যেমন নগরের রাস্তায় রাস্তায় সেবার কাজ করে বেড়া‪িছলেন মায়েরা তাদের রোগাক্রান্ত, মৃতপ্রায় বা‪চাদের কোলে নিয়ে লোকদের ভিড় ঠেলে তাঁর নজর আকর্ষণ করবার জন্য আসছিল। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 24.2

    এই মা’দের দেখন- ফ্যাকাশে, শ্রান্ত প্রায়, হতাশাগ্রস্ত, শীর্ণকায় তবু বদ্ধপরিকর এবং চেষ্টায় অটল। যাতনার বোঝা বয়ে নিয়ে তারা ত্রাণকর্তার আকর্ষণ করছে। উপচে পড়া জনতার ভিড়ে যখন তারা পিছে পড়ে থাকছে- যীশু ধীরে ধীরে তাদের দিকে তাঁর পথ করে নিয়ে যে পর্যন্ত তাদের কাছে এলেন, তত সময় এগুতে থাকলেন। ওদের মনে আশা সঞ্চারিত হল। তাঁর নজরে পড়ার এবং দয়াভরা প্রকাশিত চোখের দিকে তাকাবার সাথে সাথে তাদের আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগল। নতুন দলের মধ্য থেকে একজনকে আলাদা করে ত্রাণকর্তা তার (স্ত্রী লোকটির) বিশ্বাস যাচাই করতে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার জন্য আমি কি করিব?” স্ত্রীলোকটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, “প্রভু আপনি যদি আমার বা‪চাকে সুস্থ করিতেন।” যীশু ছোট বা‪চাটিকে তার কোল থেকে তুলে নিলেন, আর তাঁর ছোঁয়ায় রোগ পালিয়ে গেল। মৃত্যুর বিবর্ণতা চলে গেল: জীবনদায়ী প্রবাহ তার ধমনী দিয়ে বইতে লাগল; তার পেশীগুলো শক্তি পেল। তার মায়ের কাছে সান্ত্বনা ও শান্তির বাণী ব্যক্ত করা হলো; আর তখনই জরুরী রোগী তাঁর কাছে আনা হল। আবার যীশু তাঁর জীবনদায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন এবং সকলে তাঁর গৌরব প্রকাশ করতে লাগল, যিনি এই আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। যীশুর জীবনের মহত্ব সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে থাকি। তিনি যে অলৌকিক কাজ করেছেন, তিনি যে আশ্চর্য কাজ সাধন করেছেন, আমরা সে সব বিষয় বলাবলি করি, কিন্তু ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি তাঁর নজরদারি, তার মহত্বের আরও প্রমাণ।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 24.3

    যিহূদীদের মধ্যে বা‪চাদেরকে গুরুদের কাছে নিয়ে যাবার একটা প্রথা ছিল যে, বা‪চাদের ওপরে হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। কিন্তু ত্রাণকর্তার অনুসারীরা চিন্তা করল, এ ধরনের সামান্য কাজ করলে তাঁর অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হবে। মা’য়েরা যখন তাদের বা‪চাদের নিয়ে তাঁর আশীর্বাদ লাভের বাসনায় তার কাছে আসছিল, তখন তাঁর অনুসারীরা তাদেরকে বাঁধা দিতে লাগল। তারা ভাবল যীশুর সাথে দেখা করে কোন উপকার লাভের বয়স এখনো তাদের হয়নি; কেননা তারা এখনো খুব ছোট। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল যে, তাদের যীশুর সাথে দেখা করতে দিলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু ত্রাণকর্তা মা’দের উদ্বেগ ও বোঝা উপলব্ধি করতে পারলেন; যারা ঈশ্বরের বাক্যানুসারে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দিতে চাচ্ছিল। তিনি তাদের প্রার্থনা শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি স্বয়ং তাদেরকে তাঁর সাক্ষাতে আকর্ষণ করলেন। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 25.1

    একজন মা তার বা‪চাকে নিয়ে যীশুকে খুঁজতে বাড়ী ছেড়ে আসল। পথিমধ্যে তার প্রতিবেশীর কাছে তার যাত্রার উদ্দেশ্য বলল, আর তার প্রতিবেশীও চাইল যেন যীশু তার বা‪চাদের আশীর্বাদ করেন। এইভাবে অনেক মায়েরা তাদের ছোট ছোট বা‪চাদের নিয়ে সেখানে একত্রিত হল। অনেক বা‪চারা তাদের শিশুকাল পার হয়ে কিশোরকিশোরী ও যুবক-যুবতী বয়সের মাঝামাঝিতে পরিণত হয়েছে। মায়েরা যখন তাদের ই‪ছার কথা জানালেন, যীশু তাদের অশ্রুসিক্ত ভীত, ক্ষীণ আবেদন সহানুভূতিসহকারে শুনলেন। কিন্তু তাদের প্রতি তাঁর অনুসারীদের আচরণ দেখানোর জন্য অপেক্ষা করলেন। যখন তিনি দেখলেন তাঁর অনুসারীরা মা’দেরকে ধমক দিয়ে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন- তাঁরা ভেবেছিলেন তারা তাঁকে সাহায্য করছেন; তিনি তাদের ভুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ” শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই।” (মার্ক ১০:১৪)। শিশুদের তার কোলে তুলে নিয়ে তিনি তাদের মাথায় হাত রাখলেন, এবং যে আশীর্বাদের জন্য তারা এসেছিল, তিনি তাদেরকে সেই আশীর্বাদ করলেন। ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 25.2

    মায়েরা সান্ত্বনা পেল। তারা যীশুর বাক্যের আশীর্বাদ উদ্দীপনা সহকারে নিয়ে তাদের বাড়ি ফিরে গেল। তারা এর দ্বারা দায়িত্ব পালন করতে এবং তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য আশা সহকারে কাজ করতে উৎসাহিত হয়েছিল।MHBen 25.3

    এই ছোট ছেলেমেয়েদের পরবর্তী জীবন যদি আমাদের কাছে খোলা হত, তা হলে আমরা দেখতে পেতাম মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে সেই দিনের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দি‪চ্ছে এবং তাদের প্রতি ত্রাণকর্তার প্রেমের কথা সকল আবার বলছে। আমরা আরো দেখতে পেতাম বছরের পর বছর এই কথা সকল স্মরণ করে তারা যীশুর প্রায়শ্চিত্ত মূল্য দ্বারা রচিত পথে চলেছে- বিপথগামী হয়নি।MHBen 26.1

    যীশু আজো একইরূপ দরদী ত্রাণকর্তা হিসেবেই আছেন, যেমন তিনি এই পৃথিবীতে থাকাকালিন সময়ে লোকদের মাঝে চলতেন। যা যিহূদার কালে বা‪চাদের যেমন আদর করে কোলে নিয়েছিলেন, তিনি এখনো মায়েদের প্রতি তেমন সাহায্যকারী দূতরূপে আছেন। বহুযুগ আগের ছেলেমেয়েরা যেমন করে তাঁর রক্ত দ্বারা কেনা হয়েছিল আজকে আমাদের হৃদয়ের সন্তানেরাও ঠিক তদ্রূপ।MHBen 26.2

    যীশু প্রত্যেক মায়ের অনন্তর বোঝা সম্পর্কে জানেন। তাঁরও একজন মা ছিলেন, যিনি অভাব অনটন, আরাম আয়েশ বঞ্চিত ছিলেন, তাই তিনি প্রত্যেক মায়ের ব্যথা-বেদনার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। যিনি কনানীয় এক স্ত্রীলোকের অনন্তর বাসনা পূরণ করতে দীর্ঘ পদযাত্রা করে এসেছিলেন, তিনি আজও মায়েদের জন্য যতটা প্রয়োজন, ততটাই করবেন। যিনি প্যালেষ্টাইনে এক বিধবাকে তার ছেলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, আর ক্রুশোপরে দূরূহ-বেদনার মধ্যেও যিনি নিজ মাকে স্মরণে রেখেছিলেন। একইভাবে প্রত্যেকটি বেদনায় ও প্রয়োজনে তিনি সান্ত্বনা দান এবং সাহায্য করবেন।MHBen 26.3

    মায়েরা তাদের জটিলতা নিয়ে যীশুর কাছে আসুন। তাদের সন্তানদের তত্ত্বাবধান করতে পর্যাপ্ত অনুগ্রহ পাবেন। ত্রাণকর্তার পায়ে যে মায়েরা তাদের ভার-বোঝা রাখবে, তাদের জন্য দরজা সকল খোলা আছে। যিনি বলেছিলেন, “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও বারণ করিও না।” (মার্ক ১০:১৫), তিনি এখনও মা’দের তাদের ছোট ছেলেমেয়েদেরকে আশীর্বাদ করবার জন্য তাঁর কাছে আনতে আহ্বান করেন।MHBen 26.4

    যে ছেলেমেয়েদেরকে তাঁর সাথে দেখা করাবার জন্য আনা হয়েছিল যীশু তাদের মাঝে এমন নরনারীদেরকে দেখেছিলেন যারা তাঁর দয়ার উত্তরাধিকারী ও তাঁর রাজ্যের প্রজা হবে, এবং তাদের কেউ কেউ তাঁর জন্য মৃত্যুবরণও করবে। তিনি জানতেন যে, এই বা‪চারা অনেক বয়স্ক লোক যারা পৃথিবীর জ্ঞানে জ্ঞানবান ও কঠিনমনা তাদের অপেক্ষা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কথা শুনবে ও তিনি তাদের পর্যায়ে নেমে আসবেন। স্বর্গের মহামহিম, তিনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয় শিশু-সুলভভাবে বুঝবার ক্ষমতা মত করে সহজ করে দিলেন। তিনি তাদের মনে সত্যের বীজ বপন করলেন যে বীজ পরবর্তী বছরগুলোতে অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে এবং অনন্তজীবনের খাদ্য উৎপন্ন করবে।MHBen 27.1

    যীশু যখন অনুসারীদের বা‪চাদেরকে তাঁর কাছে আসতে বারণ করতে নিষেধ করেছিলেন- তিনি সর্বযুগে তাঁর অনুসারীদের সমাজের পরিচালকদের, সেবাকারীদের, পরামর্শদাতাদের ও সব খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন। যীশু শিশুদের তাঁর দিকে আকর্ষণ করছেন এবং আমাদের প্রতি আহ্বান করেছেন, “আমার নিকটে আসিতে দেও” যেন তিনি বলছেন, তোমরা যদি বাধা না দেও তবে তারা আমার কাছে আসবে।MHBen 27.2

    আপনার অ-খ্রীষ্টিয় আচরণ যেন যীশুকে ভূয়া আদর্শরূপে প্রকাশ না করে। আপনার উদাসীনতা ও কর্কশ ব্যবহার দ্বারা বা‪চাদেরকে তাঁর কাছ থেকে দূরে রাখবেন না। স্বর্গ তাদের জন্য যে আয়েশের স্থান হবে না এ ধরনের অনুভূতি তাদের কাছে কখনো উপস্থিত করবেন না। ছেলেমেয়েদের কাছে বলবেন না যে ধর্ম এমন এক বিষয় যা তারা বুঝবে না অথবা এমন আচরণ করবেন না যে, বা‪চারা শিশুকালে যীশুকে গ্রহণ করুক এটা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হয়নি। তাদেরকে মিথ্যা অনুভূতি প্রদান করবেন না যে যীশু একটি নিরানন্দদায়ক ধর্ম, আর যে কারণে পরিত্রাণকারীর কাছে আসতে চাইলে জীবনকে আরামদায়ক ও সুখকর করার মত সব কিছু ছেড়ে দিতে হবে।‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬MHBen 27.3

    পবিত্র আত্মা যেমন ছেলেমেয়েদের অনন্ত বিচরণ করেন, তখন তাঁর কাজে সহায়তা করেন। তাদেরকে শিক্ষাদান করুন যে, পরিত্রাণকারী তাদেরকে ডাকছেন। তাদের বিকাশ লাভের ও তারুণ্যের কালে যদি তারা তাঁর কাছে সমর্পিত হয় এর চাইতে অধিকতর আনন্দদায়ক তাঁর কাছে আর কিছুই নেই।MHBen 28.1

    যে রক্ত দিয়ে তিনি মূল্যবান আত্মাসমূহ কিনেছেন, পরিত্রাণকর্তা তাদেরকে অফুরন্ত সহানুভূতিসহকারে অতি মূল্যবান বলে বিবেচনা করেন। তারা তাঁর প্রেমের অধিকার অবর্ণনীয়। আকুল আকাংক্ষা নিয়ে তিনি তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। সবচেয়ে সুশিক্ষিত ও আকর্ষণীয় ছেলে মেয়েদের প্রতিই কেবল তাঁর অন্তর আকর্ষিত হয় না বরং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ও অবহেলার কারণে আপত্তিকর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চরিত্রের ছেলেমেয়েদের প্রতিও তাঁর অন্তর আকর্ষিত হয়। অনেক পিতামাতা উপলব্ধি করে না যে, তাদের ছেলেমেয়েদের এই ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য তারা কতটা দায়ী। যে ছেলেমেয়েদের তারা এরূপ বানিয়েছে, তাদের প্রতি কি প্রকার কোমলতা ও জ্ঞান দ্বারা আচরণ করতে হবে, তা তাদের জানা নেই। কিন্তু যীশু এই ছেলেমেয়েদের প্রতি স্নেহ ও দরদ সহকারে দেখেন। কারণ তিনি প্রথম থেকে ফলাফল পর্যন্তচিহ্নিত করেন। ‬‬‬‬‬MHBen 28.2

    খ্রীষ্টান কার্যকারী খ্রীষ্টের প্রতিনিধি হয়ে এই সকল ক্রটিপূর্ণ ও বিপথগামীদেরকে পরিত্রাণকর্তার কাছে আকর্ষণ করতে পারেন। প্রজ্ঞা ও কৌশল দ্বারা তিনি তাদেরকে তার অনন্তর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন। তিনি সাহস যোগাতে ও তাদের মাঝে আশা সঞ্চারিত করতে পারেন এবং যীশুর অনুগ্রহের মাধ্যমে তাদের চরিত্রের রূপান্তরিত অবলোকন করতে পারেন যে, তাদের বিষয়ে বলা যাবে “ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই।”MHBen 28.3

    ত্রাণকর্তার হাতে তুলে দেয়া
    মোট পাঁচ খানা রুটি
    MHBen 28.4

    বিশাল জনতাকে তৃপ্তির সাথে খাওয়ালেন।

    সারা দিনভর জনতার ঢল পায়ে পায়ে সমুদ্রের কিনারে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সাথে জড়ো হল, আর তিনি ওদেরকে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তারা তাঁর অনুগ্রহের বাক্য শুনছিলেন; এত সহজ ও সরল ভাষা যেন তা তাদের আত্মায় গিলিয়দের মলম স্বরূপ। তাঁর ঐশ্বরিক আরোগ্যকারী হাত রোগীদের জন্য আরোগ্য ও মৃতপ্রায় লোকদের জন্য জীবন আনয়ন করল। তাদের কাছে সে দিনটি মনে হয়েছিল যেন স্বর্গ তাদের মাঝে নেমে এসেছে এবং তারা কখন খাবার খেয়েছে আর কতক্ষণ অনাহারে আছে, সে সম্পর্কে তারা অচেতনই ছিল।MHBen 28.5

    পশ্চিমে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল, তখনও লোকেরা দেরী করছিল। অবশেষে শিষ্যরা ত্রাণকর্তার কাছে এসে অনুরোধ করে বললেন, নিজেদের সুবিধার্থে এখন লোকদের যেতে দেয়া উচিত। অনেকে বহু দূর থেকে এসেছে, এবং সকাল থেকে কিছুই খায় নি। কাছে পিঠে শহরে বা গ্রামে গিয়ে হয়তো তারা কিছু খাবারের সন্ধান করে নিতে পারবে। কিন্তু যীশু বললেন, “তোমরাই উহাদিগকে আহার দেও।” (মথি ১৪:১৬)। তখন ফিলিপের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন, “উহাদের আহারার্থে আমরা কোথায় রুটি কিনিতে পাইব?” (যোহন ৬:৫)।MHBen 29.1

    ফিলিপ অগণিত মাথার ওপর দিয়ে তাকালেন এবং ভাবলেন এত বিশাল জনতার খাবার ব্যবস্থা করা কিই-না অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তিনি জবাবে বললেন প্রত্যেককে অল্প অল্প করে দিলেও যত লোককে খাওয়াবে ২০০ দীনারেও (তৎকালীন মূল্যে প্রায় ৩৪ ডলার) কুলাবে না।MHBen 29.2

    যীশু জানতে চাইলেন এই লোকদের মাঝে কি পরিমাণ খাবার পাওয়া যেতে পারে। আন্দ্রিয় বললেন, “এখানে একটী বালক আছে, তাহার কাছে যবের পাঁচখানা রুটি এবং দুইটী মাছ আছে; কিন্তু এত লোকের মধ্যে তাহাতে কি হইবে?” (যোহন ৬:৯)। যীশু ওগুলো তাঁর কাছে আনতে নির্দেশ দিলেন। “পরে তিনি লোকসমূহকে ঘাসের উপরে বসিতে আজ্ঞা করিলেন; আর সেই পাঁচখানি রুটি ও দুইটি মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে উর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং রুটী কয়খানি ভাঙ্গিয়া শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিলেন, তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল; এবং তাহারা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া পূর্ণ বারো ডালা তুলিয়া লইলেন। (মথি ১৪:১৯, ২০)।MHBen 29.3

    যীশু যে বিশাল জনতাকে খাওয়ালেন, তা ছিল এক ঐশী আশ্চর্য কাজ, তবুও যে খাবার জোগাড় করা হয়েছিল তা কতই না সাদামাটা ছিল, কেবল মাছ ও যবের রুটি যা ছিল গালীলের মাছ ধরা জেলেদের নিত্য দিনের খাবার।MHBen 29.4

    যীশু লোকদের জন্য রাজকীয় বহুমূল্যবান খাবার ব্যবস্থা করতে পারতেন, কিন্তু কেবলমাত্র ক্ষুধা নিবারণের জন্য যে খাবার তাদের উদ্দেশে যোগাড় করা হয়েছিল, সম্ভবত তাতে তাদের কাজের দ্বারা যীশু এক সহজ সরলতা বিষয়ক শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। সৃষ্টির শুরুতে আদম হবা যেমন খাবার অভ্যাস করেছিলেন, তদ্রূপ মানুষ যদি প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী খাদ্যাভ্যাসে সহজ-সরলতা বজায় রাখত তবে মানব পরিবারের জন্য ঐ ধরনের খাবারের প্রাচুর্যও থাকত। কিন্তু স্বার্থপরতা ও ক্ষুধার প্রতি অসংযমতার কারণে পাপ ও দৈন্যদশা এসেছে- একদিকে খাদ্যের আধিক্য প্রযুক্ত এবং অন্য দিকে অভাব প্রযুক্ত।MHBen 30.1

    যীশু বিলাসীতার উদ্দেশে আকুল আকাংক্ষাকে পরিতৃপ্ত করার দ্বারা তাঁর কাছে লোকদের আকর্ষণ করতে চাননি। দীর্ঘ উত্তেজনাপূর্ণ দিনের শেষে পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত বিশাল জনতার কাছে এই সাধারণ খাবার ছিল তাঁর ক্ষমতার ও জীবনের নিত্য দিনের চাহিদা মিটাতে তাঁর স্নেহশীল তত্ত্ববধানের এক নিশ্চয়তা। ত্রাণকর্তা তাঁর অনুসারীদের কাছে পৃথিবীর বিলাসিতা দান করবেন বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেননি; তাদের ভাগ্য দারিদ্রতা দ্বারা রুদ্ধ হতে পারে, কিন্তু তাঁর বাক্য বলা হয়েছে যে তাদের প্রয়োজন মিটান হবে এবং পৃথিবীর উত্তমতা হতেও উত্তমতর তাঁর নিজস্ব উপস্থিতির স্থায়ী স্বাচ্ছন্দ্য তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন।MHBen 30.2

    লোকদের খাওয়ানোর পর প্রচুর খাবার উদ্বৃত্ত হল। যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন, “অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া সকল সংগ্রহ কর, যেন কিছুই নষ্ট না হয়।”যোহন ৬:১২। এই বাক্যে খাবার ডালার মধ্যে রাখা অপেক্ষা অধিক অর্থবহ ছিল। শিক্ষার দুটি দিক ছিল। কিছুই নষ্ট করা যাবে না। সাময়িক কোন সুযোগ-সুবিধা অবহেলায় হাতছাড়া করা যাবে না। লোকদের উপকারে আসবে এমন কিছুই অবহেলা করা যাবে না। পৃথিবীর অভাবগ্রস্তদের প্রয়োজন মেটাবে এমন সব গুঁড়াগাঁড়া জড়ো করতে হবে। একই প্রকার যত্ন সহকারে আত্মার চাহিদা মেটাতে স্বর্গীয় রুটি সংগ্রহ করতে হবে। ঈশ্বরের সত্য বাক্যের দ্বারা আমাদের বাঁচতে হবে। ঈশ্বর যা বলেছেন তার কিছুই বৃথা যাবে না। আমাদের প্রতি‬‬‬‬‬ পরিত্রাণকর্তার বলা একটি বাক্যও অবহেলা করা যাবে না। নিষ্ফল অবস্থায় ভূমিতে একটি বাক্যও পড়তে দেয়া যাবে না।MHBen 30.3

    রুটি বিষয়ক অলৌকিক কাজটি ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরশীলতা শিক্ষা দেয়। যীশু যখন পাঁচ হাজার জনকে খাওয়ালেন, তখন খাবার হাতের কাছে ছিল না। দৃশ্যতঃ তাঁর আয়ত্ত্বে কোন উপায় ছিল না। প্রান্তরে স্ত্রী ও শিশু ছাড়া পাঁচ হাজার লোক সেখানে ছিল। তাঁর অনুসরণ করতে তিনি তাদেরকে সেখানে আমন্ত্রণ জানাননি। তাঁর সাথে থাকার আগ্রহে বিনা আদেশে বা বিনা আমন্ত্রণে তারা সেখানে এসেছিল কিন্তু তিনি জানতেন সমস্ত দিনভর তাঁর বাক্য শিক্ষার পর এখন তারা ক্ষুধার্ত ও দুর্বল। তারা নিজ বাড়ী থেকে অনেক দূরে এসেছিল আর রাতও এসে পড়েছে। তাদের অনেকের কাছেই খাবার কেনার টাকাও ছিল না। যিনি তাদের জন্য চল্লিশ দিবা রাত্র প্রান্তরে উপবাস করেছিলেন। তিনি চাইলেন না তারা উপবাস থাকা অবস্থায় বাড়ী ফিরে যাক।MHBen 31.1

    ঈশ্বরের দূরদর্শীতার গুণে যীশুকে তাঁর স্থানে রাখা হয়েছিল; এবং প্রয়োজন মেটাতে তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। যখন আমরা সংকীর্ণ অবস্থানে নীত হই, তখন আমাদেরও ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা আবশ্যক, প্রতিটা জরুরী অবস্থায় আমাদের তাঁর অনুগ্রহের আকর্ষণ করা উচিত যাঁর হুকুমে অসীম সাহায্যের ভান্ডার রয়েছে।MHBen 31.2

    এই অলৌকিক কাজের সম্মান তিনি পিতার কাছ থেকে পেলেন; তিনি শিষ্যদের দিলেন, শিষ্যরা লোকদের দিলেন আর লোকেরা একে অন্যকে দিল। এইরূপে যারা যীশুর সাথে সংযুক্ত তারা তাঁর কাছ থেকে জীবন খাদ্য পাবে এবং অন্যদেরকেও তা থেকে অংশ প্রদান করবে। শিষ্যরা যীশুর ও লোকদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমরূপে নিয়োজিত।MHBen 31.3

    যখন শিষ্যরা জীবনদাতার নির্দেশ ” তোমরাই উহাদিগকে আহার দাও” শুনলেন তখন তাদের মনের মধ্যে সর্ব প্রকার সমস্যা এসে উপস্থিত হল। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, “আমরা কি খাবার কিনিতে গ্রামে যাইব?” কিন্তু যীশু কি বললেন?- “তোমরাই উহাদিগকে আহার দাও।” শিষ্যরা তাদের কাছে যা ছিল তা সমস্তই যীশুর কাছে নিয়ে এলেন; কিন্তু তিনি তাদেরকে খাবার জন্য নিমন্ত্রণ দেন নি। তাঁর হাতে খাবার পরিমাণে বৃদ্ধি পেল, এবং তিনি তাদেরকে পরিবেশন করতে বললেন। যীশুর কাছে যতবার শিষ্যরা হাত প্রসারিত করছিল তা কখনও অপূরণ থাকেনি। ক্ষুদ্র ভান্ডার সকলের জন্য পর্যাপ্ত হল। লোকদের খাওয়া শেষ হলে শিষ্যরা যীশুর সঙ্গে স্বর্গ হতে সরবরাহকৃত মূল্যবান খাবার ভোজন করলেন।MHBen 31.4

    যেমন আমরা গরীব, মূর্খ, ক্লিষ্টদের দেখি তখন আমাদের অন্তর কতই না বিচলিত হয়। আমাদের ক্ষীণবল ও নগণ্য সংস্থান দ্বারা এই ভয়াবহ চাহিদাকে কিভাবে সাহায্য করা যায়? আমরা কি এই কাজে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন পরিকল্পনার জন্য অথবা অন্য কোন সংগঠনের দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করব না? যীশু বলেন, ” তোমরাই উহাদিগকে আহার দাও।” তোমাদের সম্পদ, সময়, সামর্থ্য যা তোমাদের কাছে আছে, তাই ব্যবহার কর। তোমাদের যবের রুটি যীশুর কাছে নিয়ে এস।MHBen 32.1

    হাজার হাজার লোকদের খাওয়াতে আপনার সম্পদ যথেষ্ট না-ও হতে পারে, তবে একজনের জন্য যথেষ্ট হতেও পারে। যীশুর হাতে তারা অনেকে খাওয়াতে পারে। শিষ্যদের মত, আপনার যা আছে তাই দিন। যীশু সে দান বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন। তিনি তাঁর ওপরে সৎ ও সরল আস্থাপূর্ণ নির্ভরতাকে পুরষ্কৃত করবেন। যা কিছু অপ্রতুল সরবরাহ বলে মনে হয় তা মহাভোজরূপে প্রতীয়মান হতে পারে।MHBen 32.2

    “যে অল্প বীজ বুনে সে অল্প ফসল-ই কাটিবে, আর যে বেশি বীজ বুনে সে বেশি ফসল কাটিবে।” ...তোমাদের সব রকম ভাবে প্রেম করবার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে, যাতে তোমাদের যা কিছু দরকার তার সবই সব সময় তোমাদের থাকে; আর তার ফলে যেন তোমরা সব রকম ভাল কাজের জন্য খোলা হাতে দান করতে পার। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে-MHBen 32.3

    “সে মুক্ত হস্তে গরীবদের দান করিয়াছে;
    তাহার সততা চিরকাল স্থায়ী।”
    MHBen 32.4

    “আর যিনি বপনকারীকে বীজ ও আহারের জন্য খাদ্য যোগাইয়া থাকেন, তিনি তোমাদের বপনের বীজ যোগাইবেন এবং প্রচুর করিবেন, আর তোমাদের ধার্মিকতার ফল বৃদ্ধি করিবেন; এরূপে তোমরা সর্ব্বপ্রকার দানশীলতার নিমিত্তে সর্ব্ববিষয়ে ধনবান্ হইবে, আর এই দানশীলতা আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ সম্পন্ন করে। করিন্থীয় ৯:৬-১১।MHBen 32.5

    *****

    Larger font
    Smaller font
    Copy
    Print
    Contents